প্রেমের গল্প: গয়নার বাক্স by শুভ্র চৌধুরী
বিশাল এক ট্রাংকের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছে
মুহিত। ট্রাংকের রং সবুজ। হাতলের মধ্যে লাল রং করা। সে দাঁড়িয়ে আছে
কমলাপুর রেলস্টেশনের মাঝখানে। আশপাশ দিয়ে লোকজন যাচ্ছে। যাওয়ার সময়
আড়চোখে তাকাচ্ছে। ফিটফাট একটি তরুণ রং–বেরঙের ট্রাংক হাতে দাঁড়িয়ে আছে,
বিষয়টা মনে হয় কেউ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। তার হাতে থাকার কথা
‘প্রেসিডেন্ট’ স্যুটকেস কিংবা মেরুন রঙের লাগেজ।
কিছুক্ষণ আগে এক টোকাই এসে তাকে জিজ্ঞেস করে গেছে, ‘মামা,একটা পেপসি আইন্যা দিমু?’
মুহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছে, ‘দে, ঠান্ডা দেখে আনিস। সঙ্গে যেন পাইপ দেয়!’
টোকাই দৌড় দিয়ে পেপসি আনতে গেছে। নিশা বেশ দূরে দাঁড়িয়ে শসা কিনছে। এই রাতের বেলা যে শসা বিক্রি হয়, মুহিতের জানা ছিল না। নিশার ভেতরে নাটকীয়তা বিষয়টা বিল্টইন। ট্রেন স্টেশনে এলে নাকি শসা খেতেই হবে!
ওরা যাচ্ছে মুহিতের গ্রামের বাড়িতে। নিশার শ্বশুরবাড়ি। দিনাজপুর। দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণ। বিয়ের পর এই প্রথম দিনাজপুর যাচ্ছে তারা। দুজনই থাকে ঢাকায়। তিন দিনের ছুটি। যাওয়ার আগে নিশা ঘোষণা করল ট্রাংক ছাড়া শ্বশুরবাড়ি যাবে না। স্যুটকেস চলবে না। তাই ট্রাংক কেনা হয়েছে পুরান ঢাকা থেকে।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই শসা হাতে দৌড়ে আসতে লাগল নিশা। মুহিত অবাক, হুট করে দৌড় দেওয়ার কী হলো? কোনো সমস্যা? মুহিতের মনে ক্ষীণ সন্দেহ—নিশা শসাওয়ালাকে টাকা না দিয়েই দৌড় দিয়েছে! সেদিন রমনা পার্কেও একই ঘটনা। দশ টাকার বাদাম কিনেছে। বাদামের টাকা না দিয়েই মুহিতের হাত ধরে দৌড় দিল নিশা। বাদাম বিক্রেতা ছেলেটা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সে–ও তার বাদামের ঝুড়ি গলায় নিয়ে দৌড়ে আসতে লাগল ওদের পেছন পেছন। দশ টাকা তো কম টাকা নয়! বাদামওয়ালা ছেলেটি কাছে আসতেই ওর হাতে এক শ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল নিশা। ছেলেটি হা করে এক শ টাকার নোটটি ধরে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। এর মাঝে কী হয়ে গেল, সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু আজ নিশা কেন আবার দৌড় দিল বোঝা যাচ্ছে না। যেকোনো মুহূর্তে ট্রেন চলে আসবে। এমন সময় নাটকীয় কোনো ঘটনা ঘটালে সর্বনাশ!
নিশা শসা হাতে মুহিতের কাছে এসে বলল, ‘আজকে যাওয়া ক্যানসেল!’
মুহিত অবাক, ‘যাওয়া ক্যানসেল মানে কী? ট্রেন বাতিল নাকি?’
নিশা শসায় কামড় বসিয়ে বলল, ‘নাহ, ট্রেন আসছে। কিন্তু আমরা আজকে যাব না! চলো, বাসায় ফিরে যাই।’
মুহিত যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘নিশা, অনেক কষ্ট করে দুইটা টিকেট ম্যানেজ করা হয়েছে। তাছাড়া ছুটিও পাওয়া যাবে না! এই পাগলামি করার কোনো মানে হয়? সব সময় পাগলামি ভালো লাগে না!’
নিশা শসায় লবণ মাখাতে মাখাতে বলল, ‘কোনো মানেই হয় না। কিন্তু আজকে আমি যাচ্ছি না।’
মুহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দীর্ঘ একটা সময় এই মেয়েটির সঙ্গে জীবন কাটাতে হবে তার!
২.
বিশাল ট্রাংক টানতে টানতে ওরা আবার নিজেদের ঢাকার ছোট্ট তিন রুমের ফ্ল্যাটটিতে এসেছে। রাত ভালোই হয়েছে। বারান্দায় ঝিরিঝিরি হাওয়া। নিশা মুহিতের জন্য চা বানিয়ে এনেছে। আশপাশের কোথাও থেকে ফুলের মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে। কী ফুলের কে জানে! নিশা চায়ের কাপ রাখতে রাখতে বলল, ‘স্যরি, মুহিত। অনেক কষ্ট হয়ে গেল!’ মুহিত ঠান্ডা গলায় বলল, ‘কষ্ট হবে কেন? কিন্তু ঠিক কী কারণে আমরা ফিরে এলাম, এটা বুঝতে পারছি না।’
নিশা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি মায়ের জন্য একটা গয়না কিনেছিলাম। গয়নার সেই বাক্সটা ভুল করে ঘরেই ফেলে গেছিলাম। অনেক শখ করে কেনা। সেটা না নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে ইচ্ছা করছিল না।’
মুহিত অবাক হয়ে নিশার দিকে তাকিয়ে রইল। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর এসব পাগলামির পেছনেও যে কিছু না কিছু কারণ থাকে, সেটা সে কবে বুঝবে কে জানে!
কিছুক্ষণ আগে এক টোকাই এসে তাকে জিজ্ঞেস করে গেছে, ‘মামা,একটা পেপসি আইন্যা দিমু?’
মুহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছে, ‘দে, ঠান্ডা দেখে আনিস। সঙ্গে যেন পাইপ দেয়!’
টোকাই দৌড় দিয়ে পেপসি আনতে গেছে। নিশা বেশ দূরে দাঁড়িয়ে শসা কিনছে। এই রাতের বেলা যে শসা বিক্রি হয়, মুহিতের জানা ছিল না। নিশার ভেতরে নাটকীয়তা বিষয়টা বিল্টইন। ট্রেন স্টেশনে এলে নাকি শসা খেতেই হবে!
ওরা যাচ্ছে মুহিতের গ্রামের বাড়িতে। নিশার শ্বশুরবাড়ি। দিনাজপুর। দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণ। বিয়ের পর এই প্রথম দিনাজপুর যাচ্ছে তারা। দুজনই থাকে ঢাকায়। তিন দিনের ছুটি। যাওয়ার আগে নিশা ঘোষণা করল ট্রাংক ছাড়া শ্বশুরবাড়ি যাবে না। স্যুটকেস চলবে না। তাই ট্রাংক কেনা হয়েছে পুরান ঢাকা থেকে।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই শসা হাতে দৌড়ে আসতে লাগল নিশা। মুহিত অবাক, হুট করে দৌড় দেওয়ার কী হলো? কোনো সমস্যা? মুহিতের মনে ক্ষীণ সন্দেহ—নিশা শসাওয়ালাকে টাকা না দিয়েই দৌড় দিয়েছে! সেদিন রমনা পার্কেও একই ঘটনা। দশ টাকার বাদাম কিনেছে। বাদামের টাকা না দিয়েই মুহিতের হাত ধরে দৌড় দিল নিশা। বাদাম বিক্রেতা ছেলেটা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সে–ও তার বাদামের ঝুড়ি গলায় নিয়ে দৌড়ে আসতে লাগল ওদের পেছন পেছন। দশ টাকা তো কম টাকা নয়! বাদামওয়ালা ছেলেটি কাছে আসতেই ওর হাতে এক শ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল নিশা। ছেলেটি হা করে এক শ টাকার নোটটি ধরে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। এর মাঝে কী হয়ে গেল, সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু আজ নিশা কেন আবার দৌড় দিল বোঝা যাচ্ছে না। যেকোনো মুহূর্তে ট্রেন চলে আসবে। এমন সময় নাটকীয় কোনো ঘটনা ঘটালে সর্বনাশ!
নিশা শসা হাতে মুহিতের কাছে এসে বলল, ‘আজকে যাওয়া ক্যানসেল!’
মুহিত অবাক, ‘যাওয়া ক্যানসেল মানে কী? ট্রেন বাতিল নাকি?’
নিশা শসায় কামড় বসিয়ে বলল, ‘নাহ, ট্রেন আসছে। কিন্তু আমরা আজকে যাব না! চলো, বাসায় ফিরে যাই।’
মুহিত যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘নিশা, অনেক কষ্ট করে দুইটা টিকেট ম্যানেজ করা হয়েছে। তাছাড়া ছুটিও পাওয়া যাবে না! এই পাগলামি করার কোনো মানে হয়? সব সময় পাগলামি ভালো লাগে না!’
নিশা শসায় লবণ মাখাতে মাখাতে বলল, ‘কোনো মানেই হয় না। কিন্তু আজকে আমি যাচ্ছি না।’
মুহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দীর্ঘ একটা সময় এই মেয়েটির সঙ্গে জীবন কাটাতে হবে তার!
২.
বিশাল ট্রাংক টানতে টানতে ওরা আবার নিজেদের ঢাকার ছোট্ট তিন রুমের ফ্ল্যাটটিতে এসেছে। রাত ভালোই হয়েছে। বারান্দায় ঝিরিঝিরি হাওয়া। নিশা মুহিতের জন্য চা বানিয়ে এনেছে। আশপাশের কোথাও থেকে ফুলের মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে। কী ফুলের কে জানে! নিশা চায়ের কাপ রাখতে রাখতে বলল, ‘স্যরি, মুহিত। অনেক কষ্ট হয়ে গেল!’ মুহিত ঠান্ডা গলায় বলল, ‘কষ্ট হবে কেন? কিন্তু ঠিক কী কারণে আমরা ফিরে এলাম, এটা বুঝতে পারছি না।’
নিশা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি মায়ের জন্য একটা গয়না কিনেছিলাম। গয়নার সেই বাক্সটা ভুল করে ঘরেই ফেলে গেছিলাম। অনেক শখ করে কেনা। সেটা না নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে ইচ্ছা করছিল না।’
মুহিত অবাক হয়ে নিশার দিকে তাকিয়ে রইল। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর এসব পাগলামির পেছনেও যে কিছু না কিছু কারণ থাকে, সেটা সে কবে বুঝবে কে জানে!
No comments