গাড়ির দুর্ঘটনা ও হার্ট অ্যাটাক -ঘড়ির কাঁটা by ফরিদা আখতার
এ বছরের জুন মাসে যখন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হলো, তখন এ ব্যবস্থা বিশ্বের কত দেশে চালু আছে তা নিয়ে বেশ যুক্তি দেখানো হয়েছিল। কথাটা মিথ্যাও নয়। শুধু পার্থক্য এই যে যেসব দেশ ঘড়ির কাঁটা আগে-পিছে করেছে, সেখানে শীত ও গরমকালে সময়ের ব্যবধান অনেক বেশি। গরমকালে কোথাও সূর্য ডোবে রাত ১০টায় আর শীতকালে সূর্য ওঠে সকাল ১০টায়। অনেকটা এ রকমই। উত্তর মেরুর দেশে তো কথাই নেই। জুন মাসে সূর্য ডোবে আর ওঠে, অর্থাত্ রাত বলতেই নেই, আর ডিসেম্বর মাসে সূর্য উঠেই ডুবে যায়, অর্থাত্ দিন বলতে কিছু নেই। আমাদের দেশে গরম আর শীতকালের সময়ের ব্যবধান সে রকম নয়। ভূগোলে বড় ভালো অবস্থানে আছি আমরা। কিন্তু সেটাও আমাদের সইছে না। আমাদেরও উত্তর ও পশ্চিমের দেশের মতোই আচরণ করতে হবে। এটাই কি ডিজিটাল?
যা হোক, ধরে নিলাম, সরকার যা করেছে, বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের জন্য আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করেছে। চেষ্টা করা তো দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই চেষ্টায় যদি কোনো ফল না হয় এবং যদি এর খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষের, তখন তো একটু নড়েচড়ে বসা লাগে। জনগণ এখন তিক্ত-বিরক্ত হয়ে প্রতিদিন পত্রিকায় তাদের মতামত দিচ্ছে। একটি পত্রিকায় নয়, বেশ কয়েকটি পত্রিকায়। কিন্তু সরকার বলে দিয়েছে, ঘড়ির কাঁটা আবার ফিরিয়ে নেওয়ার নাকি কোনো পরিকল্পনাই নেই। কী জ্বালা! এখন তো দেখছি চেষ্টা নয়, এখন সরকার জেদ করছে। ব্যাপারটা মনে হচ্ছে সরকার ভাবছে, ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিলে যদি বিফলতা স্বীকার করা হয়ে যায়! তাই সেটা আর পেছানো যাবে না। এদিকে সূর্য তো আর সরকারের কথায় ওঠেও না, বসেও না। সে তার সময়মতো উঠছে আর সেটা সরকারের নির্ধারিত ঘড়ির সময়ে হয়ে যাচ্ছে সকাল সাতটা পাঁচ মিনিট। অর্থাত্ সূর্য উঠতে না উঠতেই সবার ছুটতে হয় কাজের উদ্দেশ্যে।
এত ভূমিকা দিচ্ছি ঘড়ির কাঁটা পেছানোর জন্য আরও একটু তদবির করার জন্য শুধু নয়। সেটা তো এখন সবাই বলছে, এখন সরকারের দয়া হলে সবার দাবির প্রতি নজর দেবে। সে কামনাই করি। কিন্তু আজ আমি লিখতে বসেছি ঘড়ির কাঁটা আগে-পিছে করার সঙ্গে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্পর্ক আছে, এমন গবেষণার খবর পেয়ে তা পাঠকের কাছে তুলে ধরার জন্য। কিছুদিন আগে পেশাগত কাজে কানাডার টরন্টোতে গিয়েছিলাম। সেখানে গরমকালে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নিলেও শীতের সময় আসতেই তা পিছিয়ে নেওয়া হয়। টরন্টোতে নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে শীতকালীন সময় অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা আবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশনের খবরে দেখলাম আবহাওয়ার খবর বলার সময় ঘড়ির কাঁটা আগানো ও পেছানো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সুইডেনের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়। মন্তব্য করা হয় যে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। ইন্টারনেট থেকে সেই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করে দেখলাম, এই গবেষণার ফলাফল ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি The New England Journal of Medicine এই গবেষণাটি প্রকাশ করেছে। সুইডেনের Karolinska Institute-এর Dr. Imre Janszky এবং সুইডেনের National Board of Health and Welfare-এর Dr. Riokard ১৯৮৭ সাল থেকে সংগৃহীত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, বসন্তকালে অর্থাত্ মার্চ মাসে ডে লাইট সেভিং টাইমের জন্য ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দিলে সপ্তাহের প্রথম তিন দিন (সোমবার বা প্রথম কর্মদিবস থেকে তিন দিন) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পাঁচ শতাংশ বেড়ে যায়। আবার হেমন্তকালে (নভেম্বর মাসে) সোমবারে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা একটু কমে আসে। গবেষকদ্বয় বলেছেন, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দিলে এক ঘণ্টা কম ঘুম হওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, আবার ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে নিলে এক ঘণ্টা বেশি চোখ বন্ধ রাখার সুযোগ তাঁদের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। New England Journal of Medicine-এর কাছে চিঠি লিখে এই দুই গবেষক বলেছেন, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য আসল ‘কালপ্রিট’ হচ্ছে এক ঘণ্টা ঘুম কম হওয়া। তাঁদের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ঝুঁকির মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীরাই বেশি পড়ছেন। বয়সের দিক থেকে দেখা গেছে, ৬৫ বছর বয়সের নিচে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই এই ঝুঁকির শিকার হচ্ছেন। অর্থাত্ যাঁরা কর্মক্ষম এবং কাজের জন্য যাঁদের নির্দিষ্ট সময় বাইরে যেতে হয়, তাঁদের ঘুম কম হওয়ার সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের ব্যাপার জড়িত আছে। অবসর নিয়েছেন এমন মানুষ এই বাড়তি ঝুঁকিতে পড়ছেন না। বর্তমানে যেসব দেশে এই ডে লাইট সেভিং টাইম মেনে চলা হচ্ছে, সেখানে মানুষের সংখ্যা হচ্ছে ১৫০ কোটি। তার মানে, কোটি কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
ঘুমের ব্যাঘাত মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এমন শিরোনামে U. S. National Commission on Sleep Disorders-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালে ২৪ হাজার ৩১৮টি গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে। নিদ্রাহীনতার কারণে কর্মক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ দুর্ঘটনার ফলে ১৩ মিলিয়ন কর্মদিবসের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পরোক্ষ কারণে এই সংখ্যা আরও অনেক বড়। নিদ্রাহীনতা অনেক কারণে ঘটছে; তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়া। কানাডার ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট রেকর্ড থেকে দেখা গেছে, বসন্তকালে যখন ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়া হয় সোমবার ট্রাফিক অ্যাক্সিডেন্টের হার সাত শতাংশ বেড়ে যায়। আবার হেমন্তকালে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে নিলে এই হার কমে আসে। আমেরিকার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডেট্রয়েটে মাসে গড়ে ৮৪০টি গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিন (সোমবার) দুর্ঘটনার সংখ্যা এক হাজার ৩৯৭, অর্থাত্ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর বিদ্যুত্ খরচের বিষয়টিও গবেষণায় দেখা গেছে, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়ার ফলে বাসায় বিদ্যুতের ব্যবহার এক শতাংশ বেড়ে গেছে। কাজেই বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে এই যুক্তিও খাটে না।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এই গবেষণাগুলো করা হয়নি, করলে হয়তো বা একই রকম ফলাফল আসবে। কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতা শুনলেই তো মনে হয়, এ সমস্যাগুলো এখানেও প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে। এবার কি তাহলে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে পারি যে আর কোনো যুক্তিতে না হোক, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও গাড়ি দুর্ঘটনার কথা বিবেচনা করে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের মন্ত্রীদের গাড়িও তো এই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
ফরিদা আখতার: নারী আন্দোলনের নেত্রী।
যা হোক, ধরে নিলাম, সরকার যা করেছে, বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের জন্য আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করেছে। চেষ্টা করা তো দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই চেষ্টায় যদি কোনো ফল না হয় এবং যদি এর খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষের, তখন তো একটু নড়েচড়ে বসা লাগে। জনগণ এখন তিক্ত-বিরক্ত হয়ে প্রতিদিন পত্রিকায় তাদের মতামত দিচ্ছে। একটি পত্রিকায় নয়, বেশ কয়েকটি পত্রিকায়। কিন্তু সরকার বলে দিয়েছে, ঘড়ির কাঁটা আবার ফিরিয়ে নেওয়ার নাকি কোনো পরিকল্পনাই নেই। কী জ্বালা! এখন তো দেখছি চেষ্টা নয়, এখন সরকার জেদ করছে। ব্যাপারটা মনে হচ্ছে সরকার ভাবছে, ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিলে যদি বিফলতা স্বীকার করা হয়ে যায়! তাই সেটা আর পেছানো যাবে না। এদিকে সূর্য তো আর সরকারের কথায় ওঠেও না, বসেও না। সে তার সময়মতো উঠছে আর সেটা সরকারের নির্ধারিত ঘড়ির সময়ে হয়ে যাচ্ছে সকাল সাতটা পাঁচ মিনিট। অর্থাত্ সূর্য উঠতে না উঠতেই সবার ছুটতে হয় কাজের উদ্দেশ্যে।
এত ভূমিকা দিচ্ছি ঘড়ির কাঁটা পেছানোর জন্য আরও একটু তদবির করার জন্য শুধু নয়। সেটা তো এখন সবাই বলছে, এখন সরকারের দয়া হলে সবার দাবির প্রতি নজর দেবে। সে কামনাই করি। কিন্তু আজ আমি লিখতে বসেছি ঘড়ির কাঁটা আগে-পিছে করার সঙ্গে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্পর্ক আছে, এমন গবেষণার খবর পেয়ে তা পাঠকের কাছে তুলে ধরার জন্য। কিছুদিন আগে পেশাগত কাজে কানাডার টরন্টোতে গিয়েছিলাম। সেখানে গরমকালে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নিলেও শীতের সময় আসতেই তা পিছিয়ে নেওয়া হয়। টরন্টোতে নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে শীতকালীন সময় অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা আবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশনের খবরে দেখলাম আবহাওয়ার খবর বলার সময় ঘড়ির কাঁটা আগানো ও পেছানো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সুইডেনের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়। মন্তব্য করা হয় যে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। ইন্টারনেট থেকে সেই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করে দেখলাম, এই গবেষণার ফলাফল ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি The New England Journal of Medicine এই গবেষণাটি প্রকাশ করেছে। সুইডেনের Karolinska Institute-এর Dr. Imre Janszky এবং সুইডেনের National Board of Health and Welfare-এর Dr. Riokard ১৯৮৭ সাল থেকে সংগৃহীত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, বসন্তকালে অর্থাত্ মার্চ মাসে ডে লাইট সেভিং টাইমের জন্য ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দিলে সপ্তাহের প্রথম তিন দিন (সোমবার বা প্রথম কর্মদিবস থেকে তিন দিন) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পাঁচ শতাংশ বেড়ে যায়। আবার হেমন্তকালে (নভেম্বর মাসে) সোমবারে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা একটু কমে আসে। গবেষকদ্বয় বলেছেন, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দিলে এক ঘণ্টা কম ঘুম হওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, আবার ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে নিলে এক ঘণ্টা বেশি চোখ বন্ধ রাখার সুযোগ তাঁদের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। New England Journal of Medicine-এর কাছে চিঠি লিখে এই দুই গবেষক বলেছেন, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য আসল ‘কালপ্রিট’ হচ্ছে এক ঘণ্টা ঘুম কম হওয়া। তাঁদের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ঝুঁকির মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীরাই বেশি পড়ছেন। বয়সের দিক থেকে দেখা গেছে, ৬৫ বছর বয়সের নিচে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই এই ঝুঁকির শিকার হচ্ছেন। অর্থাত্ যাঁরা কর্মক্ষম এবং কাজের জন্য যাঁদের নির্দিষ্ট সময় বাইরে যেতে হয়, তাঁদের ঘুম কম হওয়ার সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের ব্যাপার জড়িত আছে। অবসর নিয়েছেন এমন মানুষ এই বাড়তি ঝুঁকিতে পড়ছেন না। বর্তমানে যেসব দেশে এই ডে লাইট সেভিং টাইম মেনে চলা হচ্ছে, সেখানে মানুষের সংখ্যা হচ্ছে ১৫০ কোটি। তার মানে, কোটি কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
ঘুমের ব্যাঘাত মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এমন শিরোনামে U. S. National Commission on Sleep Disorders-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালে ২৪ হাজার ৩১৮টি গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে। নিদ্রাহীনতার কারণে কর্মক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ দুর্ঘটনার ফলে ১৩ মিলিয়ন কর্মদিবসের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পরোক্ষ কারণে এই সংখ্যা আরও অনেক বড়। নিদ্রাহীনতা অনেক কারণে ঘটছে; তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়া। কানাডার ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট রেকর্ড থেকে দেখা গেছে, বসন্তকালে যখন ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়া হয় সোমবার ট্রাফিক অ্যাক্সিডেন্টের হার সাত শতাংশ বেড়ে যায়। আবার হেমন্তকালে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে নিলে এই হার কমে আসে। আমেরিকার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডেট্রয়েটে মাসে গড়ে ৮৪০টি গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিন (সোমবার) দুর্ঘটনার সংখ্যা এক হাজার ৩৯৭, অর্থাত্ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর বিদ্যুত্ খরচের বিষয়টিও গবেষণায় দেখা গেছে, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেওয়ার ফলে বাসায় বিদ্যুতের ব্যবহার এক শতাংশ বেড়ে গেছে। কাজেই বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে এই যুক্তিও খাটে না।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এই গবেষণাগুলো করা হয়নি, করলে হয়তো বা একই রকম ফলাফল আসবে। কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতা শুনলেই তো মনে হয়, এ সমস্যাগুলো এখানেও প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে। এবার কি তাহলে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে পারি যে আর কোনো যুক্তিতে না হোক, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও গাড়ি দুর্ঘটনার কথা বিবেচনা করে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের মন্ত্রীদের গাড়িও তো এই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
ফরিদা আখতার: নারী আন্দোলনের নেত্রী।
No comments