শতাধিক চালক-সহকারী অপহরণ- ২৫ বছরে ৫০ বার হামলা by সুজন ঘোষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে হামলা, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার) ও সহকারীদের অপহরণ এবং এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আহত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এসব হামলার জন্য বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দায়ী বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন।
হামলাকারী ও অপহরণকারীদের কোনো শাস্তি ও বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম অনেকটা শাটল ট্রেননির্ভর। এ ট্রেনের মাধ্যমে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। তাই শাটল ট্রেন বন্ধ থাকলে ক্যাম্পাস কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এ কারণে শাটল ট্রেন ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ২৫ বছরে অন্তত ৫০ বার বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শতাধিক ট্রেনচালক ও তাঁদের সহকারী অপহূত এবং অর্ধশতাধিক চালক-সহকারী আহত হন।
জানা যায়, ৫ আগস্ট সেহরির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করেছে বলে ধারণা করছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অপহূত চালককে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরের মধ্যে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
এর আগে গত ২ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে শাটল ট্রেনে হামলা করে এবং ট্রেনচালককে অপহরণ করে। ওই সময় প্রায় ২৯ ঘণ্টা শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চালকদের ওপর বারবার হামলা হচ্ছে। ট্রেনের দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভূমিকা না রাখলে এসব তো ঘটতেই থাকবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শাটল ট্রেন চালকদের ওপর হামলা ও অপহরণের ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোও বাস্তবায়িত হয় না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ লাইনে ট্রেন চালানোর আগ্রহ হারাচ্ছেন চালকেরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ-দৌল্লাহ বলেন, ‘রেলওয়ে সেবাধর্মী সংস্থা। এ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা কিছুতেই কাম্য নয়। এমন অযৌক্তিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।’
জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শাটল ট্রেনে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন আহত হন চট্টগ্রাম স্টেশনমাস্টার ও স্টেশন ব্যবস্থাপক। ওই সময় শিক্ষার্থীরা স্টেশনমাস্টারের কক্ষ ভাঙচুর করেন। ১৯৯১ সালের ৭ জুলাই চৌধুরীহাট এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় ট্রেনচালক এম এল দাশ ও তোফাজ্জল হোসেনকে। ১৯৯৩ সালের ১২ মে ফতেয়াবাদ এলাকায় ট্রেন থামিয়ে চালক আবদুল কাদের ও আবু তাহেরকে মারধর করা হয়। একই বছর ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জংশনের কেবিন থেকে বের করে মারধর করা হয় আবদুল ওয়াদুদকে। ১৯৯৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোলোশহর স্টেশনে রবার্টপোপ ও জালাল আহাম্মদকে মারধর করার পাশাপাশি স্টেশনে ভাঙচুর ও প্ল্যাটফর্মে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই দিন মকবুল আহাম্মদ ও ফরজ আলী মারধরের শিকার হন। এ ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আটজন চালক অপহরণ ও মারধরের শিকার হন। শাটল ট্রেনে সবচেয়ে বেশি হামলা ও অপহরণের ঘটনা ঘটে ২০০৮ সালে। এ সময় ছয়জন চালক ও সহকারী অপহূত হন। ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল বটতলী স্টেশনে ট্রেন ছাড়াকে কেন্দ্র করে ইদ্রিস মিয়া ও কামরুজ্জামানকে মারধর করা হয়। সর্বশেষ ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করা হয়।
এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে বিভিন্ন সময় সমঝোতামূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
২০০০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এ রকম এক বৈঠকে চালকেরা সাত দফা দাবি দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শাটল ট্রেন চলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কোনো রেলকর্মী নিহত হলে ছয় লাখ টাকা, পঙ্গু ও গুরুতর আহত হলে চার লাখ টাকা এবং আহত হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জহুরুল হক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় আলোচনার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ইউনিয়ন নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল মনসুর সিকদার বলেন, ‘শাটল ট্রেনে হামলা বা অবরোধের সংস্কৃতিতে ছাত্রলীগ বিশ্বাসী নয়। তবে বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন এ ধরনের পন্থা গ্রহণ করে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম অনেকটা শাটল ট্রেননির্ভর। এ ট্রেনের মাধ্যমে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। তাই শাটল ট্রেন বন্ধ থাকলে ক্যাম্পাস কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এ কারণে শাটল ট্রেন ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ২৫ বছরে অন্তত ৫০ বার বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শতাধিক ট্রেনচালক ও তাঁদের সহকারী অপহূত এবং অর্ধশতাধিক চালক-সহকারী আহত হন।
জানা যায়, ৫ আগস্ট সেহরির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করেছে বলে ধারণা করছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অপহূত চালককে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরের মধ্যে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
এর আগে গত ২ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে শাটল ট্রেনে হামলা করে এবং ট্রেনচালককে অপহরণ করে। ওই সময় প্রায় ২৯ ঘণ্টা শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চালকদের ওপর বারবার হামলা হচ্ছে। ট্রেনের দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভূমিকা না রাখলে এসব তো ঘটতেই থাকবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শাটল ট্রেন চালকদের ওপর হামলা ও অপহরণের ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোও বাস্তবায়িত হয় না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ লাইনে ট্রেন চালানোর আগ্রহ হারাচ্ছেন চালকেরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ-দৌল্লাহ বলেন, ‘রেলওয়ে সেবাধর্মী সংস্থা। এ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা কিছুতেই কাম্য নয়। এমন অযৌক্তিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।’
জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শাটল ট্রেনে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন আহত হন চট্টগ্রাম স্টেশনমাস্টার ও স্টেশন ব্যবস্থাপক। ওই সময় শিক্ষার্থীরা স্টেশনমাস্টারের কক্ষ ভাঙচুর করেন। ১৯৯১ সালের ৭ জুলাই চৌধুরীহাট এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় ট্রেনচালক এম এল দাশ ও তোফাজ্জল হোসেনকে। ১৯৯৩ সালের ১২ মে ফতেয়াবাদ এলাকায় ট্রেন থামিয়ে চালক আবদুল কাদের ও আবু তাহেরকে মারধর করা হয়। একই বছর ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জংশনের কেবিন থেকে বের করে মারধর করা হয় আবদুল ওয়াদুদকে। ১৯৯৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোলোশহর স্টেশনে রবার্টপোপ ও জালাল আহাম্মদকে মারধর করার পাশাপাশি স্টেশনে ভাঙচুর ও প্ল্যাটফর্মে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই দিন মকবুল আহাম্মদ ও ফরজ আলী মারধরের শিকার হন। এ ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আটজন চালক অপহরণ ও মারধরের শিকার হন। শাটল ট্রেনে সবচেয়ে বেশি হামলা ও অপহরণের ঘটনা ঘটে ২০০৮ সালে। এ সময় ছয়জন চালক ও সহকারী অপহূত হন। ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল বটতলী স্টেশনে ট্রেন ছাড়াকে কেন্দ্র করে ইদ্রিস মিয়া ও কামরুজ্জামানকে মারধর করা হয়। সর্বশেষ ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করা হয়।
এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে বিভিন্ন সময় সমঝোতামূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
২০০০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এ রকম এক বৈঠকে চালকেরা সাত দফা দাবি দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শাটল ট্রেন চলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কোনো রেলকর্মী নিহত হলে ছয় লাখ টাকা, পঙ্গু ও গুরুতর আহত হলে চার লাখ টাকা এবং আহত হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জহুরুল হক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় আলোচনার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ইউনিয়ন নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল মনসুর সিকদার বলেন, ‘শাটল ট্রেনে হামলা বা অবরোধের সংস্কৃতিতে ছাত্রলীগ বিশ্বাসী নয়। তবে বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন এ ধরনের পন্থা গ্রহণ করে।’
No comments