মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই -দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-মাঠের পাশে চা বেচেন মনু মিয়া by ওমর ফারুক মিয়াজী
রতিদিন সাতসকালে গ্রামের স্কুলের মাঠের পাশে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া অস্থায়ী দোকানে চলে যান ৬৭ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়া। সঙ্গে থাকে একটি কেটলি আর কয়েকটি চায়ের কাপ। তাঁর স্ত্রী ওজুফা বেগমও গ্রাম থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিয়ে আসেন সকাল সকাল।
এরপর তিনি বাড়ি চলে যান। মনু মিয়ার বাড়ির পাশে বাহেরচর একে ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়। সকালে ছোট হাট বসে ওই বিদ্যালয়ের মাঠে। মাঠের পাশে গাছতলায় চা বিক্রি করেন মনু মিয়া। যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যের মুখে কিছু খাবার জোটে। এমন কষ্টের মধ্যেও স্বাধীন দেশে দুই বেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকায় গর্বিত এই মুক্তিযোদ্ধা।
দাউদকান্দি উপজেলা সদর থেকে নৌকাযোগে ছয় কিলোমিটার পেরিয়ে বাহেরচর গ্রাম। সেই গ্রামে দোচালা টিনের ছাউনি আর পাটখড়ির বেড়ার ঘরে কোনোমতে জীবন কাটে মনু মিয়ার। একসময় জমি ছিল, নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৩ শতাংশ জমিতে নড়বড়ে একটি ঘর। একসময় শরীরে জোর ছিল। নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়স বাড়ায় আগের মতো কাজ করার শক্তি নেই তাঁর। তাই ২০ বছর ধরে চা বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি। মাঠের পাশে গাছের নিচে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া অস্থায়ী দোকান মনু মিয়ার। বর্ষাকালে সেখানে বসে আর চা বিক্রি করতে পারেন না। ফলে পুরো মৌসুমটা তাঁর কাটে আরো কষ্টে।
মনু মিয়ার দুই ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রী আছেন। এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। মনু মিয়া বলেন, 'ছোড ছেলে আমার সাথে চা বেচে। দুই মেয়েই বিয়ের উপযুক্ত, কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারতেছি না। চা বিক্রি কইরা যে টাকা পাই তা দিয়া কোনোমতে সংসার চলে। আল্লাহ তওফিক দিলে আর কারো সহযোগিতা পাইলে মেয়ে দুইডারে বিয়া দিতে পারলেই শান্তি।' তিনি আরো বলেন, 'বর্ষাকালে চা বিক্রি করতে না পারলেও আগের সময়ের মতো আর না খাইয়া থাকতে হয় না। সম্মানী ভাতা যা পাই, তা দিয়া কোনোমতে চলে। বঙ্গবন্ধু যদি আজ বাঁইচা থাকতো তাইলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এত কষ্ট থাকত না।'
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে মনু মিয়া বলেন, '১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রেডিওতে শুইনা প্রতিজ্ঞা করলাম, দেশকে হানাদারমুক্ত করবো। দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন ভয়ে কেউ যুদ্ধে যেতে চায়নি। আমি বাবা-মাকে না বলেই যুদ্ধে চইলা যাই। দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউছার আহমেদের সাথে যুদ্ধে গেছিলাম। আগরতলায় ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে যোগ দিছিলাম। দাউদকান্দি অঞ্চলে যুদ্ধ করি। বৃহত্তর দাউদকান্দির বর্তমান তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি যুদ্ধে পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করি। তারপর গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ হয় খুবই কঠিন। খুব ভোর বেলা শুরু হয় মুখোমুখি যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা কেউ কিছুই খায়নি তখনো। সবাই অস্ত্র হাতে গুলি শুরু করলো। পাক হানাদাররাও গুলি করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমরাও পাল্টা গুলি করে অর্ধশত পাক সৈন্যকে খতম কইরা ফেললাম। ধীরে ধীরে তারা পিছু হটতে লাগলো। পাক সৈন্যরা আমাদের সাথে টিকতে না পাইরা গোমতী-মেঘনা নদী দিয়া পালাইয়া যায়। এ যুদ্ধে আমাদের ১৫-২০ জন সহযোদ্ধা শহীদ হয়। সেই স্মৃতি এখনো ভুলতে পারি নাই।'
দাউদকান্দি উপজেলা সদর থেকে নৌকাযোগে ছয় কিলোমিটার পেরিয়ে বাহেরচর গ্রাম। সেই গ্রামে দোচালা টিনের ছাউনি আর পাটখড়ির বেড়ার ঘরে কোনোমতে জীবন কাটে মনু মিয়ার। একসময় জমি ছিল, নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৩ শতাংশ জমিতে নড়বড়ে একটি ঘর। একসময় শরীরে জোর ছিল। নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়স বাড়ায় আগের মতো কাজ করার শক্তি নেই তাঁর। তাই ২০ বছর ধরে চা বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি। মাঠের পাশে গাছের নিচে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া অস্থায়ী দোকান মনু মিয়ার। বর্ষাকালে সেখানে বসে আর চা বিক্রি করতে পারেন না। ফলে পুরো মৌসুমটা তাঁর কাটে আরো কষ্টে।
মনু মিয়ার দুই ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রী আছেন। এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। মনু মিয়া বলেন, 'ছোড ছেলে আমার সাথে চা বেচে। দুই মেয়েই বিয়ের উপযুক্ত, কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারতেছি না। চা বিক্রি কইরা যে টাকা পাই তা দিয়া কোনোমতে সংসার চলে। আল্লাহ তওফিক দিলে আর কারো সহযোগিতা পাইলে মেয়ে দুইডারে বিয়া দিতে পারলেই শান্তি।' তিনি আরো বলেন, 'বর্ষাকালে চা বিক্রি করতে না পারলেও আগের সময়ের মতো আর না খাইয়া থাকতে হয় না। সম্মানী ভাতা যা পাই, তা দিয়া কোনোমতে চলে। বঙ্গবন্ধু যদি আজ বাঁইচা থাকতো তাইলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এত কষ্ট থাকত না।'
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে মনু মিয়া বলেন, '১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রেডিওতে শুইনা প্রতিজ্ঞা করলাম, দেশকে হানাদারমুক্ত করবো। দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন ভয়ে কেউ যুদ্ধে যেতে চায়নি। আমি বাবা-মাকে না বলেই যুদ্ধে চইলা যাই। দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউছার আহমেদের সাথে যুদ্ধে গেছিলাম। আগরতলায় ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে যোগ দিছিলাম। দাউদকান্দি অঞ্চলে যুদ্ধ করি। বৃহত্তর দাউদকান্দির বর্তমান তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি যুদ্ধে পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করি। তারপর গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ হয় খুবই কঠিন। খুব ভোর বেলা শুরু হয় মুখোমুখি যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা কেউ কিছুই খায়নি তখনো। সবাই অস্ত্র হাতে গুলি শুরু করলো। পাক হানাদাররাও গুলি করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমরাও পাল্টা গুলি করে অর্ধশত পাক সৈন্যকে খতম কইরা ফেললাম। ধীরে ধীরে তারা পিছু হটতে লাগলো। পাক সৈন্যরা আমাদের সাথে টিকতে না পাইরা গোমতী-মেঘনা নদী দিয়া পালাইয়া যায়। এ যুদ্ধে আমাদের ১৫-২০ জন সহযোদ্ধা শহীদ হয়। সেই স্মৃতি এখনো ভুলতে পারি নাই।'
No comments