দারিদ্র্য বিমোচন- ড. ইউনূস ও তাঁর ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব by মনসুর মুসা
মুহাম্মদ ইউনূসের মূল পরিচয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে নয়। নোবেল পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যৌথভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে। সেদিক থেকে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক। একজন ব্যক্তি ও একটি সংস্থা একসঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। এই পুরস্কারের আগে তিনি কমপক্ষে ডজন খানেক পুরস্কার পেয়েছেন দেশে ও বিদেশে।
তাঁকে পুরস্কৃত করার মূল কারণ একটি—তিনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের উদ্যোক্তা। নিজের পকেট থেকে ৮৫৬ টাকা দিয়ে তিনি ক্ষুদ্রঋণের সূচনা করেছিলেন। তিনি তখন জানতেন না যে তিনি কী করতে যাচ্ছেন। তাঁকে প্রথম দিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকব্যবস্থার সঙ্গে। সেটা হলো ব্যাংকব্যবস্থায় বন্ধকি ছাড়া ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। তিনি অধ্যাপক ও কর্মী হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত জামিনে এই কাজ শুরু করেছিলেন। এটি ছিল তাঁর গরিবের জন্য একটু কিছু করার নৈতিক দায়িত্ববোধ-সংগত পদক্ষেপ। প্রচলিত লগ্নিব্যবস্থা ও ব্যাংকঋণ পদ্ধতি তাঁর কাছে দরিদ্রবান্ধব ছিল বলে মনে হয়নি। তিনি বড় কোনো দার্শনিক চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ করেছিলেন এমন মনে হয় না। তাঁর লিখিত জীবনীগ্রন্থে এ ধরনের কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।
একটি তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সমস্যার একটি তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে কাজটা করেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাফল্য তাঁকে নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা দেয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেছিলেন। যতদূর মনে হয়, তিনি একাধিকবার বন্ধকিবিহীন ক্ষুদ্রঋণের দিকে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্মত করাতে চেষ্টা করেছিলেন। একাধিকবার তাঁকে বৈঠক করতে হয়, তাঁর প্রস্তাব উপস্থাপন করতে হয়, যুক্তিবিন্যাস করতে হয়। এটি ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি খেয়াল এবং সেই খেয়াল চরিতার্থ করার নিষ্ঠা। এই রকম কাজের প্রতি নিষ্ঠা তাঁর কলেজজীবনে ছিল, স্কুলজীবনেও ছিল। যদি কেউ তাঁর জীবনী মনোযোগসহকারে পাঠ করেন তাহলে তাঁর কর্মের পরিচয় পাওয়া যাবে। তাঁর সম্পর্কে যাঁরা স্মৃতিচারণা করেছেন, সবাই তাঁর চরিত্রের এই দিকটির কথা বলেছেন। মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রজীবন ও শিক্ষকজীবনে কখনো আর ১০ জনের মতো ছিলেন না। তিনি সব সময় ছিলেন বিশিষ্ট আর অগ্রগামী।
যখন তিনি ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য সম্পর্কে সচেতন হন, তখনকার পৃথিবীতে দুটো শক্তিশালী অর্থনৈতিক চিন্তাস্রোত প্রবাহিত ছিল। একটি হচ্ছে সাম্যবাদী চেতনাপ্রসূত সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা, আর একটি ছিল বিশ্বব্যবস্থায় ‘বাণিজ্য উদারীকরণ’ করে পুঁজিবাদ বিকাশের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করা। প্রচলিত এ দুই আদর্শ সম্পূরকও ছিল না, পরিপূরকও ছিল না। ছিল পরস্পরবিরোধী।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি দরিদ্র দেশের মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারের সন্তান হিসেবে খুব কাছে থেকে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জীবন অবলোকন করেছেন। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে ধনতন্ত্রের অপরিমিত বিকাশের ভালোমন্দও লক্ষ করেছেন। তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প দারিদ্র্য ও বিত্তবানতার মধ্যে বিরাজমান সংঘাতমুখী সংকট নিরসনের একটি মধ্যবর্তী পথ। তিনি মানুষের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেছেন। ধনীর ঋণ নেওয়ার যেমন অধিকার আছে, তেমনি দরিদ্র মানুষেরও ঋণ নেওয়ার অধিকার আছে। ধনীর বন্ধক দেওয়ার সৌভাগ্য আছে, কিন্তু গরিবের তা নেই। এদিক দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ তাদের একটি নতুন পথের ইঙ্গিত নিয়ে আছে। ইউনূস দরিদ্র মানুষের জন্য শ্রেণীশত্রু খতম করার বিপজ্জনক পথ পরিহার করে ক্ষুদ্রঋণ সমঝোতার পথ নির্দেশ করেন। তাঁর এই প্রচেষ্টায় প্রত্যক্ষভাবে ধনীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু দরিদ্ররা প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হয়েছে। বেঁচে থাকা ও সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করার সহজ সুযোগ তারা পেয়েছিল। দরিদ্রের যে শেষ সুযোগ আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি করা, সেই অপমানজনক অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পায়।
এই পথ অনসুন্ধান করতে গিয়ে মানুষের দারিদ্র্যমুক্তির পথে তিনি সামান্য আলোকপাত করেছেন। অর্থনীতির তাত্ত্বিক জগতে মুহাম্মদ ইউনূস একটি মনোভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই পন্থা শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাসীদের মনঃপূত হয়নি। কারণ, ব্যক্তিগত উদ্যোগের সুযোগের কাছে তা নিঃশেষিত হয়েছে। ফলে সমাজতন্ত্রীরা তাঁকে খুব সুনজরে দেখতে পারেননি। এমনকি বন্ধকি ব্যবস্থায় জড়িত যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধকি চক্রের সুবিধাভোগী ছিল, তাঁরাও পছন্দ করেননি। কিন্তু পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষ মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবাদর্শের সদর্থক দিকটিকে গ্রহণ করেছেন। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারত এবং পৃথিবীর আরও অনেক দেশে ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের ভাবধারা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। ক্ষুদ্রঋণের কথা শুধু মুহাম্মদ ইউনূস একাই বলেছেন তা নয়, আরও অনেকেই বলেছেন। তবে ইউনূসের বক্তব্যে যে স্বচ্ছতা, তীক্ষতা ও যৌক্তিক বলিষ্ঠতা দেখা গেছে, অন্যত্র তা ছিল দুর্লভ। তাই বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তাঁর চিন্তা নানাভাবে প্রসারিত হতে পেরেছে। পৃথিবীর অর্থনৈতিক মানচিত্রে ক্ষুদ্রঋণ একটি উল্লেখযোগ্য প্রপঞ্চ। দারিদ্র্য দূরীকরণ কিংবা গরিবকে ধনী করা ক্ষুদ্রঋণের উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য, দরিদ্র
মানুষেরও ঋণ পাওয়ার অধিকার আছে, সে দাবি প্রতিষ্ঠা করা। সেই অধিকার তাঁকে তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করে।
এ কথা ঠিক যে স্বাপ্নিক হিসেবে তিনি কখনো কখনো বলেছেন, দারিদ্র্য জাদুঘরে স্থান পাবে। তাঁর সেই স্বপ্ন কতটা বস্তুনিষ্ঠ সে প্রশ্ন তোলা যায়। কারণ, দারিদ্র্য এমন কোনো বস্তু নয় যেটা জাদুঘরে স্থান পেতে পারে। দারিদ্র্য মানুষের চিন্তার মধ্যে, ভাবনার মধ্যে, কাজের মধ্যে বিরাজ করে। সুতরাং, দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী আরও বহু যুগ পৃথিবীর মানুষের স্বপ্নই থাকবে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস যে বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছেন, সেটার জন্য তিনি শান্তিতে পুরস্কার পেয়েছেন। শান্তিতে না পেয়ে তিনি যদি অর্থনীতিতে পেতেন, তাহলেও অবাক হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।
মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্বে মানুষের ঋণ পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুদের হার নিয়ে কোথাও কোথাও তাঁর সমালোচনা হয়েছে। সে রকম সমালোচনা হতেই পারে। ব্যাংকব্যবস্থায় সুদের হার কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়, একটি পরিবর্তনযোগ্য সিদ্ধান্ত, দেশকালপাত্রভেদে তা ভিন্ন হতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক এখন আর জোবরা গ্রামে সীমিত নেই, ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর বহু গ্রামে, বহু নগরে, বহু দেশে। ব্যাংক পরিচালনার ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
মনসুর মুসা: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
একটি তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সমস্যার একটি তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে কাজটা করেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাফল্য তাঁকে নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা দেয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেছিলেন। যতদূর মনে হয়, তিনি একাধিকবার বন্ধকিবিহীন ক্ষুদ্রঋণের দিকে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্মত করাতে চেষ্টা করেছিলেন। একাধিকবার তাঁকে বৈঠক করতে হয়, তাঁর প্রস্তাব উপস্থাপন করতে হয়, যুক্তিবিন্যাস করতে হয়। এটি ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি খেয়াল এবং সেই খেয়াল চরিতার্থ করার নিষ্ঠা। এই রকম কাজের প্রতি নিষ্ঠা তাঁর কলেজজীবনে ছিল, স্কুলজীবনেও ছিল। যদি কেউ তাঁর জীবনী মনোযোগসহকারে পাঠ করেন তাহলে তাঁর কর্মের পরিচয় পাওয়া যাবে। তাঁর সম্পর্কে যাঁরা স্মৃতিচারণা করেছেন, সবাই তাঁর চরিত্রের এই দিকটির কথা বলেছেন। মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রজীবন ও শিক্ষকজীবনে কখনো আর ১০ জনের মতো ছিলেন না। তিনি সব সময় ছিলেন বিশিষ্ট আর অগ্রগামী।
যখন তিনি ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য সম্পর্কে সচেতন হন, তখনকার পৃথিবীতে দুটো শক্তিশালী অর্থনৈতিক চিন্তাস্রোত প্রবাহিত ছিল। একটি হচ্ছে সাম্যবাদী চেতনাপ্রসূত সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা, আর একটি ছিল বিশ্বব্যবস্থায় ‘বাণিজ্য উদারীকরণ’ করে পুঁজিবাদ বিকাশের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করা। প্রচলিত এ দুই আদর্শ সম্পূরকও ছিল না, পরিপূরকও ছিল না। ছিল পরস্পরবিরোধী।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি দরিদ্র দেশের মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারের সন্তান হিসেবে খুব কাছে থেকে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জীবন অবলোকন করেছেন। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে ধনতন্ত্রের অপরিমিত বিকাশের ভালোমন্দও লক্ষ করেছেন। তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প দারিদ্র্য ও বিত্তবানতার মধ্যে বিরাজমান সংঘাতমুখী সংকট নিরসনের একটি মধ্যবর্তী পথ। তিনি মানুষের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেছেন। ধনীর ঋণ নেওয়ার যেমন অধিকার আছে, তেমনি দরিদ্র মানুষেরও ঋণ নেওয়ার অধিকার আছে। ধনীর বন্ধক দেওয়ার সৌভাগ্য আছে, কিন্তু গরিবের তা নেই। এদিক দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ তাদের একটি নতুন পথের ইঙ্গিত নিয়ে আছে। ইউনূস দরিদ্র মানুষের জন্য শ্রেণীশত্রু খতম করার বিপজ্জনক পথ পরিহার করে ক্ষুদ্রঋণ সমঝোতার পথ নির্দেশ করেন। তাঁর এই প্রচেষ্টায় প্রত্যক্ষভাবে ধনীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু দরিদ্ররা প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হয়েছে। বেঁচে থাকা ও সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করার সহজ সুযোগ তারা পেয়েছিল। দরিদ্রের যে শেষ সুযোগ আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি করা, সেই অপমানজনক অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পায়।
এই পথ অনসুন্ধান করতে গিয়ে মানুষের দারিদ্র্যমুক্তির পথে তিনি সামান্য আলোকপাত করেছেন। অর্থনীতির তাত্ত্বিক জগতে মুহাম্মদ ইউনূস একটি মনোভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই পন্থা শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাসীদের মনঃপূত হয়নি। কারণ, ব্যক্তিগত উদ্যোগের সুযোগের কাছে তা নিঃশেষিত হয়েছে। ফলে সমাজতন্ত্রীরা তাঁকে খুব সুনজরে দেখতে পারেননি। এমনকি বন্ধকি ব্যবস্থায় জড়িত যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধকি চক্রের সুবিধাভোগী ছিল, তাঁরাও পছন্দ করেননি। কিন্তু পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষ মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবাদর্শের সদর্থক দিকটিকে গ্রহণ করেছেন। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারত এবং পৃথিবীর আরও অনেক দেশে ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের ভাবধারা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। ক্ষুদ্রঋণের কথা শুধু মুহাম্মদ ইউনূস একাই বলেছেন তা নয়, আরও অনেকেই বলেছেন। তবে ইউনূসের বক্তব্যে যে স্বচ্ছতা, তীক্ষতা ও যৌক্তিক বলিষ্ঠতা দেখা গেছে, অন্যত্র তা ছিল দুর্লভ। তাই বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তাঁর চিন্তা নানাভাবে প্রসারিত হতে পেরেছে। পৃথিবীর অর্থনৈতিক মানচিত্রে ক্ষুদ্রঋণ একটি উল্লেখযোগ্য প্রপঞ্চ। দারিদ্র্য দূরীকরণ কিংবা গরিবকে ধনী করা ক্ষুদ্রঋণের উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য, দরিদ্র
মানুষেরও ঋণ পাওয়ার অধিকার আছে, সে দাবি প্রতিষ্ঠা করা। সেই অধিকার তাঁকে তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করে।
এ কথা ঠিক যে স্বাপ্নিক হিসেবে তিনি কখনো কখনো বলেছেন, দারিদ্র্য জাদুঘরে স্থান পাবে। তাঁর সেই স্বপ্ন কতটা বস্তুনিষ্ঠ সে প্রশ্ন তোলা যায়। কারণ, দারিদ্র্য এমন কোনো বস্তু নয় যেটা জাদুঘরে স্থান পেতে পারে। দারিদ্র্য মানুষের চিন্তার মধ্যে, ভাবনার মধ্যে, কাজের মধ্যে বিরাজ করে। সুতরাং, দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী আরও বহু যুগ পৃথিবীর মানুষের স্বপ্নই থাকবে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস যে বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছেন, সেটার জন্য তিনি শান্তিতে পুরস্কার পেয়েছেন। শান্তিতে না পেয়ে তিনি যদি অর্থনীতিতে পেতেন, তাহলেও অবাক হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।
মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্বে মানুষের ঋণ পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুদের হার নিয়ে কোথাও কোথাও তাঁর সমালোচনা হয়েছে। সে রকম সমালোচনা হতেই পারে। ব্যাংকব্যবস্থায় সুদের হার কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়, একটি পরিবর্তনযোগ্য সিদ্ধান্ত, দেশকালপাত্রভেদে তা ভিন্ন হতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক এখন আর জোবরা গ্রামে সীমিত নেই, ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর বহু গ্রামে, বহু নগরে, বহু দেশে। ব্যাংক পরিচালনার ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
মনসুর মুসা: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments