বিস্ময় বালক-দাবায় বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বলতর হতে পারে

বাংলাদেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বসভায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারছে বেশ কয়েকটি ইভেন্টে। নিঃসন্দেহে ক্রিকেটই প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে এ ক্ষেত্রে। এ খেলায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সেরা দশের মধ্যে। কিন্তু ক্রিকেটেরও অনেক আগে বিশ্বসভায় আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা হয়েছে দাবা খেলার মাধ্যমে।


বিশ্ব রেটিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের অবস্থান অনেকেরই ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই যে নিয়াজ মোরশেদ নামের এক বালক কয়েক দশক আগে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তারপর কিন্তু আর থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। সেই দৌড়েই আজকে আমাদের সামনে এমন এক বিস্ময় বালক এসে উপস্থিত হয়েছে, যাকে নিয়ে অনায়াসে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। আশা করতে পারে, এই খেলায় আমরা আরো অনেক এগিয়ে যেতে পারব। শুধু একজন নিয়াজ মোরশেদ কিংবা একজন রানী হামিদই আমাদের গর্বের খেলোয়াড় নন। গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ, রানী, রিফাত, জিয়াউর রহমানদের হাত ধরে আরো খেলোয়াড় আসছে এই দেশে। যাদের প্রশিক্ষণ, পৃষ্ঠপোষকতা দিলে হয়তো দেশের মুখ উজ্জ্বল করে দেওয়ার মতো সুযোগ তারাই তৈরি করবে। অন্তত আট বছরের শিশু ফাহাদের প্রতিভা দেখে আমাদের এই আশাবাদ ব্যক্ত করার সুযোগ আছে নিশ্চয়ই। বিশেষ করে এই শিশুটি যখন অকপটে বাংলাদেশের বিখ্যাত খেলোয়াড় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানকে মাত্র আট মিনিটের খেলায় কুপোকাত করে দিতে সক্ষম হয়, তখন আমরা আশাবাদী হতেই পারি।
মঙ্গলবারের এই খেলা অনানুষ্ঠানিক হলেও খেলোয়াড় শিশুটির মেধা আমাদের বিস্মিত করে। তাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তারও সুযোগ করে দেয়। একটি গ্রামের একজন স্কুলশিক্ষকের সন্তান এই বিস্ময় বালক ফাহাদ আমাদের দেখিয়ে দেয়, প্রতিভা থাকলে অনেক দূর যাওয়া যায়। একই সঙ্গে আমাদের ভাবতে শেখায়, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা অনেক প্রতিভাই বিকশিত হতে পারে। ফাহাদের বাবা স্কুলশিক্ষক হিসেবে নিজের ছেলেকে গড়ে তুলছেন। তিনি নিজের নেশার সঙ্গে সন্তানকেও জড়িয়ে নিয়েছেন। এই স্কুলশিক্ষক নিজ এলাকায় দাবা ক্লাব গঠন করে শিশুদের দাবা শেখার ব্যবস্থা করেছেন। সেই পথ ধরেই ফরিদপুর জেলার মধুখালীর স্কুলশিক্ষক নজরুল ইসলাম নিজের প্রচেষ্টায় একজন ফাহাদ রহমান উপহার দিতে পেরেছেন। এমনি করে যদি জেলায় জেলায় দাবা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অনেক ফাহাদ রহমান আমরা এই বাংলাদেশ থেকেই পেয়ে যাব। তার সঙ্গে যদি ড. কাজী মোতাহার হোসেনের মতো দাবাপ্রেমিক পাওয়া যায় তাহলে ববি ফিশার, কাসপারভ, ভারতের বিশ্বনাথন কিংবা নরওয়ের কার্লসেনের মতো বিশ্ববিখ্যাত খেলোয়াড়ও জন্ম নিতে পারে এই দেশে। আর এই কাজটি করতে হলে কোনো ব্যক্তির একক প্রচেষ্টায় সম্ভব হবে না। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দাবা ফেডারেশনকে শক্তিশালী করতে হবে। স্কুল পর্যায়ে জোরালো দাবা খেলা প্রতিযোগিতা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে দাবা খেলার পৃষ্ঠপোষকতার অভাব প্রচণ্ড। যে কারণে সরকারকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন বেশি। খেলাটি যদি স্কুল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে প্রচারব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী হবে, এর জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে নজরুল ইসলামের মতো সংগঠকদেরও কাজে লাগাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.