প্রেমের গল্প : তুমি? by মুহাম্মদ নাহিদ সালমান
আমি যখন প্রথম তার প্রেমে পড়লাম, তখন তার মৃত্যুর বয়স আট মাস!
নভেম্বর মাস, একটা শেষ বৃষ্টি এসে শীতটাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবে—সে রকম একটা সময়। খাওয়াদাওয়া শেষে যখন দীর্ঘ একটা রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল। মাথার কাছে উবু হয়ে থাকা হলদে টেবিলবাতিটা, পায়ের কাছে গোটানো কম্বল আর কোলের ওপর ধরে রাখা গল্পের বইটা সরিয়ে যখন বিছানার পাশের জানালার থাই গ্লাসটা খুললাম, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ব্যাপার ঘটল! বহু বছরের পুরোনো একটা ভেজা বাতাসে জানালার পর্দাটা থরথর করে কেঁপে উঠল, দেয়ালের টিকটিকি টিকটিক করে ভয় প্রকাশ করল, খালি পায়ের পাতা জমে যেতে চাইল, বাইরের গলিত অন্ধকার ফোঁটায় ফোঁটায় ছুঁতে চাইল ভেতরের শুকনো বাতাস। আমি ভয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম। কাচের গায়ে বড় বড় জলের কান্নার দাগ যেন দেখতে না হয়, তাই টেনে দিলাম পর্দা। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে, ঘরের বাতাস বদলে গেছে পুরোটুকুই, কম্বলের ওম কমে গেছে জুড়নো ভাতের মতো, ভয়ার্ত টিকটিকি লুকিয়ে পড়েছে কোনো এক কোনায়, ঘড়ির কাঁটা বুক ধড়ফড়ানি নিয়ে বহু কষ্টে ছুঁয়েছে একটার কাঁটা। আমি কোনোমতে ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর সেই রাতেই ব্যাখ্যাতীত এক প্রেমের আবির্ভাব হলো তার প্রতি!
২.
মৃত্যুর মাঝে একটা হীরার মতো শক্ত বিষণ্নতা থাকতে হয়, নয়তো পাহাড়ের মতো ভারী কোনো আনুষ্ঠানিকতা। এর কোনোটাই তার মৃত্যুতে সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল না। ছিল মার্চের গনগনে রোদ, কালচে পিচঢালা একটা রাস্তা, অভিশপ্ত ল্যাম্পপোস্ট, সে আর আমি। আমার কোচিং শেষে শ্যামলীর মোড়ে এসে দাঁড়ালাম বাসের জন্য। নীলক্ষেত যাব, কয়েকটা বই কেনা দরকার। এমন সময় তার ফোন এল, ‘আর দুটো মিনিট দাঁড়াও। আমি চলে এসেছি প্রায়।’
‘তোমাকে না বললাম, আসতে হবে না!’ কথাটা বলে শেষ করার আগেই লাইনটা কেটে গেল। কিছুক্ষণ বাদে যখন সিগন্যালে লালবাতি জ্বলে উঠল আর বাসগুলো একটার পর একটা সারি করে দাঁড়াতে শুরু করল, তখনই পেছনের একটা বাস থেকে নেমে এল সে। দাড়ি–গোঁফের জঙ্গলের মধ্য থেকে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। পকেট হাতড়ে একটা সিগারেট, দেশলাই বের করে জ্বালল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম ফুটওভার ব্রিজের ছায়ায়। সে আমার পাশে এসেও একটু সরে দাঁড়াল। সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতাম না বলেই হয়তো একটু দূরে দাঁড়াল।
আচমকা সিগন্যাল বাতিটা সবুজ হয়ে গেল, বাসগুলো কিছুক্ষণ ঘরঘর করে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় নামার জানান দিল। যে বাসটা একটু পিছিয়ে হুড়োহুড়ি করে আগে যেতে চাইল, সেই বাসেরই ছায়াশ্রয়ী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে। এরপর সবকিছু ঘটে গেল বিদ্যুতের বেগে, রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে, বাস ততক্ষণে হাওয়ায় মিশে গেছে, সঙ্গে করে নিয়ে গেছে আমার বুকের কতগুলো কম্পন, কিছু মানুষ দৌড়ে গেল!
এর পর থেকে যা কিছু আমার মনে আছে সব ধোঁয়া ধোঁয়া, ছেঁড়া–খোঁড়া। তবু মনে আছে, আশপাশের কিছু লোকের সহায়তায় তাকে নিয়ে গেছিলাম এক স্বনামধন্য হাসপাতালে, রাস্তায় থাকতেই তার বাসায় জানালাম। কোলে তার শুকনো রক্তের দাগওয়ালা মাথা। পুলিশি কেসের ঝামেলা থেকে হাসপাতালকে বাঁচাতে যখন ফর্ম পূরণ করছি, তখন সে একবার বমি করল। আমি জানতাম, এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। তখনো তার জ্ঞান ছিল, তখনো সে মাথা ঘুরিয়ে আমাকে দেখছিল। তার চোখেমুখে যন্ত্রণার তীব্রতায় ভেজা অসহায় ভাব। তার আধা ঘণ্টা খানেক পর তার বড় ভাই ভার্সিটি থেকে এসে পৌঁছায়, তখন সে অচেতন। এতক্ষণ আমাকে হয়তো নারী ভেবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি, ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো। আরও কিছু ফর্ম এল, জানলাম তার রক্তে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আছে বলে তখনই অপারেশন করা যাবে না এবং সেটা কোনো হাসপাতালেই সম্ভব নয়। অপেক্ষা করতে হবে, তার অপারেশন হবে সবার শেষে। অপেক্ষার মাঝে তার মা–বাবা এসে উপস্থিত হলেন এবং আমি একটা সময় কাঁপা কাঁপা পায়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।
৩.
সে মারা যায় তারও তিন দিন পর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রেখেছিল। তারা রাত সাড়ে ১০টার আগে কোনো অনুরোধেই অপারেশন শুরু করেনি। আইসিইউতে রেখেও তাকে বাঁচানো যায়নি। শুনেছি, লাশের নিথর দেহ আনতেও তাদের ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে একটার পর একটা। আর আমার আট মাস লেগে গেল তার মৃত্যু থেকে বেরোতে কিংবা হত্যার মতো অপরাধবোধ থেকে নিজেকে বাঁচাতে। হয়তো সবকিছু অন্য রকম হতে পারত ও যদি না আসত শ্যামলীতে, হয়তো বেঁচে থাকত যদি আমি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতাম, যদি বাসটা না পেছাত, যদি সিগন্যালটা তখন সবুজ না হতো। এ রকম হাজারো ‘হয়তো’ আর ‘যদি’র ভিড়ে আমিই হয়তো বিলীন হয়ে যেতাম। কিন্তু হইনি! আমি আফসোস কাটিয়ে উঠেছি, অপরাধবোধের পাশ কেটে গেছি। মৃত্যুকে মেনে নিয়েছি, মানুষ বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে।
একদিন সে বলেছিল, ‘আমি সবচেয়ে কী ভয় করি জানো? বিস্মৃতি, যখন আমি থাকব না, তখন কারও স্মৃতিতেও আমার জায়গা হবে না—এ কথা ভাবতেও আমার ভীষণ কষ্ট হয়।’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘কেন? তোমার মা-বাবা আছেন, বড় ভাই আছেন, ভাবার মানুষের অভাব হবে না।’ আমার অমন নির্দয় রসিকতায় সে আর কথা বাড়ায়নি। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল, হয়তো সহানুভূতি খুঁজছিল কিছুটা। সেই অন্বেষণ এখন সুদূর অতীত। অনার্সের পর্ব আমি চুকিয়ে এসেছি অনেক দিন হলো। একটা স্কুলে এখন ইংরেজির মাস্টার, বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক, একটা ছোট্ট ছেলেও আছে। একেবারে ছোট, হামাগুড়ি থেকে কেবল হাঁটতে শিখেছে। কিছুক্ষণ হেলেদুলে হেঁটে ভারসাম্য রাখতে না পেরে যখন আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমি তার ফোলা ফোলা গাল দুটো হালকা করে টিপে দিই, তখন সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, হাসে। আমার তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে পড়ে তাকে। কোনো দিন ভয়ংকর ঝড়ের সন্ধ্যায়, কখনো বিকেলে চায়ের কাপ হাতে, নয়তো কোনো লোডশেডিংয়ের রাতে, নয়তো গনগনে রোদে পুড়ে যেতে যেতে হঠাৎ মনে হয় তাকে। মাঝেমেধ্য মন খারাপ করা রাতে যখন সামান্য ছিটেফোঁটার মেঘও থাকে না আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলি, ‘আমি তোমাকে মনে রেখেছি, কারণে, অকারণে। তুমি?’
নভেম্বর মাস, একটা শেষ বৃষ্টি এসে শীতটাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবে—সে রকম একটা সময়। খাওয়াদাওয়া শেষে যখন দীর্ঘ একটা রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল। মাথার কাছে উবু হয়ে থাকা হলদে টেবিলবাতিটা, পায়ের কাছে গোটানো কম্বল আর কোলের ওপর ধরে রাখা গল্পের বইটা সরিয়ে যখন বিছানার পাশের জানালার থাই গ্লাসটা খুললাম, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ব্যাপার ঘটল! বহু বছরের পুরোনো একটা ভেজা বাতাসে জানালার পর্দাটা থরথর করে কেঁপে উঠল, দেয়ালের টিকটিকি টিকটিক করে ভয় প্রকাশ করল, খালি পায়ের পাতা জমে যেতে চাইল, বাইরের গলিত অন্ধকার ফোঁটায় ফোঁটায় ছুঁতে চাইল ভেতরের শুকনো বাতাস। আমি ভয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম। কাচের গায়ে বড় বড় জলের কান্নার দাগ যেন দেখতে না হয়, তাই টেনে দিলাম পর্দা। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে, ঘরের বাতাস বদলে গেছে পুরোটুকুই, কম্বলের ওম কমে গেছে জুড়নো ভাতের মতো, ভয়ার্ত টিকটিকি লুকিয়ে পড়েছে কোনো এক কোনায়, ঘড়ির কাঁটা বুক ধড়ফড়ানি নিয়ে বহু কষ্টে ছুঁয়েছে একটার কাঁটা। আমি কোনোমতে ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর সেই রাতেই ব্যাখ্যাতীত এক প্রেমের আবির্ভাব হলো তার প্রতি!
২.
মৃত্যুর মাঝে একটা হীরার মতো শক্ত বিষণ্নতা থাকতে হয়, নয়তো পাহাড়ের মতো ভারী কোনো আনুষ্ঠানিকতা। এর কোনোটাই তার মৃত্যুতে সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল না। ছিল মার্চের গনগনে রোদ, কালচে পিচঢালা একটা রাস্তা, অভিশপ্ত ল্যাম্পপোস্ট, সে আর আমি। আমার কোচিং শেষে শ্যামলীর মোড়ে এসে দাঁড়ালাম বাসের জন্য। নীলক্ষেত যাব, কয়েকটা বই কেনা দরকার। এমন সময় তার ফোন এল, ‘আর দুটো মিনিট দাঁড়াও। আমি চলে এসেছি প্রায়।’
‘তোমাকে না বললাম, আসতে হবে না!’ কথাটা বলে শেষ করার আগেই লাইনটা কেটে গেল। কিছুক্ষণ বাদে যখন সিগন্যালে লালবাতি জ্বলে উঠল আর বাসগুলো একটার পর একটা সারি করে দাঁড়াতে শুরু করল, তখনই পেছনের একটা বাস থেকে নেমে এল সে। দাড়ি–গোঁফের জঙ্গলের মধ্য থেকে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। পকেট হাতড়ে একটা সিগারেট, দেশলাই বের করে জ্বালল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম ফুটওভার ব্রিজের ছায়ায়। সে আমার পাশে এসেও একটু সরে দাঁড়াল। সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতাম না বলেই হয়তো একটু দূরে দাঁড়াল।
আচমকা সিগন্যাল বাতিটা সবুজ হয়ে গেল, বাসগুলো কিছুক্ষণ ঘরঘর করে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় নামার জানান দিল। যে বাসটা একটু পিছিয়ে হুড়োহুড়ি করে আগে যেতে চাইল, সেই বাসেরই ছায়াশ্রয়ী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে। এরপর সবকিছু ঘটে গেল বিদ্যুতের বেগে, রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে, বাস ততক্ষণে হাওয়ায় মিশে গেছে, সঙ্গে করে নিয়ে গেছে আমার বুকের কতগুলো কম্পন, কিছু মানুষ দৌড়ে গেল!
এর পর থেকে যা কিছু আমার মনে আছে সব ধোঁয়া ধোঁয়া, ছেঁড়া–খোঁড়া। তবু মনে আছে, আশপাশের কিছু লোকের সহায়তায় তাকে নিয়ে গেছিলাম এক স্বনামধন্য হাসপাতালে, রাস্তায় থাকতেই তার বাসায় জানালাম। কোলে তার শুকনো রক্তের দাগওয়ালা মাথা। পুলিশি কেসের ঝামেলা থেকে হাসপাতালকে বাঁচাতে যখন ফর্ম পূরণ করছি, তখন সে একবার বমি করল। আমি জানতাম, এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। তখনো তার জ্ঞান ছিল, তখনো সে মাথা ঘুরিয়ে আমাকে দেখছিল। তার চোখেমুখে যন্ত্রণার তীব্রতায় ভেজা অসহায় ভাব। তার আধা ঘণ্টা খানেক পর তার বড় ভাই ভার্সিটি থেকে এসে পৌঁছায়, তখন সে অচেতন। এতক্ষণ আমাকে হয়তো নারী ভেবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি, ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো। আরও কিছু ফর্ম এল, জানলাম তার রক্তে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আছে বলে তখনই অপারেশন করা যাবে না এবং সেটা কোনো হাসপাতালেই সম্ভব নয়। অপেক্ষা করতে হবে, তার অপারেশন হবে সবার শেষে। অপেক্ষার মাঝে তার মা–বাবা এসে উপস্থিত হলেন এবং আমি একটা সময় কাঁপা কাঁপা পায়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।
৩.
সে মারা যায় তারও তিন দিন পর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রেখেছিল। তারা রাত সাড়ে ১০টার আগে কোনো অনুরোধেই অপারেশন শুরু করেনি। আইসিইউতে রেখেও তাকে বাঁচানো যায়নি। শুনেছি, লাশের নিথর দেহ আনতেও তাদের ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে একটার পর একটা। আর আমার আট মাস লেগে গেল তার মৃত্যু থেকে বেরোতে কিংবা হত্যার মতো অপরাধবোধ থেকে নিজেকে বাঁচাতে। হয়তো সবকিছু অন্য রকম হতে পারত ও যদি না আসত শ্যামলীতে, হয়তো বেঁচে থাকত যদি আমি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতাম, যদি বাসটা না পেছাত, যদি সিগন্যালটা তখন সবুজ না হতো। এ রকম হাজারো ‘হয়তো’ আর ‘যদি’র ভিড়ে আমিই হয়তো বিলীন হয়ে যেতাম। কিন্তু হইনি! আমি আফসোস কাটিয়ে উঠেছি, অপরাধবোধের পাশ কেটে গেছি। মৃত্যুকে মেনে নিয়েছি, মানুষ বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে।
একদিন সে বলেছিল, ‘আমি সবচেয়ে কী ভয় করি জানো? বিস্মৃতি, যখন আমি থাকব না, তখন কারও স্মৃতিতেও আমার জায়গা হবে না—এ কথা ভাবতেও আমার ভীষণ কষ্ট হয়।’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘কেন? তোমার মা-বাবা আছেন, বড় ভাই আছেন, ভাবার মানুষের অভাব হবে না।’ আমার অমন নির্দয় রসিকতায় সে আর কথা বাড়ায়নি। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল, হয়তো সহানুভূতি খুঁজছিল কিছুটা। সেই অন্বেষণ এখন সুদূর অতীত। অনার্সের পর্ব আমি চুকিয়ে এসেছি অনেক দিন হলো। একটা স্কুলে এখন ইংরেজির মাস্টার, বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক, একটা ছোট্ট ছেলেও আছে। একেবারে ছোট, হামাগুড়ি থেকে কেবল হাঁটতে শিখেছে। কিছুক্ষণ হেলেদুলে হেঁটে ভারসাম্য রাখতে না পেরে যখন আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমি তার ফোলা ফোলা গাল দুটো হালকা করে টিপে দিই, তখন সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, হাসে। আমার তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে পড়ে তাকে। কোনো দিন ভয়ংকর ঝড়ের সন্ধ্যায়, কখনো বিকেলে চায়ের কাপ হাতে, নয়তো কোনো লোডশেডিংয়ের রাতে, নয়তো গনগনে রোদে পুড়ে যেতে যেতে হঠাৎ মনে হয় তাকে। মাঝেমেধ্য মন খারাপ করা রাতে যখন সামান্য ছিটেফোঁটার মেঘও থাকে না আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলি, ‘আমি তোমাকে মনে রেখেছি, কারণে, অকারণে। তুমি?’
No comments