মাদকের স্বর্গরাজ্য সাভার by হাফিজ উদ্দিন
সাভার উপজেলায় প্রায় ২০ লাখের অধিক লোকের বসবাস। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলছে এ এলাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে অপরাধী চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে বহু গুণ। আর দিন দিন সাভার পরিণত হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে মাঝেমধ্যে তৎপর থাকলেও কতিপয় পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীর সখ্যের কারণে মূল গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে মাদক বন্ধের জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বিভিন্ন সভা করলেও ভেস্তে যাচ্ছে সব পরিকল্পনা। সভাস্থল থেকে ফিরেই জড়িয়ে পড়ছে মাদক বিক্রিতে- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সাভার মডেল থানার ওসি মোস্তফা কামাল দাবি করেন, সাভারে কোথাও মাদক নেই, এমনকি মাদক স্পট পর্যন্ত নেই। তবে বক্তারপুরে বেদেপল্লীতে কিছু মাদক বেচাকেনা হয় বলে ওসি স্বীকার করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারের দুই শতাধিক মদকের স্পর্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইমান্দিপুর, মজিদপুর, ব্যাংক কলোনি, রাজাশন, বিরুলিয়া, আমিনবাজার, সাধাপুর, বক্তারপুর, নিরিবিলি, জোরপুল, আনন্দপুর, কর্ণপাড়া, নামাগেন্ডা, ব্যাংক টাউন, নামাবাজার, আশুলিয়া, আকরাইন, গেরুয়া, মনসুরনগর, চাঁপাইন, শিমুলিয়া, কলমা, রাজফুলবাড়িয়া, শ্যামপুর, সামাইর, বেদেপল্লী, বেগুনবাড়ী, জিরাব, ধরেন্ডা, বলিয়ারপুর, নয়ারহাট, গাজিরচট, বুড়িবাজার, সাভার কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি মাদকের স্পর্ট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বাজার রোডের একটি ধানের চাতালে ও নামাবাজার ফেন্সি সুপার মার্কেটের ভেতরে মাদকের স্পট রয়েছে। এসব স্পটে পাইকারি ও খুচড়া মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইন, ফেনসিডিল বেশি বিক্রি হচ্ছে। ‘ইয়াবা’ ট্যাবলেট সাভারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে এমনও গুজন রয়েছে সবার মুখে মুখে। তবে ইয়াবা ট্যাবলেটেরও রয়েছে বিভিন্ন কোড নম্বর। নম্বর ভেদে ট্যাবলেটের দাম বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী হচ্ছে ডব্লিউআর ৪ শ’ টাকা, এক্স ওয়াই ৩৫০ টাকা, চম্পা ৩৫০ টাকা, ডব্লিউআই ৩৫০ টাকা, আর ৪৫০ টাকা। এসব স্পটে আবার হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেটের পাশাপাশি গাঁজা ও বাংলা মদের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক হারে। আবার কিছু কিছু এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব কায়দায় শার্টের কলার ও হাতলের ভাঁজে, মানিব্যাগে, জুতার ভেতরে, দিয়াশলাই ও সিগারেটেরে প্যাকেটের ভেতরে রেখে খুচরা ইয়াবা ট্যাবলেট ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে। সাভারে শুধু মাদকেই শেষ নয়। এ মাদকের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে অপরাধীর অভয়ারন্য। আমিনবাজার একটি মার্কেটের বেইজমেন্টে দীর্ঘদিন ধরে বিাভন্ন মাদকদ্রব্য বেচাবিক্রি হচ্ছে বলে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসায়ী সোসাইটি এলাকার সিদ্দিক, স্বত্তা, আব্বাস, মেজর, নিত্যানন্দ, হারুন, স্বপন, রাজু ও ভান্ডারি। এর মধ্যেই এসব এলাকায় পুলিশ ও র্যাব একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কয়েক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের আগের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সাভার পৌর এললাকার মজিদপুর ও ছোটবলিমেহের মহল্লায় র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত মাদক সম্রাট মুন্নার স্ত্রী শিল্পী আক্তার, খলিল, ফিরোজ, ইদ্রিস, মুক্তি, কহি, সোহেল ও আনোয়ার। ডগরমোড়া এলাকায় জুয়েল। দিলখুশাবাগে তুষার ও মাছ বিক্রেতা সুজিত। মিটন গ্রামের নূর আলম, দারোগ আলী, ব্যাংকলোনীর ফরহাদ, কাতলাপুর মহল্লায় স্বপন, মোহাম্মদ আলী, আনন্দপুরের ফজলু, নামাগেন্ডায় রিপন ও ভাগলপুরের শিপন। চাঁপাইন এলাকায় রকি, রাসেল ও পিয়ার আলী। সিআরপি রোডে জুয়েল। বনপুকুর এলাকায় জুম্মত, পাগলা, নাহিদ ও কামরুল। নিমেরটেক এলাকায় মোতালেব, ইমান আলী, বিপ্লব ও মোখলেছ। জোরপুল এলাকায় হাসান, ইয়াদ আলী, ইজু ও হাফেজ। চাকুলিয়ার তানজিল, বনগ্রামের রশিদ ও সাদাপুরের চুন্নু। আমিনবাজার এলাকায় সোহেল ও কালাচাঁন। সলমাসির ইয়ার আলী ও ঝাউচরের বারেক। ভাটপাড়া এলাকার সিদ্দিক, আব্বাস ও মিজান। বেদেপল্লীর মেজর, বিবি, খোকন, শাহীন, এরশাদ, আফসার, সোহেল, সোহান ও সৌকত। জামসিং এলাকার সাইফুল, বিল্লাল, গোপাল, রিপন ও নান্নু। রেডিও কলোনি এলাকায় শান্তিবাবু। বিরুলিয়া এলাকার রসুল, আয়নাল, হাসনা, কালাম, সলিম, বাতেন, আনোয়ার। ছোট কালিয়াকৈরের হামিদ। ভবানীপুরের আল আমিন, তারেক। হেমায়েতপুরের দুদু, মনির, শামীম ও মোতালেব। যাদুরচর এলাকার আনসু। রাজফুলবাড়িয়ার সোহেল ও পারভেজ। পানপাড়ার যাদব, আক্তার ও শামীম। বলিয়ারপুরের আকালি। এ ছাড়া সাভার থানা পুলিশের একাধিক সোর্স মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদিকে দিলখুশাবাগে মাদকব্যবসায়ী সুজিতের সঙ্গে সাভার থানার এএসআই আহাদ আলীর রয়েছে সুসম্পর্ক। প্রায় রাতেই তাদের দু’জনকে একত্রে দেখেছে অনেকেই। এসব এলাকায় র্যাব একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের আগের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। অনেকেই অভিযোগ করেন, এসব স্পট থেকে থানা পুলিশ মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন।
No comments