নিজে বেঁচে বাবাকেও বাঁচাল জেমস
লাইবেরিয়ার আলেকজান্ডার কোলি চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান মেদসঁ সঁ ফ্রতিয়েখের (এমএসএফ) স্বাস্থ্যকর্মী। ইবোলার ছোবলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে তাঁর জীবন। ভয়াবহ এ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে কোলির স্ত্রী, ভাই আর দুই মেয়েকে। আক্রান্ত হয়েছিল ১৮ বছর বয়সী ছেলে জেমস কোলিও। তবে এমএসএফের পরিচর্যায় বেঁচে গেছে তাঁর সেই অন্ধের যষ্টি। তরুণ জেমস কোলি এমএসএফের পরিচর্যায় ইবোলামুক্ত হওয়া হাজারতম রোগী। তিনি বেশ আগে থেকেই পেশাগত কারণে থাকতেন লাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ফয়াতে। তাঁর পরিবার থাকত রাজধানী মনরোভিয়ায়। আলেকজান্ডারের মুখেই শোনা যাক তাঁর স্বজন হারানো ও একমাত্র ছেলের বেঁচে যাওয়ার কাহিনি: ‘২১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে আমি কখনোই ভুলব না। আমি ইবোলার ভয়াবহতা নিয়ে গ্রামে গিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছিলাম। ওই দিন আমার স্ত্রীর নম্বর থেকে ফোন এল।
তবে ফোনে কেবলই নীরবতা। ওপাশ থেকে কেউ কথা বলছিল না। আমি স্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম সবাইকে নিয়ে আমার কাছে চলে আসতে। ও কিছুতেই এসব বিশ্বাস করত না। সেদিন আরও রাতে আবার ফোন পেলাম বাড়ি থেকে। আমার ভাই বলল, তোমার স্ত্রী মারা গেছে। আমি ফোন বন্ধ করে ছুড়ে ফেললাম। ২৩ বছরের যুগলজীবন ছিল আমাদের। সপ্তাহের শেষ দিকে মনরোভিয়া থেকে আবার ফোন এল। জানলাম ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে আমার ভাই মারা গেছে। একে একে চলে গেল আমার দুই ছোট মেয়েও। বেঁচে ছিল একমাত্র ছেলে জেমস। আমি ওকে ফোয়ায় চলে আসতে বললাম। ও এল। পরদিন জেমসকে খুব ক্লান্ত লাগছিল। সন্দেহবশত ওকে এমএসএফের ইবোলা পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে গেলাম। ভাইরাস ধরা পড়ল। সারাটি রাত শুধু কাঁদলাম। কেবলই ভাবছিলাম, ও চলে গেলে আমি কী করে বাঁচব। পরদিন দূর থেকে ছেলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো। জেমস বলল, ‘কেঁদো না বাবা। আমি বেঁচে থাকবই।’ এরপর ইবোলায় বেশ কয়েকটি মৃত্যু দেখলাম। সব সময় মনে হতো, কবে শুনব জেমসও মারা গেছে। তবে এক দিন ও সেরে উঠল। আনন্দে জড়িয়ে ধরলাম ছেলেকে। ওকে বলি, ‘এখন আমি তোমার বাবা, আমিই মা।’” সূত্র: বিবিসি।
No comments