তাহলে অ-খুনিদের সঙ্গেই সংলাপ হোক! by সোহরাব হাসান
ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশি কূটনীতিক, দলীয় নেতা-কর্মী ও
সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। প্রতিবারই তাঁরা এ
কাজটি করে থাকেন। দুই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসাদের মধ্যে বিদেশি কূটনীতিকরাই
অভিন্ন অতিথি। আর সবাই ভিন্ন ভিন্ন ‘গ্রহের’ মানুষ।
এই শুভেচ্ছা বিনিময়ে কতটা শুভেচ্ছা আছে আর কতটা রাগ ও বিরাগের মিশেল আছে, তা বের করা কঠিন নয়।
বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছেন। মানুষের মুখে হাসি ও আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু ঈদের আগে বেতন না পাওয়া তোবা গার্মেন্টসের ১৬০০ শ্রমিকের মতো আরও অনেক শ্রমিকের মুখে যে হাসি ছিল না, সেটি তিনি শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারতেন।
এই শুভেচ্ছা বিনিময়ে কতটা শুভেচ্ছা আছে আর কতটা রাগ ও বিরাগের মিশেল আছে, তা বের করা কঠিন নয়।
বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছেন। মানুষের মুখে হাসি ও আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু ঈদের আগে বেতন না পাওয়া তোবা গার্মেন্টসের ১৬০০ শ্রমিকের মতো আরও অনেক শ্রমিকের মুখে যে হাসি ছিল না, সেটি তিনি শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারতেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পুলিশের কড়া পাহারায় রংপুরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। কড়া পাহারায় তাঁর ঈদের নামাজ পড়ার কারণ রংপুরে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি, কাটাকাটি। এক গ্রুপ রওশনের সমর্থক, আরেক গ্রুপ এরশাদের। দেশের নিরুত্তাপ রাজনীতিতে কিছুটা হলেও এরশাদ দম্পতি উত্তাপ ছড়াচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশের মানুষ ঈদ করতে পারায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঈদ ও হজ পালনকারীদের প্রতি মোবারকবাদ জানিয়েছেন। ঈদের আগে তিনি আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে যে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, সে জন্য তাঁকে অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে তাঁর মন্ত্রিসভায় লতিফ সিদ্দিকীর মতো বেফাঁস মন্তব্য করা লোক দ্বিতীয়টি না থাকলেও জনগণের সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি মনে করা মানুষ আরও আছেন। দেশবাসী আশা করে, তাঁদের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী কঠোর হবেন। এ ছাড়া ‘অকর্মক’ মন্ত্রীদের ব্যাপারেও তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, বেফাঁস মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী বেকায়দায় পড়েছেন। জনগণের প্রশ্ন, লতিফ সিদ্দিকী গত সাড়ে পাঁচ বছর মন্ত্রী পদে থেকে যে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ করেছেন, তার বিচার হবে কি না? রোববারের প্রথম আলোতে ইফতেখার মাহমুদের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গাজীপুরের শালবন দখল করে তিনি নিজের নামে পাঠাগার তৈরি করছিলেন। মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর সেই পাঠাগারের মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বস্ত্রকল সংস্থার কোটি কোটি টাকার সম্পদ তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকদের বিনা মূল্যে দান করে দিয়েছেন। বাপের সম্পত্তি হলে যে কেউ দান করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি কীভাবে তিনি দান করলেন? এসব সম্পত্তি উদ্ধারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো ক্ষমতাবান এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাবেন না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু র্যাব-পুলিশ এমনকি শিক্ষাব্যবস্থাও ধ্বংস করার অভিযোগ এনে বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো নেই, স্বস্তিতে নেই। পথে পথে চাঁদাবাজির জন্য তিনি সরকারদলীয় লোকদের দায়ী করে বলেছেন, এই অবৈধ ও ভেজাল সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, দেশের কল্যাণ হবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে বলেছেন, দেশের মানুষ এবারে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে ঈদ উদযাপন করছে। ‘গণতন্ত্রহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়?’
আজ মির্জা ফখরুলেরা সর্বত্র গণতন্ত্রহীনতা দেখছেন। হয়তো তাঁদের এই দেখার মধ্যে সত্যও আছে। কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কি তারা গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পেরেছিল?
আমাদের রাজনীতিকেরা গণতন্ত্রকে বিচার করেন ক্ষমতায় থাকা না-থাকা নিয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি সবখানে একদলীয় বাকশালের ভূত দেখতে পায়। আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ চোখে বাইনোকুলার লাগিয়েও গণতন্ত্র খুঁজে পায় না।
প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন উভয়ের বক্তৃতায় সংলাপ ও আন্দোলনের বিষয়টি উঠে এসেছে। বিএনপির সংলাপ প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাঁরা আগে সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন, তাঁরা আবার কীভাবে বলেন, সংলাপ হতেই হবে। এর মধ্যে তিনি অশান্তি ও ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছেন, দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। সংলাপের জন্য অনন্তকাল তাঁরা অপেক্ষাও করবেন না। যখনই প্রয়োজন হবে, ডাক দেবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কার সঙ্গে সংলাপ? খুনিদের সঙ্গে তো সংলাপ হতে পারে না। তিনি বিএনপি আমলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাংসদ-মন্ত্রী হত্যা এবং ২০১৩ সালে যারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে, তাদের ইঙ্গিত করেছেন। যারা এসব দুষ্কর্ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিচার চলছে। বিচার শেষ হলেই প্রমাণিত হবে কে অপরাধী, কে নিরপরাধ। তার পরও আমরা এদের সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নিতে পারি। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তদন্ত নেই, তাঁদের সঙ্গে সংলাপ করতে বাধা কোথায়?
গত ৫ জানুয়ারির আগে যদি প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিতে পারেন, এখন বিএনপির সংলাপ প্রস্তাব নাকচ করার কী যুক্তি হতে পারে? একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী ভুল করলে কেবল তাঁকে বা তাঁর দলকে খেসারত দিতে হয়। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী ভুল করলে তার খেসারত দিতে হয় গোটা দেশকেই।
প্রধানমন্ত্রী খুনিদের সঙ্গে সংলাপ করতে চান না। তাহলে অ-খুনিদের সঙ্গেই সংলাপ হোক।
No comments