ভর্তির সুযোগের সমতা নেই by জসিম উদ্দিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষার নিয়মে পরির্বতন আনতে চাচ্ছে। নতুন নিয়মে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্ররা একবারের বেশি অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন না। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়ার যে সুযোগ এত দিন ধরে চলছিল, তা আর থাকছে না। কর্তৃপক্ষ নিয়মটি আগামী বছর থেকে কার্যকর করতে চায়। তাহলে এবার প্রথম যারা ভর্তি পরীক্ষা দিলেন আগামীবার তাদের জন্য আর সুযোগ থাকছে না। এবার যারা প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন, তারা এমনিতেই প্রস্তুতির জন্য কম সময় পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে বিুব্ধ হয়ে তারা আন্দোলন করছেন। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণদের ৫৬ শতাংশ দ্বিতীয়বারের। বাকি ৪৪ শতাংশ প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কোনো সময় না দিয়ে এখন হুট করে দীর্ঘ দিন চলা এ পদ্ধতি বাতিল করলে নিঃসন্দেহে এ বছরের ছাত্ররা বঞ্চিত হবেন। দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রধান কারণ পছন্দমাফিক বিষয় না পাওয়া। এটি স¤পূর্ণ চাকরির বাজারকেন্দ্রিক একটি চিন্তা। বেকারত্বের অভিশাপ আমাদের ওপর যেভাবে চেপে বসে আছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার বাসনা থেকে উদ্ভূত। শিক্ষার লক্ষ্য এতটা বস্তুবাদী হওয়ার কথা না থাকলেও পরিস্থিতি বাধ্য করছে তাদের। এরা প্রায় সবাই ঢাকা কিংবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার ভর্তি হন। দ্বিতীয়বার যখন কাক্সিত বিষয় পান, তা ছেড়ে আসেন। তাদের ছেড়ে আসা আসনগুলো খালি পড়ে থাকে। যেখানে অন্য একজন শিক্ষার্থী সুযোগ পেতে পারতেন। এই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৪২১টি, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ৪১৬টি এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৪২৯টি আসন শূন্য হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নিয়ম এমন সিস্টেম লসকে প্রতিরোধ করবেন। কিন্তু যেভাবে বিনা নোটিশে সিদ্ধান্তটি চাপিয়ে দিতে চাইছে কর্তৃপক্ষ তা দয়ামায়াহীন।
কর্তৃপক্ষ এবার ভর্তি পরীক্ষা এক মাস এগিয়ে আনে। প্রস্তুতির জন্য নতুন ছাত্ররা মাত্র দুই মাস সময় পান। অন্য দিকে দ্বিতীয়বারে অংশ নেয়া ছাত্ররা বছরজুড়ে সময় পেয়েছেন। একটি ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন চলে আসছে। এ পদ্ধতি পরিবর্তন করার জন্য কয়েক বছর সময় দেয়া দরকার। ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের মানসিক প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে। এবারই যদি এ সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় অনেকে মুষড়ে পড়বেন। অন্য দিকে কমপক্ষে এক বছর সময় দেয়া হলে এবারের ছাত্ররা যেমন সুযোগটি পাবেন অন্য দিকে নতুন যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসবেন তারা মাথায় রাখবেন, এরপর আর সুযোগ থাকবে না। সুতরাং প্রস্তুতিটাও তারা সেভাবে রাখনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের তুলনায় এর আসন সংখ্যা সীমিত। একটি আসনের বিপরীতে ৫০ জন ছাত্র প্রতিযোগিতা করেন। এ ধরনের আসন স্বল্পতার মধ্যে গড়ে চার শ’র বেশি আসন মাস্টার্স পর্যন্ত শূন্য থাকা বিরাট অপচয়। এই আসনগুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নতুন বছরের আসনের ওপর পুরনো বছরের ভর্তি-ইচ্ছুকেরা ভাগ বসাচ্ছেন। নতুন ও পুরনোদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা হয়। যেমন এবার যারা পাস করে ভর্তি পরীায় বসেছেন, তারা সময় পেয়েছেন দুই মাসেরও কম; কিন্তু আগের বছরের শিক্ষার্থীরা, তারা প্রস্তুতির জন্য পেয়েছেন এক বছরের বেশি সময়। ভর্তি পরীায় জালিয়াতির জন্য দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় আসা ছাত্ররা প্রধানত দায়ী। মোবাইল ফোনে প্রশ্ন বলে দেয়া, হলে নকল করা। এ ছাডা এক শ্রেণীতে সিনিয়রের সাথে জুনিয়রদের কাস করার েেত্রও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাও দেখা দেয়। এসব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছর থেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীায় অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে না। একবার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তবে তিনি ক্ষুব্ধ শিার্থীদের একটি দাবির পক্ষে মত দিয়েছেন। তা হলো সিদ্ধান্তটা যেন আগামীবারের পর অর্থাৎ ২০১৬ থেকে কার্যকর করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্ররা খুবই খারাপ ফলাফল করেছেন। ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কেবল দু’জন উপযুক্ত ছাত্র পাওয়া গেছে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশের বেশি ছাত্র ফেল করেছে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, শিক্ষার মান ঠিক আছে। তিনি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন জিপিএ ৫ বাড়ার অর্থ শিক্ষার মান বেড়েছে এমন বোঝায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির জন্য একটি সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতির প্রস্তাব করা হচ্ছে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এর সাথে সুর মিলিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল অভিযোগ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা শিক্ষামন্ত্রীকে মানছেন না। সে জন্য তিনি সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশ দিলে তা না মানার সাহস পাবেন না ভিসিরা। তার এ ধরনের বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ হয়ে অনেকটা হুমকির মতো মনে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে, তা ভণ্ডুুল করার আহ্বান জানাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। অনেক শিক্ষক তার এ বক্তব্যে আহত হয়েছেন। কারণ সর্বাত্মাক কর্তৃত্ববাদী শাসনের এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও যদি তাদের স্বাধীনতা হারায় আর কিছুই বাকি থাকবে না।
শিক্ষার মানের যে অবনতি হয়েছে সে ব্যাপারে স্বীকার করতে না চাইলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম থেকে এটা প্রমাণ হচ্ছে, এরা ব্যাপারটি নিয়ে শঙ্কিত। এত দিন নানা পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলেও এরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে থেকেছে নির্বিকার। এখন ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এইচএসসি পরীার ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রস্তুত করেছে শিা মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের এইচএসসি পরীায় যেখানে মোট শিার্থীর ৯.৯৭ শতাংশ জিপিএ ৫ পেযেেছ, ২০১৩ সালে পেয়েছে ৭.০৩ শতাংশ। আর ২০০৬ সালে ২.৯৪ শতাংশ এবং ২০০৭ সালে তা ছিল ৩.০৬ শতাংশ। প্রত্যেক বছর জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ও পাসের হার বাড়ছে। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কাছে তথ্য চাওয়া হবে, সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক পরীায় উত্তীর্ণ শিার্থীরা কেমন ফলাফল করছে। এসএসসি ও এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ’র শতকরা হার বাড়ার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কতজন শিার্থী বিভিন্ন বর্ষে প্রথম শ্রেণী পাচ্ছে তা তুলনা করা হবে। এ বোধোদয়কে সাধুবাদ জানাতে হয়। এ সূত্র ধরে শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় যদি তাদের ভুল শোধরাতে অগ্রসর হয় তাতেই জাতির কল্যাণ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত ভর্তিপদ্ধতি ছাত্রদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে। ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে সমন্বয় না থাকার কারণে ছাত্র ও অভিভাবকেরা বিপদে পড়েন। আবার একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগওয়ারি ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন রয়েছে। বাড়তি ফি আদায়ের জন্য এ ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ ধরনের জটিলতা নিরসনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মেডিক্যালের মতো গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি-প্রক্রিয়ার পে মত দিয়েছেন। সারা দেশের পরীার্থী যদি এক দিনে পরীা দেন এবং মেধাক্রম অনুসারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে একজনকে সাত-আট জায়গায় পরীার দুর্ভোগে পড়তে হয় না, নকলের সুযোগও কমে। হতে পারে যে একেকটি অনুষদের জন্য একেক গুচ্ছপরীা। সে েেত্র শিার্থীদেরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পছন্দের জন্য ছাত্ররা একটি পছন্দের ক্রম দেবেন। মেধা স্কোরের ভিত্তিতে তার ফয়সালা করা হবে।
এ ধরনের হলে সর্বোচ্চ মেধাবীরা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ নিতে পারবেন। একইভাবে যারা চাইবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে বাড়ির কাছে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন তারও সহজ সুযোগ ঘটবে। প্রায় একই সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র ও অভিভাবকদের হয়রানির অবসান হতে পারে। দেশে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মান উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। সব বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমবে। ফলে যশোর, কুমিল্লা, পটুয়াখালীর ছাত্ররা সেখানে পড়তে চাইবেন। ভালো শিকেরা যাতে ঢাকার বাইরে থাকতে রাজি হন, সে জন্য তাদের বিশেষ বোনাস ও অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিকদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকের পর পরই যদি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাহলে কোচিংয়ের দৌরাত্ম্য থাকে না। কোচিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়মকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। একজন ডাক্তার নিজের পেশায় না গিয়ে অধিক আয়ের জন্য কোচিং ব্যবসায়কে বেছে নিচ্ছেন। একইভাবে প্রকৌশলীদের অনেককে এ কাজে জড়িত হতে দেখা যাচ্ছে। অথচ সরকার তাদের পেছনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে অর্জিত শিক্ষা নির্দিষ্ট পেশায় ব্যবহারের জন্য।
সরকার নাগরিকদের নির্বিশেষে ভর্তির সমান সুযোগ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসাছাত্রদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন এটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও প্রধান ১৩টি বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না। কারণ তিনি মাদরাসা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য শর্ত যোগ করা হয়েছে। ইংরেজিতে পেতে হবে ২০ এবং ঐচ্ছিক ইংরেজিতে পেতে হবে ১৫। মাদরাসাছাত্রের বাইরে এ শর্ত পূরণ করতে পেরেছেন মাত্র দু’জন ছাত্র। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আবদুর রহমান ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৬৮ দশমিক ৯৮ পেয়েছেন। ১৩ বিষয়ে প্রথমেই অযোগ্য হয়ে যাওয়া এই ছাত্র ইংরেজিতে পেয়েছেন ২৮ দশমিক ৫০। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ২০০ নম্বরের ইংরেজি না পড়ায় তিনি এ বিভাগে ভর্তি হতে পারছেন না। ১০০ নম্বরের ইংরেজি পড়েও তিনি যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি শিখতে পেরেছেন, তা মূল্যায়ন করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছাত্রদের যোগ্যতার বিচারের প্রতিবন্ধক। যদিও তা আরোপ করা হয়েছে অধিকতর যোগ্যদের বেছে নেয়ার নামে।
মাদরাসাছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় সব শর্ত পূরণ করেও পছন্দনীয় বিভাগ পাচ্ছেন না। অন্য দিকে যোগ্য ছাত্রদের না পেয়ে শর্ত শিথিল করে অনেক বিভাগে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি করাতে হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে মাদরাসাছাত্রদের ভর্তির ফলাফল ‘অন্যান্য’ নামে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘অন্যান্য’ নামে শ্রেণীকরণ করে মাদরাসাছাত্রদের জন্য একটি কোটা করে দেয়া হচ্ছে। ইতিহাস বিভাগে প্রথম হয়েছেন মাদরাসাছাত্র। এ বিভাগে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র দু’টি আসন। এর ফলে অন্য ছাত্ররা তাদের চেয়ে অনেক কম নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থেকেও তারা বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। পিছিয়ে পড়াদের জন্য সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা রয়েছে। এ কোটা আরো ব্যাপকভাবে রয়েছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে। এখন এ কোটা পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে একটি বিশেষ শ্রেণীকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য। এ ধরনের উল্টো কোটার ব্যবহার পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমেই অনেক বিভাগে মাদরাসাছাত্রদের ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিশ্বাবিদ্যালয় তা-ই অনুসরণ করতে চাইছে নানাভাবে শর্ত আরোপ করে। আমাদের সংবিধানের ১৯ ধারায় নাগরিকদের মধ্যে সুযোগের সমতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। সরকার এ অধিকারের রক্ষক হবে। মাদরাসাছাত্রদের সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ নিয়েও কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুসংখ্যক শিক্ষকের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমনটি হচ্ছে। এরা ধর্মের বিরোধিতা করতে গিয়ে নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার হরণ করে চলেছেন। স্বায়ত্তশাসনের আড়াল নিয়ে অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষক চোরাগোপ্তা কায়দায় এ বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে লুকিয়ে থেকে একদল ছাত্রকে বঞ্চিত না করে এসব সম্মানিত শিক্ষকের মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ্যে ব্যক্ত করা উচিত। এখন মাদরাসা বোর্ডও ২০০ নম্বরের ইংরেজি ও ২০০ নম্বরের বাংলা পড়ানোর ব্যবস্থা করছে। এই ছাত্ররা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসবেন তখন এসব শিক্ষক আবার কোনো নতুন শর্ত জুড়ে দেয় কি না সেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
jjshim146@yahoo.com
কর্তৃপক্ষ এবার ভর্তি পরীক্ষা এক মাস এগিয়ে আনে। প্রস্তুতির জন্য নতুন ছাত্ররা মাত্র দুই মাস সময় পান। অন্য দিকে দ্বিতীয়বারে অংশ নেয়া ছাত্ররা বছরজুড়ে সময় পেয়েছেন। একটি ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন চলে আসছে। এ পদ্ধতি পরিবর্তন করার জন্য কয়েক বছর সময় দেয়া দরকার। ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের মানসিক প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে। এবারই যদি এ সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় অনেকে মুষড়ে পড়বেন। অন্য দিকে কমপক্ষে এক বছর সময় দেয়া হলে এবারের ছাত্ররা যেমন সুযোগটি পাবেন অন্য দিকে নতুন যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসবেন তারা মাথায় রাখবেন, এরপর আর সুযোগ থাকবে না। সুতরাং প্রস্তুতিটাও তারা সেভাবে রাখনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের তুলনায় এর আসন সংখ্যা সীমিত। একটি আসনের বিপরীতে ৫০ জন ছাত্র প্রতিযোগিতা করেন। এ ধরনের আসন স্বল্পতার মধ্যে গড়ে চার শ’র বেশি আসন মাস্টার্স পর্যন্ত শূন্য থাকা বিরাট অপচয়। এই আসনগুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নতুন বছরের আসনের ওপর পুরনো বছরের ভর্তি-ইচ্ছুকেরা ভাগ বসাচ্ছেন। নতুন ও পুরনোদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা হয়। যেমন এবার যারা পাস করে ভর্তি পরীায় বসেছেন, তারা সময় পেয়েছেন দুই মাসেরও কম; কিন্তু আগের বছরের শিক্ষার্থীরা, তারা প্রস্তুতির জন্য পেয়েছেন এক বছরের বেশি সময়। ভর্তি পরীায় জালিয়াতির জন্য দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় আসা ছাত্ররা প্রধানত দায়ী। মোবাইল ফোনে প্রশ্ন বলে দেয়া, হলে নকল করা। এ ছাডা এক শ্রেণীতে সিনিয়রের সাথে জুনিয়রদের কাস করার েেত্রও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাও দেখা দেয়। এসব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছর থেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীায় অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে না। একবার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পক্ষে এসব যুক্তি দিয়েছেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তবে তিনি ক্ষুব্ধ শিার্থীদের একটি দাবির পক্ষে মত দিয়েছেন। তা হলো সিদ্ধান্তটা যেন আগামীবারের পর অর্থাৎ ২০১৬ থেকে কার্যকর করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্ররা খুবই খারাপ ফলাফল করেছেন। ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কেবল দু’জন উপযুক্ত ছাত্র পাওয়া গেছে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশের বেশি ছাত্র ফেল করেছে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, শিক্ষার মান ঠিক আছে। তিনি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন জিপিএ ৫ বাড়ার অর্থ শিক্ষার মান বেড়েছে এমন বোঝায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির জন্য একটি সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতির প্রস্তাব করা হচ্ছে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এর সাথে সুর মিলিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল অভিযোগ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা শিক্ষামন্ত্রীকে মানছেন না। সে জন্য তিনি সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশ দিলে তা না মানার সাহস পাবেন না ভিসিরা। তার এ ধরনের বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ হয়ে অনেকটা হুমকির মতো মনে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে, তা ভণ্ডুুল করার আহ্বান জানাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। অনেক শিক্ষক তার এ বক্তব্যে আহত হয়েছেন। কারণ সর্বাত্মাক কর্তৃত্ববাদী শাসনের এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও যদি তাদের স্বাধীনতা হারায় আর কিছুই বাকি থাকবে না।
শিক্ষার মানের যে অবনতি হয়েছে সে ব্যাপারে স্বীকার করতে না চাইলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম থেকে এটা প্রমাণ হচ্ছে, এরা ব্যাপারটি নিয়ে শঙ্কিত। এত দিন নানা পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলেও এরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে থেকেছে নির্বিকার। এখন ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এইচএসসি পরীার ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রস্তুত করেছে শিা মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের এইচএসসি পরীায় যেখানে মোট শিার্থীর ৯.৯৭ শতাংশ জিপিএ ৫ পেযেেছ, ২০১৩ সালে পেয়েছে ৭.০৩ শতাংশ। আর ২০০৬ সালে ২.৯৪ শতাংশ এবং ২০০৭ সালে তা ছিল ৩.০৬ শতাংশ। প্রত্যেক বছর জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ও পাসের হার বাড়ছে। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কাছে তথ্য চাওয়া হবে, সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক পরীায় উত্তীর্ণ শিার্থীরা কেমন ফলাফল করছে। এসএসসি ও এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ’র শতকরা হার বাড়ার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কতজন শিার্থী বিভিন্ন বর্ষে প্রথম শ্রেণী পাচ্ছে তা তুলনা করা হবে। এ বোধোদয়কে সাধুবাদ জানাতে হয়। এ সূত্র ধরে শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় যদি তাদের ভুল শোধরাতে অগ্রসর হয় তাতেই জাতির কল্যাণ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত ভর্তিপদ্ধতি ছাত্রদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে। ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে সমন্বয় না থাকার কারণে ছাত্র ও অভিভাবকেরা বিপদে পড়েন। আবার একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগওয়ারি ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন রয়েছে। বাড়তি ফি আদায়ের জন্য এ ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ ধরনের জটিলতা নিরসনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মেডিক্যালের মতো গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি-প্রক্রিয়ার পে মত দিয়েছেন। সারা দেশের পরীার্থী যদি এক দিনে পরীা দেন এবং মেধাক্রম অনুসারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে একজনকে সাত-আট জায়গায় পরীার দুর্ভোগে পড়তে হয় না, নকলের সুযোগও কমে। হতে পারে যে একেকটি অনুষদের জন্য একেক গুচ্ছপরীা। সে েেত্র শিার্থীদেরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পছন্দের জন্য ছাত্ররা একটি পছন্দের ক্রম দেবেন। মেধা স্কোরের ভিত্তিতে তার ফয়সালা করা হবে।
এ ধরনের হলে সর্বোচ্চ মেধাবীরা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ নিতে পারবেন। একইভাবে যারা চাইবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে বাড়ির কাছে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন তারও সহজ সুযোগ ঘটবে। প্রায় একই সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র ও অভিভাবকদের হয়রানির অবসান হতে পারে। দেশে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মান উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। সব বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমবে। ফলে যশোর, কুমিল্লা, পটুয়াখালীর ছাত্ররা সেখানে পড়তে চাইবেন। ভালো শিকেরা যাতে ঢাকার বাইরে থাকতে রাজি হন, সে জন্য তাদের বিশেষ বোনাস ও অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিকদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকের পর পরই যদি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাহলে কোচিংয়ের দৌরাত্ম্য থাকে না। কোচিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়মকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। একজন ডাক্তার নিজের পেশায় না গিয়ে অধিক আয়ের জন্য কোচিং ব্যবসায়কে বেছে নিচ্ছেন। একইভাবে প্রকৌশলীদের অনেককে এ কাজে জড়িত হতে দেখা যাচ্ছে। অথচ সরকার তাদের পেছনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে অর্জিত শিক্ষা নির্দিষ্ট পেশায় ব্যবহারের জন্য।
সরকার নাগরিকদের নির্বিশেষে ভর্তির সমান সুযোগ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসাছাত্রদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন এটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও প্রধান ১৩টি বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না। কারণ তিনি মাদরাসা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য শর্ত যোগ করা হয়েছে। ইংরেজিতে পেতে হবে ২০ এবং ঐচ্ছিক ইংরেজিতে পেতে হবে ১৫। মাদরাসাছাত্রের বাইরে এ শর্ত পূরণ করতে পেরেছেন মাত্র দু’জন ছাত্র। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আবদুর রহমান ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৬৮ দশমিক ৯৮ পেয়েছেন। ১৩ বিষয়ে প্রথমেই অযোগ্য হয়ে যাওয়া এই ছাত্র ইংরেজিতে পেয়েছেন ২৮ দশমিক ৫০। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ২০০ নম্বরের ইংরেজি না পড়ায় তিনি এ বিভাগে ভর্তি হতে পারছেন না। ১০০ নম্বরের ইংরেজি পড়েও তিনি যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি শিখতে পেরেছেন, তা মূল্যায়ন করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছাত্রদের যোগ্যতার বিচারের প্রতিবন্ধক। যদিও তা আরোপ করা হয়েছে অধিকতর যোগ্যদের বেছে নেয়ার নামে।
মাদরাসাছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় সব শর্ত পূরণ করেও পছন্দনীয় বিভাগ পাচ্ছেন না। অন্য দিকে যোগ্য ছাত্রদের না পেয়ে শর্ত শিথিল করে অনেক বিভাগে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি করাতে হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে মাদরাসাছাত্রদের ভর্তির ফলাফল ‘অন্যান্য’ নামে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘অন্যান্য’ নামে শ্রেণীকরণ করে মাদরাসাছাত্রদের জন্য একটি কোটা করে দেয়া হচ্ছে। ইতিহাস বিভাগে প্রথম হয়েছেন মাদরাসাছাত্র। এ বিভাগে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র দু’টি আসন। এর ফলে অন্য ছাত্ররা তাদের চেয়ে অনেক কম নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থেকেও তারা বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। পিছিয়ে পড়াদের জন্য সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা রয়েছে। এ কোটা আরো ব্যাপকভাবে রয়েছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে। এখন এ কোটা পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে একটি বিশেষ শ্রেণীকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য। এ ধরনের উল্টো কোটার ব্যবহার পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমেই অনেক বিভাগে মাদরাসাছাত্রদের ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিশ্বাবিদ্যালয় তা-ই অনুসরণ করতে চাইছে নানাভাবে শর্ত আরোপ করে। আমাদের সংবিধানের ১৯ ধারায় নাগরিকদের মধ্যে সুযোগের সমতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। সরকার এ অধিকারের রক্ষক হবে। মাদরাসাছাত্রদের সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ নিয়েও কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুসংখ্যক শিক্ষকের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমনটি হচ্ছে। এরা ধর্মের বিরোধিতা করতে গিয়ে নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার হরণ করে চলেছেন। স্বায়ত্তশাসনের আড়াল নিয়ে অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষক চোরাগোপ্তা কায়দায় এ বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে লুকিয়ে থেকে একদল ছাত্রকে বঞ্চিত না করে এসব সম্মানিত শিক্ষকের মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ্যে ব্যক্ত করা উচিত। এখন মাদরাসা বোর্ডও ২০০ নম্বরের ইংরেজি ও ২০০ নম্বরের বাংলা পড়ানোর ব্যবস্থা করছে। এই ছাত্ররা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসবেন তখন এসব শিক্ষক আবার কোনো নতুন শর্ত জুড়ে দেয় কি না সেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
jjshim146@yahoo.com
No comments