‘ভাঙাগড়ার জীবন আমাদের’ by কুন্তল রায়
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল আটটা। কারওয়ান
বাজার রেলক্রসিংয়ের ঘণ্টি বেজে চলেছে। নামতে শুরু করল একটার পর একটা
রেলগেটের প্রতিবন্ধক বার। গেটের দুধারে জমে থাকা বাস, পিকআপ ভ্যান,
ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর সামনে দিয়ে ধুলা উড়িয়ে চলে গেল কমলাপুর রেলস্টেশন
ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী।
প্রতিবন্ধক সরে যাওয়ার পর রেললাইন ধরে কারওয়ান বাজার মাছের আড়তের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন মো. শাজাহান (৪০)। গায়ে হাফহাতা শার্ট, পরনে লুঙ্গি। আড়তসংলগ্ন রেললাইনের কাছে গিয়ে দেখতে পান লাঠি হাতে কয়েকজন যুবককে। রেললাইনের ওপর জোরে জোরে লাঠির বাড়ি দিয়ে তাঁরা জানান দিচ্ছেন, ‘কেউ ডালা নিয়ে ঢুকবি না, কেউ লাইনের ওপর বসবি না। বসবি তো মার খায়া মইরা যাবি।’
অন্যদিনের মতো এখানে নিয়ম ভেঙে রেললাইনের ওপর মাছের বাজার নেই, দরদাম নিয়ে হই-হট্টগোল নেই। পাশেই আড়তে মাছ বেচা-কেনা, দরদাম হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কোনোকিছুই যেন অন্যদিনের মতো নয়। আগের দিন এই রেলপথের ওপর দিয়ে মুহূর্তের যে বিভীষিকা ঘটে গেছে, তা কেউ ভুলতে পারছেন না।
ভুলতে পারছেন না শাজাহানও। ৮-১০ বছর ধরে আড়ত থেকে মাছ কিনে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। রেললাইনের পাশেই একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন ব্যানার দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দ্যাখেন, কিছু পড়তে পারেন?’ দেখা গেল, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আর কিছুই পড়া যাচ্ছে না। শাজাহান বলে চলেন, ‘মানুষ মইরা আমাগো খরচ বাড়ায়া দিছে, আইজক্যা মাছ নিয়া বইতে পারুম না, তাই মাছ কিনি নাই। আগে ১০০-১৫০ টাকা নিত, এইবার তো ২০০ টাকা চাইব। ঠিক এই জাগায় মানুষগুলো মরছে...মনডা ভালা না।’
বোঝা গেল, বৃহস্পতিবার সকালে এখানেই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী যমুনা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের মাঝে আটকা পড়ে ও ট্রেনের ধাক্কায় চারজন মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ।
খরচ কীভাবে বাড়ল—এ প্রশ্নের জবাবে শাজাহানের ভাষ্য, লাইনের ওপর ব্যবসা করতে গেলে টাকা দিতে হয়। কাকে দিতে হয়—প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যারে-তারে। পুলিশ, রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নাইটগার্ড, আড়তদার, শ্রমিক নেতা—যে য্যামনে পারে টাকা নেয়।’
রেললাইন ধরে আরেকটু সামনে এগোতেই দেখা গেল জটলা করে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই মাছ ব্যবসায়ী। আড়ত থেকে মাছ কিনে ফেরি করে বিক্রি করেন। আজ লাইনের ওপর কাউকে বসতে দিচ্ছে না, তাই তাঁদেরও ব্যবসা বন্ধ। তাঁদের মুখেও একই কথা, ‘মানুষ মইরা খরচ বাড়ল।’ মৃধা নামের এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘এইখানে যার য্যামুন ক্ষেমতা, সে সেইভাবে টাকা নেয়।’
সকাল আটটা ২৫ মিনিট। হঠাৎ শোরগোল শুরু হলো। রেললাইনের ওপর দিয়ে বড় প্লাস্টিকের ব্যারেল গড়াতে গড়াতে নিয়ে যাচ্ছিল ১৪-১৫ বছরের একটি ছেলে। লাঠি হাতে এক ব্যক্তি গিয়ে ধাম-ধাম করে দুটি বাড়ি দিয়ে ব্যারেলটিকে লাইনের একপাশে নিয়ে ফেললেন, আর ছেলেটির উদ্দেশে গালি ছুড়ে দিলেন। ধীরগতিতে ঢাকা ছেড়ে গেল ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস।
রেললাইন ধরে আরও ভেতরের দিকে গেলে পূর্ব পাশে একটি টং দোকান। আজ চা বানাচ্ছেন না, শুধু সিগারেট বিক্রি করছেন দোকানদার রহমান। বেঞ্চে বসা হলুদ শার্ট পরা এক বৃদ্ধ শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, পাশে আরেক বৃদ্ধ সিগারেট ফুঁকছেন। হলুদ শার্ট পরা বৃদ্ধ হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘ওই যে বুড়া লোকটা এখানে কলা নিয়ে বসত, হ্যায় মারা গেছে।’ দোকানদার বলেন, ‘ওই যে মাঝে-মইদ্যে পেয়ারা, আবার আমও বিক্রি করত, ওই লোকটা? হ্যাঁ হ্যাঁ চিনছি, আমাদেরও পেয়ারাটা-কলাডা দিত? ইশ...রে, ইন্না লিল্লাহি...।’
বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনায় রেললাইনের ওপর থাকা নারীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই জীবন দেন কলাবিক্রেতা ময়মনসিংহের নূর মোহাম্মদ। আরও মারা যান দুজন নারী, একজন পুরুষ।
আটটা ৪০, আটটা ৫০ ও নয়টা পাঁচ মিনিটে আরও তিনটি ট্রেন কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং পার হয়। আর লাইনের দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য মানুষ এক দিন আগের দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণা করতে থাকেন।
নয়টা ৪০ মিনিটে মাথায় লাল কাপড় বাঁধা রেল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা ২০-২৫ জন শ্রমিক হাতে দা-শাবল নিয়ে লাইনের দুপাশে বস্তিঘর ও টং দোকানের বেড়া এবং বাইরে থাকা মালপত্র ভাঙতে শুরু করেন। নিমেষে এসব ঘর-দোকানের মালিকেরা মালপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। দু-তিন মিনিট পার হতেই উচ্চ শব্দে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে হাজির হয় তিতাস কমিউটার ট্রেন। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, জটলা তখনো লাইনের ওপর। হুড়মুড় করে সবাই লাইনের ওপর থেকে নেমে আসে, কোনোমতে ট্রেনটি পার হয়ে যায়। বস্তিঘরগুলো লাইনের সঙ্গে এতটাই লাগোয়া যে সহজে নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পুলিশের সংখ্যা। তেজগাঁও থানার পুলিশ, রেলপুলিশ, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকাল ১০টার দিকে আসে বুলডোজার। কারওয়ান বাজার ক্রসিংয়ের পূর্ব পাশ থেকে শুরু হয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। বুলডোজারের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে ভাঙতে থাকে টং দোকান, বস্তিঘর। আরেকটু দূরে যেসব ঘর এখনো ভাঙা হয়নি, সেগুলোর টিন-বেড়া-মালপত্র খুলে নিয়ে দৌড়াতে থাকে মানুষ।
১০টা ২৮ মিনিটে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসের জন্য উচ্ছেদ কাজ মিনিট খানেক বন্ধ থাকে। ট্রেন পার হয়ে গেলে আবার উচ্ছেদ শুরু হয়। উচ্ছেদকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুননবী কবীর। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আজ কারওয়ান বাজার ক্রসিং থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হবে। উচ্ছেদ অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। তিনি দাবি করেন, রেললাইনের দুধারে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ সব সময় চলে।
বেলা ১১টা। হুড়মুড়িয়ে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। সঙ্গে মালপত্র নিয়ে দোকানমালিক ও বস্তিঘর বাসিন্দাদের দৌড়াদৌড়ি। আবার দেখা হয় শাজাহানের সঙ্গে। কারওয়ান বাজার কাঠপট্টিসংলগ্ন লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে। এই প্রতিবেদককে দেখে বলেন, ‘কত বার যে এই লাইনে উচ্ছেদ হইল! ভাঙে, সাত দিনের মইধ্যে আবার ঘর উঠে। আর মাইনষ্যের কাছ থিকা টাকা নেয়। এইভাবেই চলব। আপনে আবার সাত দিন পর আইয়া দেইখেন, কথাডা ঠিক কইলাম কি না।’ স্মিত হেসে শাজাহান শেষ করেন, ‘বুঝলেন, ভাঙাগড়ার জীবন আমাদের!’
প্রতিবন্ধক সরে যাওয়ার পর রেললাইন ধরে কারওয়ান বাজার মাছের আড়তের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন মো. শাজাহান (৪০)। গায়ে হাফহাতা শার্ট, পরনে লুঙ্গি। আড়তসংলগ্ন রেললাইনের কাছে গিয়ে দেখতে পান লাঠি হাতে কয়েকজন যুবককে। রেললাইনের ওপর জোরে জোরে লাঠির বাড়ি দিয়ে তাঁরা জানান দিচ্ছেন, ‘কেউ ডালা নিয়ে ঢুকবি না, কেউ লাইনের ওপর বসবি না। বসবি তো মার খায়া মইরা যাবি।’
অন্যদিনের মতো এখানে নিয়ম ভেঙে রেললাইনের ওপর মাছের বাজার নেই, দরদাম নিয়ে হই-হট্টগোল নেই। পাশেই আড়তে মাছ বেচা-কেনা, দরদাম হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কোনোকিছুই যেন অন্যদিনের মতো নয়। আগের দিন এই রেলপথের ওপর দিয়ে মুহূর্তের যে বিভীষিকা ঘটে গেছে, তা কেউ ভুলতে পারছেন না।
ভুলতে পারছেন না শাজাহানও। ৮-১০ বছর ধরে আড়ত থেকে মাছ কিনে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। রেললাইনের পাশেই একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন ব্যানার দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দ্যাখেন, কিছু পড়তে পারেন?’ দেখা গেল, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আর কিছুই পড়া যাচ্ছে না। শাজাহান বলে চলেন, ‘মানুষ মইরা আমাগো খরচ বাড়ায়া দিছে, আইজক্যা মাছ নিয়া বইতে পারুম না, তাই মাছ কিনি নাই। আগে ১০০-১৫০ টাকা নিত, এইবার তো ২০০ টাকা চাইব। ঠিক এই জাগায় মানুষগুলো মরছে...মনডা ভালা না।’
বোঝা গেল, বৃহস্পতিবার সকালে এখানেই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী যমুনা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের মাঝে আটকা পড়ে ও ট্রেনের ধাক্কায় চারজন মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ।
খরচ কীভাবে বাড়ল—এ প্রশ্নের জবাবে শাজাহানের ভাষ্য, লাইনের ওপর ব্যবসা করতে গেলে টাকা দিতে হয়। কাকে দিতে হয়—প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যারে-তারে। পুলিশ, রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নাইটগার্ড, আড়তদার, শ্রমিক নেতা—যে য্যামনে পারে টাকা নেয়।’
রেললাইন ধরে আরেকটু সামনে এগোতেই দেখা গেল জটলা করে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই মাছ ব্যবসায়ী। আড়ত থেকে মাছ কিনে ফেরি করে বিক্রি করেন। আজ লাইনের ওপর কাউকে বসতে দিচ্ছে না, তাই তাঁদেরও ব্যবসা বন্ধ। তাঁদের মুখেও একই কথা, ‘মানুষ মইরা খরচ বাড়ল।’ মৃধা নামের এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘এইখানে যার য্যামুন ক্ষেমতা, সে সেইভাবে টাকা নেয়।’
সকাল আটটা ২৫ মিনিট। হঠাৎ শোরগোল শুরু হলো। রেললাইনের ওপর দিয়ে বড় প্লাস্টিকের ব্যারেল গড়াতে গড়াতে নিয়ে যাচ্ছিল ১৪-১৫ বছরের একটি ছেলে। লাঠি হাতে এক ব্যক্তি গিয়ে ধাম-ধাম করে দুটি বাড়ি দিয়ে ব্যারেলটিকে লাইনের একপাশে নিয়ে ফেললেন, আর ছেলেটির উদ্দেশে গালি ছুড়ে দিলেন। ধীরগতিতে ঢাকা ছেড়ে গেল ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস।
রেললাইন ধরে আরও ভেতরের দিকে গেলে পূর্ব পাশে একটি টং দোকান। আজ চা বানাচ্ছেন না, শুধু সিগারেট বিক্রি করছেন দোকানদার রহমান। বেঞ্চে বসা হলুদ শার্ট পরা এক বৃদ্ধ শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, পাশে আরেক বৃদ্ধ সিগারেট ফুঁকছেন। হলুদ শার্ট পরা বৃদ্ধ হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘ওই যে বুড়া লোকটা এখানে কলা নিয়ে বসত, হ্যায় মারা গেছে।’ দোকানদার বলেন, ‘ওই যে মাঝে-মইদ্যে পেয়ারা, আবার আমও বিক্রি করত, ওই লোকটা? হ্যাঁ হ্যাঁ চিনছি, আমাদেরও পেয়ারাটা-কলাডা দিত? ইশ...রে, ইন্না লিল্লাহি...।’
বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনায় রেললাইনের ওপর থাকা নারীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই জীবন দেন কলাবিক্রেতা ময়মনসিংহের নূর মোহাম্মদ। আরও মারা যান দুজন নারী, একজন পুরুষ।
আটটা ৪০, আটটা ৫০ ও নয়টা পাঁচ মিনিটে আরও তিনটি ট্রেন কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং পার হয়। আর লাইনের দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য মানুষ এক দিন আগের দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণা করতে থাকেন।
নয়টা ৪০ মিনিটে মাথায় লাল কাপড় বাঁধা রেল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা ২০-২৫ জন শ্রমিক হাতে দা-শাবল নিয়ে লাইনের দুপাশে বস্তিঘর ও টং দোকানের বেড়া এবং বাইরে থাকা মালপত্র ভাঙতে শুরু করেন। নিমেষে এসব ঘর-দোকানের মালিকেরা মালপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। দু-তিন মিনিট পার হতেই উচ্চ শব্দে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে হাজির হয় তিতাস কমিউটার ট্রেন। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, জটলা তখনো লাইনের ওপর। হুড়মুড় করে সবাই লাইনের ওপর থেকে নেমে আসে, কোনোমতে ট্রেনটি পার হয়ে যায়। বস্তিঘরগুলো লাইনের সঙ্গে এতটাই লাগোয়া যে সহজে নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পুলিশের সংখ্যা। তেজগাঁও থানার পুলিশ, রেলপুলিশ, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকাল ১০টার দিকে আসে বুলডোজার। কারওয়ান বাজার ক্রসিংয়ের পূর্ব পাশ থেকে শুরু হয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। বুলডোজারের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে ভাঙতে থাকে টং দোকান, বস্তিঘর। আরেকটু দূরে যেসব ঘর এখনো ভাঙা হয়নি, সেগুলোর টিন-বেড়া-মালপত্র খুলে নিয়ে দৌড়াতে থাকে মানুষ।
১০টা ২৮ মিনিটে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসের জন্য উচ্ছেদ কাজ মিনিট খানেক বন্ধ থাকে। ট্রেন পার হয়ে গেলে আবার উচ্ছেদ শুরু হয়। উচ্ছেদকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুননবী কবীর। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আজ কারওয়ান বাজার ক্রসিং থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হবে। উচ্ছেদ অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। তিনি দাবি করেন, রেললাইনের দুধারে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ সব সময় চলে।
বেলা ১১টা। হুড়মুড়িয়ে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। সঙ্গে মালপত্র নিয়ে দোকানমালিক ও বস্তিঘর বাসিন্দাদের দৌড়াদৌড়ি। আবার দেখা হয় শাজাহানের সঙ্গে। কারওয়ান বাজার কাঠপট্টিসংলগ্ন লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে। এই প্রতিবেদককে দেখে বলেন, ‘কত বার যে এই লাইনে উচ্ছেদ হইল! ভাঙে, সাত দিনের মইধ্যে আবার ঘর উঠে। আর মাইনষ্যের কাছ থিকা টাকা নেয়। এইভাবেই চলব। আপনে আবার সাত দিন পর আইয়া দেইখেন, কথাডা ঠিক কইলাম কি না।’ স্মিত হেসে শাজাহান শেষ করেন, ‘বুঝলেন, ভাঙাগড়ার জীবন আমাদের!’
No comments