অ ক ঈ ং ঙ খ চ-ভিনদেশির বাংলা শেখা by ফারহানা আলম
৬০ বছর আগে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে বাঙালিরা। সেই বাংলা ভাষায় কি শুধু আমরা বাঙালিরাই কথা বলি? বরং বাঙালি এবং বাংলাদেশে কাজ করতে আসা বিদেশিরাও এই ভাষায় কথা বলছেন নিয়মিতই। তাঁদের প্রয়োজনেই তাঁরা শিখে নিচ্ছেন এ ভাষা।
বিদেশিরা এ দেশে এসে কোনো ব্যক্তি বা কোনো স্কুলের মাধ্যমে শিখে থাকেন বাংলা ভাষা। অনেক দিন ধরেই এমন শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নিশা সরকার। বিদেশিদের বাংলা ভাষা শেখানোর এই কাজটি তিনি করছেন ১৯ বছর ধরে।
কেমন করে ভাষা শেখানোর কাজ শুরু করেছেন জানতে চাইলে নিশা বলেন, ‘আমার স্বামী একটি বিদেশি সংস্থায় কাজ করতেন। সেখানে অনেক বিদেশি ছিলেন। তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য তাঁরা টুকটাক প্রচলিত বাংলা শিখতে চাইতেন। সে সময়ে তাঁদের পড়ানোর মাধ্যমে আমি ভাষাশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করি।’ এভাবেই শুরু। এরপর নিশা কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে বনানীতে একটি বাংলা ভাষা শেখার স্কুল দিয়েছিলেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ছিলেন চাকরিজীবী। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। একসময় স্কুলটি বন্ধ করে দিতে হয়। এখন নিশা সরকার বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন আমেরিকান স্কুলে। এ ছাড়া বাংলা শেখান বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের। তাঁর কাছে বাংলা শিখেছেন, এ রকম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান ডেলিগেশন প্রধান উইলিয়াম হানা, জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি রেনাটা ডেজালিয়েন প্রমুখ।
নিশা ব্যক্তিগতভাবেও শেখাচ্ছেন বাংলা ভাষা। তাঁর কাছে বাংলা ভাষা শিখেছেন অনেকেই। অনেক বিদেশি নাগরিকই বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাঁরা কাজটা আরও ভালোভাবে করার জন্যই ভাষাটা শিখে নিতে চান। অনেকে শেখেন কাজ চালানোর জন্য, আবার অনেকে বাংলা বর্ণমালাকে ভালোবেসে সেটা আয়ত্তে আনার জন্য চালিয়ে যান এই শিক্ষা কার্যক্রম।
নিশা জানালেন, তিনি দুটো পদ্ধতিতে বাংলা ভাষা শিখিয়ে থাকেন। প্রথমটি হলো ‘ফোনেটিক্স’ এবং দ্বিতীয়টি হলো ‘স্ক্রিপ্ট বেইজ’। যাঁরা শুধু বলার জন্য ভাষা শিখতে চান তাঁদের জন্য প্রযোজ্য প্রথমটি। আর যাঁরা ভালোভাবে বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে চান তাঁরা করেন দ্বিতীয়টি। নিশার কাছ থেকে জানা গেল, ফোনেটিক্স কোর্সটি হয় দুই মাসে। মোটামুটি দুই মাসেই একজন ভালোমতো বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। আর স্ক্রিপ্ট বেইজ বাংলা শিখতে গেলে অন্তত দুই বছর কোর্স করতে হয়। এতে বর্ণমালা, ব্যাকরণ, গল্প, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কেও পড়ানো হয়ে থাকে। একজন মোটামুটি আট দিনেই স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ শিখতে পারেন বলে জানালেন নিশা।
নিশা জানালেন, কখনো কখনো তাঁর শিক্ষার্থীরা দু-একটি ক্লাস করে চলে যান ফিল্ডে, তারপর আবার এসে করেন। এভাবে শেখার পাশাপাশি তাঁরা চর্চাও করতে পারেন।
নিশার কাছে বর্তমানে বাংলা শিখছেন নেদারল্যান্ড দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার মিরিয়াম ওতো। বাংলা ভাষা মিরিয়াম খুব ভালোই রপ্ত করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে তার কাজ এই জুন নাগাদ শেষ। কিন্তু তার পরও মিরিয়াম চালিয়ে যাচ্ছেন এই ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। কেন বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেছিলেন জানতে চাইলে মিরিয়াম বলেন, ‘এই দেশে কাজ করব বলে এই দেশের ভাষাটা ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে চেয়েছি। স্বাধীনভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং দেশটাকে আরও ভালোভাবে জানার জন্যই আমি বাংলা ভাষা শিখছি।’ ডাচ নাগরিক মিরিয়াম কাজের তাগিদে বাংলা শিখতে শুরু করলেও এখন ভালোবেসেই শিখছেন এই ভাষা।
হেল্লে বার্নস্টেইন সোরসেন ডেনমার্কের নাগরিক। ২০১০ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন স্বামীর কাজের সূত্রে। বর্তমানে তিনি নিজেও একটি সুইস প্রকল্পের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন। আর প্রকল্পের কাজে তাঁকে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। যারা খুব বেশি ভালো ইংরেজি বলতে পারে না। কিন্তু হেল্লে বাংলা শেখার কারণে তাদের সমস্যাগুলো খুব ভালোভাবে জানতে পারছেন। ‘যেহেতু যোগাযোগ এখন সহজ হয়ে গেছে, তাই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এই মেয়েদের জীবনমান উন্নত করানোর কাজটা এখন অনেক বেশিই সহজ আমার কাছে’—বললেন হেল্লে। নিশার কাছে নয় মাস ধরে বাংলা শিখছেন হেল্লে। এখন নিজে নিজে যেমন বলতে পারেন, তেমনি লিখতেও চেষ্টা করছেন। মিরিয়াম ও হেল্লের মতো আরও অনেকেই বাংলা শিখছেন নিশার কাছে। নিশারও যেন এই কাজে কোনো ক্লান্তি নেই। তাঁর কারণে একজন ভিনদেশি বাংলা ভাষায় কথা বলছেন, শিখছেন এই বাংলায় লিখতে... ভাবতেই আনন্দ।
কেমন করে ভাষা শেখানোর কাজ শুরু করেছেন জানতে চাইলে নিশা বলেন, ‘আমার স্বামী একটি বিদেশি সংস্থায় কাজ করতেন। সেখানে অনেক বিদেশি ছিলেন। তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য তাঁরা টুকটাক প্রচলিত বাংলা শিখতে চাইতেন। সে সময়ে তাঁদের পড়ানোর মাধ্যমে আমি ভাষাশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করি।’ এভাবেই শুরু। এরপর নিশা কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে বনানীতে একটি বাংলা ভাষা শেখার স্কুল দিয়েছিলেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ছিলেন চাকরিজীবী। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। একসময় স্কুলটি বন্ধ করে দিতে হয়। এখন নিশা সরকার বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন আমেরিকান স্কুলে। এ ছাড়া বাংলা শেখান বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের। তাঁর কাছে বাংলা শিখেছেন, এ রকম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান ডেলিগেশন প্রধান উইলিয়াম হানা, জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি রেনাটা ডেজালিয়েন প্রমুখ।
নিশা ব্যক্তিগতভাবেও শেখাচ্ছেন বাংলা ভাষা। তাঁর কাছে বাংলা ভাষা শিখেছেন অনেকেই। অনেক বিদেশি নাগরিকই বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাঁরা কাজটা আরও ভালোভাবে করার জন্যই ভাষাটা শিখে নিতে চান। অনেকে শেখেন কাজ চালানোর জন্য, আবার অনেকে বাংলা বর্ণমালাকে ভালোবেসে সেটা আয়ত্তে আনার জন্য চালিয়ে যান এই শিক্ষা কার্যক্রম।
নিশা জানালেন, তিনি দুটো পদ্ধতিতে বাংলা ভাষা শিখিয়ে থাকেন। প্রথমটি হলো ‘ফোনেটিক্স’ এবং দ্বিতীয়টি হলো ‘স্ক্রিপ্ট বেইজ’। যাঁরা শুধু বলার জন্য ভাষা শিখতে চান তাঁদের জন্য প্রযোজ্য প্রথমটি। আর যাঁরা ভালোভাবে বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে চান তাঁরা করেন দ্বিতীয়টি। নিশার কাছ থেকে জানা গেল, ফোনেটিক্স কোর্সটি হয় দুই মাসে। মোটামুটি দুই মাসেই একজন ভালোমতো বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। আর স্ক্রিপ্ট বেইজ বাংলা শিখতে গেলে অন্তত দুই বছর কোর্স করতে হয়। এতে বর্ণমালা, ব্যাকরণ, গল্প, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কেও পড়ানো হয়ে থাকে। একজন মোটামুটি আট দিনেই স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ শিখতে পারেন বলে জানালেন নিশা।
নিশা জানালেন, কখনো কখনো তাঁর শিক্ষার্থীরা দু-একটি ক্লাস করে চলে যান ফিল্ডে, তারপর আবার এসে করেন। এভাবে শেখার পাশাপাশি তাঁরা চর্চাও করতে পারেন।
নিশার কাছে বর্তমানে বাংলা শিখছেন নেদারল্যান্ড দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার মিরিয়াম ওতো। বাংলা ভাষা মিরিয়াম খুব ভালোই রপ্ত করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে তার কাজ এই জুন নাগাদ শেষ। কিন্তু তার পরও মিরিয়াম চালিয়ে যাচ্ছেন এই ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। কেন বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেছিলেন জানতে চাইলে মিরিয়াম বলেন, ‘এই দেশে কাজ করব বলে এই দেশের ভাষাটা ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে চেয়েছি। স্বাধীনভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং দেশটাকে আরও ভালোভাবে জানার জন্যই আমি বাংলা ভাষা শিখছি।’ ডাচ নাগরিক মিরিয়াম কাজের তাগিদে বাংলা শিখতে শুরু করলেও এখন ভালোবেসেই শিখছেন এই ভাষা।
হেল্লে বার্নস্টেইন সোরসেন ডেনমার্কের নাগরিক। ২০১০ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন স্বামীর কাজের সূত্রে। বর্তমানে তিনি নিজেও একটি সুইস প্রকল্পের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন। আর প্রকল্পের কাজে তাঁকে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। যারা খুব বেশি ভালো ইংরেজি বলতে পারে না। কিন্তু হেল্লে বাংলা শেখার কারণে তাদের সমস্যাগুলো খুব ভালোভাবে জানতে পারছেন। ‘যেহেতু যোগাযোগ এখন সহজ হয়ে গেছে, তাই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এই মেয়েদের জীবনমান উন্নত করানোর কাজটা এখন অনেক বেশিই সহজ আমার কাছে’—বললেন হেল্লে। নিশার কাছে নয় মাস ধরে বাংলা শিখছেন হেল্লে। এখন নিজে নিজে যেমন বলতে পারেন, তেমনি লিখতেও চেষ্টা করছেন। মিরিয়াম ও হেল্লের মতো আরও অনেকেই বাংলা শিখছেন নিশার কাছে। নিশারও যেন এই কাজে কোনো ক্লান্তি নেই। তাঁর কারণে একজন ভিনদেশি বাংলা ভাষায় কথা বলছেন, শিখছেন এই বাংলায় লিখতে... ভাবতেই আনন্দ।
No comments