বিরোধ ঘোচালেন মহিউদ্দিন by একরামুল হক

অবশেষে প্রায় সোয়া দুই বছর পর নগর আওয়ামী লীগের বিরোধ ঘোচালেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। নেতাদের মান ভাঙাতে নিজেই গেলেন তাঁদের ঘরে। তাঁর এই উদ্যোগে বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন শীর্ষ নেতারা।দ্বিধাবিভক্ত নেতাদের একমঞ্চে আসার খবরে উৎফুল্ল তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরাও।


আগামী সংসদ নির্বাচনে নগরের আসনে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে এই ঐক্য ধরে রাখার তাগিদ দিলেন তাঁরা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনের আগে নগর আওয়ামী লীগের বিভক্তি স্পষ্ট হয়। একটি পক্ষ ওই সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধিতা করেন। নির্বাচনে তিনি হেরে যান। দলীয় কোন্দলে এই পরাজয় ঘটে বলে নেতা-কর্মীদের ধারণা। তবে বিরোধের শুরু আরও আগে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে শিল্পপতি শামসুল আলমকে প্রার্থী করাতে চেয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। একই আসন থেকে মনোনয়ন চান নুরুল ইসলাম বিএসসি। অবশ্য ওই আসনে দলের টিকিট নিয়ে জেতেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। আর শামসুল আলম বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে হেরে যান। এ কারণে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে নুরুল ইসলাম বিএসসির সম্পর্কে অবনতি ঘটে। প্রকাশ্য রূপ নেয় বিরোধ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়েও মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীনের সঙ্গে।
দীর্ঘদিন পর সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজেই বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবে তিনি গত বৃহস্পতিবার নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং পরদিন শুক্রবার নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী আফছারুল আমীনের বাসায় যান। এরপর নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিরোধের বরফ গলা শুরু হয়। দলীয় সূত্র জানায়, নগর রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন। আবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীনও মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
জানতে চাইলে সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ। একমঞ্চে সব কর্মসূচি পালন করতে চাই।’ এর আগে গত সোমবার চশমা হিলের বাসায় ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নির্দেশ আছে। এখন ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হলো। আমি কাউকে ছোট-বড় বা পর মনে করি না । আমি ১৪ দলের নেতাদের বাসায়ও যাই। আর উনারা (বিএসসি-আফছারুল) তো আমার দলের।’
ঐক্যের উদ্যোগের বিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কেউ হয়তো রাগ করে আসেননি। কেউ ভুল করে বিভক্ত ছিলেন। সামনে নির্বাচন। এখন বিভক্তি রাখা ঠিক হবে না। স্বাধীনতার পক্ষের কেউ চাইবে না এই শক্তি বিভক্ত হোক। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’ আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মহিউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেছিলেন, ‘গত নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরের চারটি আসনে আমরা জিতেছি। আগামী নির্বাচনেও চারটি আসনই ধরে রাখতে চাই। আমি জরিপ করে দেখেছি এবারও চারটি আসনে আমরা জয়ী হব।’
আগামী নির্বাচনে নগরের কোনো আসন থেকে প্রার্থী হবেন কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতি করলে নির্বাচনে সবাই প্রার্থী হতে চায়। তবে আমি এখনো সেই রকম কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগ আপাতত সফল বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম বিএসসি ও আফছারুল আমীনের ভূমিকার প্রশংসা করেন তাঁরা। জানতে চাইলে পূর্ব হালিশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘দুই পক্ষের ঐক্যের কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উৎফুল্ল। কারণ, আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরা দ্বিধাবিভক্তি পছন্দ করেন না। মহিউদ্দিন চৌধুরী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। পাশাপাশি সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং মন্ত্রী আফছারুল আমীন এগিয়ে আসায় আমরা খুশি।’
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাই একই আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিটা ছিল সাময়িক। সবাই আন্তরিক হলে এবং সাংগঠনিক নিয়মকানুন মেনে চললে এই ঐক্য আরও মজবুত হবে, যার সুফল আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে পাব।’

No comments

Powered by Blogger.