গল্প- আমি ঝমলু by মুহাম্মদ রিয়াজুল আমীন
চার বছর ধরেই চেষ্টা করছিলাম টাইম মেশিনটা
তৈরি করতে, কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। একবার সূত্রে ভুল হয় তো
একবার মোটর ঠিকমতো জোড়া লাগে না। এর মধ্যেই একবার মেশিন চালু করার সঙ্গে
সঙ্গে ড্রাফটিং মিটার উল্টো দিকে ঘোরা শুরু করল আর সোজা গিয়ে পড়ল পাশের
বাসার নতুন কেনা গাড়িটার ওপর। সেটা নিয়ে সে কী হম্বিতম্বি ভদ্রলোকের!
পুলিশ-টুলিশ ডেকে একাকার অবস্থা। আমি বলি, এত বড় একটা আবিষ্কারের জন্য
একটা গাড়ি নাহয় নষ্টই হলো, তার জন্য পুলিশ ডাকার কী দরকার? কিন্তু
ভদ্রলোক আমার কোনো কথাই শুনলেন না। আমিও মনে মনে ঠিক করে রেখেছি, পরেরবার
আমার বাসায় চা খেতে এলে চায়ের সঙ্গে ভদ্রলোককে একটা ‘হাঁচিগুলি’ খাইয়ে
দেব। তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল!
যা-ই হোক, এ রকম আরও হাজারটা ঝামেলার কারণে টাইম মেশিনটা তৈরি হচ্ছিলই না। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সম্মেলনে জাপানি বিজ্ঞানী ‘হাআশি-খুউশি’ যখন বলল, টিকটিকির লেজ থেকে খুব ভালো রকেট ফুয়েল তৈরি করা যায়, তখনই আমি বুঝতে পারলাম আমার মেশিনে ঝামেলাটা কোথায়? তারপর পুরো সাত দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির ফসল এই টাইম মেশিন। যদিও সাড়ে তিন হাজার টিকটিকি তাদের লেজ বিসর্জন দিয়েছে এই আবিষ্কারের জন্য। তাতে কী, পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কার তো বড় বড় বিসর্জন থেকেই হয়েছে। আমি আর টিকটিকিদের জন্য বেশি দুঃখ না করে বেরিয়ে পড়েছিলাম টাইম ট্র্যাভেলে।
যা-ই হোক, এ রকম আরও হাজারটা ঝামেলার কারণে টাইম মেশিনটা তৈরি হচ্ছিলই না। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সম্মেলনে জাপানি বিজ্ঞানী ‘হাআশি-খুউশি’ যখন বলল, টিকটিকির লেজ থেকে খুব ভালো রকেট ফুয়েল তৈরি করা যায়, তখনই আমি বুঝতে পারলাম আমার মেশিনে ঝামেলাটা কোথায়? তারপর পুরো সাত দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির ফসল এই টাইম মেশিন। যদিও সাড়ে তিন হাজার টিকটিকি তাদের লেজ বিসর্জন দিয়েছে এই আবিষ্কারের জন্য। তাতে কী, পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কার তো বড় বড় বিসর্জন থেকেই হয়েছে। আমি আর টিকটিকিদের জন্য বেশি দুঃখ না করে বেরিয়ে পড়েছিলাম টাইম ট্র্যাভেলে।
প্রথমেই টাইম সেট করলাম ১৮৯৪ সালে, ইতালির পেভিয়া শহরে। এ সময় আইনস্টাইন মাত্র স্কুলে পড়ছেন। বিজ্ঞানী হওয়ার আগে আইনস্টাইন কেমন ছিলেন সেটা জানার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের।
টাইম সেট করে চেয়ারের হাতলের পাশে রাখা অন বাটনটা চাপ দিতেই প্রচণ্ড ঝাঁকি দিয়ে ঝনঝন শব্দ করে ইঞ্জিন স্টার্ট হয়ে গেল এবং পুরো মেশিনটা ডান দিকে ঘুরতে শুরু করল। চক্রবৃদ্ধি হারে ঘোরার গতি বেড়ে দাঁড়াল ঘণ্টায় ৭২০ দশমিক ৩ মাইল। প্রচণ্ড ঝাঁকিতে চেম্বারের ভেতরে থাকা লাল লাইট যখন জ্বলে উঠল, তখন একটু ভয় পেয়ে গেলাম, ক্র্যাশ না করে যায়। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে টাইম মেশিন ধুপ করে ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে মাটি থেকে দুই ফুট ওপরে উঠে গেল। মিনিট তিনেক সেখানে থাকার পর আবার ধুপ করে সেটা নিচে নেমে এল। নিচে নেমেই ইঞ্জিন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। আমি খুব সাবধানে চেয়ারের পাশের দরজাটা খুলে আস্তে করে মাথাটা বাইরে বের করলাম। হালকা একটা বাতাস মুখে এসে লাগল। সামনে তাকিয়ে দেখি আমার টাইম মেশিন একটা ব্রিজের ওপর এসে দাঁড়িয়েছে। ব্রিজের রেলিংয়ের ওপর পা ঝুলিয়ে আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টি দিয়ে বসে আছে ১৩/১৪ বছরের একটা ছেলে। মাথার চুল এলোমেলো। এক দেখাতেই বুঝে গেলাম আমি শিশু আইনস্টাইনকে পেয়ে গেছি। দেরি না করে লাফ দিয়ে মেশিন থেকে বের হয়ে যখনই তার কাছে পৌঁছালাম তখনই মাথায় প্রচণ্ড জোরে ধুপ করে একটা বাড়ি খেলাম। আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে এল। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার ল্যাবরেটরিতে। বুঝলাম, টাইম মেশিনে আবার কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে। যে কারণে টাইম ট্র্যাভেল করতে পারলেও নির্দিষ্ট সময়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না।
যা-ই হোক, মন খারাপ না করে আবার কাজ শুরু করলাম। ভোররাতে বাসায় ফিরেছি। এখন দুপুর হয়ে এল। আমার কাজ বন্ধ নেই। শিশু আইনস্টাইনের সঙ্গে কথা তো বলতেই হবে।
আমি ঝমলু। বাংলাদেশ নামের খুব সুন্দর এক দেশের ছোটখাটো একজন মানুষ। এখন আমি বানাচ্ছি টাইম মেশিন। বলা যায় না, যখন তুমি বুড়ো হয়ে যাবে তখন তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েও যেতে পারে!
No comments