১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে হংকং পুলিশ
হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলায় জড়িত সন্দেহে গত শুক্রবার রাতে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় অপরাধী চক্রের সদস্য বলে দাবি করা হয়েছে। একদল চীনপন্থী সেদিনই আরও আগে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এর জেরে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা বাতিল করে। খবর বিবিসি ও এএফপির। চীনপন্থীরা হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ছিঁড়ে ফেলে এবং ব্যানার নামিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মাফিয়াদের হামলা চালাতে মদদ দিয়েছে সরকার। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বলে, দুই পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। যে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত আটজন স্থানীয় অপরাধী চক্রের সদস্য। সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইং গতকাল শনিবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সোমবার সরকারি অফিস ও স্কুলগুলো খোলা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং প্রধান সড়কগুলো থেকে সরে যাওয়া, যাতে স্কুলগুলো খুলতে পারে। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে চীনের ঘোষণা বাতিলের দাবিতে কয়েক দিন ধরে সেখানকার বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ চলছে। পরে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইংয়ের পদত্যাগের দাবিও যুক্ত করে বিক্ষোভকারীরা। তাঁকে পদত্যাগের জন্য গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
লিউং চুন-ইং পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানালেও এ সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক আগে জানান, তাঁর প্রধান সচিব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকের সন্দেহ, প্রশাসকের আলোচনার কথা কালক্ষেপণের একটি কৌশলমাত্র। এতে পথে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কমে যাবে। এই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচলের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা, তাদের তাঁবু ছিঁড়ে ফেলা ও ব্যানার নামিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা বেড়ে যায়। হংকং ছাত্র ফেডারেশন চীনপন্থীদের হামলার পর শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালাতে মাফিয়াদের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এ কারণে আলোচনা বাতিল করা হলো। প্রসঙ্গত, সরকার সমঝোতা আলোচনার আমন্ত্রণ জানালেও তা কখন এবং কোথায় হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। ‘অকুপাই সেন্ট্রাল’ আন্দোলনের নেতা বেনি তাই বলেছেন, তাঁরা আলোচনা বাতিলের প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি এ-ও বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর বিরোধীদের হামলা প্রতিহত করছে না পুলিশ। এর মধ্যে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা বাতিলের প্রেক্ষাপটে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুক্রবারের সংঘর্ষ এটাও স্পষ্ট করে, চলমান এ আন্দোলনের বিরোধী পক্ষও রয়েছে। লি নামের একজন নির্মাণশ্রমিক বলেন, ‘খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের কাজ করতে হয়। এই আন্দোলন একটা খেলা। এই খেলায় অংশ নিয়ে বসে থাকলে আমাদের চলবে না।’ গত ৩১ আগস্ট বেইজিং ঘোষণা করে, ২০১৭ সালে হংকংয়ে প্রত্যক্ষ নির্বাচন করতে দেওয়া হবে। তবে প্রার্থীদের অনুমোদন করবে বেইজিং। এই ঘোষণার প্রতিবাদে গত ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহব্যাপী ক্লাস বর্জন কর্মসূচির ডাক দেয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ‘অকুপাই সেন্ট্রাল’ আন্দোলনকারী ও শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে হংকংয়ের কেন্দ্রস্থল দখল করে নেয়।
No comments