'কিল মারার গোঁসাই' ঢাকা ওয়াসা-সেবার মান নিশ্চিত করে পানির দাম বাড়ান

কথায় বলে, 'ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই'। ঢাকা ওয়াসার অবস্থা হয়েছে তেমনই। ওয়াসার পানির মান দিন দিনই খারাপ হচ্ছে। অনেক এলাকায় ওয়াসার পানি পান করা তো দূরে থাক, দুর্গন্ধে মুখের কাছেও নেওয়া যায় না। অথচ আগামী ১ জুলাই থেকে ওয়াসা সেই পানির দাম ইউনিটপ্রতি ২৮ পয়সা বাড়াচ্ছে।


অর্থাৎ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মানুষকে আগামী মাস থেকে প্রতি ইউনিট পানি কিনতে হবে ৬ টাকা ৬২ পয়সায়। অন্যদিকে ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি (ডিপিডিসি) বিদ্যুতের দাম ১১.৯৩ শতাংশ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর আগে আরইবি ও পিডিবি অনুরূপ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গণশুনানি ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে বিইআরসি চূড়ান্তভাবে দাম নির্ধারণ করবে।
উৎপাদন খরচ বাড়লে দাম কিছুটা বাড়বে_এটাই স্বাভাবিক। এর আগে দফায় দফায় দাম বেড়েই পানি ও বিদ্যুতের বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকরা অসন্তোষ, এমনকি তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেছে কখনো কখনো, আর তা করেছে এসব রাষ্ট্রীয় সেবার মান নিয়ে। বিগত জোট সরকারের আমলে যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা পর্যন্ত এলাকাবাসীর আন্দোলন রীতিমতো গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। আন্দোলনকারীদের হাতে স্থানীয় এমপি পর্যন্ত চরম নাজেহাল হয়েছিলেন। একদিকে রাষ্ট্রীয় খাতের এসব সেবার মান কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে এসব সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। মূল্যবৃদ্ধি যাতে অযৌক্তিক পর্যায়ে চলে না যায়, সেদিকেও অবশ্যই সরকারকে নজর দিতে হবে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ঢাকা ওয়াসা বিশেষ ক্ষমতাবলে পানির দাম বাড়াচ্ছে। গত তিন বছর একইভাবে তারা দাম বাড়িয়েছে। অথচ ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ এলাকায়ই ওয়াসার পানি পান করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরবরাহ করা পানি যেমন দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত, তেমনি রোগজীবাণুতে ভরা। ফলে মানুষ বাধ্য হচ্ছে অনেক বেশি দাম দিয়ে পানির জার কিনে তৃষ্ণা নিবারণ করতে। এর প্রধান কারণ ওয়াসার পাইপলাইন পুরনো ও ছিদ্রযুক্ত, ফলে স্যুয়ারেজের পানিও ওয়াসার পানির সঙ্গে মিশে যায়। আবার ভূপৃষ্ঠস্থ উৎসের পানিও চরমভাবে দূষিত। সেসব পানিতে শুধু জৈব দূষণ নয়, শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সব রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতিও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর নৈতিক কোনো অধিকারই ঢাকা ওয়াসার থাকতে পারে না। থাকা উচিত নয়। আর দাম বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু সেই উৎপাদন খরচ কেন বাড়ছে? বিভিন্ন সময় এসব সংস্থার দুর্নীতি, চুরি ও অনিয়মের প্রচুর খবর ছাপা হয়েছে। তাই দুর্নীতির কারণে যে উৎপাদন খরচ বাড়ে, তা গ্রাহকের ঘাড়ে চাপানো হবে কেন?
আমাদের দুর্ভাগ্য, জনগণ সরকার নির্বাচন করলেও কোনো সরকারই জনগণের স্বার্থরক্ষায় খুব একটা আগ্রহী নয়। বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ঢাকায় পানি সরবরাহের মান আগের তুলনায় অনেক নিম্নগামী। ঢাকা ওয়াসার যে পানি মানুষ ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না, সে পানির দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা আশা করি, দাম বাড়ানোর ব্যাপারে ওয়াসার একতরফা সিদ্ধান্তে সরকার অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবে। আর তা করতে না পারলে আমরা তাকে সরকারের অসহায়ত্ব ও জনস্বার্থবিরোধী অবস্থান হিসেবেই ধরে নেব।

No comments

Powered by Blogger.