বাইরের বিপদ: ভেতরের বিপদ by ড. মাহফুজ পারভেজ
রাজনৈতিক হৈচৈ আর হট্টগোল দেশের মধ্যে এমনই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, বাইরের অনেক কিছু সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের বিরাট মচ্ছব এখন। একের পর এক ইস্যুতে বাংলাদেশের মানুষ উত্তেজিত ও রোমাঞ্চিত হয়ে থাকলে কারও কারও সুবিধা হয় বৈকি! সে সুবিধা নিতে কসুরও করে না সংশ্লিষ্টরা। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, ভারত আরও ১৬টি ব্যারেজ ফারাক্কার উজানে নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশ নিজেকে নিয়ে উত্তেজিত ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকলে ভেতরের বিপদেই কাবু থাকবে; বাইরের বিপদ দেখা বা সামলানো তখন কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের এখন তেমনই অবস্থা। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে পানি সন্ত্রাস বা পানি আগ্রাসনের মতো বিষয়টিও বাংলাদেশের ওপর আরও কঠিনভাবে আরোপের চেষ্টা চলছে।
এমনিতেই বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে উজানের দেশ ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। টিপাইমুখের ইস্যু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বিপদের কারণ হয়েছে। তিস্তার পানি না পাওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লি-কলকাতা নাটকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এখন আবার ফারাক্কার উজানে ১৬টি ব্যারেজ নির্মাণ করা হলে পানিশূন্য হয়ে মরুপ্রক্রিয়ার শিকার হতে বিশেষ বিলম্ব হবে না বাংলাদেশের! পানি আগ্রাসন বা সন্ত্রাসের খবরটি পাওয়া গেল এমনই সময়ে যখন শুষ্ক মওসুম আসন্ন। পানির তখনই বিশেষ দরকার। শীতে বাংলাদেশে বৃষ্টি হয় না। নদীতে পানি থাকে না। অথচ সে সময় রবিশস্য ও শাক-সবজি চাষের জন্য পানির বিশেষ প্রয়োজন। বাংলাদেশের কৃষি অর্থনৈতিক কাঠামোতে রবিশস্য বা শীতকালীন শাক-সবজির অবদান অপরিসীম। ব্যক্তিগতভাবে কৃষকদের লাভবান করা ছাড়াও দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান ক্ষেত্র হলো এই শীতকালীন চাষাবাদজাত উৎপাদন। এখন পানির অভাবে এই চাষ মার খেলে বাংলাদেশের কৃষক মার খাবে। কৃষি মার খাবে। অর্থনীতি মার খাবে। মার বাংলাদেশের মানুষ নানা দিক থেকেই খাচ্ছে। বিদেশের শ্রম বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রতিক্রিয়ায়। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কা বিদ্যমান। সৌদি আরব ইতিমধ্যেই বাইরের শ্রমিকদের ব্যাপারে কঠিন নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও পত্রিকায় যে সব রিপোর্ট ছাপা হয়, সেগুলো আশাজনক নয়। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের কোন খবর চোখে পড়ে না। বরং মালয়েশিয়ার জঙ্গলে বিপদের সম্মুখীন বাংলাদেশী শ্রমিকদের নানা কষ্টের বিবরণই শোনা যাচ্ছে।
এই যে বাইরের নানা বিপদ, তার জন্য দেশের ভেতরে আমরা কি করতে পারছি বা করছি? করতে তো পারছিই না, বরং ভেতরের নানা বিপদ আগলে বসে আছি। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বচন যেমন আছে, তেমনি আছে ড. পিয়াস করিমের মরদেহ। আছে আরও নানা ইস্যু। বিভিন্ন ইস্যুতে লড়াই ও তর্ক-বিতর্কে মশগুল থাকলে ভারত পানি দিলো কিনা, কৃষি ও কৃষক বাঁচলো কিনা, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার রইলো কিনা, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক জেলে বা গুলিতে প্রাণ হারালো কিনা, সে প্রশ্ন আর কে করবে! অতীতে আমরা জাতীয় স্বার্থে সোচ্চার হয়েছি। সুদূর ভিয়েতনামের ঘটনায় এখানে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের গুলিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে মানুষ প্রাণ উৎসর্গ করেছে। এখন আমরা নিজেরাই মরছি নিজেদের হাতে, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কলহে। আর ফেলানী বা অন্যরা সীমান্তে গুলি বা বিদেশের কারাগারের ভেতরে মরলেও ভ্রূক্ষেপ করছি না। তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ছি না। নিজের সঙ্গে নিজেরাই লড়ে লড়ে শক্তি নাশ করলে বাইরের বিপদের সঙ্গে পারা কতটুকু সম্ভব হবে! বিপদ বিপদই। বাইরের হোক আর ভেতরের। বিপদকে মোকাবিলা না করলে সেটা ক্যান্সার হবে। ভেতরে হলেও হবে। বাইরের হলেও হবে। অতএব বিপদ আর না বাড়িয়ে বরং কমানোর ব্যবস্থা করাই বুদ্ধিমানের কাজ এবং মানুষের জন্য সুখ আর নিরাপত্তার পূর্বশর্তও এটাই।
এমনিতেই বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে উজানের দেশ ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। টিপাইমুখের ইস্যু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বিপদের কারণ হয়েছে। তিস্তার পানি না পাওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লি-কলকাতা নাটকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এখন আবার ফারাক্কার উজানে ১৬টি ব্যারেজ নির্মাণ করা হলে পানিশূন্য হয়ে মরুপ্রক্রিয়ার শিকার হতে বিশেষ বিলম্ব হবে না বাংলাদেশের! পানি আগ্রাসন বা সন্ত্রাসের খবরটি পাওয়া গেল এমনই সময়ে যখন শুষ্ক মওসুম আসন্ন। পানির তখনই বিশেষ দরকার। শীতে বাংলাদেশে বৃষ্টি হয় না। নদীতে পানি থাকে না। অথচ সে সময় রবিশস্য ও শাক-সবজি চাষের জন্য পানির বিশেষ প্রয়োজন। বাংলাদেশের কৃষি অর্থনৈতিক কাঠামোতে রবিশস্য বা শীতকালীন শাক-সবজির অবদান অপরিসীম। ব্যক্তিগতভাবে কৃষকদের লাভবান করা ছাড়াও দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান ক্ষেত্র হলো এই শীতকালীন চাষাবাদজাত উৎপাদন। এখন পানির অভাবে এই চাষ মার খেলে বাংলাদেশের কৃষক মার খাবে। কৃষি মার খাবে। অর্থনীতি মার খাবে। মার বাংলাদেশের মানুষ নানা দিক থেকেই খাচ্ছে। বিদেশের শ্রম বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রতিক্রিয়ায়। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কা বিদ্যমান। সৌদি আরব ইতিমধ্যেই বাইরের শ্রমিকদের ব্যাপারে কঠিন নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও পত্রিকায় যে সব রিপোর্ট ছাপা হয়, সেগুলো আশাজনক নয়। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের কোন খবর চোখে পড়ে না। বরং মালয়েশিয়ার জঙ্গলে বিপদের সম্মুখীন বাংলাদেশী শ্রমিকদের নানা কষ্টের বিবরণই শোনা যাচ্ছে।
এই যে বাইরের নানা বিপদ, তার জন্য দেশের ভেতরে আমরা কি করতে পারছি বা করছি? করতে তো পারছিই না, বরং ভেতরের নানা বিপদ আগলে বসে আছি। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বচন যেমন আছে, তেমনি আছে ড. পিয়াস করিমের মরদেহ। আছে আরও নানা ইস্যু। বিভিন্ন ইস্যুতে লড়াই ও তর্ক-বিতর্কে মশগুল থাকলে ভারত পানি দিলো কিনা, কৃষি ও কৃষক বাঁচলো কিনা, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার রইলো কিনা, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক জেলে বা গুলিতে প্রাণ হারালো কিনা, সে প্রশ্ন আর কে করবে! অতীতে আমরা জাতীয় স্বার্থে সোচ্চার হয়েছি। সুদূর ভিয়েতনামের ঘটনায় এখানে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের গুলিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে মানুষ প্রাণ উৎসর্গ করেছে। এখন আমরা নিজেরাই মরছি নিজেদের হাতে, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কলহে। আর ফেলানী বা অন্যরা সীমান্তে গুলি বা বিদেশের কারাগারের ভেতরে মরলেও ভ্রূক্ষেপ করছি না। তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ছি না। নিজের সঙ্গে নিজেরাই লড়ে লড়ে শক্তি নাশ করলে বাইরের বিপদের সঙ্গে পারা কতটুকু সম্ভব হবে! বিপদ বিপদই। বাইরের হোক আর ভেতরের। বিপদকে মোকাবিলা না করলে সেটা ক্যান্সার হবে। ভেতরে হলেও হবে। বাইরের হলেও হবে। অতএব বিপদ আর না বাড়িয়ে বরং কমানোর ব্যবস্থা করাই বুদ্ধিমানের কাজ এবং মানুষের জন্য সুখ আর নিরাপত্তার পূর্বশর্তও এটাই।
No comments