রোডমার্চ সফল করা নিয়ে বিএনপিতে নানা শঙ্কা by মোশাররফ বাবলু ও শফিক সাফি
অনেক হাঁকডাক দিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। প্রথমবারেই হোঁচট খেল তারা। রোডমার্চ ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি নেই। মহাসমাবেশ থেকে তিন বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও চট্টগ্রামের কর্মসূচি পিছিয়ে গেছে। রাজশাহী জেলা বিএনপি ও মহানগরী বিএনপি নেতাদের মতবিরোধের কারণে রাজশাহী শহরে রোডমার্চ কিংবা জনসভাও হচ্ছে না। রাজশাহী বিভাগের রোডমার্চ চলে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, রোডমার্চের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি প্রথম দিকেই হোঁচট খাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের রোডমার্চ পিছিয়ে গেল।
অথচ ছয় মাস ধরে নেতারা বলছেন, রোজার ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। তা হবে এক দফার আন্দোলন। এ আন্দোলনে সাফল্যের বিষয়ে দলের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রথম রোডমার্চ হবে ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে। আগামী সোমবার ১০ অক্টোবর গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়া সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন। ১৮ অক্টোবর রোডমার্চ হবে ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে। ওইদিনও সকাল সাড়ে ৯টায় গুলশানের বাসা থেকে তিনি যাত্রা শুরু করবেন। প্রথম দিন বগুড়ায় জনসভা ও রাতে বগুড়ায় রাত যাপন করবেন তিনি। পরের দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভা। রাতে রাজশাহীর সার্কিট হাউসে থাকবেন তিনি।
সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের রোডমার্চের সঙ্গে আশপাশের প্রায় ২৫টি জেলার নেতা-কর্মীরা জড়িত। এসব জেলার নেতা-কর্মীরা রোডমার্চ সফল করার প্রস্তুতি নিলেও দলের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্ব চলছে। রোডমার্চের আগেই দ্বন্দ্ব মেটাতে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের নির্দেশের পর ওইসব জেলা নেতাদের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক করেন। এতেও দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি। রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে রাজশাহী শহরে রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে করতে হচ্ছে। এদিকে গতকাল নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলের নিজ নিজ নেতারা কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে বৈঠক করেন।
দলের একটি সূত্রে জানা যায়, রোডমার্চ কর্মসূচিতে চারদলীয় ঐক্যজোট, শরিক দল ও সমমনা দলগুলোর সমর্থন থাকলেও তাদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কর্মসূচি ঘোষণার পর চারদলীয় ঐক্যজোট ও সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়নি। এ নিয়ে সমমনা দলের নেতারা নাখোশ। জামায়াতের নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। রোডমার্চে জামায়াত নেতারা অংশ নেবেন কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। এ অবস্থায় কর্মসূচি সফল করা নিয়ে বিএনপিতে চলছে নানা টেনশন। গতকাল এলডিপি মহাসচিব জাহানারার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর উত্তরার বাসায় বৈঠক করেন। রোডমার্চ সফল করা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। এলডিপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, দিদার বখ্ত, মামদুদুর রহমান চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম।
ঢাকা-সিলেট রোডমার্চ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল পাঁচ সদস্যের একটি দল সকালে ছয়টি স্পট পরিদর্শন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান শামীম। আজ শুক্রবার সিলেটে রোডমার্চ প্রস্তুতি কমিটির সভা হবে বলে জানা গেছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, রোডমার্চ কর্মসূচি নিয়ে দলের মধ্যে কোনো কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নেই। কর্মসূচি সফল হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত। তিনি বলেন, 'সিলেটের রোডমার্চে ছয়টি পথসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। আমরা স্পটগুলো পরিদর্শন করছি। সর্বত্র নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখছি। প্রচারণাও চলছে সমানভাবে। পথসভার স্পটগুলো হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব চৌরাস্তা, নরসিংদীর ইটাখোলা মাঠ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঙালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ মোড় ও মৌলভীবাজারের শেরপুর।' এরপর সিলেট পর্যন্ত কোনো পথসভা থাকবে না। কারণ পরদিন ১১ অক্টোবর সিলেট শহরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভা রয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা রূপগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার স্পটগুলো পরিদর্শন করেছি। আরো দুটি করব। সর্বত্র ব্যাপক প্রস্তুতি দেখেছি। আশা করি, এই রোডমার্চে ব্যাপক মানুষের ঢল নামবে।'
রাজশাহী রোডমার্চ কর্মসূচির সমন্বয়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের মধ্যে আপাতত কোন্দল নেই। কর্মসূচি সফল হবে। এই রোডমার্চের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে। দলের নেতা-কর্মীরাও সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কর্মসূচি সফল করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। বড় দলের মধ্যে কম-বেশি কিছু মতবিরোধ থাকলেও তা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঠিক হয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা রোডমার্চ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সব সময় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। জেলা নেতাদের মধ্যে কিছু মতবিরোধ ছিল, তাও নিরসন হয়েছে' বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র নেতারা যত কথাই বলেন না কেন সারা দেশের জেলা-উপজেলা নেতাদের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি। পদ-পদবি ও নেতৃত্বের কারণে এই দ্বন্দ্ব চলছে। জেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোন্দল ও দ্বন্দ্বের কথা শিকার করেছেন।
পাবনা : পাবনায় চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের সমর্থনপুষ্ট জেলা কমিটির আহ্বায়ক মেজর (অব.) কে এস ফিরোজের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে পাবনা সদর পৌর মেয়র কামরুল ইসলাম মিন্টুর মধ্যে কোন্দল বিরাজমান।
গাজীপুর : গাজীপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ ও চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন ও কেন্দ্রীয় নেতা হাসানউদ্দিন সরকারের বনিবনা নেই।
নওগা : নওগাঁয় জেলা কমিটির সভাপতি সামসুজ্জোহার সঙ্গে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক এমপি শামসুল আলম প্রামাণিক ও ডা. সালেক চৌধুরীর চরম বিরোধ।
রাজশাহী : রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগরের সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফার কোন্দল ও দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে রাজশাহীর মূল শহরে রোডমার্চ ও জনসভা স্থগিত হয়ে যায়।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে জেলার আহ্বায়ক আহমেদ আজম খানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি নেই প্রায় একযুগ। সেখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খানম রিতা, মইনুল ইসলাম খান শান্ত, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, তোজাম্মেল হক তোজা ও প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আখতার হামিদ ডাব্লুর নেতৃত্বে যে দ্বন্দ্ব বিরাজমান, তাতে দল জর্জরিত।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে মহানগর কমিটির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাসিরের বিবাদ অনেক পুরনো।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় জেলা কমিটিতে হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের সঙ্গে সাক্কুর দ্বন্দ্ব।
ফেনী : সাইদ এস্কান্দারের একচ্ছত্র আধিপত্য।
কক্সবাজার : কক্সবাজারে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন ও জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহানের সঙ্গে সদরের দলীয় এমপি লুৎফর রহমান কাজলের মুখ দেখাদেখি বন্ধ।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ও আবুল কালাম আজাদের তীব্র বিরোধ।
নরসিংদী : বর্তমান সভাপতি খাইরুল কবির খোকনের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী ও সাবেক সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ইরানের দ্বন্দ্ব চলছে।
ভৈরব : কিশোরগঞ্জের অবস্থা আরো খারাপ। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক ও জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমানের সঙ্গে জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর কথাবার্তাও বন্ধ।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক আসপিয়ার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলন গ্রুপিংয়ের বিভক্তি বেশ পুরনো।
মৌলভীবাজার : জেলা কমিটির সভাপতি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমানের সঙ্গে সাবেক এমপি খালেদা রব্বানীর বিরোধ চলছে।
সিলেট : সিলেট মহানগরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. শাহরিয়ারের রেষারেষি আজো ঘোচেনি।
সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের রোডমার্চের সঙ্গে আশপাশের প্রায় ২৫টি জেলার নেতা-কর্মীরা জড়িত। এসব জেলার নেতা-কর্মীরা রোডমার্চ সফল করার প্রস্তুতি নিলেও দলের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্ব চলছে। রোডমার্চের আগেই দ্বন্দ্ব মেটাতে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের নির্দেশের পর ওইসব জেলা নেতাদের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক করেন। এতেও দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি। রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে রাজশাহী শহরে রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে করতে হচ্ছে। এদিকে গতকাল নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলের নিজ নিজ নেতারা কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে বৈঠক করেন।
দলের একটি সূত্রে জানা যায়, রোডমার্চ কর্মসূচিতে চারদলীয় ঐক্যজোট, শরিক দল ও সমমনা দলগুলোর সমর্থন থাকলেও তাদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কর্মসূচি ঘোষণার পর চারদলীয় ঐক্যজোট ও সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়নি। এ নিয়ে সমমনা দলের নেতারা নাখোশ। জামায়াতের নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। রোডমার্চে জামায়াত নেতারা অংশ নেবেন কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। এ অবস্থায় কর্মসূচি সফল করা নিয়ে বিএনপিতে চলছে নানা টেনশন। গতকাল এলডিপি মহাসচিব জাহানারার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর উত্তরার বাসায় বৈঠক করেন। রোডমার্চ সফল করা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। এলডিপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, দিদার বখ্ত, মামদুদুর রহমান চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম।
ঢাকা-সিলেট রোডমার্চ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল পাঁচ সদস্যের একটি দল সকালে ছয়টি স্পট পরিদর্শন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান শামীম। আজ শুক্রবার সিলেটে রোডমার্চ প্রস্তুতি কমিটির সভা হবে বলে জানা গেছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, রোডমার্চ কর্মসূচি নিয়ে দলের মধ্যে কোনো কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নেই। কর্মসূচি সফল হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত। তিনি বলেন, 'সিলেটের রোডমার্চে ছয়টি পথসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। আমরা স্পটগুলো পরিদর্শন করছি। সর্বত্র নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখছি। প্রচারণাও চলছে সমানভাবে। পথসভার স্পটগুলো হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব চৌরাস্তা, নরসিংদীর ইটাখোলা মাঠ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঙালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ মোড় ও মৌলভীবাজারের শেরপুর।' এরপর সিলেট পর্যন্ত কোনো পথসভা থাকবে না। কারণ পরদিন ১১ অক্টোবর সিলেট শহরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভা রয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা রূপগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার স্পটগুলো পরিদর্শন করেছি। আরো দুটি করব। সর্বত্র ব্যাপক প্রস্তুতি দেখেছি। আশা করি, এই রোডমার্চে ব্যাপক মানুষের ঢল নামবে।'
রাজশাহী রোডমার্চ কর্মসূচির সমন্বয়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের মধ্যে আপাতত কোন্দল নেই। কর্মসূচি সফল হবে। এই রোডমার্চের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে। দলের নেতা-কর্মীরাও সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কর্মসূচি সফল করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। বড় দলের মধ্যে কম-বেশি কিছু মতবিরোধ থাকলেও তা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঠিক হয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা রোডমার্চ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সব সময় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। জেলা নেতাদের মধ্যে কিছু মতবিরোধ ছিল, তাও নিরসন হয়েছে' বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র নেতারা যত কথাই বলেন না কেন সারা দেশের জেলা-উপজেলা নেতাদের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি। পদ-পদবি ও নেতৃত্বের কারণে এই দ্বন্দ্ব চলছে। জেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোন্দল ও দ্বন্দ্বের কথা শিকার করেছেন।
পাবনা : পাবনায় চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের সমর্থনপুষ্ট জেলা কমিটির আহ্বায়ক মেজর (অব.) কে এস ফিরোজের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে পাবনা সদর পৌর মেয়র কামরুল ইসলাম মিন্টুর মধ্যে কোন্দল বিরাজমান।
গাজীপুর : গাজীপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ ও চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন ও কেন্দ্রীয় নেতা হাসানউদ্দিন সরকারের বনিবনা নেই।
নওগা : নওগাঁয় জেলা কমিটির সভাপতি সামসুজ্জোহার সঙ্গে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক এমপি শামসুল আলম প্রামাণিক ও ডা. সালেক চৌধুরীর চরম বিরোধ।
রাজশাহী : রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগরের সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফার কোন্দল ও দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে রাজশাহীর মূল শহরে রোডমার্চ ও জনসভা স্থগিত হয়ে যায়।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে জেলার আহ্বায়ক আহমেদ আজম খানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি নেই প্রায় একযুগ। সেখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খানম রিতা, মইনুল ইসলাম খান শান্ত, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, তোজাম্মেল হক তোজা ও প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আখতার হামিদ ডাব্লুর নেতৃত্বে যে দ্বন্দ্ব বিরাজমান, তাতে দল জর্জরিত।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে মহানগর কমিটির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাসিরের বিবাদ অনেক পুরনো।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় জেলা কমিটিতে হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের সঙ্গে সাক্কুর দ্বন্দ্ব।
ফেনী : সাইদ এস্কান্দারের একচ্ছত্র আধিপত্য।
কক্সবাজার : কক্সবাজারে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন ও জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহানের সঙ্গে সদরের দলীয় এমপি লুৎফর রহমান কাজলের মুখ দেখাদেখি বন্ধ।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ও আবুল কালাম আজাদের তীব্র বিরোধ।
নরসিংদী : বর্তমান সভাপতি খাইরুল কবির খোকনের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী ও সাবেক সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ইরানের দ্বন্দ্ব চলছে।
ভৈরব : কিশোরগঞ্জের অবস্থা আরো খারাপ। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক ও জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমানের সঙ্গে জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর কথাবার্তাও বন্ধ।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক আসপিয়ার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলন গ্রুপিংয়ের বিভক্তি বেশ পুরনো।
মৌলভীবাজার : জেলা কমিটির সভাপতি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমানের সঙ্গে সাবেক এমপি খালেদা রব্বানীর বিরোধ চলছে।
সিলেট : সিলেট মহানগরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. শাহরিয়ারের রেষারেষি আজো ঘোচেনি।
No comments