স্মরণ-মহীয়সী রোকেয়া by আহমেদ রিয়াজ
বিয়ের আগে কখনো কখনো বাবার নাম যুক্ত থাকে মেয়েদের নামের শেষে। আর বিয়ের পর স্বামীর নাম। যেন যেকোনো মেয়ের পরিচয় তার বাবা অথবা স্বামীর মাধ্যমে। বেগম রোকেয়া কিন্তু ব্যতিক্রম।
তাঁর নামের শেষে থাকা 'সাখাওয়াৎ হোসেন'ই বরং বিখ্যাত হয়ে হয়েছেন এই মহীয়সী নারীর স্বামী হওয়ার কারণে। বেগম রোকেয়া সম্পর্কে মোহিতলাল মজুমদারের মন্তব্য- 'একালে হিন্দু সমাজেও এমন নারী-চরিত্র বিরল। কিন্তু তজ্জন্য হিন্দু আমি কিছুমাত্র লজ্জা বোধ করিতেছি না, কারণ বেগম রোকেয়া শুধুই মুসলিম মহিলা নহেন, তাঁহার জীবনবৃত্ত পাঠ করিয়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিয়াছে যে তিনি খাঁটি বাঙালির মেয়ে।'
অথচ বাপের বাড়িতে বাংলা শেখার অনুমতি ছিল না তাঁর। তখনকার মুসলিম সমাজব্যবস্থাই ছিল এমন। ঘরে কেবল আরবি আর উর্দু শেখানো হতো। কিন্তু তিনি তো বেগম রোকেয়া। রোকেয়া আর তাঁর বোন করিমুননেসা গোপনে বাংলা শিখতেন বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের কাছে। বাবা জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার ছিলেন জমিদার। মা রাহাতুননেসা চৌধুরানী। রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে।
গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে চলে যেতেন বড় ভাইয়ের ঘরে। তারপর মোমের আলোয় বাংলা আর ইংরেজি শিখতেন। তাঁর জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল অসীম।
১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে। বিপত্নীক সাখাওয়াতের বয়স তখন প্রায় ৪০ বছর। রোকেয়ার কাছে বুড়ো মানুষ। তবে মুক্তমনা। রোকেয়াকে তিনি লেখালেখিতে প্রচুর উৎসাহ দিতেন। স্বামীর যত্নে তিনি ভালো ইংরেজিও শিখেছিলেন। রোকেয়ার নারীমুক্তির ভাবনাচিন্তারও সমর্থক ছিলেন সাখাওয়াৎ হোসেন। বেগম রোকেয়া নিজেও বলেছেন, 'আমার শ্রদ্ধেয় স্বামী অনুকূল না হইলে আমি কখনোই প্রকাশ্য সংবাদপত্রে লিখিতে সাহসী হইতাম না।'
তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ 'সুলতানাস ড্রিম'। পরে বাংলায় তা অনুবাদ হয়- 'সুলতানার স্বপ্ন' নামে। বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য রচনা। তাঁর অন্যান্য বই হচ্ছে- 'পদ্মরাগ', 'মতিচুর', 'অবরোধবাসিনী'। প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প, যা কিছুই তিনি লিখেছেন, সবখানেই নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর নারীর সম-অধিকারের কথা বলেছেন। তাঁর দর্শন ছিল- শিক্ষা আর পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া নারীমুক্তি অসম্ভব। এ ছাড়া সমাজের নানা অসংগতির কথা তো ছিলই। তাঁর শেষ লেখা 'নারীর অধিকার' লিখেছিলেন ১৯৩২ সালের ৮ ডিসেম্বর। পরদিন ৯ ডিসেম্বর ফজরের আজানের পর মারা যান এই বাঙালি মহীয়সী।
এক চিঠিতে নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'আমার মতো দুর্ভাগিনী অপদার্থ বোধ হয় এ দুনিয়ায় আর একটা জন্মায়নি। শৈশবে বাপের আদর পাইনি। বিবাহিত জীবনে কেবল স্বামীর রোগের সেবা করেছি। দুবার মা হয়েছিলুম, তাদেরও প্রাণ ভরে কোলে নিতে পারিনি। আমি আমার ব্যর্থ জীবন নিয়ে হেসেখেলে দিন গুনছি।'
নিজেকে নিজে যতই ব্যর্থ বলুন, বেগম রোকেয়ার আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাঁর সমসাময়িক ও চিরকালের নারীসমাজ।
আহমেদ রিয়াজ
অথচ বাপের বাড়িতে বাংলা শেখার অনুমতি ছিল না তাঁর। তখনকার মুসলিম সমাজব্যবস্থাই ছিল এমন। ঘরে কেবল আরবি আর উর্দু শেখানো হতো। কিন্তু তিনি তো বেগম রোকেয়া। রোকেয়া আর তাঁর বোন করিমুননেসা গোপনে বাংলা শিখতেন বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের কাছে। বাবা জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার ছিলেন জমিদার। মা রাহাতুননেসা চৌধুরানী। রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে।
গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে চলে যেতেন বড় ভাইয়ের ঘরে। তারপর মোমের আলোয় বাংলা আর ইংরেজি শিখতেন। তাঁর জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল অসীম।
১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে। বিপত্নীক সাখাওয়াতের বয়স তখন প্রায় ৪০ বছর। রোকেয়ার কাছে বুড়ো মানুষ। তবে মুক্তমনা। রোকেয়াকে তিনি লেখালেখিতে প্রচুর উৎসাহ দিতেন। স্বামীর যত্নে তিনি ভালো ইংরেজিও শিখেছিলেন। রোকেয়ার নারীমুক্তির ভাবনাচিন্তারও সমর্থক ছিলেন সাখাওয়াৎ হোসেন। বেগম রোকেয়া নিজেও বলেছেন, 'আমার শ্রদ্ধেয় স্বামী অনুকূল না হইলে আমি কখনোই প্রকাশ্য সংবাদপত্রে লিখিতে সাহসী হইতাম না।'
তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ 'সুলতানাস ড্রিম'। পরে বাংলায় তা অনুবাদ হয়- 'সুলতানার স্বপ্ন' নামে। বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য রচনা। তাঁর অন্যান্য বই হচ্ছে- 'পদ্মরাগ', 'মতিচুর', 'অবরোধবাসিনী'। প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প, যা কিছুই তিনি লিখেছেন, সবখানেই নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর নারীর সম-অধিকারের কথা বলেছেন। তাঁর দর্শন ছিল- শিক্ষা আর পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া নারীমুক্তি অসম্ভব। এ ছাড়া সমাজের নানা অসংগতির কথা তো ছিলই। তাঁর শেষ লেখা 'নারীর অধিকার' লিখেছিলেন ১৯৩২ সালের ৮ ডিসেম্বর। পরদিন ৯ ডিসেম্বর ফজরের আজানের পর মারা যান এই বাঙালি মহীয়সী।
এক চিঠিতে নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'আমার মতো দুর্ভাগিনী অপদার্থ বোধ হয় এ দুনিয়ায় আর একটা জন্মায়নি। শৈশবে বাপের আদর পাইনি। বিবাহিত জীবনে কেবল স্বামীর রোগের সেবা করেছি। দুবার মা হয়েছিলুম, তাদেরও প্রাণ ভরে কোলে নিতে পারিনি। আমি আমার ব্যর্থ জীবন নিয়ে হেসেখেলে দিন গুনছি।'
নিজেকে নিজে যতই ব্যর্থ বলুন, বেগম রোকেয়ার আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাঁর সমসাময়িক ও চিরকালের নারীসমাজ।
আহমেদ রিয়াজ
No comments