সংলাপের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করুন- সংসদের চতুর্দশ অধিবেশন

জাতীয় রাজনীতিকে সংসদে টেনে আনার আরেকটি সুযোগ সরকারি ও বিরোধী দলের সামনে আসছে। নবম সংসদের ১৪তম অধিবেশন বসবে ৪ সেপ্টেম্বর। এই অধিবেশনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের রুলস অব গেম চূড়ান্ত করতে সচেষ্ট হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।


অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপিকে আমন্ত্রণ এবং নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা প্রস্তুতকরণ—এ দুটিই রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সম্প্রতি। বিরোধী দল এই অধিবেশনকে তাদের চলমান আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করবে কি না, তা অনিশ্চিত। তারা সর্বশেষ সংসদে যোগ দিয়েছিল গত মার্চে, ১২তম অধিবেশনে। বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তাঁরা প্রস্তুত করছেন। এখন কি আমরা আশা করতে পারি যে বিএনপি এ-সংক্রান্ত লিখিত রূপরেখা সংসদের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করার সুযোগ নেবে?
ক্ষমতাসীনেরা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর থেকে বলে আসছে, বিরোধী দল সংসদে এসে যেকোনো প্রস্তাব পেশ করতে পারে, এমনকি প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনও করতে পারে। সরকারি দলের এই মনোভাবকে কৌশলগত গণ্য করা যেতে পারে। বিরোধী দলও সংসদে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল দিয়ে নিজেদের একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নিতে পারে।
সরকারি দল এখন যুক্তি দিতে পারছে যে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যখন বলা হলো, আগামী দুই মেয়াদে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে, তখন তারা সংসদে কোনো প্রস্তাব দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের ওপর বাধানিষেধ সৃষ্টি করার পর বিরোধী দলের একটা ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারত। কিন্তু সেটা না করে এত দিন তারা একগুঁয়েমি মনোভাব দেখিয়ে আসছে।
বিএনপি এখন বলছে, তারা শুধু বিলুপ্ত হওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর ভিত্তিতে নির্দলীয় সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। তবে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া গেলেও সেটাকে তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা যদি ধরেও নিই যে ক্ষমতাসীন দল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আগামী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজি, তাহলেও সংকট মিটছে না। কারণ, এখন আর বিচারপতিদের সম্পৃক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুযোগ নেওয়া যাবে না। সরকারি দল যখন বিরোধী দলকে সংসদে যোগদানে এতটাই জোর দিচ্ছে, তখন সেই শর্ত বিরোধী দলের পূরণ করা দরকার।
পঞ্চম সংসদের বিরোধী দল জানত যে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করবে না, তদুপরি তারা বিল জমা দিয়েছিল। আমরা আশা করব, আগামী অধিবেশন সামনে রেখে সরকারি দল আলাপ-আলোচনাবান্ধব একটি সহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতি অসূয়াপ্রসূত মনোভাব পরিহারে সরকারি দলের দায় অনেক বেশি।

No comments

Powered by Blogger.