রাষ্ট্রপতিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার আশঙ্কা বিএনপির by তানভীর সোহেল

রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, সরকার শেষ মুহূর্তে বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার জন্য বিএনপির দেখানো এই পন্থা অবলম্বন করতে পারে। এমন কিছু ইঙ্গিত-আলামত পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন তাঁরা।


দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওমরাহ হজ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের আলোচনা হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের উপায় খুঁজছে বিএনপি। দলটি সংবিধানবিশেষজ্ঞ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ২ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করাটা ভুল ছিল বলে খালেদা জিয়াসহ বেশির ভাগ সদস্য একমত হন। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ওই পরিস্থিতিতে ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা করা সঠিক ছিল বলে দাবি করলে, খালেদা জিয়া তা সরাসরি নাকচ করে দেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর আলোকে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা করার ব্যাপারে বিএনপি আগের অবস্থান থেকেও সরে এসেছে। দলটি মনে করছে, নির্দলীয় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর ত্রয়োদশ সংশোধনীর আলোকে এটা করা হলে তা বিএনপির জন্য ভালো হবে না। সরকারের হাতে এর অপব্যবহারের ক্ষমতা থাকবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তাঁর দলের অবস্থান সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অনুরূপ। তাঁরা চান তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হোক। তবে প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো প্রস্তাব তৈরি করেনি। এ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি ইতিমধ্যে সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। খায়রুল হকও তাঁর রায়ে বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থেকে দূরে রাখার বিষয়ে বলেছেন। তাই ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হলে বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে ওই সরকারের উপদেষ্টা করতে আওয়ামী লীগের জন্য কোনো অসুবিধা হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করলে স্বাভাবিক কারণেই বিএনপি তা মানবে না। এতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ কেন ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মানেনি; বিএনপিও সেই উদাহরণ টেনে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
বিএনপির এই শঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো দিবাস্বপ্ন দেখে বিএনপির লাভ হবে না। যে প্রক্রিয়ায় হোক নির্বাচনকালীন নির্বাচিত ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হতে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছিল। এটা জনগণ রুখে দিয়েছে। এটা ভুল না ঠিক, তা বলে লাভ নেই।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ উচ্চ আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে রাজনৈতিক সংকট দূর হবে। তাই বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তারপর সে অনুযায়ী দাবি জোরদার করা হলে মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.