রঙ্গব্যঙ্গ-সাহারা-হানিফ মুখোমুখি by মোস্তফা কামাল

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দুই নেতার কোন্দল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আগে আওয়ামী লীগে তাঁদের অবস্থান যাই থাকুক, এখন তাঁদের একজন সরকারের এবং আরেকজন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মানুষ। তাঁদের বক্তব্য মিডিয়ায় গুরুত্ব পায়। তাঁদের বক্তব্যকে সরকারের বক্তব্য হিসেবেও গণ্য করা হয়।


তাঁরা যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন, সেহেতু তাঁদের বক্তব্যকে সরকারের বক্তব্য হিসেবেই আমরা মনে করি। আর সেই বক্তব্য নিয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁদের কাল্পনিক কথাবার্তা আমরা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।
হানিফ : সাহারা আপা, আপনি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলেন কেন? আপনি তো দেখছি সরকারকে ডোবাবেন! আমি বুঝতে পারছি, আপনার মুখটাই মূল সমস্যা।
সাহারা খাতুন : এই! এসব কথা বলার তুমি কে? বড় বড় কথা বলবে না। কোথা থেকে কী হয়েছ মনে আছে! আর আমি কী উল্টাপাল্টা কথা বললাম?
হানিফ : আপনি কেন বললেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলেও হরতাল করবে না?
সাহারা খাতুন : আমি কী বলব না বলব সেটা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে বলতে হবে নাকি?
হানিফ : অবশ্যই। আমার অবস্থান আপনি টের পাননি? আমিও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মন্ত্রী হয়েছেন তো কী হয়েছে? আজ আছেন, কাল বাদ পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু আমাদের বাদ পড়ার ভয় নেই। আপনার বাদ পড়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেসব কথাবার্তা বলছেন, তাতে মন্ত্রী থাকার আর সুযোগ কোথায়?
সাহারা খাতুন : হানিফ, খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমার ভুল হলে প্রধানমন্ত্রী যা বলার বলবেন। তুমি বলার কে? আমি যা সত্যি তাই বলেছি।
হানিফ : কোনটা সত্যি? আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে হরতাল করবে না�এ কথা আপনি বলতে পারেন? এটা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বলতে পারি। আর দলীয় বিষয়ে কথা বলতে হলে আমরা বলব। আপনি বলার কে? মন্ত্রী হয়েছেন, নিজের মন্ত্রণালয়টা ঠিকমতো চালান। তা তো পারছেন না!
সাহারা খাতুন : পারছি না মানে! তুমিই তো উল্টাপাল্টা বকছ। মন্ত্রী হয়েছি বলে আমি কি দলের কেউ না? দেখো হানিফ, নিজের চরকায় তেল দাও, বুঝলে! কোলা ব্যাঙ কুয়া থেকে সাগরে পড়লে যে অবস্থা হয় তোমার সে অবস্থা হয়েছে। এখনো তো তল পাওনি। পেলে বুঝবে!
হানিফ : আগে মুখ সামলান সাহারা আপা। তারপর কথা বলেন। আপনার মুখের কারণেই আমরা বারবার বিব্রত হচ্ছি। মিডিয়ার সমালোচনা সহ্য করছি। আপনি নিজেও ডুববেন, আমাদেরও ডোবাবেন। যদি মুখ সামলাতে না পারেন তাহলে আগেভাগেই বিদায় হন!
সাহারা খাতুন : থাক থাক! ছোট মুখে বড় কথা! ওসব পাকামো রাখো তো! অনেক হয়েছে। আর আমার কাজ নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি আমার মন্ত্রণালয় কিভাবে চালাতে হয় তা খুব ভালো করেই বুঝি। তোমাকে দায়িত্ব দিলে তো তুমি দুদিনও চালাতে পারবে না! তুমি তোমার কাজ করো। তোমরাই আওয়ামী লীগের বড় সমস্যা। রাজনীতির কিছু বোঝো না, রাজনীতি নিয়ে মিডিয়ায় গলাবাজি করো! টিভির চোঙা ধরলেই খইয়ের মতো কথা ফোটে, তাই না! টিভি খুললেই তোমার চেহারা দেখি! তুমি কী এমন নেতা হয়েছ, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দাও! বেশি বেশি কথা বলো!
হানিফ : কি নেতা হয়েছি দেখেন না! আমরা আওয়ামী লীগকে চালাই। আমরা যা বলি সেটাই আওয়ামী লীগের বক্তব্য। কেন, টের পান না?
সাহারা খাতুন : হুম! আমরা রাজধানীতে রাজনীতি করেই ভাত পাই না, আর কোথাকার কোন উপজেলা নেতা! যাও, যাও! তোমাদের আর বেল নেই। তুমি ভাবছ, মন্ত্রী হয়েছি বলে তোমাদের তেল মারব? মোটেই না! দলের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছি তা আগে করো, তারপর কথা বলতে এসো। হঠাৎ বড় পদ পেয়ে গেছ তো, তাই টের পাচ্ছ না!
হানিফ : সাহারা আপা, কী ত্যাগ করেছেন সেটা আমরা দেখেছি। মায়ের কাছে মাসির গল্প বলে লাভ নেই। ভাগ্যগুণে মন্ত্রী হয়েছেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। আর মন্ত্রণালয়টা একটু ঠিকঠাক মতো চালান! আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে আগেরবারের মতো এবারও একই অবস্থা হবে। আর আপনি এত পুলিশের পক্ষে সাফাই গান কেন?
সাহারা খাতুন : তোমাকে বলেছি না, তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমি মন্ত্রণালয় চালাব না। আর আইনশৃঙ্খলার কী হয়েছে? আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো আছে।
হানিফ : বাহ্! আপনি তো দেখছি আ�তুষ্টিতে ভুগছেন! কোনো লাভ নেই, বুঝলেন! কোনো লাভ নেই।
সাহারা খাতুন : কী বলতে চাও তুমি? তুমি কি বলতে চাও, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ?
হানিফ : সেটা আমি বলব না। প্রধানমন্ত্রী বলবেন। কিছুদিন পরই টের পাবেন।
সাহারা খাতুন : যাও যাও! তোমাকে বলেছি না, আমার বিষয় নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না! তোমার ব্যাপারটাও আমি দেখছি। সাহারা খাতুনের মুখের ওপর কথা বলার সাহস তুমি কোথায় পেয়েছ, তা দেখছি!
হানিফ : আমাকে আপনি হুমকি দিচ্ছেন? দেখেন, ভালো হবে না কিন্তু...
সাহারা খাতুন : কি হবে, মন্ত্রিত্ব চলে যাবে? সে জন্য আমি চিন্তিত নই।
হানিফ চলে যাওয়ার পর সাহারা খাতুন কাজের দিকে মনোযোগ দিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই মন বসাতে পারলেন না। হানিফের কথাগুলো বারবার তার বুকের মধ্যে তীরের ফলার মতো বিঁধে যাচ্ছিল।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক   

No comments

Powered by Blogger.