প্রেমের গল্প- এক বিকেলের ছবি by তানভীর মাহমুদুল হাসান
তানুশা একটা ব্যাংকে চাকরি করে। চাকরিটা
যে অনেক ভালো লাগে, তা নয়। কিন্তু কদিন আগের বাজে সময়টা থেকে অনেকটা ভালো
সময় কেটে যাচ্ছে। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে,
রান্না করে, টিভি দেখে, বই পড়ে কিংবা গান শুনে তার সময় কেটে যাচ্ছে
কাটাকুটির দুনিয়ায়। জীবনে বেঁচে থাকাটা এখন আর খারাপ লাগছে না তানুশার।
ইদানীং সে খেয়াল করছে পাশের ফ্ল্যাটের এক ছেলে নিয়মিত তাকে ফলো করে। সকালে লিফট দিয়ে নামার সময় ছেলেটাও নামে, ওঠার সময়ও লিফটে দেখা যায় তাকে। কথা বলে না। মনে হয় বয়সে দুই–তিন বছর ছোট হবে। তাই বিষয়টায় তেমন পাত্তা দিচ্ছে না তানুশা। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে অফিসের সামনেও ছেলেটা ঘুরঘুর করছে! ব্যাপারটা আর স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। আবার ছেলেটার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলতে ইচ্ছা করছে না। তানুশা ভাবে, দেখি আজ বাসায় গিয়ে কিছু একটা ফয়সালা করতে হবে।
ঠিকই সেদিন আবার দেখা হলো ছেলেটার সঙ্গে। তানুশা বেশ খানিকটা কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?’
: না লিখতে চাই।
: কথা বলতে পারেন না?
: সবার সামনে গুছিয়ে বলতে পারি না।
ছেলেটা হাতে একটা চিরকুট দিয়ে পালিয়ে গেল! তানুশার ইচ্ছা হলো পড়ে দেখার। একসময় খুলেও ফেলল। একটা চিঠি। চিঠিটা এ রকম—
প্রিয় ‘ব্যাংকার’
আপনি ভাববেন না যে আমি আপনার পেছনে ঘুরঘুর করি। আসলে হয়েছে কী, আমি সেই অনেক দিন ধরেই মেলাতে পারছি না যে আপনার কোন চোখটা বেশি সুন্দর! তাই নানাভাবে আপনাকে দেখার চেষ্টা করি। আমি জানি, আপনি বিরক্ত হন। আমি যেদিন বের করতে পারব আপনার কোন চোখটা বেশি সুন্দর, সেদিন হয়তো আপনার পেছনে আর ঘুরঘুর করব না।
ইতি
রাখাল
হাসি পেল তানুশার। স্কুলজীবনে এমন চিঠি পেত সে। তবে সেগুলোয় থাকত সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব। ‘ভালোবাসতে চাই’, ‘বিয়ে করতে চাই’, ‘তোমার জন্য রানিমহল বানাতে চাই’ ধরনের চিঠি। কখনো কোনো চিঠির উত্তর দেওয়া হয়নি তানুশার। সত্যি বলতে সে হয়তো চিঠি লিখতেই জানে না। তবে রাখাল ছেলেটাকে মজার মনে হচ্ছে। একটু অন্য রকম। বাজে উদ্দেশ্যও থাকতে পারে! তানুশা আবার ভাবে, বাচ্চা একটা ছেলে, কতটুকুই বা আর সাহস দেখাবে! তবে তার নাম কি সত্যি রাখাল?
পরদিন সকালে লিফটে ওঠার সময় রাখালের হাতে একটা ছোট কাগজ ধরিয়ে দিল তানুশা। বলল, ‘আমি চলে গেলে পোড়ো। তুমি কথা বলতে জানো না, আর আমি লিখতে জানি না। আর আজ ছয়টার দিকে আমার অফিসের সামনে এসো। ভয় পেয়ো না। তুমি নাহয় কথা লিখবে আর আমি বলব!’
বিকেল পাঁচটায় জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই তানুশা দেখল রাখাল দাঁড়িয়ে আছে। এক ঘণ্টা আগে এসে ঘেমে–নেয়ে একাকার হচ্ছে। ২৩–২৪ বছরের একটা ছেলে, কিন্তু মনে হচ্ছে ক্লাস এইটপড়ুয়া এক ছেলে ক্লাস সেভেনপড়ুয়া এক মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। একটা আগে অফিস থেকে বেরোল তানুশা।
: কখন এলে তুমি? আমি কিন্তু তোমাকে তুমি করেই বলব। ছোট হবে তো আমার। কেমন?
: তুমি করেই বলবেন কিন্তু আমি আপনার ছোট হব না। আমার চেহারাটাই বাচ্চা বাচ্চা। আমার আব্বার চেহারাও বাচ্চা বাচ্চা। এটা আমাদের বংশের ঐতিহ্য বলতে পারেন।
: তুমি তো কথা বলতেও পারো দেখছি! তবে নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছ যে?
: আপনার চোখের রহস্য ভাঙতে ইচ্ছা করছে না।
কথাটা বলেই একটা খাম দিয়ে হনহন করে, প্রায় দৌড়ে চলে গেল রাখাল। তানুশার হঠাৎ ইচ্ছা হলো হাতের ব্যাগ ফেলে দিয়ে, চুল ছেড়ে সে–ও ছেলেটার পেছন পেছন দৌড়াবে!
রাখালের খামটা আর খুলে দেখল না তানুশা। তীব্র ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেটা ছিঁড়ে ফেলে দিল বিকেলের রাস্তায়।
পরদিন সকালে রাখাল এল চিঠির উত্তরের আশায়। তানুশা বলল, ‘তোমার চিঠিতে তো কোনো প্রশ্ন দেখিনি।’
: ছবিটাও দেখেননি?
: কোন ছবি?
: আপনার দুচোখের ছবি। অনেক বাজে এঁকেছি। দূর থেকে আপনাকে দেখেছি তো, তাই ভালো হয়নি।
তানুশা বলতে পারত, ফেলে দিয়েছি। কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল না। বলল, ‘খুব সুন্দর হয়েছে। তুমি ভালো আঁকো। আমার সামনে বসে আমাকে আঁকবে?’
ইদানীং সে খেয়াল করছে পাশের ফ্ল্যাটের এক ছেলে নিয়মিত তাকে ফলো করে। সকালে লিফট দিয়ে নামার সময় ছেলেটাও নামে, ওঠার সময়ও লিফটে দেখা যায় তাকে। কথা বলে না। মনে হয় বয়সে দুই–তিন বছর ছোট হবে। তাই বিষয়টায় তেমন পাত্তা দিচ্ছে না তানুশা। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে অফিসের সামনেও ছেলেটা ঘুরঘুর করছে! ব্যাপারটা আর স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। আবার ছেলেটার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলতে ইচ্ছা করছে না। তানুশা ভাবে, দেখি আজ বাসায় গিয়ে কিছু একটা ফয়সালা করতে হবে।
ঠিকই সেদিন আবার দেখা হলো ছেলেটার সঙ্গে। তানুশা বেশ খানিকটা কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?’
: না লিখতে চাই।
: কথা বলতে পারেন না?
: সবার সামনে গুছিয়ে বলতে পারি না।
ছেলেটা হাতে একটা চিরকুট দিয়ে পালিয়ে গেল! তানুশার ইচ্ছা হলো পড়ে দেখার। একসময় খুলেও ফেলল। একটা চিঠি। চিঠিটা এ রকম—
প্রিয় ‘ব্যাংকার’
আপনি ভাববেন না যে আমি আপনার পেছনে ঘুরঘুর করি। আসলে হয়েছে কী, আমি সেই অনেক দিন ধরেই মেলাতে পারছি না যে আপনার কোন চোখটা বেশি সুন্দর! তাই নানাভাবে আপনাকে দেখার চেষ্টা করি। আমি জানি, আপনি বিরক্ত হন। আমি যেদিন বের করতে পারব আপনার কোন চোখটা বেশি সুন্দর, সেদিন হয়তো আপনার পেছনে আর ঘুরঘুর করব না।
ইতি
রাখাল
হাসি পেল তানুশার। স্কুলজীবনে এমন চিঠি পেত সে। তবে সেগুলোয় থাকত সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব। ‘ভালোবাসতে চাই’, ‘বিয়ে করতে চাই’, ‘তোমার জন্য রানিমহল বানাতে চাই’ ধরনের চিঠি। কখনো কোনো চিঠির উত্তর দেওয়া হয়নি তানুশার। সত্যি বলতে সে হয়তো চিঠি লিখতেই জানে না। তবে রাখাল ছেলেটাকে মজার মনে হচ্ছে। একটু অন্য রকম। বাজে উদ্দেশ্যও থাকতে পারে! তানুশা আবার ভাবে, বাচ্চা একটা ছেলে, কতটুকুই বা আর সাহস দেখাবে! তবে তার নাম কি সত্যি রাখাল?
পরদিন সকালে লিফটে ওঠার সময় রাখালের হাতে একটা ছোট কাগজ ধরিয়ে দিল তানুশা। বলল, ‘আমি চলে গেলে পোড়ো। তুমি কথা বলতে জানো না, আর আমি লিখতে জানি না। আর আজ ছয়টার দিকে আমার অফিসের সামনে এসো। ভয় পেয়ো না। তুমি নাহয় কথা লিখবে আর আমি বলব!’
বিকেল পাঁচটায় জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই তানুশা দেখল রাখাল দাঁড়িয়ে আছে। এক ঘণ্টা আগে এসে ঘেমে–নেয়ে একাকার হচ্ছে। ২৩–২৪ বছরের একটা ছেলে, কিন্তু মনে হচ্ছে ক্লাস এইটপড়ুয়া এক ছেলে ক্লাস সেভেনপড়ুয়া এক মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। একটা আগে অফিস থেকে বেরোল তানুশা।
: কখন এলে তুমি? আমি কিন্তু তোমাকে তুমি করেই বলব। ছোট হবে তো আমার। কেমন?
: তুমি করেই বলবেন কিন্তু আমি আপনার ছোট হব না। আমার চেহারাটাই বাচ্চা বাচ্চা। আমার আব্বার চেহারাও বাচ্চা বাচ্চা। এটা আমাদের বংশের ঐতিহ্য বলতে পারেন।
: তুমি তো কথা বলতেও পারো দেখছি! তবে নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছ যে?
: আপনার চোখের রহস্য ভাঙতে ইচ্ছা করছে না।
কথাটা বলেই একটা খাম দিয়ে হনহন করে, প্রায় দৌড়ে চলে গেল রাখাল। তানুশার হঠাৎ ইচ্ছা হলো হাতের ব্যাগ ফেলে দিয়ে, চুল ছেড়ে সে–ও ছেলেটার পেছন পেছন দৌড়াবে!
রাখালের খামটা আর খুলে দেখল না তানুশা। তীব্র ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেটা ছিঁড়ে ফেলে দিল বিকেলের রাস্তায়।
পরদিন সকালে রাখাল এল চিঠির উত্তরের আশায়। তানুশা বলল, ‘তোমার চিঠিতে তো কোনো প্রশ্ন দেখিনি।’
: ছবিটাও দেখেননি?
: কোন ছবি?
: আপনার দুচোখের ছবি। অনেক বাজে এঁকেছি। দূর থেকে আপনাকে দেখেছি তো, তাই ভালো হয়নি।
তানুশা বলতে পারত, ফেলে দিয়েছি। কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল না। বলল, ‘খুব সুন্দর হয়েছে। তুমি ভালো আঁকো। আমার সামনে বসে আমাকে আঁকবে?’
No comments