বিদায় স্টিভ by মুহম্মদ খান

মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই চলে গেলেন প্রযুক্তিবিশ্বের বিস্ময় অ্যাপলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান স্টিভ জবস। গত বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলতোয় মারা যান তিনি। অ্যাপলের ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। অ্যাপল তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন 'আইফোন ফোর এস' বাজারজাত করার ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পরই স্টিভ মারা গেলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০০৪ সালে শনাক্ত হওয়ার কিছুদিন পরই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্টিভ জবসের ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার অপসারণ করা হয়।


এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে তাঁর পাকস্থলী প্রতিস্থাপন করতে হয়। কয়েক বছর ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি যখন ক্লান্ত তখন (২৪ অগাস্ট, ২০১১) তিনি অ্যাপলের সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান। অ্যাপল এই স্বপ্নদ্রষ্টার সম্মানে তাদের ওয়েবসাইটে স্টিভের সাদাকালো একটি বড় ছবি জুড়ে দিয়েছে। সেখানে লেখা, 'স্টিভ জবস : ১৯৫৫-২০১১'। এক বিবৃতিতে অ্যাপল জানিয়েছে, 'অ্যাপলের সব উদ্ভাবনের নেপথ্যে ছিল স্টিভের মেধা, ভালোবাসা ও উদ্যম, যা আমাদের সবার জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। স্টিভের জন্যই বিশ্ব আজ অনেক উন্নত।'
জবসের মৃত্যু সংবাদ জানার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ তালিকায় জবসের যোগ্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিল গেটস, ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও রয়েছেন।
বিল গেটস তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'আগামী কয়েক প্রজন্ম জবসকে স্মরণ করবে। আমরা যারা তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সত্যিই ভাগ্যবান।' ওবামা তাঁর শোকবার্তায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা আজ সবাই যে বদলে যাওয়া পৃথিবীটাকে দেখছি, সেটা জবসই করেছেন।'
সারা বিশ্বের অ্যাপল-প্রেমীরা স্টিভ জবসের অকালমৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে। সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত অ্যাপলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি সাদা রঙের আইপ্যাডের সঙ্গে স্টিভের ছবিতে ফুল দিচ্ছে ভক্তকুল, আর পতাকা নামিয়ে রাখা হয়েছে অর্ধেক। পৃথিবীর অন্যান্য শহরে স্টিভের জন্য ভালোবাসা জানাতে অ্যাপলের দোকানের সামনে ভিড় করছে ভক্তকুল। তারা বলছে, 'জবস আমাদের সবার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। আমরা আজকে যেভাবে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি, সেটাই ঠিক করে দিয়েছেন স্টিভ। তাঁর জন্য আমাদের ভালোবাসার শেষ নেই।'
সিলিকন ভ্যালির যে বাড়িতে জবস থাকতেন, সেই বাড়ির সামনে ফুল রেখে যাচ্ছে অসংখ্য ভক্ত। ছোট ছেলেমেয়েরা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখ ভেজাচ্ছে। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
জবসের মৃত্যুর খবর নিয়ে ফেসবুকে কয়েক শ পেজ তৈরি হয়েছে। পেজগুলোতে লেখা : রেস্ট ইন পিস_স্টিভ জবস (জওচ - ঝঃবাব ঔড়নং)। একজন প্রযুক্তি ব্যক্তিত্বের জন্য এত মায়া আগে আর কখনোই দেখা যায়নি।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে সিরীয় বংশোদ্ভূত বাবা আবদুল ফাত্তাহ জান্দালি ও মা জোয়ান সিবিলের ঘরে স্টিভ জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরেই সিলিকন ভ্যালির শ্রমিক পল ও ক্লারার কাছে স্টিভকে দত্তক দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়ার সময় হিউলেট-প্যাকার্ডের (এইচপি) একটি কারখানায় কাজ নেন স্টিভ। কারখানার আরেক কর্মী ওজনিয়াকের সঙ্গে এখানেই বন্ধুত্ব হয় তাঁর। ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ওয়াজনিয়াককে নিয়ে বাড়ির গ্যারেজে অ্যাপল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু করেন। তাঁদের তৈরি অ্যাপলের মাধ্যমেই 'পার্সোনাল কম্পিউটার' বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কম্পিউটারের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে কম্পিউটার শুধু গবেষণার কাজেই ব্যবহার করা হতো।
২০০১ সালে বাজারে আসা সাদা রঙের আভিজাত্যপূর্ণ চেহারার আইপড তাৎক্ষণিকভাবে সংগীতপিপাসুদের স্টাইল আইকনে পরিণত হয়। আইপডে সহজে গান পাওয়ার জন্য আই টিউনস বাজারে আনেন তিনি।
২০০৭ সালে আইপডের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় আইফোন বাজারে আসে। ২০০৮ সালে বাজারে আসে অত্যন্ত হালকা ও পাতলা ম্যাকবুক এয়ার। সর্বশেষ ২০১০ সালে ট্যাবলেট কম্পিউটার আইপ্যাড বাজারে ছেড়ে প্রযুক্তিবিশ্বের সবচেয়ে বড় চমকটি দেখান জবস।
বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী ২০১০ সাল শেষে জবসের সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৬০১ কোটি আমেরিকান ডলারে। এই বিশাল সম্পদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
খাদ্যাভ্যাসে নিরামিষাশী স্টিভ জবস বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.