জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উপকূলে-দুর্গতদের বাঁচাতে দ্রুত উদ্যোগ চাই
নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের পানি মাত্র ৪-৫ ফুট উঁচু হয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছিল। আর তাতেই উপকূল রক্ষা বাঁধের অন্তত ৩৪টি জায়গা ভেঙে গেছে। অন্তত দেড় লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের খাবার নেই, রান্না করার উপায় নেই, পান করার মতো পানি নেই, রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই_এককথায় এই দেড় লাখ মানুষ এক অসহনীয়, অবর্ণনীয় অবস্থায় জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে কয়েক শ গবাদিপশু ভেসে গেছে।
বহু মাছের খামার, চিংড়িঘের ডুবে গেছে। আউশ ধান, পানের বরজসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু ঘরবাড়িও বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন কী করবে উপকূলীয় অঞ্চলের এসব মানুষ? ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক জোয়ারেও তাদের বাড়িঘর, জমিজমা প্লাবিত হবে। এর পরও কি তাদের পক্ষে সেখানে থাকা সম্ভব হবে? তারা কোথায় যাবে?
জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কেবল ২০১০ সালেই চার কোটি ২০ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের উদ্বাস্তুর সংখ্যাই বেশি। আর এদের উদ্বাস্তু হওয়ার প্রধান কারণ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। ২০০৭ সালে প্রলয়ংকরী সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে আমাদের সারা উপকূল তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এখনো বহু মানুষ নতুন করে বাড়িঘর বানাতে পারেনি, বেড়িবাঁধ বা সড়কের পাশে ছাপরা তুলে বসবাস করছে। সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধও পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। এর ওপর নিম্নচাপের সামান্য প্রভাবেই যদি ৩৪ জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে এমন বাঁধ থাকা-না থাকা সমান অর্থ বহন করে না কি? সিডরের পর বিশেষজ্ঞরা বারবার বেড়িবাঁধ আরো উঁচু ও শক্ত করে বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। চার বছর অতিবাহিত হতে চলল, বেড়িবাঁধ উঁচু করা তো দূরে থাক, মেরামতটাই সম্পন্ন করা যায়নি। ১৯৯২ সালে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকারিভাবে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি যেসব সুপারিশ করেছিল, প্রায় দুই দশকেও সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ তো নেই বললেই চলে, পুরনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোরও অধিকাংশ প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় চলে গেছে। এ অবস্থায় যদি আরেকটি বড় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয়, তাহলে উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জীবনে কত বড় বিপর্যয় নেমে আসবে_তা ভাবা যায় কি? উপকূলীয় মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের এই অবহেলা কেন? তাদের প্রতি কি আমাদের কোনো মমত্ববোধ, কোনো রকম দায়িত্ববোধ নেই?
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দুই দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার শুধু সংখ্যা নয়, দুর্যোগের তীব্রতা বা ধ্বংস করার ক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে অনেক বেশি করে। আমরা বিষয়গুলো যে উপলব্ধি করছি না, তা নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা বেশ জোরের সঙ্গে আমাদের দুরবস্থা ও সম্ভাব্য পরিণতির কথা নিয়মিতভাবে তুলে ধরছি। বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী উন্নত দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। সেসবেরও প্রয়োজন আছে, তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু বাঁচামরার সন্ধিক্ষণে থাকা উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জন্য আমাদের নিজেদের কি করণীয় কিছু নেই? থাকলে আজ পর্যন্ত কেন উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামত করা গেল না_সে প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। কেন এখন পর্যন্ত সিডর ও আইলাদুর্গত লোকজনের পুনর্বাসন করা গেল না? কেন এখনো তাদের কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়? এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের দিকে তাকালেও উপকূলের সেসব মানুষকে নিয়ে আমরা কতটুকু ভাবি, তার প্রতিফলন পাওয়া যায়।
জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আশা করি, বর্তমান সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করবে এবং উপকূলীয় মানুষের জীবন রক্ষায় অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কেবল ২০১০ সালেই চার কোটি ২০ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের উদ্বাস্তুর সংখ্যাই বেশি। আর এদের উদ্বাস্তু হওয়ার প্রধান কারণ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। ২০০৭ সালে প্রলয়ংকরী সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে আমাদের সারা উপকূল তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এখনো বহু মানুষ নতুন করে বাড়িঘর বানাতে পারেনি, বেড়িবাঁধ বা সড়কের পাশে ছাপরা তুলে বসবাস করছে। সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধও পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। এর ওপর নিম্নচাপের সামান্য প্রভাবেই যদি ৩৪ জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে এমন বাঁধ থাকা-না থাকা সমান অর্থ বহন করে না কি? সিডরের পর বিশেষজ্ঞরা বারবার বেড়িবাঁধ আরো উঁচু ও শক্ত করে বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। চার বছর অতিবাহিত হতে চলল, বেড়িবাঁধ উঁচু করা তো দূরে থাক, মেরামতটাই সম্পন্ন করা যায়নি। ১৯৯২ সালে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকারিভাবে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি যেসব সুপারিশ করেছিল, প্রায় দুই দশকেও সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ তো নেই বললেই চলে, পুরনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোরও অধিকাংশ প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় চলে গেছে। এ অবস্থায় যদি আরেকটি বড় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয়, তাহলে উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জীবনে কত বড় বিপর্যয় নেমে আসবে_তা ভাবা যায় কি? উপকূলীয় মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের এই অবহেলা কেন? তাদের প্রতি কি আমাদের কোনো মমত্ববোধ, কোনো রকম দায়িত্ববোধ নেই?
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দুই দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার শুধু সংখ্যা নয়, দুর্যোগের তীব্রতা বা ধ্বংস করার ক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে অনেক বেশি করে। আমরা বিষয়গুলো যে উপলব্ধি করছি না, তা নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা বেশ জোরের সঙ্গে আমাদের দুরবস্থা ও সম্ভাব্য পরিণতির কথা নিয়মিতভাবে তুলে ধরছি। বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী উন্নত দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। সেসবেরও প্রয়োজন আছে, তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু বাঁচামরার সন্ধিক্ষণে থাকা উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জন্য আমাদের নিজেদের কি করণীয় কিছু নেই? থাকলে আজ পর্যন্ত কেন উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামত করা গেল না_সে প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। কেন এখন পর্যন্ত সিডর ও আইলাদুর্গত লোকজনের পুনর্বাসন করা গেল না? কেন এখনো তাদের কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়? এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের দিকে তাকালেও উপকূলের সেসব মানুষকে নিয়ে আমরা কতটুকু ভাবি, তার প্রতিফলন পাওয়া যায়।
জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আশা করি, বর্তমান সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করবে এবং উপকূলীয় মানুষের জীবন রক্ষায় অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
No comments