নিজের নামেই ভোট চাইলেন মোদি
হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপিকে পার করার যাবতীয় দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১০ দিনে অন্তত ৩০টা জনসভা করবেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই দুই রাজ্যে একার ক্ষমতায় বিজেপি সরকার গড়তে পারবে কি না, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আর সে কারণেই লোকসভার ভোটের পর এই দুই রাজ্যের নির্বাচন ‘টিম-মোদিকে’ দাঁড় করিয়েছে কঠিন পরীক্ষার মুখে। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয় মোদির প্রচারপর্ব। প্রথমে হরিয়ানা, পরে মহারাষ্ট্র। দুই রাজ্যেই বিজেপি তার জোটসঙ্গীদের বিদায় দিয়েছে। হরিয়ানায় তিন বছর ধরে জোট ছিল হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসের সঙ্গে। আর মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে জোট ছিল টানা ২৫ বছর। দুই রাজ্যে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি এককভাবে সরকার গড়তে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন যত বড় হয়ে উঠছে, ততই বেড়ে যাচ্ছে মোদি-নির্ভরতা। মোদিও তাই একেবারে সোজাসুজি নিজের নামে ভোট চাইতে দ্বিধা করছেন না। গতকাল হরিয়ানায় মোদি বলেছেন, এই রাজ্যে তিনি পড়াশোনা করেছেন। এই রাজ্যেই পেয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষা। তাঁকে ভোট দেওয়ার অর্থ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। মোদি ভোটারদের উদ্দেশে সরাসরিই বলেন, কংগ্রেসের ‘অপশাসন’ থেকে রাজ্যকে মুক্ত করতে হলে বিজেপিকেই ভোট দিতে হবে। উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন জরুরি। রাজ্যবাসী পরিবর্তন চাইলে তাঁকেই জেতাতে হবে। নিজের নামে এই যে সরাসরি ভোট-ভিক্ষা, এই দুই রাজ্যের ভোটে তা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মোদির কাছে বিরাট ঝুঁকির ব্যাপার। ডান হাত অমিত শাহকে তিনিই দলের সভাপতি করেছেন। দীর্ঘদিনের দুই জোট সঙ্গীকে বিদায় দিয়ে একলা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত এই জুটিরই সাহসী পদক্ষেপ। সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হলে দলে অমিত শাহর একাধিপত্যের দিনও শেষ হয়ে যেতে পারে। এটা নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ দুজনেই বিলক্ষণ বুঝেছেন। সেই কারণেই মহারাষ্ট্রে কুড়িটিরও বেশি এবং হরিয়ানায় অন্তত ১০টি জনসভার গুরুদায়িত্ব মোদি নিয়েছেন। সেই প্রচারে সবকিছুর ওপরে স্থান দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে। এটাও দলেরই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে গত চার মাসে দেশে ও বিদেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের উচ্চতাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছেন। বিদেশি নেতাদের সঙ্গে তাঁর সখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় থেকে এ কথাও সমর্থকেরা বলতে শুরু করেছেন যে শিগগিরই মোদি হয়ে উঠবেন একজন আন্তর্জাতিক নায়ক।
মোদিও এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা তাঁকে তাঁর পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা করে দিচ্ছে। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন তিনি সারা দেশের সব রাজ্যের পড়ুয়াদের সঙ্গে টেলিভিশন মারফত কথা বললেন। ২ অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিন পালন করলেন ‘স্বচ্ছতা আন্দোলনকে’ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনী প্রচার শুরুর ঠিক আগের দিন গত শুক্রবার ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ব্যবহার করলেন রেডিওকে। লক্ষ্য ছিল, নিজের স্বপ্ন ও বিশ্বাসকে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। ওই অনুষ্ঠানের নামও তাঁরই দেওয়া, ‘হৃদয়ের কথা’। রেডিও মারফত দেশবাসীকে বললেন মোদি, আমরা সব পারি। আমাদের বিশ্বজয়ের ক্ষমতা আছে। শুধু নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। মোদি স্বচ্ছতা আন্দোলনের কথা শোনালেন, সবচেয়ে কম খরচে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠানোর কথা শোনালেন, জোর দিলেন খাদি বস্ত্র কেনার প্রয়োজনীয়তায়। মহাপুরুষদের গল্প শুনিয়ে বললেন, আমরা আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়েছি। আমাদের দোষ একটাই, নিজেদের শক্তি উপলব্ধি করতে না পারা। জনগণকে তিনি বললেন, একযোগে আমরা বহুদূর যেতে পারি। গঠনমূলক চিন্তা যাঁর মাথাতেই আসুক, দ্বিধামুক্ত হয়ে তা তাঁকে জানাতে তিনি অনুরোধ করেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে এসবই মোদিকে আর পাঁচজনের চেয়ে আলাদা করেছে। এই ভাবমূর্তিতে ভর দিয়েই মোদি হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বাকিদের মোকাবিলায় নেমেছেন। রাজ্যে বড় মাপের দলীয় নেতা না থাকায় এই দুই বিধানসভার ভোটও হয়ে উঠছে মোদি বনাম অন্যদের লড়াই।
No comments