মুখ্যমন্ত্রী মমতার এক মাস এবং ... by সুব্রত আচার্য্য
ইংরেজিতে একটা কথা আছে_'মর্নিং শোজ্ দ্য ডে'। অর্থাৎ সকালটাই আভাস দেয় আজকের দিনটা কেমন যাবে। পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাম দুর্গকে ছত্রখান করে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার বয়স আজ এক মাস; এক বছর নয়। সময়টা খুবই অল্প।
কিন্তু এ অল্প সময়ের মধ্যে যে 'ম্যাজিক' মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দেখালেন, এতে পরিষ্কার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৬তম বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত অনেক কিছুই করে দেখাবেন মমতা। তবে এটাও ঠিক, কলকাতাকে লন্ডন বানানোর 'প্রতিশ্রুতি' ঠিক ওই সময়ের মধ্যে কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে সব মহলেই। ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা ব্যানার্জি। আজ ২০ জুন। এরই মধ্যে চারটি ছুটির দিন ছিল। আর বাকি ২৬ কর্মদিবসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যবাসী যা দেখল, ৩৪ বছরের বাম শাসনামলে এমন চিত্র কোনো দিনও দেখা গিয়েছিল কি না, মাথা চুলকে ভাবতে হচ্ছে কট্টর বাম সমর্থকদেরও।
৩৪ বছরে রাজ্যে কর্মসংস্কৃতি কেমন ছিল? এর উত্তরে বলতে হয়_কোনো সরকারি অফিসের কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা, কেউ দুপুর সাড়ে ১২টার আগে অফিসে আসতেন না। বিকেল সাড়ে ৩টা বাজতেই বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হতো। শনিবার অর্ধদিবস কর্মদিবস হলেও সেদিনও কার্যত কোনো কাজই হতো না সরকারি অফিসগুলোতে।
জরুরি পরিসেবামূলক সংস্থা_যেমন হাসপাতাল কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও এমন এই প্রভাব ছিল। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমআরআই কিংবা সিটিস্ক্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হতো ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে রোগী মরে তাঁর চলি্লশা পর্যন্ত শেষ হয়ে যেত। থানায় গিয়ে বড় বাবুর (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সঙ্গে দেখা করা, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা_প্রায় একই মনে করতেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ। তাই ওই পর্যন্ত যাওয়ার সাহস ছিল না সাধারণ মানুষের। কর্মসংস্কৃতির বালাই যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেটা কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলেন। মানুষের মধ্যে এই টের পাওয়ার প্রবণতা বুঝে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন, 'যখন যে কাজ আসবে সঙ্গে সঙ্গেই করতে হবে।' তাঁর ওই স্লোগানের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল 'ডু ইট নাউ'। অর্থাৎ 'এখনই করো'। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজে সকাল ১১টা থেকে ২টা এবং সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অফিস করলেও তাঁর মন্ত্রিসভার মধ্যে 'ডু ইট নাউ' স্লোগান বাস্তবায়িত করতে পারেননি। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩০০ দিনই বহু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সঠিক সময় তাঁদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেননি। এতেই অনুমেয়, নিচুতলার সরকারি কর্মীদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ কতটা কার্যকর হয়েছিল!।
পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে আশা বহু প্রত্যাশিত নতুন সরকারের এক মাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর নিজের হাতে রেখেছেন ৯টি মন্ত্রক। এমন ১০টি মন্ত্রক, যেগুলো নিয়ে দীর্ঘদিনের হাজার হাজার অভিযোগ। যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, বিদ্যুৎ, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন, কৃষি, পার্বত্য উন্নয়ন এবং কর্মী ও জনপ্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিন ছিল শনিবার। সরকারি ছুটির দিন। সেদিনও সারা দিন অফিস করেছেন মমতা। এর পরই শুরু হয় অতর্কিতে বিভিন্ন মন্ত্রক পরিদর্শন, হাসপাতাল, পুলিশ লাইন থেকে ফুটপাত- রুটিন ছাড়াই এলোমেলো কর্মসূচিতে প্রশাসন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে মেদ জমে ক্রনিক ডিজিজ হওয়ার মুখে যখন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রশাসন, ঠিক তখনই প্রায় মতো মমতার আবির্ভাবে অবশ্য ঝিমিয়ে যাওয়া অনেক আমলা মুখে না বললেও অন্তরে দারুণ খুশি। এবার যদি গুনে গুনে বলা যায়, কী কী করলেন মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী গত এক মাসে। আসলে এক মাস নয়। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার মাত্র ১৮ দিনের (২০ মে থেকে ৮ জুন) মধ্যে মমতা ব্যানার্জি যে কটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর ফল বছরের পর বছর পাবে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ। যেমন প্রথম দিনের কেবিনেট বৈঠকে সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মমতার সরকার। পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে পাবর্ত্যাঞ্চলে চলা অশান্তিও মাত্র দুদিনের বৈঠকে সমাধান করে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এর আগে রাজ্যের সব স্কুলের শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে মাসের প্রথম দিনেই বেতন-ভাতা চলে যাওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবার আশা যাক, জরুরি পরিসেবামূলক সংস্থা হাসপাতাল ও পুলিশ লাইন পরিদর্শন। আকস্মিক এই পরিদর্শনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নিয়োগ সাবেক বিভাগীয় প্রধানরা। ২৬ মে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি পরিদর্শন করার সময় ওই হাসপাতালের সুপার মুখ্যমন্ত্রী না বলে হাসপাতালে আশার জন্য 'তিরস্কার' করেন। বলা ভালো, কৈফিয়ত চান! অথচ ওই হাসপতালে প্রবেশের পরই মুখ্যমন্ত্রী দেখেন, অসংখ্য রোগী মানবেতর এদিক-সেদিন পড়ে রয়েছেন। কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। দালাল ও কমিশনচক্র সক্রিয়। সুপার শ্যামাপদ গড়াইকে সেদিন রাতেই কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে 'সাসপেন্ড' করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য হাসপাতালগুলোতেও। তাই তটস্থ হয়ে পড়েন সব হাসপাতাল প্রধানরা। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পরিসেবা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন ২৫ মে। সেখানেও চরম অব্যবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। একে একে খাদ্য দপ্তর, দমকল দপ্তর পরিদর্শন করে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কালো তালিকা তৈরি করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা ব্যানার্জি।
এখন রাজ্যের কট্টর বামপন্থী পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মমতার এই পদক্ষেপগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করছে। বলছে, হৃৎগৌরব ফিরে আসছে পশ্চিমবঙ্গে। অর্থাৎ কর্মসংস্কৃতি ফিরছে রাজ্যে। মমতা ব্যানার্জি বিধানসভা নির্বাচনের স্লোগান ছিল, 'বদলা নয় বদল চাই'। লোকসভা নির্বাচনের সময় 'পরিবর্তন চাই' স্লোগানটি যেভাবে মানুষ গ্রহণ করেছিল, সেই ধারাবাহিকতাও যে বিধানসভা নির্বাচনে থাকবে, দূরদর্শী মমতা ব্যানার্জি ঠিকই সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর সে কারণেই হয়তো তিনি 'বদলা নয় বদল চাই' বলে স্লোগান তুলে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর, কতটা ঝানু রাজনীতিক হলে দলীয় কর্মীদের দলীয় অফিসে রবীন্দ্রসংগীত কিংবা নজরুলগীতি শোনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একবার ভাবুন তো! নির্বাচনে বিপুল উৎসাহের মধ্যে রবীন্দ্র কিংবা নজরুলগীতি না শুনে হাজার হাজার, লাখ লাখ দলীয় কর্মী যদি রগচটা রক অ্যান্ড রোল কিংবা হিন্দি গান বাজাতে শুনতেন, তবে পশ্চিমবঙ্গে 'বদলা নয় বদল চাই' এই স্লোগানটির অর্থ কী দাঁড়াত। রক্তের হোলিখেলা শুরু হতো। আসলে মমতা ব্যানার্জি তাঁর সরকারের রূপরেখা অনেক আগে থেকে তৈরি করে রেখেছিলেন।
লেখক : সাংবাদিক, কলকাতা
subrata.acharjee@gmail.com
৩৪ বছরে রাজ্যে কর্মসংস্কৃতি কেমন ছিল? এর উত্তরে বলতে হয়_কোনো সরকারি অফিসের কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা, কেউ দুপুর সাড়ে ১২টার আগে অফিসে আসতেন না। বিকেল সাড়ে ৩টা বাজতেই বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হতো। শনিবার অর্ধদিবস কর্মদিবস হলেও সেদিনও কার্যত কোনো কাজই হতো না সরকারি অফিসগুলোতে।
জরুরি পরিসেবামূলক সংস্থা_যেমন হাসপাতাল কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও এমন এই প্রভাব ছিল। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমআরআই কিংবা সিটিস্ক্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হতো ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে রোগী মরে তাঁর চলি্লশা পর্যন্ত শেষ হয়ে যেত। থানায় গিয়ে বড় বাবুর (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সঙ্গে দেখা করা, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা_প্রায় একই মনে করতেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ। তাই ওই পর্যন্ত যাওয়ার সাহস ছিল না সাধারণ মানুষের। কর্মসংস্কৃতির বালাই যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেটা কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলেন। মানুষের মধ্যে এই টের পাওয়ার প্রবণতা বুঝে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন, 'যখন যে কাজ আসবে সঙ্গে সঙ্গেই করতে হবে।' তাঁর ওই স্লোগানের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল 'ডু ইট নাউ'। অর্থাৎ 'এখনই করো'। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজে সকাল ১১টা থেকে ২টা এবং সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অফিস করলেও তাঁর মন্ত্রিসভার মধ্যে 'ডু ইট নাউ' স্লোগান বাস্তবায়িত করতে পারেননি। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩০০ দিনই বহু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সঠিক সময় তাঁদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেননি। এতেই অনুমেয়, নিচুতলার সরকারি কর্মীদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ কতটা কার্যকর হয়েছিল!।
পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে আশা বহু প্রত্যাশিত নতুন সরকারের এক মাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর নিজের হাতে রেখেছেন ৯টি মন্ত্রক। এমন ১০টি মন্ত্রক, যেগুলো নিয়ে দীর্ঘদিনের হাজার হাজার অভিযোগ। যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, বিদ্যুৎ, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন, কৃষি, পার্বত্য উন্নয়ন এবং কর্মী ও জনপ্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিন ছিল শনিবার। সরকারি ছুটির দিন। সেদিনও সারা দিন অফিস করেছেন মমতা। এর পরই শুরু হয় অতর্কিতে বিভিন্ন মন্ত্রক পরিদর্শন, হাসপাতাল, পুলিশ লাইন থেকে ফুটপাত- রুটিন ছাড়াই এলোমেলো কর্মসূচিতে প্রশাসন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে মেদ জমে ক্রনিক ডিজিজ হওয়ার মুখে যখন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রশাসন, ঠিক তখনই প্রায় মতো মমতার আবির্ভাবে অবশ্য ঝিমিয়ে যাওয়া অনেক আমলা মুখে না বললেও অন্তরে দারুণ খুশি। এবার যদি গুনে গুনে বলা যায়, কী কী করলেন মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী গত এক মাসে। আসলে এক মাস নয়। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার মাত্র ১৮ দিনের (২০ মে থেকে ৮ জুন) মধ্যে মমতা ব্যানার্জি যে কটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর ফল বছরের পর বছর পাবে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ। যেমন প্রথম দিনের কেবিনেট বৈঠকে সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মমতার সরকার। পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে পাবর্ত্যাঞ্চলে চলা অশান্তিও মাত্র দুদিনের বৈঠকে সমাধান করে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এর আগে রাজ্যের সব স্কুলের শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে মাসের প্রথম দিনেই বেতন-ভাতা চলে যাওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবার আশা যাক, জরুরি পরিসেবামূলক সংস্থা হাসপাতাল ও পুলিশ লাইন পরিদর্শন। আকস্মিক এই পরিদর্শনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নিয়োগ সাবেক বিভাগীয় প্রধানরা। ২৬ মে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি পরিদর্শন করার সময় ওই হাসপাতালের সুপার মুখ্যমন্ত্রী না বলে হাসপাতালে আশার জন্য 'তিরস্কার' করেন। বলা ভালো, কৈফিয়ত চান! অথচ ওই হাসপতালে প্রবেশের পরই মুখ্যমন্ত্রী দেখেন, অসংখ্য রোগী মানবেতর এদিক-সেদিন পড়ে রয়েছেন। কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। দালাল ও কমিশনচক্র সক্রিয়। সুপার শ্যামাপদ গড়াইকে সেদিন রাতেই কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে 'সাসপেন্ড' করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য হাসপাতালগুলোতেও। তাই তটস্থ হয়ে পড়েন সব হাসপাতাল প্রধানরা। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পরিসেবা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন ২৫ মে। সেখানেও চরম অব্যবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। একে একে খাদ্য দপ্তর, দমকল দপ্তর পরিদর্শন করে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কালো তালিকা তৈরি করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা ব্যানার্জি।
এখন রাজ্যের কট্টর বামপন্থী পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মমতার এই পদক্ষেপগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করছে। বলছে, হৃৎগৌরব ফিরে আসছে পশ্চিমবঙ্গে। অর্থাৎ কর্মসংস্কৃতি ফিরছে রাজ্যে। মমতা ব্যানার্জি বিধানসভা নির্বাচনের স্লোগান ছিল, 'বদলা নয় বদল চাই'। লোকসভা নির্বাচনের সময় 'পরিবর্তন চাই' স্লোগানটি যেভাবে মানুষ গ্রহণ করেছিল, সেই ধারাবাহিকতাও যে বিধানসভা নির্বাচনে থাকবে, দূরদর্শী মমতা ব্যানার্জি ঠিকই সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর সে কারণেই হয়তো তিনি 'বদলা নয় বদল চাই' বলে স্লোগান তুলে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর, কতটা ঝানু রাজনীতিক হলে দলীয় কর্মীদের দলীয় অফিসে রবীন্দ্রসংগীত কিংবা নজরুলগীতি শোনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একবার ভাবুন তো! নির্বাচনে বিপুল উৎসাহের মধ্যে রবীন্দ্র কিংবা নজরুলগীতি না শুনে হাজার হাজার, লাখ লাখ দলীয় কর্মী যদি রগচটা রক অ্যান্ড রোল কিংবা হিন্দি গান বাজাতে শুনতেন, তবে পশ্চিমবঙ্গে 'বদলা নয় বদল চাই' এই স্লোগানটির অর্থ কী দাঁড়াত। রক্তের হোলিখেলা শুরু হতো। আসলে মমতা ব্যানার্জি তাঁর সরকারের রূপরেখা অনেক আগে থেকে তৈরি করে রেখেছিলেন।
লেখক : সাংবাদিক, কলকাতা
subrata.acharjee@gmail.com
No comments