সীমান্ত হাট-সচল থাকুক সম্প্রীতির এই হাট
গত দুই বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখায় দুটি যৌথ হাট অনেক উদ্দীপনা নিয়ে চালু হলেও এখন যে তা স্তিমিত হয়ে এসেছে, শনিবার প্রকাশিত সমকালের বিশেষ আয়োজনে তা স্পষ্ট।
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী হাটটি পরিণত হয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের একতরফা পাইকারি বাজারে। আবার সুনামগঞ্জের ডালুরা-বালাট সীমান্ত হাটে কড়াকড়ি আরোপ করায় কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় ক্রেতা মিলছে না। পচে যাচ্ছে কাঁচামাল। হাটগুলো চালুর উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত চোরাচালান বন্ধ করে দুই পাশের মানুষের মধ্যে স্থানীয়ভাবে বৈধ বাণিজ্যিক বিনিময় বাড়ানো। প্রতি সপ্তাহে অভিন্ন স্থানে দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতার একত্র হওয়ার সাংস্কৃতিক মূল্যও অপরিসীম। কিন্তু বাণিজ্যই যদি অসম কিংবা প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ থাকে, তাহলে সেই সংস্কৃতির রঙ ফিকে হতে সময় লাগে না। দুর্ভাগ্যবশত, সীমান্ত হাট দুটিতে সেটাই ঘটেছে। অন্যদিকে আরও চারটি সীমান্ত হাট বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ধরনের বিনিময়স্থলের সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে আমরা। কিন্তু বিদ্যমান দুই হাট কীভাবে কার্যকর হতে পারে, সেদিকে আগে মনোযোগ দেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে ভারতের দিক থেকে পণ্যের 'নেগেটিভ লিস্ট' বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। আমাদের সরকারের উচিত হবে হাটে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। ভারতীয় বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রিতে আগ্রহী হওয়ায় বাংলাদেশের খুচরা ক্রেতারা বিপাকে পড়ছেন। পাশাপাশি শুল্কমুক্ত পাইকারি বাজারের সুবিধা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে তা খুচরা মূল্যে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। এতে করে হাট চালুর মাধ্যমে চোরাচালান রোধের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হতে বসেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে পাইকারি বিক্রি নিরুৎসাহিত করা। ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়াও হাটগুলো নিয়ে উদ্দীপনা কমে আসার একটি কারণ। ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি অবাধ করা যায় কি-না, ভেবে দেখা হোক। অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজনের ফলে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সীমান্ত হাটের মাধ্যমে তা কমে আসবে, এটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই হাটেও যদি থাকে বিধিনিষেধ ও কড়াকড়ির বাড়াবাড়ি, তাহলে সম্প্রীতির বন্ধন মজবুত হবে কীভাবে?
No comments