সন্তানদের প্রতি হজরত লোকমানের উপদেশ by অ্যাডভোকেট খোন্দকার আতিয়ার রহমান
বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে অন্যায়-অত্যাচার, অনৈতিকতা, অনিষ্টতা, দুর্নীতি, ভেজাল, ঘুষ, খুন, গুম, ছিনতাই, মাদকতাসহ বিভিন্ন অপরাধ। এক কথায়, এমন কোনো কুকর্ম নেই যা চলছে না। সমাজের নি¤œস্তর থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নৈতিকতার চরম স্খলন ঘটেছে। আর এ অনিয়ম ও অনাসৃষ্টির মূল হোতা হলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমাজের শিক্ষিত সমাজ। পত্রপত্রিকায় অহরহ সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ; শিক্ষা, সড়ক, নৌপরিবহন, পুলিশ ও শুল্ক বিভাগসহ বেশির ভাগ দফতরই দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যে নিমজ্জিত, যার পেছনে রয়েছে চরম লোভ ও লালসা। এদের কারণে দেশ ও জাতি মহাক্ষতির সম্মুখীন হলেও প্রতিরোধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না। তাই সর্বত্র আমজনতার মধ্য ফুটে উঠেছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।
এ অবস্থা নিরসনে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনের সূরা লোকমানে সন্তানদের সুন্দর চরিত্র গঠনে হজরত লোকমান আ: তাঁর ছেলেকে যে ১১টি সৎ উপদেশ দিয়েছিলেন তা হলো নিম্নরূপ-
আল্লাহর সাথে শিরক কোরো না : ‘হে আমার প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শিরক কোরো না, নিশ্চয় শিরক হলো বড় জুলুম ও মহাপাপ’ (সূরা লোকমান : ১৩)। একজন মানবশিশুকে অবশ্যই জীবনের শুরু থেকে আল্লাহর তাওহিদে বিশ্বাসী হতে হবে। কারণ, তাওহিদই হলো যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতার একমাত্র মাপকাঠি। তাই প্রথমে তিনি তার ছেলেকে আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরিক করা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছেন।
মাতাপিতার প্রতি সদাচরণ করো : ‘আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি শুকরিয়া আদায় করো। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই’ (সূরা লোকমান : ১৪)। পিতামাতা সন্তানের কাছ থেকে আনুগত্য, সদাচরণ ও খেদমত পাওয়ার অধিকারীÑ এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের দেয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
মাতাপিতা যখন সন্তানকে শিরক বা কুফরের আদেশ করেন তখন তা মানা যাবে না : ‘সে ক্ষেত্রে উপদেশ দেয়া হয়েছে দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করার।’
(সূরা লোকমান : ১৫)।
অতি ক্ষুদ্র অপরাধও করা যাবে না : লোকমান আ: তাঁর ছেলেকে অতি ুদ্র অপরাধ করতেও নিষেধ করেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয়ই পাপ-পুণ্য যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অতঃপর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানগুলোতে বা জমিনের মধ্যে; আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ’ (সূরা লোকমান : ১৬)।
সালাত কায়েম করো : ‘হে আমার প্রিয় বৎস! সালাত কায়েম করো’ (সূরা লোকমান : ১৭)। লোকমান আ: তাঁর সন্তানকে সালাতে তার ওয়াজিব ও রোকন সমূহ আদায় করতে বলেছেন।
সৎ কাজ করো ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকো : তিনি তাঁর সন্তানকে সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার পরামর্শ দেন। পবিত্র কুরআনে ভালো কাজের বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে মানুষকে নিষেধ করো’ (সূরা লোকমান : ১৭)।
বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করো : ‘যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার ওপর তুমি ধৈর্য ধারণ করো।’ অর্থাৎ বিপদে-আপদে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যখন সমস্যার সম্মুখীন হবে তখন করণীয় হলো ধৈর্য ধারণ করা এবং ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
ব্যবহারে শিষ্টাচার ও বিনয় অবলম্বন : ‘হে বৎস! মানুষের সাথে কথোপকথনের সময় শিষ্টাচার অবলম্বন করো।’ পবিত্র কুরআনে বিষয়টি উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’ (সূরা লোকমান : ১৮)।
অহঙ্কার ও গর্বভরে পদচারণ কোরো না : এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অহঙ্কার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাঁটাচলা করবে না’ (সূরা লোকমান : ৩১)।
নমনীয় হয়ে হাঁটাচলা করো : মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো’ (সূরা লোকমান : ১৯)। চলাচলে যেন কোনো প্রকার সীমা লঙ্ঘন না হয় সে দিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
নরম সুরে কথা বলো : হজরত লোকমান আ: তাঁর ছেলেকে নরম সুরে কথা বলার উপদেশ দেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার আওয়াজ নিচু করো’ (সূরা লোকমান : ১৯)। মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ এখানে কথা বলার সময় বাড়াবাড়ি না করে নরম আওয়াজে কথা বলার উপদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা, বিকট আওয়াজে কথা বলা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে একেবারেই অপছন্দীয়।
তাই চরম সঙ্কটের পথে অগ্রসরমাণ এই সমাজকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকে কঠোর আইন তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন করে অসৎ উপায়ে উপার্জিত সব সম্পদ সরকারি খাতে বাজেয়াপ্তকরণ, আর্থিক দণ্ড ও সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে এ অবস্থার নিরসন করতে হবে এবং পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূরা লোকমানে হজরত লোকমান আ:-এর উপদেশ অনুযায়ী বাল্যকাল থেকেই আমাদের সন্তানদের মধ্যে এই শিক্ষা দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সৎ, আদর্শবান ও নির্ভীক হিসেবে গড়ে তুলে অন্যায়-অত্যাচার, অনিয়ম-দুর্নীতি, ভেজাল, নেশা প্রতিরোধ করে সুখী ও সুন্দর সমাজ গঠন করে উচ্চ মর্যাদাবান গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
লেখক : প্রবন্ধকার
এ অবস্থা নিরসনে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনের সূরা লোকমানে সন্তানদের সুন্দর চরিত্র গঠনে হজরত লোকমান আ: তাঁর ছেলেকে যে ১১টি সৎ উপদেশ দিয়েছিলেন তা হলো নিম্নরূপ-
আল্লাহর সাথে শিরক কোরো না : ‘হে আমার প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শিরক কোরো না, নিশ্চয় শিরক হলো বড় জুলুম ও মহাপাপ’ (সূরা লোকমান : ১৩)। একজন মানবশিশুকে অবশ্যই জীবনের শুরু থেকে আল্লাহর তাওহিদে বিশ্বাসী হতে হবে। কারণ, তাওহিদই হলো যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতার একমাত্র মাপকাঠি। তাই প্রথমে তিনি তার ছেলেকে আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরিক করা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছেন।
মাতাপিতার প্রতি সদাচরণ করো : ‘আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি শুকরিয়া আদায় করো। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই’ (সূরা লোকমান : ১৪)। পিতামাতা সন্তানের কাছ থেকে আনুগত্য, সদাচরণ ও খেদমত পাওয়ার অধিকারীÑ এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের দেয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
মাতাপিতা যখন সন্তানকে শিরক বা কুফরের আদেশ করেন তখন তা মানা যাবে না : ‘সে ক্ষেত্রে উপদেশ দেয়া হয়েছে দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করার।’
(সূরা লোকমান : ১৫)।
অতি ক্ষুদ্র অপরাধও করা যাবে না : লোকমান আ: তাঁর ছেলেকে অতি ুদ্র অপরাধ করতেও নিষেধ করেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয়ই পাপ-পুণ্য যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অতঃপর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানগুলোতে বা জমিনের মধ্যে; আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ’ (সূরা লোকমান : ১৬)।
সালাত কায়েম করো : ‘হে আমার প্রিয় বৎস! সালাত কায়েম করো’ (সূরা লোকমান : ১৭)। লোকমান আ: তাঁর সন্তানকে সালাতে তার ওয়াজিব ও রোকন সমূহ আদায় করতে বলেছেন।
সৎ কাজ করো ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকো : তিনি তাঁর সন্তানকে সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার পরামর্শ দেন। পবিত্র কুরআনে ভালো কাজের বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে মানুষকে নিষেধ করো’ (সূরা লোকমান : ১৭)।
বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করো : ‘যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার ওপর তুমি ধৈর্য ধারণ করো।’ অর্থাৎ বিপদে-আপদে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যখন সমস্যার সম্মুখীন হবে তখন করণীয় হলো ধৈর্য ধারণ করা এবং ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
ব্যবহারে শিষ্টাচার ও বিনয় অবলম্বন : ‘হে বৎস! মানুষের সাথে কথোপকথনের সময় শিষ্টাচার অবলম্বন করো।’ পবিত্র কুরআনে বিষয়টি উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’ (সূরা লোকমান : ১৮)।
অহঙ্কার ও গর্বভরে পদচারণ কোরো না : এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অহঙ্কার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাঁটাচলা করবে না’ (সূরা লোকমান : ৩১)।
নমনীয় হয়ে হাঁটাচলা করো : মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো’ (সূরা লোকমান : ১৯)। চলাচলে যেন কোনো প্রকার সীমা লঙ্ঘন না হয় সে দিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
নরম সুরে কথা বলো : হজরত লোকমান আ: তাঁর ছেলেকে নরম সুরে কথা বলার উপদেশ দেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার আওয়াজ নিচু করো’ (সূরা লোকমান : ১৯)। মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ এখানে কথা বলার সময় বাড়াবাড়ি না করে নরম আওয়াজে কথা বলার উপদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা, বিকট আওয়াজে কথা বলা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে একেবারেই অপছন্দীয়।
তাই চরম সঙ্কটের পথে অগ্রসরমাণ এই সমাজকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকে কঠোর আইন তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন করে অসৎ উপায়ে উপার্জিত সব সম্পদ সরকারি খাতে বাজেয়াপ্তকরণ, আর্থিক দণ্ড ও সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে এ অবস্থার নিরসন করতে হবে এবং পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূরা লোকমানে হজরত লোকমান আ:-এর উপদেশ অনুযায়ী বাল্যকাল থেকেই আমাদের সন্তানদের মধ্যে এই শিক্ষা দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সৎ, আদর্শবান ও নির্ভীক হিসেবে গড়ে তুলে অন্যায়-অত্যাচার, অনিয়ম-দুর্নীতি, ভেজাল, নেশা প্রতিরোধ করে সুখী ও সুন্দর সমাজ গঠন করে উচ্চ মর্যাদাবান গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
লেখক : প্রবন্ধকার
No comments