বিমানবন্দরকেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাচালান: ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী চিহ্নিত, তিনজন গ্রেপ্তার- গোয়েন্দা, শুল্ক ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মী জড়িত by নজরুল ইসলাম
স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন ১০ জনকে শনাক্ত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চিহ্নিত এসব ব্যক্তি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) নিরাপত্তা শাখা ও শুল্ক বিভাগে কর্মরত।
এ ছাড়া দুবাইকেন্দ্রিক এই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত চারজন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় (মানি এক্সচেঞ্জ) প্রতিষ্ঠানের মালিককেও শনাক্ত করেছে ডিবি।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলার শৌচাগার থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী মনোয়ারুলকে আটক করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা (এপিবিএন)। পরে তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে ওই শৌচাগারের কমোড থেকে ১৩ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের ১১৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার এবং এর সঙ্গে জড়িত বিমানবন্দরে কর্মরত এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আবদুল আজিজ শাহেক গ্রেপ্তার করা হয়।
এই দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী কাজী আবুল কালাম ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী দেব কুমার দাসকে। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক নিজাম খন্দকারকে। গ্রেপ্তার হওয়া এই চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে তাঁদের সম্পৃক্ততাসহ আর কারা কারা জড়িত, তাঁদের নাম বলেছেন। চারজনই এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় এপিবিএনের করা মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, চক্রের সদস্যরা দুবাই থেকে যাত্রী সেজে স্বর্ণের চালান নিয়ে আসে। ঢাকায় বিমান অবতরণের পর স্বর্ণভর্তি ব্যাগ বিমানবন্দরের নির্দিষ্ট শৌচাগারের ভেতর নিয়ে রাখত। এরপর সেখান থেকে সিভিল এভিয়েশনের জড়িত কর্মীরা তা শুল্ক হল পর্যন্ত বহন করে আনতেন। এ কাজে জড়িত ছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া এনএসআই কর্মকর্তা আজিজ শাহ্ও। আর, শুল্ক হলে এলে যাতে ওই ব্যাগ তল্লাশি করা না হয়, তা দেখভাল করতেন চক্রে জড়িত শুল্ক কর্মকর্তারা। কোনো কারণে স্ক্যানিং মেশিনে ব্যাগ দেওয়া হলেও সমস্যা হতো না। কারণ, স্ক্যানিং মেশিন অপারেটর রেখা পারভিন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি পলাতক। তাঁকে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিমানবন্দরের ভেতরে সহযোগিতাকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের সবার চালানপ্রতি ঘুষ দেওয়া হয় বলে গ্রেপ্তার একটি চক্রের প্রধান দেব কুমার দাস স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি রিমান্ডে ও পরে আদালতে বলেন, স্বর্ণের চালানটি বিমানবন্দরের বাইরে আনার পর চক্রের অন্য সদস্যরা তা গ্রহণ করেন। আবার অনেক সময় বিমানবন্দরের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় পাস নিয়ে টার্মিনালের ভেতরে গিয়েও তাঁরা চালান গ্রহণ করতেন বলে তিনি জানান।
ডিবি সূত্র জানায়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে শুল্ক বিভাগের দুজন রাজস্ব কর্মকর্তা (একজন নারী, আরেকজন পুরুষ), বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শাখার সাবেক একজন পদস্থ কর্মকর্তাসহ (বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত) আরও চার কর্মীর নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা শাখার চার কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিদেশ থেকে আনা এসব স্বর্ণ একশ্রেণীর স্বর্ণ-দোকানি কিনে থাকেন। বায়তুল মোকাররম বিপণিবিতান ও তাঁতীবাজারের এমন নয়জন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন।
মানি এক্সচেঞ্জের আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান: ডিবি সূত্র জানায়, তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঢাকার পুরানা পল্টনের সাব্বির টাওয়ারে অবস্থিত ঢাকা মানি এক্সচেঞ্জ, দিলকুশার ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জ, গুলশান ২ নম্বরের কারেন্সি ইন কারেন্সি ও মিরপুর ১০ নম্বরের প্যারামাউন্ট মানি এক্সচেঞ্জ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, তিনিই এ প্রতিষ্ঠান চালান। এর মালিক তাঁর মামা নবী নেওয়াজ খান সিরাজগঞ্জ শহরে থাকেন।
দিলকুশায় ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি একসময় মুদ্রা লেনদেনে দালালি করতেন। পরে তাঁকে ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক করা হয়। মিজানের তৎপরতার কারণে এই প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে।
আসাদুজ্জামান দাবি করেন, মিজান ২০০৭ সালে এক যুবকের সঙ্গে মারামারি করে চলে যান। পরে একদিন এসে পরিচালকের পদ থেকে মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা বলে চলে যান।
জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) ও স্বর্ণ চোরাচালান মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত এনএসআই, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কয়েকটি মুদ্রা বিনিময়কারী ব্যবসায়ীর (মানি এক্সচেঞ্জ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ছাড়া দুবাইকেন্দ্রিক এই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত চারজন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় (মানি এক্সচেঞ্জ) প্রতিষ্ঠানের মালিককেও শনাক্ত করেছে ডিবি।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলার শৌচাগার থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী মনোয়ারুলকে আটক করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা (এপিবিএন)। পরে তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে ওই শৌচাগারের কমোড থেকে ১৩ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের ১১৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার এবং এর সঙ্গে জড়িত বিমানবন্দরে কর্মরত এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আবদুল আজিজ শাহেক গ্রেপ্তার করা হয়।
এই দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী কাজী আবুল কালাম ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী দেব কুমার দাসকে। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক নিজাম খন্দকারকে। গ্রেপ্তার হওয়া এই চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে তাঁদের সম্পৃক্ততাসহ আর কারা কারা জড়িত, তাঁদের নাম বলেছেন। চারজনই এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় এপিবিএনের করা মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, চক্রের সদস্যরা দুবাই থেকে যাত্রী সেজে স্বর্ণের চালান নিয়ে আসে। ঢাকায় বিমান অবতরণের পর স্বর্ণভর্তি ব্যাগ বিমানবন্দরের নির্দিষ্ট শৌচাগারের ভেতর নিয়ে রাখত। এরপর সেখান থেকে সিভিল এভিয়েশনের জড়িত কর্মীরা তা শুল্ক হল পর্যন্ত বহন করে আনতেন। এ কাজে জড়িত ছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া এনএসআই কর্মকর্তা আজিজ শাহ্ও। আর, শুল্ক হলে এলে যাতে ওই ব্যাগ তল্লাশি করা না হয়, তা দেখভাল করতেন চক্রে জড়িত শুল্ক কর্মকর্তারা। কোনো কারণে স্ক্যানিং মেশিনে ব্যাগ দেওয়া হলেও সমস্যা হতো না। কারণ, স্ক্যানিং মেশিন অপারেটর রেখা পারভিন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি পলাতক। তাঁকে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিমানবন্দরের ভেতরে সহযোগিতাকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের সবার চালানপ্রতি ঘুষ দেওয়া হয় বলে গ্রেপ্তার একটি চক্রের প্রধান দেব কুমার দাস স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি রিমান্ডে ও পরে আদালতে বলেন, স্বর্ণের চালানটি বিমানবন্দরের বাইরে আনার পর চক্রের অন্য সদস্যরা তা গ্রহণ করেন। আবার অনেক সময় বিমানবন্দরের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় পাস নিয়ে টার্মিনালের ভেতরে গিয়েও তাঁরা চালান গ্রহণ করতেন বলে তিনি জানান।
ডিবি সূত্র জানায়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে শুল্ক বিভাগের দুজন রাজস্ব কর্মকর্তা (একজন নারী, আরেকজন পুরুষ), বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শাখার সাবেক একজন পদস্থ কর্মকর্তাসহ (বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত) আরও চার কর্মীর নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা শাখার চার কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিদেশ থেকে আনা এসব স্বর্ণ একশ্রেণীর স্বর্ণ-দোকানি কিনে থাকেন। বায়তুল মোকাররম বিপণিবিতান ও তাঁতীবাজারের এমন নয়জন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন।
মানি এক্সচেঞ্জের আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান: ডিবি সূত্র জানায়, তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঢাকার পুরানা পল্টনের সাব্বির টাওয়ারে অবস্থিত ঢাকা মানি এক্সচেঞ্জ, দিলকুশার ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জ, গুলশান ২ নম্বরের কারেন্সি ইন কারেন্সি ও মিরপুর ১০ নম্বরের প্যারামাউন্ট মানি এক্সচেঞ্জ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, তিনিই এ প্রতিষ্ঠান চালান। এর মালিক তাঁর মামা নবী নেওয়াজ খান সিরাজগঞ্জ শহরে থাকেন।
দিলকুশায় ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি একসময় মুদ্রা লেনদেনে দালালি করতেন। পরে তাঁকে ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক করা হয়। মিজানের তৎপরতার কারণে এই প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে।
আসাদুজ্জামান দাবি করেন, মিজান ২০০৭ সালে এক যুবকের সঙ্গে মারামারি করে চলে যান। পরে একদিন এসে পরিচালকের পদ থেকে মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা বলে চলে যান।
জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) ও স্বর্ণ চোরাচালান মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত এনএসআই, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কয়েকটি মুদ্রা বিনিময়কারী ব্যবসায়ীর (মানি এক্সচেঞ্জ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
No comments