অপটিমিস্টস’র হাত ধরে জীবনযুদ্ধে জয়ী টুম্পা
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার স্বল্পের চক
গ্রামের নিশাত আরা টুম্পা। হঠাৎ এক পারিবারিক ঝড় এলোমেলো করে দেয় তার পুরো
জীবন। পিতা-মাতার বিচ্ছেদে নিরাশার রাজ্যে পড়ে যায় ছোট্ট শিশুটি। শুরু হয়
তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের। জীবনে কোন কিছুই থেমে থাকে না। অসহায় টুম্পার
পাশে এসে দাঁড়ায় দাতব্য প্রতিষ্ঠান দি অপটিমিস্টস। সেই ২০০৪ সালে টুম্পা
যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তখন থেকে তার সঙ্গী এই মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান।
এরপর ক্রমশ এগিয়ে গেছে টুম্পা। আজ জীবন যুদ্ধে জয়ের পথে সেদিনকার ছোট্ট
শিশুটি। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে রেখেছে সাফল্যের ছোঁয়া। দাদী খুশী
বেগম সবসময় বুকে আগলে রেখেছেন টুম্পা আর তার ভাইকে। বাঁধন হারানোর সময়েও এ
এক বাঁধনের গল্পই। দি অপটিমিস্টস এর সহযোগিতায় টুম্পা এখন পড়ছেন বন্দর
গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেছে দ্বাদশ শ্রেণীতে। টুম্পা কৃতজ্ঞ দি অপটিমিস্টস
এর প্রতি। বলেন, অপটিমিস্টস এর সহযোগিতা না পেলে আমি কখনও এতদূর পড়া-লেখা
করতে পারতাম না। আমি সারাজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
মানবতার কল্যাণের ব্রত নিয়ে ২০০০ সালের ৬ই অক্টোবর যাত্রা শুরু করে বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘দি অপটিমিস্টস।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় নিউ ইয়র্কে। ঢাকায় সংস্থাটির শাখা কার্যালয় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশে দি অপটিমিস্টস্ এর রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, রংপুর, ফেনী, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের ৬২৮ শিশুর স্পন্সর করছে সংস্থাটি। সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৮১ স্কুলগামী শিশুর সহযোগিতায়ও এগিয়ে এসেছে দি অপটিমিস্টস। আশাহত শিশুদের আশা যোগানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থটি। দারিদ্র্য অথবা পিতা-মাতা হারিয়ে দুর্যোগে পড়া শিশুদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে দি অপটিমিস্টস। শিক্ষা উপকরণ থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে অসহায় শিশুদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে এ দাতব্য সংস্থা। আমরা ফিরে যাই নিশাত আর টুম্পার সংগ্রামী জীবনের গল্পে। এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। রহিম মিয়া ও ববি বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে টুম্পা বড়। ২০০১ সালে তার পিতা অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে তাদের ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর টুমপার নানা তার মাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। এভাবেই তার জীবনের বিভীষিকাময় যাত্রা শুরু হয়। এ অবস্থায় টুমপা এবং তার ভাইয়ের লেখাপড়াসহ যাবতীয় ভরণ-পোষণের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে তাদের দাদি খুশী বেগমের ওপর। তার দাদি অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের লেখাপড়া ও ভরণ- পোষণ চালিয়ে নিতে থাকে। টুমপার স্বপ্ন ভবিষ্যতে লেখাপড়া শিখে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু টুম্পার দাদা বা কোন কাকা নেই তাদের সহযোগিতা করার মতো। এমন পরিস্থিতিতে নিশাত আরা টুমপার পাশে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় দি অপটিমিস্টস। তখন থেকেই দি অপটিমিস্টস এর আর্থিক সহায়তা পেয়ে টুমপা প্রতিটি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে ৫ম শ্রেণীর পরীক্ষায় এ-প্লাস পেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। হাইস্কুলের প্রতিটি ক্লাসে ভাল ফলাফল অর্জন করে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় এবং ভর্তি হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পুনরায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় অত্র সংস্থার এসএসপিতে।
No comments