হাওয়ার্ড বি এবং টেরেসিটা সি. শাফার-পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ভারতের অবস্থান
বিশ্ব সম্পর্কে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গিতে সংশয়ের শুরু সেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময়ে। তখন থেকেই নিরাপত্তাহীনতা দেশটিকে বিপদগ্রস্ত করে রেখেছে। এ সময়ে যে শুধু পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির সূত্রপাত তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুত্বের শুরুও তখন থেকে।
দেশ হিসেবে আয়তনে পাকিস্তান তার বিশাল প্রতিবেশী ভারতের সাত ভাগের এক ভাগ এবং পাকিস্তানের কাছে শত্রু প্রতিবেশী হিসেবে চিহ্নিত। পাকিস্তানের কর্মকর্তা এবং ভাষ্যকারদের কাছে এই বেদনার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মৌলিক ইস্যু হলো কাশ্মীর। পাকিস্তানিরা বিশ্বাস করে, তারা ভারত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। তারা অনুভব করে, ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক কাঠামো তাদের নির্ভরশীল, অকর্মণ্য ও অবহেলিত করে রেখেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান এ কথাও মনে করে যে বৈদেশিক সম্পর্কে পাকিস্তানকে ভারতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের নেগোশিয়েটররা প্রায়ই তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারপার্টদের বোঝাতে চান, আমেরিকান এবং অন্যরা ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও চতুরতা ধরতে পারছেন না। তাঁরা যুক্তি দেন, আমেরিকাকে ব্যবহার করে পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ছোট দেশের ভোগান্তির সৃষ্টি করছে ভারত। অধিকাংশ পাকিস্তানি মনে করে, ভারতের দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য যে বিপদ ডেকে আনছে, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সচেতন নয়।
উপমহাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য নবাগতদের চেয়ে খানিকটা বেশি পরিচিত। পাকিস্তানের একতরফা কথা হলো_ভারত এ অঞ্চলে তার প্রতিবেশীদের পুরোপুরি স্বাধীন দেখতে চায় না। তাদের নিজস্ব পলিসি থাকুক এবং নিজেদের মতো করে চলুক, তা তারা দেখতে চায় না। এর সবচেয়ে বড় নগ্ন প্রমাণ হলো, ভারতের পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করে ফেলার নীতি দিয়ে পাকিস্তানকে দাসের রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই ভয় পাকিস্তানের মধ্যে জেঁকে বসেছে পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সংকটপূর্ণ ঘটনায়। ১৯৭১ সালে ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলায় সমর্থন জুগিয়েছিল। সে স্মৃতি পাকিস্তানকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। পাকিস্তান জানে, আমেরিকানরা ভারতের গণতন্ত্র দ্বারা সন্তুষ্ট, অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সহজাত দুর্বলতা সম্পর্কেও যুক্তরাষ্ট্র অবগত। তাই পাকিস্তান চায় ভারতের সরকার পরিচালনার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরতে, বিশেষ করে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিষয়ে ভারতের আচরণের ব্যাপারে। পাকিস্তান তাদের নিজেদের বক্তব্যকে, নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদের বক্তব্যকে প্রমাণসাপেক্ষ বলে উপস্থাপন করতে চায়। দীর্ঘকাল তাদের মধ্যে বিশ্বাস আছে যে ভারতীয়রা তাদের চেয়ে কূট, অপেক্ষাকৃত কম সৎ এবং কম সাহসী।
পাকিস্তান শঙ্কিত যে যুক্তরাষ্ট্র বুঝি শীতল যুদ্ধের অবসানের পর ভারতের দিকে নুয়ে পড়েছে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে, জর্জ ডাবি্লউ বুশের প্রশাসনের সময় থেকে। পাকিস্তানিরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছে, ওয়াশিংটন ভারতকে উদীয়মান বিশ্বশক্তি হিসেবে দেখতে চায়। এ বিষয়টিকে কিছু প্রভাবশালী আমেরিকান মনে করেন, ভারত হলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উগ্র চীনের একটি কাউন্টারপার্ট_যে চীনের রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘকালের উষ্ণ সম্পর্ক। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দিলি্লর সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক নিয়ে আমেরিকা মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। ভারত এবং আমেরিকা বরং একে অপরকে এখন প্রায়ই বলে থাকে 'ন্যাচারাল অ্যালাই'।
তবে একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গেও বেশ কয়েকটি কারণে কাছাকাছি থাকতে চায়। এর সঙ্গে রয়েছে ৯/১১-র পর থেকেই আল-কায়েদা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে পাকিস্তানের ভুমিকা, যা অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মেনে নিয়েছে। তাই ওয়াশিংটন এখন সঠিকভাবেই দাবি করতে পারে, ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন তারা একই সঙ্গে ইসলামাবাদ এবং দিলি্লর সঙ্গেও সমানভাবে সম্পর্ক উপভোগ করছে।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের চুম্বকাংশ।
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
পাকিস্তানের নেগোশিয়েটররা প্রায়ই তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারপার্টদের বোঝাতে চান, আমেরিকান এবং অন্যরা ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও চতুরতা ধরতে পারছেন না। তাঁরা যুক্তি দেন, আমেরিকাকে ব্যবহার করে পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ছোট দেশের ভোগান্তির সৃষ্টি করছে ভারত। অধিকাংশ পাকিস্তানি মনে করে, ভারতের দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য যে বিপদ ডেকে আনছে, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সচেতন নয়।
উপমহাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য নবাগতদের চেয়ে খানিকটা বেশি পরিচিত। পাকিস্তানের একতরফা কথা হলো_ভারত এ অঞ্চলে তার প্রতিবেশীদের পুরোপুরি স্বাধীন দেখতে চায় না। তাদের নিজস্ব পলিসি থাকুক এবং নিজেদের মতো করে চলুক, তা তারা দেখতে চায় না। এর সবচেয়ে বড় নগ্ন প্রমাণ হলো, ভারতের পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করে ফেলার নীতি দিয়ে পাকিস্তানকে দাসের রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই ভয় পাকিস্তানের মধ্যে জেঁকে বসেছে পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সংকটপূর্ণ ঘটনায়। ১৯৭১ সালে ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলায় সমর্থন জুগিয়েছিল। সে স্মৃতি পাকিস্তানকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। পাকিস্তান জানে, আমেরিকানরা ভারতের গণতন্ত্র দ্বারা সন্তুষ্ট, অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সহজাত দুর্বলতা সম্পর্কেও যুক্তরাষ্ট্র অবগত। তাই পাকিস্তান চায় ভারতের সরকার পরিচালনার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরতে, বিশেষ করে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিষয়ে ভারতের আচরণের ব্যাপারে। পাকিস্তান তাদের নিজেদের বক্তব্যকে, নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদের বক্তব্যকে প্রমাণসাপেক্ষ বলে উপস্থাপন করতে চায়। দীর্ঘকাল তাদের মধ্যে বিশ্বাস আছে যে ভারতীয়রা তাদের চেয়ে কূট, অপেক্ষাকৃত কম সৎ এবং কম সাহসী।
পাকিস্তান শঙ্কিত যে যুক্তরাষ্ট্র বুঝি শীতল যুদ্ধের অবসানের পর ভারতের দিকে নুয়ে পড়েছে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে, জর্জ ডাবি্লউ বুশের প্রশাসনের সময় থেকে। পাকিস্তানিরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছে, ওয়াশিংটন ভারতকে উদীয়মান বিশ্বশক্তি হিসেবে দেখতে চায়। এ বিষয়টিকে কিছু প্রভাবশালী আমেরিকান মনে করেন, ভারত হলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উগ্র চীনের একটি কাউন্টারপার্ট_যে চীনের রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘকালের উষ্ণ সম্পর্ক। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দিলি্লর সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক নিয়ে আমেরিকা মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। ভারত এবং আমেরিকা বরং একে অপরকে এখন প্রায়ই বলে থাকে 'ন্যাচারাল অ্যালাই'।
তবে একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গেও বেশ কয়েকটি কারণে কাছাকাছি থাকতে চায়। এর সঙ্গে রয়েছে ৯/১১-র পর থেকেই আল-কায়েদা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে পাকিস্তানের ভুমিকা, যা অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মেনে নিয়েছে। তাই ওয়াশিংটন এখন সঠিকভাবেই দাবি করতে পারে, ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন তারা একই সঙ্গে ইসলামাবাদ এবং দিলি্লর সঙ্গেও সমানভাবে সম্পর্ক উপভোগ করছে।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের চুম্বকাংশ।
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments