নদীতে পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু- লঞ্চের ছাদে, মাঝনদী থেকেও উঠেছে মানুষ by অরূপ দত্ত ও ইকবাল হোসেন

ঘাটে ভিড়তেই লঞ্চের কেবিন, ডেক এমনকি ছাদও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল যাত্রীতে। তাই লঞ্চে জায়গা পাওয়ার জন্য ঈদে ঘরমুখী অনেক যাত্রী নৌকা নিয়ে মাঝনদী থেকে লঞ্চে উঠেছে। এভাবে লঞ্চে উঠতে গিয়ে নদীতে পড়ে মারা গেছেন সালেহ আহমেদ নামের এক বৃদ্ধ।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবার লঞ্চের ছাদে ও মাঝনদী থেকে যাত্রী উঠতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন গতকাল বুধবার ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়নি। ঝুঁকি মাথায় নিয়েই যাত্রা করেছে মানুষ।
সকাল থেকেই ঘরমুখী মানুষ ভিড় জমায় সদরঘাট টার্মিনালে। বিশেষ করে চাঁদপুর, ডামুড্যা, শরীয়তপুর, আমতলী, গলাচিপাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গন্তব্যের যাত্রীরা লঞ্চের ডেকে চাদর বিছিয়ে বসে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভিড়। অনেকে ভোরেই টার্মিনালে হাজির হয়। টার্মিনালে কথা হয় বরিশালগামী লঞ্চ এমভি সুন্দরবনের যাত্রী আবদুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি জানান, লঞ্চ ছাড়ার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হলেও ঝুঁকি এড়াতে সকাল ছয়টাতেই তিনি ডেমরা থেকে চলে এসেছেন।
বিআইডব্লিউটিএ, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন টার্মিনালে ছিলেন। কিন্তু ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠা ঠেকানো যায়নি।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মো. সাইফুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, নদীপথে যাত্রীদের নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য বিআইডব্লিউটিএ তৎপর রয়েছে। লঞ্চের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে নজরদারি করা হচ্ছে।
লঞ্চমালিকদের সমিতি অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সহসভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ছাদে না ওঠার জন্য বিআইডব্লিউটিএর পাশাপাশি মালিক সমিতিও নিষেধ করেছে। কিন্তু যাত্রীরা কথা শোনে না। তা ছাড়া ছোট-বড় মিলে যত লঞ্চ আছে, সেগুলোতে নিয়ম মেনে যাত্রী উঠলে ৩৫ হাজার যাত্রী যেতে পারবে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে যেতে হয় লাখো যাত্রীকে।
বৃদ্ধের মৃত্যু: ভোলাগামী এমভি ফারহান নামের লঞ্চে ওঠার জন্য বিকেলে বৃদ্ধ সালেহ আহমেদ ছেলেমেয়ে-নাতিকে নিয়ে নৌকায় করে টার্মিনাল বরাবর মাঝনদীতে যান। কিন্তু তাঁরা লঞ্চে ওঠার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দুদিক থেকে আসা দুটি লঞ্চের ধাক্কায় সালেহ আহমেদসহ সবাই নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যান। আশপাশের নৌকার মাঝিরা অন্যদের উদ্ধার করতে পারলেও ডুবে যান সালেহ। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তাঁর লাশ উদ্ধার করেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যাত্রীদের বাধা দিলেও তারা নৌকায় চেপে লঞ্চে ওঠে। পরিবারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই সালেহ আহমেদের লাশ ভোলায় গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
পথে যানজট: ঘরমুখী যাত্রীদের চাপে সকাল থেকেই সদরঘাটের আশপাশের সড়কে ছিল তীব্র যানজট। রায়সাহেব বাজার মোড়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকসংলগ্ন সড়ক ও সদরঘাট ফুটওভারব্রিজ এলাকার এই যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। সময় বাঁচাতে অনেকে ব্যাগ হাতে-কাঁধে নিয়ে হেঁটেই গেছে টার্মিনালে।

No comments

Powered by Blogger.