আমরা নির্দোষ, যারা মরেছে তারা ‘কেয়ারলেস’ by ফারুক ওয়াসিফ
রেলপথে মুহূর্তের বিভীষিকা -কারওয়ান বাজারে দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে নিহত ৪
>>প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও নিয়ম ভেঙেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রেললাইনের ওপর বসেছিল মাছের বাজার। যথারীতি ভিড় ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার। মাছের দরদাম নিয়ে হইচই, হট্টগোলের মধ্যেই হঠাৎ দুপাশের দুটি লাইন দিয়ে আসা দুটি ট্রেনের অতিক্রম (ক্রসিং) স্তব্ধ করে দেয় সব কোলাহল। তখন সকাল আটটা ৪০। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনগামী যমুনা এক্সপ্রেস কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তসংলগ্ন এলাকা পার হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে এই রেললাইনের ওপরে থাকা ক্রেতা-বিক্রেতারা হুড়মুড় করে পাশে দুই লাইনের মাঝের অংশে নেমে পড়েন। কিন্তু একই সময়ে অপর লাইন দিয়ে কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখানে এসে পড়ে। দুই ট্রেনের মাঝে আটকে পড়া লোকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি ও ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও তিনজন। নিহতদের দুজন নারী। গুরুতর আহত আছেন আরও পাঁচজন। নিহত ব্যক্তিদের তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন কৃষি অর্থকরী ফসল বিভাগের সাবেক পরিচালক আবদুল মালেক (৬০), গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম (৫০) এবং ঘটনাস্থলেই নিহত কলা বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ। তাঁর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের কোতোয়ালিতে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া নিহত অন্য নারীর পরনে গোলাপি রঙের বোরকা ছিল। তিনজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
গুরুতর আহত পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা হলেন তিব্বত গ্রুপের কর্মচারী সৈয়দ হোসেন (৫০), ফল বিক্রেতা ফজলু খান (৪০), তাঁর ভাতিজা রাকিব খান (১৭), গৃহবধূ পারুল বেগম (৪০) ও গৃহকর্মী সালমা বেগম (৪৫)। দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান (মাছের আড়তসংলগ্ন) ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আড়তসংলগ্ন লাইন দিয়ে আসছিল কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী কর্ণফুলী ট্রেন। আর উল্টো দিকের লাইন দিয়ে আসছিল কমলাপুর স্টেশনমুখী ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন। রেললাইনের ওপর মাছের বাজার বসায় অনেক মানুষের ভিড় ছিল। তিনি বলেন, দ্রুত দুটি ট্রেন দুই দিক থেকে আসায় সব মানুষ সরে যেতে পারেনি। আর আড়তের উল্টো দিকে রেললাইনের পাশে খালি জায়গা না থাকায় যমুনা ট্রেনের ধাক্কায় বেশ কয়েকজন ছিটকে পড়ে। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর লোকজন আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। গেটম্যান আবু আহমেদ বলেন, মাছের বাজার বসার কারণে এখানে প্রায়ই সমস্যা হয়। দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী নাসিমা আক্তারের ভাষ্যমতে, দুর্ঘটনাস্থলে তিনি ১০ থেকে ১১ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নারীও ছিলেন। সকাল সোয়া নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের ওপর ও পাশে ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। রেললাইনের ওপর কলাভর্তি একটি ঝুড়ি পড়ে আছে। এ সময় ঘটনাস্থলে নিহত নূর মোহাম্মদের লাশ বস্তায় পেঁচিয়ে বাঁশ বেঁধে নিতে দেখা যায় দুজনকে। জানা গেছে, এঁরা রেলওয়ে পুলিশের অস্থায়ী ডোম। সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইন ঘেঁষে বস্তিঘরে অসংখ্য মানুষের বসবাস। আছে ছোটখাটো দোকানপাট। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বলেন, বাজার ও বস্তি না সরালে এখানে দুর্ঘটনা ঘটবেই। রুবেল মিয়া নামে কারওরান বাজার এলাকার আরেকজন গেটম্যান বলেন, প্রতিদিন ভোরে রেললাইনের ওপর মাছের অস্থায়ী বাজার বসে। এ কারণে বারবার দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় সাধারণ লোকজনকে। এর আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে।<<
>>>জীবনের প্রয়োজনে যিনি ছুটছিলেন দিনরাত, মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ চরম অমর্যাদায় বস্তায় ভরে ছুটছেন রেল পুলিশের ভাড়া করা বাহকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে মারা যাওয়া চারজনের একজনকে এভাবেই সরিয়ে নেওয়া হয় ঘটনাস্থল থেকে। রেলপথে প্রাণ হারানো মানুষের মরদেহ সরিয়ে নেওয়ার সম্মানজনক কোনো রীতি কি রেল কর্তৃপক্ষের নেই? l ছবি: প্রথম আলো
কিশোরী আর গণঘাতকেরা নরম মনের প্রাণী। কিশোরীরা নিষ্পাপ স্বভাববশতই নম্র। গণঘাতকেরা চাতুরী করে নিরীহ ভাব ধরে থাকে। কোথায় তাদের কারণে কত মানুষ মারা গেল, তা জানার ঠেকা তাদের নেই। অবশ্য যেচে পড়ে জানালে দুঃখিত হয়। তারপর আবার নিরীহ-নির্বোধ মুখে সমাজ-সংসারে রাজত্ব করে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে নিরপরাধের মৃত্যুর দায় নিতে কাউকে দেখিনি।
>>প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও নিয়ম ভেঙেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রেললাইনের ওপর বসেছিল মাছের বাজার। যথারীতি ভিড় ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার। মাছের দরদাম নিয়ে হইচই, হট্টগোলের মধ্যেই হঠাৎ দুপাশের দুটি লাইন দিয়ে আসা দুটি ট্রেনের অতিক্রম (ক্রসিং) স্তব্ধ করে দেয় সব কোলাহল। তখন সকাল আটটা ৪০। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনগামী যমুনা এক্সপ্রেস কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তসংলগ্ন এলাকা পার হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে এই রেললাইনের ওপরে থাকা ক্রেতা-বিক্রেতারা হুড়মুড় করে পাশে দুই লাইনের মাঝের অংশে নেমে পড়েন। কিন্তু একই সময়ে অপর লাইন দিয়ে কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখানে এসে পড়ে। দুই ট্রেনের মাঝে আটকে পড়া লোকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি ও ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও তিনজন। নিহতদের দুজন নারী। গুরুতর আহত আছেন আরও পাঁচজন। নিহত ব্যক্তিদের তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন কৃষি অর্থকরী ফসল বিভাগের সাবেক পরিচালক আবদুল মালেক (৬০), গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম (৫০) এবং ঘটনাস্থলেই নিহত কলা বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ। তাঁর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের কোতোয়ালিতে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া নিহত অন্য নারীর পরনে গোলাপি রঙের বোরকা ছিল। তিনজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
গুরুতর আহত পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা হলেন তিব্বত গ্রুপের কর্মচারী সৈয়দ হোসেন (৫০), ফল বিক্রেতা ফজলু খান (৪০), তাঁর ভাতিজা রাকিব খান (১৭), গৃহবধূ পারুল বেগম (৪০) ও গৃহকর্মী সালমা বেগম (৪৫)। দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান (মাছের আড়তসংলগ্ন) ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আড়তসংলগ্ন লাইন দিয়ে আসছিল কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী কর্ণফুলী ট্রেন। আর উল্টো দিকের লাইন দিয়ে আসছিল কমলাপুর স্টেশনমুখী ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন। রেললাইনের ওপর মাছের বাজার বসায় অনেক মানুষের ভিড় ছিল। তিনি বলেন, দ্রুত দুটি ট্রেন দুই দিক থেকে আসায় সব মানুষ সরে যেতে পারেনি। আর আড়তের উল্টো দিকে রেললাইনের পাশে খালি জায়গা না থাকায় যমুনা ট্রেনের ধাক্কায় বেশ কয়েকজন ছিটকে পড়ে। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর লোকজন আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। গেটম্যান আবু আহমেদ বলেন, মাছের বাজার বসার কারণে এখানে প্রায়ই সমস্যা হয়। দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী নাসিমা আক্তারের ভাষ্যমতে, দুর্ঘটনাস্থলে তিনি ১০ থেকে ১১ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নারীও ছিলেন। সকাল সোয়া নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের ওপর ও পাশে ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। রেললাইনের ওপর কলাভর্তি একটি ঝুড়ি পড়ে আছে। এ সময় ঘটনাস্থলে নিহত নূর মোহাম্মদের লাশ বস্তায় পেঁচিয়ে বাঁশ বেঁধে নিতে দেখা যায় দুজনকে। জানা গেছে, এঁরা রেলওয়ে পুলিশের অস্থায়ী ডোম। সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইন ঘেঁষে বস্তিঘরে অসংখ্য মানুষের বসবাস। আছে ছোটখাটো দোকানপাট। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বলেন, বাজার ও বস্তি না সরালে এখানে দুর্ঘটনা ঘটবেই। রুবেল মিয়া নামে কারওরান বাজার এলাকার আরেকজন গেটম্যান বলেন, প্রতিদিন ভোরে রেললাইনের ওপর মাছের অস্থায়ী বাজার বসে। এ কারণে বারবার দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় সাধারণ লোকজনকে। এর আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে।<<
>>>জীবনের প্রয়োজনে যিনি ছুটছিলেন দিনরাত, মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ চরম অমর্যাদায় বস্তায় ভরে ছুটছেন রেল পুলিশের ভাড়া করা বাহকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে মারা যাওয়া চারজনের একজনকে এভাবেই সরিয়ে নেওয়া হয় ঘটনাস্থল থেকে। রেলপথে প্রাণ হারানো মানুষের মরদেহ সরিয়ে নেওয়ার সম্মানজনক কোনো রীতি কি রেল কর্তৃপক্ষের নেই? l ছবি: প্রথম আলো
কিশোরী আর গণঘাতকেরা নরম মনের প্রাণী। কিশোরীরা নিষ্পাপ স্বভাববশতই নম্র। গণঘাতকেরা চাতুরী করে নিরীহ ভাব ধরে থাকে। কোথায় তাদের কারণে কত মানুষ মারা গেল, তা জানার ঠেকা তাদের নেই। অবশ্য যেচে পড়ে জানালে দুঃখিত হয়। তারপর আবার নিরীহ-নির্বোধ মুখে সমাজ-সংসারে রাজত্ব করে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে নিরপরাধের মৃত্যুর দায় নিতে কাউকে দেখিনি।
>>>কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা ঠিকই আঁচ করতে পেরেছেন এই ট্রেনটির যাত্রীরা। পাশেই পড়ে থাকা এই কলার ঝাঁপির মালিকও মারা গেছেন দুর্ঘটনায়। গতকাল সকাল সোয়া নয়টায় কারওয়ান বাজার রেললাইন থেকে তোলা ছবি l মো. শাহীদুজ্জামান
তৃতীয়
দুনিয়ার এক আদর্শ উদাহরণ হলো কারওয়ান বাজার। আলিশান ঝাঁ চকচকে ভবনের
নিচেই ভূতপ্রেতের বাসস্থান। তারা আবর্জনার বাক্সমতো বেড়ার তলে ঘুমায়,
রাস্তায় রান্না করে। প্রাকৃতিক কর্ম করার প্রয়োজন বোধ হয় তাদের হয় না।
হলেও সেই ঘটনার স্থানটা অদৃশ্য। এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। সেই রেলে
কাটা পড়ল ১০-১২ জন। তাদের চারজন বিনা টিকিটে ইতিমধ্যে পরপারে পৌঁছে গেছে।
নাহ, কেউ দুঃখ প্রকাশ করেনি, দায়িত্ব নেয়নি, মাফ চায়নি। রেললাইনের ওপর বসা
অবৈধ বাজারের ফেরিওয়ালা, দোকানি, খরিদ্দার—সবাই তো অবৈধই! তাদের জন্য
‘বৈধ’ মহলের জবাবদিহি চাইবে জাতির কোন বিবেক? বিবেকের পাট তো যাত্রাপালার
সঙ্গেই বিলুপ্ত হয়েছে এই দেশ থেকে। অতএব, আইনত ‘কেউ দায়ী নয়’! বাদবাকি যা,
তার সবই আহা, উহু, ছি ছি, মানবিক মানবিক!
সাবেক কালে নদী বা সড়কের কোনো জায়গায় নিয়মিতভাবে অপঘাত হলে বিশ্বাস করা হতো, জায়গাটা অপয়া। অদৃশ্য জগতের দেও-দানোরা সেখানে ঘাপটি মেরে বসে ‘মানুষ খায়’। কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ে নিয়মিতভাবে মানুষ কাটা পড়ে। কোনো প্রতিকার নেই, জীবন রক্ষার ব্যবস্থা নেই। রেল কর্তৃপক্ষ মায় সরকার হয়তো বিশ্বাস করে, সবই দেও-দানোর কাজ।
তো দেখতে গিয়েছিলাম সেই দৈত্যপুরী। কালচে হয়ে আসা রক্তের ছোপ। কয়েকটি থেঁতলানো কলা। কলার ঝুড়িটি ঠিকঠাক পড়ে আছে এক পাশে। এর মালিক বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা তৎক্ষণাৎ নিহত। সাত বছর ধরে তিনি এখানে কলা বেচেন। সাত বছর ধরে ট্রেন এলে ঝুড়ি-টুকরি নিয়ে দৌড়ে সরে যান। এবার আর পারেননি। গরুর দুধ বেচেন আবদুল বাসেত। বুড়ো লোকটার সঙ্গে প্রতিদিন কথা হতো: বেচাকেনা কেমন, লাভটাভ কিছু হয় কি না ইত্যাদি। বললাম, ক্যামনে চেনেন ওনারে? বলেন, ‘পথের পরিচয়’।
রেললাইনে সওদা নিয়ে বসা বেশির ভাগ মানুষই পথের পরিচিত। মৃতদের মধ্যে গরিব ক্রেতারাও আছেন। আজ সকালে সেখানে যখন আবার বাজার বসবে, তখন সেই পরিচিতদের কয়েকজন থাকবেন না। হয়তো নিহতদের বসবার জায়গাটা ফাঁকা থাকবে দু–এক দিন। আবারও ট্রেন আসবে জানান না দিয়ে। একইভাবে ভেঁপু বাজবে না। একইভাবে আবারও হয়তো সরে যেতে গিয়ে পড়ে যাবেন কেউ কেউ। তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যাবে ট্রেন। পেছনে পড়ে থাকবে থেঁতলানো দেহ, কাটা হাত-পা-মাথা। দৃশ্যে থাকবে থেঁতলানো সবজি বা মাছ। খাদ্য ও খাদকের একই হাল হবে। অনিয়মের ট্রেন চলতে থাকবে।
তুমুল রোদ আর পচা মাছের গন্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে আবারও দেখব: তেজগাঁওয়ের দিক থেকে একদল লোক আসছে। একটি ১৬-১৭ বছরের ছেলেকে ধরে আছে কয়েকজন, আরও কয়েকজন আনছে বেহুঁশপ্রায় এক নারীকে। ওরা যাচ্ছে কমলাপুরে রেলওয়ের নিজস্ব ডোমঘরে। ময়নাতদন্তের ছুরিতে কাটাফাটা দেহগুলো আরও ছেঁড়াবেড়া অবস্থায় সেখানে পড়ে আছে। মনিরুল যাচ্ছে তার বাবা নূর মোহাম্মদকে আনতে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে এক আহাম্মক সাংবাদিক তাদের থামতে বলবে, তার ফুটেজ প্রয়োজন। কিন্তু তারা শুনবে না। ব্যস্ততম রেলক্রসিং পেরিয়ে, সোনারগাঁও হোটেল-বিজিএমইএ ভবনের শানশওকত ঘেঁষে, এফডিসির রঙিন হাতছানি পেরিয়ে মৃতের আত্মীয়রা মিছিল করে যেতে থাকবে। কিন্তু কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা-রিকশা পাবে না।
বেশি দূর যাওয়া হয় না তাদের সঙ্গে। আবার ফিরে আসি সেই কলার টুকরির কাছে। কলার কাঁদি কাটার ছুরিটা পর্যন্ত গোছানো। কেবল শরীরটা গুছিয়ে সরে যেতে পারেনি মানুষটা। মৃত্যুর দায় কেউ না নিক, কিন্তু কলাগুলোর কী হবে? মেছো বাজারের কামলা কয়জন সেটা ঘিরে জটলা করছে। বুড়ো কলাওয়ালার কোনো ওয়ারিশ অথবা মোবাইল ফোন মেলেনি তখনো। লাশ অথবা এক টুকরি কলার কী হবে, সেই নিয়ে তারা থতমত।
উল্টা দিকে এফডিসির দেয়াল ঘেঁষে এক সারি সর্বহারা ভাতের হোটেল। তারই একটির বাসনকোসন ধোয়ার জায়গায় গালে হাত দিয়ে বসে একজন। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করি, ‘আপনার কেউ কি...’। চোখ তুলে বলেন সেই নারী, ‘আমারে জিগায়েন না, আমারেও মাইরালান।’ অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। তিন দিন আগে, এখানেই এক হোটেলমালিকের ভাই রেললাইনের ওপর গোসল করছিলেন। হয়তো তার চোখ-কানে পানির পর্দা পড়েছিল। তিনি দেখেনওনি, শোনেনওনি। ট্রেন এসে মেরে দিল। এখন তিনি হাসপাতালে।
সামনে দিয়েই হুইসেল বাজিয়ে গেল আরেকটি ট্রেন। ঘণ্টা বাজল, চালক মহাশয় হুইসেলও দিলেন ক্রসিংয়ের ঠিক আগে। কিন্তু তেজগাঁও আর বিজিএমইএর মাঝখানে ধনুকের মতো যে বাঁক; হুইসেল না দিলে সেখানকার কেউই টের পাবে না ঘাড়ের কাছেই ট্রেন। ঠিক এটা ঘটেছে তখন। হাজার হাজার মানুষের বাজার। এক দিকে ট্রেন দেখে তারা আরেক দিকে লাফ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেদিকেও তো আরেকটি ট্রেন। এ অবস্থায় সুপারম্যান না হলে বাঁচা কঠিন। বাঁচেওনি।
রেলের বসদের কর্তব্য ছিল। রেল পুলিশই যেখানে অবৈধ বাজারের বখরা খায়, সেখানে কাকে কী বলবেন? ভাঙারি দোকানের এক মজুর জানালেন, রেলবাজার থেকে প্রতিদিন টাকা তোলেন সিরাজ কমান্ডার নামের এক লোক। এফডিসির দেয়ালঘেঁষা ৪০টি দোকান; এসবের ভাড়াও তিনিই গোনেন। কিন্তু টাকাটা যায় কোথায়? খবরের সুতা ধরে ধরে হাজির হলাম তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে হাজি মকবুল আহমেদের দপ্তরে। তিনি এফবিসিসিআইয়ের সদস্য, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি সমিতির সভাপতি; বিরাট পরিবহন ব্যবসায়ী। তাঁর লন্ডনফেরত ছেলে জানালেন, ফিশ মার্কেটে কিছু জায়গার ইজারা আছে তাঁদের। তবে রেললাইনের বাজারের কথা তিনি জানেন না। জোহরের নামাজ থেকে ফিরে হাজি মকবুল আহমেদ জানালেন, তাঁরা ৪০ জন মিলে রেললাইনের পাশের জায়গা ভরাট করে ৪০টি দোকান তুলেছেন। বছরে দুই লাখ টাকায় ইজারা। তবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে চার-পাঁচ বছর আগে। রেলের বাজারের ভাড়া পান? জবাবে ভোরে আসতে বললেন বাজারে। প্রশ্ন জাগে, যে সিরাজ কমান্ডার তাঁর দোকানের ভাড়া তোলেন, তিনিই কেন খোলাবাজারেরও ভাড়ার ঠিকাদার হন? যদি রেলের বাজারের হিস্যা তাঁর না-ই থাকবে, তাহলে ফিশ মার্কেটের ওই জায়গার ভাড়া কেন নেন তিনি? মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পুত্রের প্রথম প্রতিক্রিয়া ‘বাজারের লোকজন অ্যাজ আ পারসন কেয়ারলেস’। আমার চাপাচাপিতে পরে অবশ্য তিনি দুঃখিত হন!
হাজি মকবুল, সিরাজ কমান্ডার, রেল পুলিশ, রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট, দেলু সর্দারসহ বৈধ অনেকেই এই ‘অবৈধ’ বাজার থেকে টাকা পান বটে, তবে মৃত্যুগুলো ‘কেয়ারলেস’ হওয়ার শাস্তিও বটে। আর ক্ষমতাবাজির টাকা-ব্যবসা-মুনাফা? সব নিদায় নিরীহ নিষ্পাপ।
রেল কর্তৃপক্ষ নীরব। রেলওয়ের হাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি জমি। যদি বৈধভাবেও ইজারা দেওয়া হতো, যদি জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে তারা যত্নবান হতো, তাহলে রেলও লোকসান দিত না, সময়ে সময়ে এত মানুষও কাটা পড়ত না। রেলের কালো বিড়াল কেবল দুর্নীতিই করে না, মানুষও মারে। কাকে দোষ দেব তাহলে? যারা মরেছে তাদের? নাকি সেই অদৃশ্য কালো বিড়ালদের?
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
সাবেক কালে নদী বা সড়কের কোনো জায়গায় নিয়মিতভাবে অপঘাত হলে বিশ্বাস করা হতো, জায়গাটা অপয়া। অদৃশ্য জগতের দেও-দানোরা সেখানে ঘাপটি মেরে বসে ‘মানুষ খায়’। কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ে নিয়মিতভাবে মানুষ কাটা পড়ে। কোনো প্রতিকার নেই, জীবন রক্ষার ব্যবস্থা নেই। রেল কর্তৃপক্ষ মায় সরকার হয়তো বিশ্বাস করে, সবই দেও-দানোর কাজ।
তো দেখতে গিয়েছিলাম সেই দৈত্যপুরী। কালচে হয়ে আসা রক্তের ছোপ। কয়েকটি থেঁতলানো কলা। কলার ঝুড়িটি ঠিকঠাক পড়ে আছে এক পাশে। এর মালিক বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা তৎক্ষণাৎ নিহত। সাত বছর ধরে তিনি এখানে কলা বেচেন। সাত বছর ধরে ট্রেন এলে ঝুড়ি-টুকরি নিয়ে দৌড়ে সরে যান। এবার আর পারেননি। গরুর দুধ বেচেন আবদুল বাসেত। বুড়ো লোকটার সঙ্গে প্রতিদিন কথা হতো: বেচাকেনা কেমন, লাভটাভ কিছু হয় কি না ইত্যাদি। বললাম, ক্যামনে চেনেন ওনারে? বলেন, ‘পথের পরিচয়’।
রেললাইনে সওদা নিয়ে বসা বেশির ভাগ মানুষই পথের পরিচিত। মৃতদের মধ্যে গরিব ক্রেতারাও আছেন। আজ সকালে সেখানে যখন আবার বাজার বসবে, তখন সেই পরিচিতদের কয়েকজন থাকবেন না। হয়তো নিহতদের বসবার জায়গাটা ফাঁকা থাকবে দু–এক দিন। আবারও ট্রেন আসবে জানান না দিয়ে। একইভাবে ভেঁপু বাজবে না। একইভাবে আবারও হয়তো সরে যেতে গিয়ে পড়ে যাবেন কেউ কেউ। তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যাবে ট্রেন। পেছনে পড়ে থাকবে থেঁতলানো দেহ, কাটা হাত-পা-মাথা। দৃশ্যে থাকবে থেঁতলানো সবজি বা মাছ। খাদ্য ও খাদকের একই হাল হবে। অনিয়মের ট্রেন চলতে থাকবে।
তুমুল রোদ আর পচা মাছের গন্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে আবারও দেখব: তেজগাঁওয়ের দিক থেকে একদল লোক আসছে। একটি ১৬-১৭ বছরের ছেলেকে ধরে আছে কয়েকজন, আরও কয়েকজন আনছে বেহুঁশপ্রায় এক নারীকে। ওরা যাচ্ছে কমলাপুরে রেলওয়ের নিজস্ব ডোমঘরে। ময়নাতদন্তের ছুরিতে কাটাফাটা দেহগুলো আরও ছেঁড়াবেড়া অবস্থায় সেখানে পড়ে আছে। মনিরুল যাচ্ছে তার বাবা নূর মোহাম্মদকে আনতে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে এক আহাম্মক সাংবাদিক তাদের থামতে বলবে, তার ফুটেজ প্রয়োজন। কিন্তু তারা শুনবে না। ব্যস্ততম রেলক্রসিং পেরিয়ে, সোনারগাঁও হোটেল-বিজিএমইএ ভবনের শানশওকত ঘেঁষে, এফডিসির রঙিন হাতছানি পেরিয়ে মৃতের আত্মীয়রা মিছিল করে যেতে থাকবে। কিন্তু কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা-রিকশা পাবে না।
বেশি দূর যাওয়া হয় না তাদের সঙ্গে। আবার ফিরে আসি সেই কলার টুকরির কাছে। কলার কাঁদি কাটার ছুরিটা পর্যন্ত গোছানো। কেবল শরীরটা গুছিয়ে সরে যেতে পারেনি মানুষটা। মৃত্যুর দায় কেউ না নিক, কিন্তু কলাগুলোর কী হবে? মেছো বাজারের কামলা কয়জন সেটা ঘিরে জটলা করছে। বুড়ো কলাওয়ালার কোনো ওয়ারিশ অথবা মোবাইল ফোন মেলেনি তখনো। লাশ অথবা এক টুকরি কলার কী হবে, সেই নিয়ে তারা থতমত।
উল্টা দিকে এফডিসির দেয়াল ঘেঁষে এক সারি সর্বহারা ভাতের হোটেল। তারই একটির বাসনকোসন ধোয়ার জায়গায় গালে হাত দিয়ে বসে একজন। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করি, ‘আপনার কেউ কি...’। চোখ তুলে বলেন সেই নারী, ‘আমারে জিগায়েন না, আমারেও মাইরালান।’ অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। তিন দিন আগে, এখানেই এক হোটেলমালিকের ভাই রেললাইনের ওপর গোসল করছিলেন। হয়তো তার চোখ-কানে পানির পর্দা পড়েছিল। তিনি দেখেনওনি, শোনেনওনি। ট্রেন এসে মেরে দিল। এখন তিনি হাসপাতালে।
সামনে দিয়েই হুইসেল বাজিয়ে গেল আরেকটি ট্রেন। ঘণ্টা বাজল, চালক মহাশয় হুইসেলও দিলেন ক্রসিংয়ের ঠিক আগে। কিন্তু তেজগাঁও আর বিজিএমইএর মাঝখানে ধনুকের মতো যে বাঁক; হুইসেল না দিলে সেখানকার কেউই টের পাবে না ঘাড়ের কাছেই ট্রেন। ঠিক এটা ঘটেছে তখন। হাজার হাজার মানুষের বাজার। এক দিকে ট্রেন দেখে তারা আরেক দিকে লাফ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেদিকেও তো আরেকটি ট্রেন। এ অবস্থায় সুপারম্যান না হলে বাঁচা কঠিন। বাঁচেওনি।
রেলের বসদের কর্তব্য ছিল। রেল পুলিশই যেখানে অবৈধ বাজারের বখরা খায়, সেখানে কাকে কী বলবেন? ভাঙারি দোকানের এক মজুর জানালেন, রেলবাজার থেকে প্রতিদিন টাকা তোলেন সিরাজ কমান্ডার নামের এক লোক। এফডিসির দেয়ালঘেঁষা ৪০টি দোকান; এসবের ভাড়াও তিনিই গোনেন। কিন্তু টাকাটা যায় কোথায়? খবরের সুতা ধরে ধরে হাজির হলাম তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে হাজি মকবুল আহমেদের দপ্তরে। তিনি এফবিসিসিআইয়ের সদস্য, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি সমিতির সভাপতি; বিরাট পরিবহন ব্যবসায়ী। তাঁর লন্ডনফেরত ছেলে জানালেন, ফিশ মার্কেটে কিছু জায়গার ইজারা আছে তাঁদের। তবে রেললাইনের বাজারের কথা তিনি জানেন না। জোহরের নামাজ থেকে ফিরে হাজি মকবুল আহমেদ জানালেন, তাঁরা ৪০ জন মিলে রেললাইনের পাশের জায়গা ভরাট করে ৪০টি দোকান তুলেছেন। বছরে দুই লাখ টাকায় ইজারা। তবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে চার-পাঁচ বছর আগে। রেলের বাজারের ভাড়া পান? জবাবে ভোরে আসতে বললেন বাজারে। প্রশ্ন জাগে, যে সিরাজ কমান্ডার তাঁর দোকানের ভাড়া তোলেন, তিনিই কেন খোলাবাজারেরও ভাড়ার ঠিকাদার হন? যদি রেলের বাজারের হিস্যা তাঁর না-ই থাকবে, তাহলে ফিশ মার্কেটের ওই জায়গার ভাড়া কেন নেন তিনি? মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পুত্রের প্রথম প্রতিক্রিয়া ‘বাজারের লোকজন অ্যাজ আ পারসন কেয়ারলেস’। আমার চাপাচাপিতে পরে অবশ্য তিনি দুঃখিত হন!
হাজি মকবুল, সিরাজ কমান্ডার, রেল পুলিশ, রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট, দেলু সর্দারসহ বৈধ অনেকেই এই ‘অবৈধ’ বাজার থেকে টাকা পান বটে, তবে মৃত্যুগুলো ‘কেয়ারলেস’ হওয়ার শাস্তিও বটে। আর ক্ষমতাবাজির টাকা-ব্যবসা-মুনাফা? সব নিদায় নিরীহ নিষ্পাপ।
রেল কর্তৃপক্ষ নীরব। রেলওয়ের হাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি জমি। যদি বৈধভাবেও ইজারা দেওয়া হতো, যদি জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে তারা যত্নবান হতো, তাহলে রেলও লোকসান দিত না, সময়ে সময়ে এত মানুষও কাটা পড়ত না। রেলের কালো বিড়াল কেবল দুর্নীতিই করে না, মানুষও মারে। কাকে দোষ দেব তাহলে? যারা মরেছে তাদের? নাকি সেই অদৃশ্য কালো বিড়ালদের?
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
No comments