তীর থেকে দূরে প্রত্যাশার তরী
আগামীকাল ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী জনমত জরিপ করেছে সমকাল। জরিপে উঠে এসেছে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা। আগামী দুই বছরে সরকারের জন্য কয়েকটি 'করণীয়' নির্ধারণ করেছে জনগণ। বিশেষ এ আয়োজন তত্ত্বাবধান ও জরিপের ফল বিশ্লেষণ করেছেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত বাংলাদেশের জনগণ কথা বলেছে। তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, মহাজোট সরকারের
অনেক কিছুই তাদের পছন্দ নয়। তীর থেকে দূরে রয়েছে প্রত্যাশার তরী। তিন বছর আগে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল তারা। এখন তাতে স্পষ্টতই ভাটার টান। শিক্ষা-বিদ্যুৎ-ডিজিটাল সুবিধার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা থাকলেও তিন বছরে এমন অসাধারণ কোনো অর্জন লক্ষণীয় নয়, যাকে তারা একবাক্যে বাহবা দিতে পারে। ব্যর্থতার তালিকার শীর্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। মানুষের ক্ষোভ তিস্তা-টিপাইমুখ-ট্রানজিটের মতো পররাষ্ট্রনীতি ইস্যুতে। আপত্তি ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভাজনে, মন্ত্রিসভার সার্বিক ব্যর্থতায়। সার্বিক অর্থনীতির চিত্রও হত্যাশাব্যঞ্জক। তবে এখনও যথেষ্ট ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। সরকারের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিও তাদের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। তাদের অব্যাহত সংসদ বর্জন ও হরতালের রাজনীতি গ্রহণযোগ্য নয়। দলে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের প্রতি নমনীয় মনোভাবও জনগণ পছন্দ করে না। এটাও তারা স্পষ্ট করেছে যে, কারও দুর্নীতিই পছন্দ নয়। রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকাও গ্রহণীয় নয়।
২০১১ সালের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পরিচালিত দেশব্যাপী জনমত জরিপে সর্বমোট ৩২টি প্রশ্ন রাখা হয়। ৬৪টি জেলা সদর এবং সাড়ে তিনশ'র বেশি উপজেলায় পরিচালিত জরিপের কাজে যুক্ত ছিলেন সমকালের ঢাকা অফিস এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যুক্ত প্রায় চারশ' কর্মী। সমকাল সুহৃদ সমাবেশের প্রায় পাঁচশ' সদস্যও জরিপ পরিচালনায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। জরিপে উত্তর মিলেছে ৯ হাজার ৬৫২ জনের কাছ থেকে। এদের মধ্যে শহরের ৪৭ এবং গ্রামের ৪৩ শতাংশ। নারী উত্তরদাতা ৩৫ এবং পুরুষ ৬৫ শতাংশ। নানা শ্রেণী-পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তারা। বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক চিত্রে নারী-পুরুষে প্রায় সমতা রয়েছে। কিন্তু জরিপে তার কিছু ব্যতিক্রম। শহর ও গ্রামের ক্ষেত্রেও পুরোপুরি সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কয়েক অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কয়েক গবেষকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই 'টার্গেটেড রিপ্রেজেনটেটিভ' বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা তাদের কাছেই যেতে চেয়েছি, যারা দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর
কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কমবেশি অবহিত।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উত্তরদাতারা কোনটা ভালো আর কোনটা নয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট অভিমত দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দরিদ্রদের সরকারি সহায়তা, যোগাযোগ ও পদ্মা সেতু, দুর্নীতি-টেন্ডারবাজি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ থেকে ধারণা মেলে। পরবর্তী দুই বছরের প্রত্যাশাও তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, জরিপটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ_ তা নিয়ে সংশয় নেই। গ্রামের মানুষ ও নাগরিক সমাজ প্রায় অভিন্ন ভাষায় কথা বলেছে। সরকার উৎখাতের আন্দোলন বেগবান করা কিংবা বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার তাগিদ থেকে নয়, পূর্বনির্ধারিত বিরোধিতা বা শত্রুতাবশত হয়েও নয়, বরং ন্যায় ও সত্য প্রকাশের তাগিদ থেকেই সমকাল এ উদ্যোগ নিয়েছে। মানুষ চেয়েছে, তাদের আগামী দিন যেন সুন্দর হয়। সরকার ও বিরোধীদের বিষয়ে তাদের মূল্যায়ন নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ। আশা করব যে, সরকার ও বিরোধীপক্ষ অকাতরে তা গ্রহণ করবে এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে। দেশবাসী বুঝতে পারছে, সরকার ও বিরোধী কোনো পক্ষই ঠিক পথে নেই।
জরিপে জনগণ আগামী দুই বছরের প্রধান মনোযোগ ঠিক করে দিয়েছে_ দ্রব্যমূল্য কমানো, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা। রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জিত না হলে নানা ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, এমনকি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও হুমকিতে পড়তে পারে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের প্রধান প্রত্যাশা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান। বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্ম এজন্য সরকারকে বিপুল সমর্থন দিয়েছে। অথচ সরকারের কাছে জনগণের প্রধান প্রত্যাশার তালিকায় সেটা চলে গেছে চার নম্বরে। এর কারণ অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস জিল্লুর রহমান খান বলেছেন, সরকারের ক্ষমতায় আসার পেছনে এ ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেখতে চায়নি। অথচ এ ক্ষেত্রে একের পর এক এক বিঘ্ন ঘটেছে। সরকারের কাজে জড়তা স্পষ্ট।
সমকাল জরিপে বাংলাদেশ কথা বলেছে। এখন বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব যাদের ওপর রয়েছে তারা শুনুন, জনগণ কী বলছে। জনগণ কিন্তু সবকিছুই জানে এবং বোঝে।
জরিপ থেকে তথ্য : জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১১ শতাংশ নিরক্ষর এবং ২৬ শতাংশ এসএসসি পর্যন্ত। ৪০ শতাংশ এসএসসি থেকে স্নাতক ও ২৩ শতাংশ স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পেশা : চাকরি ২০, পেশাজীবী ৮, শ্রমিক ৫, কৃষক-দিনমজুর ৮, ছাত্র ১৪, শিক্ষক ১১, গৃহিণী ১১, ব্যবসায়ী ১৫ এবং অন্যান্য ৮ শতাংশ।
বয়স : ১৮-২৫ বছর ১৯, ২৬-৩৫ বছর ৩৩, ৩৬-৫০ বছর ৩৭, ৫১-৬০ বছর ৯ এবং ৬১ বছরের বেশি ২ শতাংশ।
মহজোট সরকারের সাফল্যের তালিকার শীর্ষে শিক্ষা। তারপর বিদ্যুৎ, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পদক্ষেপ ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যর্থতার শীর্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারপর রয়েছে যোগাযোগ ও পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি। মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল প্রয়োজন বলেছেন প্রায় ৫১ শতাংশ এবং আংশিক প্রয়োজন বলেছেন প্রায় ৩৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে_ সরকারের এ দাবির প্রশ্নে হ্যাঁ বলেছেন ৩৪ এবং আংশিক সত্য বলেছেন ৩৯ শতাংশ।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ করায় জটিলতা বাড়বে_ বলেছেন ৫৫ শতাংশ এবং কিছু জটিলতা বাড়বে বলেছেন ১৭ শতাংশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রগতি বলেছেন ৫৬ শতাংশ এবং না বলেছেন ৩৩ শতাংশ। নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী কি-না এ প্রশ্নে ৬১ শতাংশের বেশি হ্যাঁ এবং না বলেছেন প্রায় ২৫ শতাংশ। দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি তেমন সুফল দিচ্ছে না_ বলেছেন ৪১ শতাংশ এবং দিচ্ছে বলেছেন ২২ শতাংশ। আর ৩৩ শতাংশ বলেছেন দিচ্ছে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা টেন্ডারবাজিতে বেপরোয়া_ এ প্রশ্নে ৫৯ শতাংশই বলেছেন হ্যাঁ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক_ বলেছেন ৪৬ শতাংশ এবং সন্তোষজনক বলেছেন ২০ শতাংশ। দৈনিন্দিন জীবনে নিরাপদবোধ করেন কি-না_ এ প্রশ্নে হ্যাঁ বলেছেন ২০ শতাংশ এবং মোটামুটি নিরাপদ উত্তর এসেছে ৪৩ শতাংশ থেকে।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়_ বলেছেন প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং হতাশাব্যঞ্জক বলছেন ৩৪ শতাংশ। খুব ভালো ও ভালো মিলিয়ে বলেছেন মাত্র ২১ শতাংশ। বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ৫১ শতাংশ। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু হবে না_ মনে করেন ৫৫ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ফের ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করতে পারে_ এমন শঙ্কা ৫৪ শতাংশের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সঠিক পথে চলছে_ মনে করেন ২৩ শতাংশ এবং মোটামুটি সঠিক পথে মনে করছেন ৩৬ শতাংশ।
২০১১ সালের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পরিচালিত দেশব্যাপী জনমত জরিপে সর্বমোট ৩২টি প্রশ্ন রাখা হয়। ৬৪টি জেলা সদর এবং সাড়ে তিনশ'র বেশি উপজেলায় পরিচালিত জরিপের কাজে যুক্ত ছিলেন সমকালের ঢাকা অফিস এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যুক্ত প্রায় চারশ' কর্মী। সমকাল সুহৃদ সমাবেশের প্রায় পাঁচশ' সদস্যও জরিপ পরিচালনায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। জরিপে উত্তর মিলেছে ৯ হাজার ৬৫২ জনের কাছ থেকে। এদের মধ্যে শহরের ৪৭ এবং গ্রামের ৪৩ শতাংশ। নারী উত্তরদাতা ৩৫ এবং পুরুষ ৬৫ শতাংশ। নানা শ্রেণী-পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তারা। বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক চিত্রে নারী-পুরুষে প্রায় সমতা রয়েছে। কিন্তু জরিপে তার কিছু ব্যতিক্রম। শহর ও গ্রামের ক্ষেত্রেও পুরোপুরি সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কয়েক অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কয়েক গবেষকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই 'টার্গেটেড রিপ্রেজেনটেটিভ' বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা তাদের কাছেই যেতে চেয়েছি, যারা দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর
কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কমবেশি অবহিত।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উত্তরদাতারা কোনটা ভালো আর কোনটা নয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট অভিমত দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দরিদ্রদের সরকারি সহায়তা, যোগাযোগ ও পদ্মা সেতু, দুর্নীতি-টেন্ডারবাজি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ থেকে ধারণা মেলে। পরবর্তী দুই বছরের প্রত্যাশাও তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, জরিপটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ_ তা নিয়ে সংশয় নেই। গ্রামের মানুষ ও নাগরিক সমাজ প্রায় অভিন্ন ভাষায় কথা বলেছে। সরকার উৎখাতের আন্দোলন বেগবান করা কিংবা বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার তাগিদ থেকে নয়, পূর্বনির্ধারিত বিরোধিতা বা শত্রুতাবশত হয়েও নয়, বরং ন্যায় ও সত্য প্রকাশের তাগিদ থেকেই সমকাল এ উদ্যোগ নিয়েছে। মানুষ চেয়েছে, তাদের আগামী দিন যেন সুন্দর হয়। সরকার ও বিরোধীদের বিষয়ে তাদের মূল্যায়ন নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ। আশা করব যে, সরকার ও বিরোধীপক্ষ অকাতরে তা গ্রহণ করবে এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে। দেশবাসী বুঝতে পারছে, সরকার ও বিরোধী কোনো পক্ষই ঠিক পথে নেই।
জরিপে জনগণ আগামী দুই বছরের প্রধান মনোযোগ ঠিক করে দিয়েছে_ দ্রব্যমূল্য কমানো, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা। রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জিত না হলে নানা ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, এমনকি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও হুমকিতে পড়তে পারে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের প্রধান প্রত্যাশা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান। বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্ম এজন্য সরকারকে বিপুল সমর্থন দিয়েছে। অথচ সরকারের কাছে জনগণের প্রধান প্রত্যাশার তালিকায় সেটা চলে গেছে চার নম্বরে। এর কারণ অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস জিল্লুর রহমান খান বলেছেন, সরকারের ক্ষমতায় আসার পেছনে এ ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেখতে চায়নি। অথচ এ ক্ষেত্রে একের পর এক এক বিঘ্ন ঘটেছে। সরকারের কাজে জড়তা স্পষ্ট।
সমকাল জরিপে বাংলাদেশ কথা বলেছে। এখন বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব যাদের ওপর রয়েছে তারা শুনুন, জনগণ কী বলছে। জনগণ কিন্তু সবকিছুই জানে এবং বোঝে।
জরিপ থেকে তথ্য : জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১১ শতাংশ নিরক্ষর এবং ২৬ শতাংশ এসএসসি পর্যন্ত। ৪০ শতাংশ এসএসসি থেকে স্নাতক ও ২৩ শতাংশ স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পেশা : চাকরি ২০, পেশাজীবী ৮, শ্রমিক ৫, কৃষক-দিনমজুর ৮, ছাত্র ১৪, শিক্ষক ১১, গৃহিণী ১১, ব্যবসায়ী ১৫ এবং অন্যান্য ৮ শতাংশ।
বয়স : ১৮-২৫ বছর ১৯, ২৬-৩৫ বছর ৩৩, ৩৬-৫০ বছর ৩৭, ৫১-৬০ বছর ৯ এবং ৬১ বছরের বেশি ২ শতাংশ।
মহজোট সরকারের সাফল্যের তালিকার শীর্ষে শিক্ষা। তারপর বিদ্যুৎ, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পদক্ষেপ ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যর্থতার শীর্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারপর রয়েছে যোগাযোগ ও পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি। মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল প্রয়োজন বলেছেন প্রায় ৫১ শতাংশ এবং আংশিক প্রয়োজন বলেছেন প্রায় ৩৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে_ সরকারের এ দাবির প্রশ্নে হ্যাঁ বলেছেন ৩৪ এবং আংশিক সত্য বলেছেন ৩৯ শতাংশ।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ করায় জটিলতা বাড়বে_ বলেছেন ৫৫ শতাংশ এবং কিছু জটিলতা বাড়বে বলেছেন ১৭ শতাংশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রগতি বলেছেন ৫৬ শতাংশ এবং না বলেছেন ৩৩ শতাংশ। নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী কি-না এ প্রশ্নে ৬১ শতাংশের বেশি হ্যাঁ এবং না বলেছেন প্রায় ২৫ শতাংশ। দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি তেমন সুফল দিচ্ছে না_ বলেছেন ৪১ শতাংশ এবং দিচ্ছে বলেছেন ২২ শতাংশ। আর ৩৩ শতাংশ বলেছেন দিচ্ছে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা টেন্ডারবাজিতে বেপরোয়া_ এ প্রশ্নে ৫৯ শতাংশই বলেছেন হ্যাঁ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক_ বলেছেন ৪৬ শতাংশ এবং সন্তোষজনক বলেছেন ২০ শতাংশ। দৈনিন্দিন জীবনে নিরাপদবোধ করেন কি-না_ এ প্রশ্নে হ্যাঁ বলেছেন ২০ শতাংশ এবং মোটামুটি নিরাপদ উত্তর এসেছে ৪৩ শতাংশ থেকে।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়_ বলেছেন প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং হতাশাব্যঞ্জক বলছেন ৩৪ শতাংশ। খুব ভালো ও ভালো মিলিয়ে বলেছেন মাত্র ২১ শতাংশ। বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ৫১ শতাংশ। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু হবে না_ মনে করেন ৫৫ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ফের ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করতে পারে_ এমন শঙ্কা ৫৪ শতাংশের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সঠিক পথে চলছে_ মনে করেন ২৩ শতাংশ এবং মোটামুটি সঠিক পথে মনে করছেন ৩৬ শতাংশ।
No comments