রঙ্গব্যঙ্গ-সরকারের আগামী বছর কেমন যাবে? by মোস্তফা কামাল
বর্তমান সরকারের যাত্রা শুরু ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। জন্ম তারিখ অনুযায়ী এই সরকার মকর রাশির জাতক। আগামী বছর সরকার শেষ বর্ষে পা রাখবে। শেষ বছরটা সরকারের কেমন যাবে, তা এখানে তুলে ধরা হলো। প্রিয় পাঠক, এটি একটি কাল্পনিক ভবিষ্যদ্বাণী। আপনারাও বিষয়টি নিয়ে কল্পনা করতে পারেন।
প্রতিটি সরকারই সাধারণত শেষ বছরে এসে নানামুখী চাপে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়ে। বিদেশি শক্তির চাপ, গোয়েন্দাদের অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক চাপ নিয়ে বেসামাল হয়ে যায় সরকার। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে নির্বাচনে জেতার কলাকৌশল আবিষ্কার করে। প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে ঢেলে সাজায়। পরে দেখা যায়, সেই প্রশাসনই ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ের রোডম্যাপ তৈরি করে। বর্তমান সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়।
মকর রাশির জাতক বর্তমান সরকারকে আগামী বছর বিরোধী দলের বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে। বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথ দখলে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। অন্যদিকে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নাশকতার পথ বেছে নেবে। একেবারেই বেপরোয়া হয়ে উঠবে জামায়াত। এ প্রক্রিয়া চলতি সপ্তাহ থেকেই ব্যাপকভাবে শুরু হবে। এর ফলে সরকার অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। একপর্যায়ে সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হতে পারে।
এ মুহূর্তে সরকারের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে না পারলে অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে না পারাও সরকারের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া দফায় দফায় জ্বালানির দাম বাড়িয়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য কখনোই নিয়ন্ত্রণে ছিল না। দেশে বেকার সমস্যার সমাধানে সরকার ব্যর্থ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের খুব একটা সাফল্য নেই। এগুলোর ব্যাপারে জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
শেষ বছরে এসে সরকার তাড়াহুড়া করে কিছু কাজ করতে চাইবে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার গোঁজামিল দেওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার থাকবে। এ কারণে গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব আরো বাড়বে। সরকারের জনপ্রিয়তাও অনেকটাই কমে যাবে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে নতুন প্রজন্মের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনার প্রতি সর্ববৃহৎ শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়; যদিও সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কর্মকর্তা পর্যায়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। দূরত্ব কমানোর কোনো উদ্যোগ সরকারের দিক থেকে নেওয়া না-ও হতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যেতে পারেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। শুধু সোনিয়া গান্ধী পরিবারের সঙ্গে শেখ পরিবারের সম্পর্কের সুযোগ পাবে বর্তমান সরকার।
শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের সমর্থন শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের হাতে সময় খুবই কম। এই অল্প সময়ের মধ্যে সরকার যদি চৌকস সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে আগামীতে উতরে যেতে পারে। তা না হলে জনসমর্থনের পারদ আরো নিচে নেবে যাবে। এর ফলে তৃতীয় কোনো শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠবে। রাজনীতির এ উত্তাপ-উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। দেশের রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থাও জারি করতে পারে। এর রেশ জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত গড়াতে পারে।
আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ড. কামাল ও বি চৌধুরীর জোট আরো লাইমলাইটে চলে আসবে। এ জোটে প্রধান দুই দলের অনেক নেতা যোগ দিতে পারেন। নাগরিক সমাজের অনেক প্রতিনিধিও যুক্ত হতে পারেন। ফলে সরকারের জন্য এ জোট একটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটাতে পারে।
সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বেফাঁস কথাবার্তায় সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। কারো কারো ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে। সরকারপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের ভাবমূর্তির ওপরও আঘাত হানার চেষ্টা হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হতে পারে। এটা সরকারের জন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে। সরকারকে এখন অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। অন্যথায় সরকার নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই পড়ে মরবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলে রাজনীতি তাঁর নিয়ন্ত্রণেও চলে আসতে পারে। সব কিছুই নির্ভর করছে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর; যদিও ক্ষমতায় থাকলে বাইরের অবস্থা বোঝা যায় না। জননেতারা সত্যি সত্যিই টের পান। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পায়ের তলায় মাটি কতটা আছে, তা যদি টের পান তাহলে বুঝব, সরকার নিশ্চয়ই সম্ভাব্য বিপদগুলো সম্পর্কে সচেতন।
সরকার কিভাবে তার বিপদ কাটিয়ে ওঠে তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকব। সবাই ভালো থাকুন এবং দেশের জন্য প্রার্থনা করুন। আমিন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
মকর রাশির জাতক বর্তমান সরকারকে আগামী বছর বিরোধী দলের বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে। বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথ দখলে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। অন্যদিকে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নাশকতার পথ বেছে নেবে। একেবারেই বেপরোয়া হয়ে উঠবে জামায়াত। এ প্রক্রিয়া চলতি সপ্তাহ থেকেই ব্যাপকভাবে শুরু হবে। এর ফলে সরকার অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। একপর্যায়ে সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হতে পারে।
এ মুহূর্তে সরকারের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে না পারলে অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে না পারাও সরকারের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া দফায় দফায় জ্বালানির দাম বাড়িয়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য কখনোই নিয়ন্ত্রণে ছিল না। দেশে বেকার সমস্যার সমাধানে সরকার ব্যর্থ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের খুব একটা সাফল্য নেই। এগুলোর ব্যাপারে জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
শেষ বছরে এসে সরকার তাড়াহুড়া করে কিছু কাজ করতে চাইবে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার গোঁজামিল দেওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার থাকবে। এ কারণে গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব আরো বাড়বে। সরকারের জনপ্রিয়তাও অনেকটাই কমে যাবে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে নতুন প্রজন্মের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনার প্রতি সর্ববৃহৎ শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়; যদিও সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কর্মকর্তা পর্যায়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। দূরত্ব কমানোর কোনো উদ্যোগ সরকারের দিক থেকে নেওয়া না-ও হতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যেতে পারেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। শুধু সোনিয়া গান্ধী পরিবারের সঙ্গে শেখ পরিবারের সম্পর্কের সুযোগ পাবে বর্তমান সরকার।
শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের সমর্থন শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের হাতে সময় খুবই কম। এই অল্প সময়ের মধ্যে সরকার যদি চৌকস সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে আগামীতে উতরে যেতে পারে। তা না হলে জনসমর্থনের পারদ আরো নিচে নেবে যাবে। এর ফলে তৃতীয় কোনো শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠবে। রাজনীতির এ উত্তাপ-উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। দেশের রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থাও জারি করতে পারে। এর রেশ জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত গড়াতে পারে।
আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ড. কামাল ও বি চৌধুরীর জোট আরো লাইমলাইটে চলে আসবে। এ জোটে প্রধান দুই দলের অনেক নেতা যোগ দিতে পারেন। নাগরিক সমাজের অনেক প্রতিনিধিও যুক্ত হতে পারেন। ফলে সরকারের জন্য এ জোট একটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটাতে পারে।
সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বেফাঁস কথাবার্তায় সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। কারো কারো ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে। সরকারপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের ভাবমূর্তির ওপরও আঘাত হানার চেষ্টা হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হতে পারে। এটা সরকারের জন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে। সরকারকে এখন অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। অন্যথায় সরকার নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই পড়ে মরবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলে রাজনীতি তাঁর নিয়ন্ত্রণেও চলে আসতে পারে। সব কিছুই নির্ভর করছে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর; যদিও ক্ষমতায় থাকলে বাইরের অবস্থা বোঝা যায় না। জননেতারা সত্যি সত্যিই টের পান। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পায়ের তলায় মাটি কতটা আছে, তা যদি টের পান তাহলে বুঝব, সরকার নিশ্চয়ই সম্ভাব্য বিপদগুলো সম্পর্কে সচেতন।
সরকার কিভাবে তার বিপদ কাটিয়ে ওঠে তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকব। সবাই ভালো থাকুন এবং দেশের জন্য প্রার্থনা করুন। আমিন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments