স্বপ্ন কোনো চোরাবালি নয় -চারদিক by সুজন সুপান্থ
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সব গোল হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। ঠিক একইভাবে তাদের পাশে বসে ভাত আর মাছের ঝোল নিয়ে বসেছে জাপান থেকে আসা সুনচকে। কারও বা খাওয়া শেষ হয়েছে। খাওয়া শেষে সবাই যে যার মতো ভাতের প্লেট পরিষ্কার করে কাজে লেগে যাচ্ছে। কাজ তাদের তেমন কিছু নয়, এই খাওয়াদাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলা আর ঘুম। এতেই তাদের আনন্দের যেন সীমা থাকে না।
‘আমি তো এখন সাকিব খানের মতোন হিরো হয়া গেছি। যে শহর চোরাবালি সিনেমায় আমার অভিনয় তো জোস্ হইছে, সবাই সেই কথাই কয়। শুনছি, আমারে নাকি জাপান আর জার্মান দ্যাশের সব সিনেমা হলে দেখাইতাছে। আমি বড় হইয়া হিরোই হমু।’—কথাগুলো ১২ বছর বয়সের শামীম ইয়াসার রাজুর। মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে খেতে এভাবেই নিজের হিরো বনে যাওয়ার কথাগুলো বলছিল রাজু। তিন বছর আগেও ছেলেটি টোকাই ছিল। দিনমান রাস্তায় রাস্তায় কাগজ আর পাতা কুড়িয়ে বেড়াত সে। সেই পাতাকুড়ুনির দল থেকে ধরে এনে সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ার জন্য একমাত্রা তাকে আশ্রয় দিয়েছে পল্লবীর এই শিশু আশ্রয়ণকেন্দ্রে। শুধু রাজু নয়, রাজুর মতো আরও অনেক শিশুই এখন থাকে এ আশ্রয়ণকেন্দ্রে।
সর্বমোট ২০ জন ছেলেমেয়ে আর একমাত্রার পরিচালনা পর্ষদ নিয়েই তাদের বর্তমান পরিবার। ২০০৩ সাল থেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়া এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘একমাত্রা’ বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিংয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করে শিশু আশ্রয়ণকেন্দ্র।
এই আশ্রয়ণকেন্দ্রের শিশু-কিশোররা প্রতিদিনই আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকে। কিন্তু গত ২৪ নভেম্বর যেন তাদের মনে একটু বাড়তি আনন্দ এসে জেঁকে বসেছে। আজ তো ওই খুদে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে মাঠে খেলতে খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ জেমি সিডন্স, অধিনায়ক মাশরাফি-বিন-মূর্তজা ও ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল আসবেন। এটা কী তাদের জন্য কম গর্বের কথা!
২৪ নভেম্বরের সেই প্রতীক্ষিত সময়টার অপেক্ষার পালা যেন ফুরোতেই চাচ্ছে না তাদের। তাদের বরণ করে নিতে সারা দিন চলে নানা আয়োজন। কেউ ফুলের মালা বানিয়েছে, কেউ নিজ হাতে এঁকেছে নানা ছবি আর কেউ বা কবিতা আর গান গেয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বরণ করে নেয় জেমি সিডন্স, মাশরাফি আর আশরাফুলকে।
একটু পরেই শুরু হয় আশরাফুল আর মাশরাফির সঙ্গে ছোট ছোট শিশু-কিশোরের ক্রিকেট খেলার আয়োজন। ছোট্ট শিশুদের বলে আশরাফুল যেমন পিটিয়েছে, ঠিক তেমনি শিশুরাও কম নয়। আশরাফুল আর মাশরাফির বলে শিশুরাও পিটিয়ে যাচ্ছে দেদার। আজ যেন কেউ কারও চেয়ে কম নয়, সমানে সমান।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ জেমি সিডন্স বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে আজকের এই খেলা আমার খুবই ভালো লাগছে। একসময়ের টোকাই আর হকার শিশুদের ভেতরও যে অসম্ভব রকম প্রতিভা থাকে তা এদের না দেখলে বোঝা যেত না। এই শিশুদের মধ্যে আমি আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
শিশুদের এই আনন্দকে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে পাশ থেকে ছুটে আসে অগণিত দর্শক। সবাই আগ্রহভরে দেখছিল তাদের খেলা।
‘একমাত্রা’র নির্বাহী পরিচালক শুভাশীষ রায় বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকেই এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়া আর সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমরা দেখেছি, যদি পরিপূর্ণ পরিচর্যা করা যায় তাহলে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব। আমরা এসব শিশুকে নিয়ে যে শহর চোরাবালি নামে একটি সিনেমা করে দেখেছি, তাদের মধ্যে অপার সম্ভাবনা। আমরা তাদের সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই বর্তমানে ময়মনসিংহে একটি শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা প্রায় শেষ করেছি। ইতিমধ্যেই দেশের সুধীসমাজ ও সহূদয় ব্যক্তিরাও এ কাজে আমাদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন। এর মাধ্যমে আমরা চাই এসব শিশুর জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা তৈরি করতে। আমাদের বিশ্বাস, সমাজের সহূদয়-সচেতন মানুষেরা নিজ নিজ সাধ্যমতো এ যাত্রার সঙ্গী হলে একমাত্রার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাটা অসম্ভব হবে না। আর যেকোনো সত্য কাজ করতে আমরা কখনোই পিছপা হব না।’
‘স্বপ্ন যে চোরাবালি নয়, স্বপ্ন সৃষ্টির পূর্বশর্ত’ এ বিশ্বাসকেই ধারণ করে হাঁটিহাঁটি পা পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ‘একমাত্রা’। তাদের এই স্বপ্ন নিঃসীম মহাসাগরের বুকে ক্ষুদ্র একবিন্দু জলকণার মতো হলেও এই বিন্দু কণা ছাড়া যে মহাসাগরের পূর্ণতা হয় না তা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করেছে ‘একমাত্রা’। আজকে যে শিশুদের বোঝা মনে হচ্ছে ‘একমাত্রা’ তাদেরই একদিন সঠিক পরিচর্যা করে জনসম্পদে পরিণত করে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবে এই দেশ, এই জনপদ।
‘আমি তো এখন সাকিব খানের মতোন হিরো হয়া গেছি। যে শহর চোরাবালি সিনেমায় আমার অভিনয় তো জোস্ হইছে, সবাই সেই কথাই কয়। শুনছি, আমারে নাকি জাপান আর জার্মান দ্যাশের সব সিনেমা হলে দেখাইতাছে। আমি বড় হইয়া হিরোই হমু।’—কথাগুলো ১২ বছর বয়সের শামীম ইয়াসার রাজুর। মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে খেতে এভাবেই নিজের হিরো বনে যাওয়ার কথাগুলো বলছিল রাজু। তিন বছর আগেও ছেলেটি টোকাই ছিল। দিনমান রাস্তায় রাস্তায় কাগজ আর পাতা কুড়িয়ে বেড়াত সে। সেই পাতাকুড়ুনির দল থেকে ধরে এনে সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ার জন্য একমাত্রা তাকে আশ্রয় দিয়েছে পল্লবীর এই শিশু আশ্রয়ণকেন্দ্রে। শুধু রাজু নয়, রাজুর মতো আরও অনেক শিশুই এখন থাকে এ আশ্রয়ণকেন্দ্রে।
সর্বমোট ২০ জন ছেলেমেয়ে আর একমাত্রার পরিচালনা পর্ষদ নিয়েই তাদের বর্তমান পরিবার। ২০০৩ সাল থেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়া এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘একমাত্রা’ বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিংয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করে শিশু আশ্রয়ণকেন্দ্র।
এই আশ্রয়ণকেন্দ্রের শিশু-কিশোররা প্রতিদিনই আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকে। কিন্তু গত ২৪ নভেম্বর যেন তাদের মনে একটু বাড়তি আনন্দ এসে জেঁকে বসেছে। আজ তো ওই খুদে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে মাঠে খেলতে খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ জেমি সিডন্স, অধিনায়ক মাশরাফি-বিন-মূর্তজা ও ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল আসবেন। এটা কী তাদের জন্য কম গর্বের কথা!
২৪ নভেম্বরের সেই প্রতীক্ষিত সময়টার অপেক্ষার পালা যেন ফুরোতেই চাচ্ছে না তাদের। তাদের বরণ করে নিতে সারা দিন চলে নানা আয়োজন। কেউ ফুলের মালা বানিয়েছে, কেউ নিজ হাতে এঁকেছে নানা ছবি আর কেউ বা কবিতা আর গান গেয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বরণ করে নেয় জেমি সিডন্স, মাশরাফি আর আশরাফুলকে।
একটু পরেই শুরু হয় আশরাফুল আর মাশরাফির সঙ্গে ছোট ছোট শিশু-কিশোরের ক্রিকেট খেলার আয়োজন। ছোট্ট শিশুদের বলে আশরাফুল যেমন পিটিয়েছে, ঠিক তেমনি শিশুরাও কম নয়। আশরাফুল আর মাশরাফির বলে শিশুরাও পিটিয়ে যাচ্ছে দেদার। আজ যেন কেউ কারও চেয়ে কম নয়, সমানে সমান।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ জেমি সিডন্স বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে আজকের এই খেলা আমার খুবই ভালো লাগছে। একসময়ের টোকাই আর হকার শিশুদের ভেতরও যে অসম্ভব রকম প্রতিভা থাকে তা এদের না দেখলে বোঝা যেত না। এই শিশুদের মধ্যে আমি আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
শিশুদের এই আনন্দকে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে পাশ থেকে ছুটে আসে অগণিত দর্শক। সবাই আগ্রহভরে দেখছিল তাদের খেলা।
‘একমাত্রা’র নির্বাহী পরিচালক শুভাশীষ রায় বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকেই এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়া আর সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমরা দেখেছি, যদি পরিপূর্ণ পরিচর্যা করা যায় তাহলে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব। আমরা এসব শিশুকে নিয়ে যে শহর চোরাবালি নামে একটি সিনেমা করে দেখেছি, তাদের মধ্যে অপার সম্ভাবনা। আমরা তাদের সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই বর্তমানে ময়মনসিংহে একটি শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা প্রায় শেষ করেছি। ইতিমধ্যেই দেশের সুধীসমাজ ও সহূদয় ব্যক্তিরাও এ কাজে আমাদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন। এর মাধ্যমে আমরা চাই এসব শিশুর জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা তৈরি করতে। আমাদের বিশ্বাস, সমাজের সহূদয়-সচেতন মানুষেরা নিজ নিজ সাধ্যমতো এ যাত্রার সঙ্গী হলে একমাত্রার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাটা অসম্ভব হবে না। আর যেকোনো সত্য কাজ করতে আমরা কখনোই পিছপা হব না।’
‘স্বপ্ন যে চোরাবালি নয়, স্বপ্ন সৃষ্টির পূর্বশর্ত’ এ বিশ্বাসকেই ধারণ করে হাঁটিহাঁটি পা পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ‘একমাত্রা’। তাদের এই স্বপ্ন নিঃসীম মহাসাগরের বুকে ক্ষুদ্র একবিন্দু জলকণার মতো হলেও এই বিন্দু কণা ছাড়া যে মহাসাগরের পূর্ণতা হয় না তা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করেছে ‘একমাত্রা’। আজকে যে শিশুদের বোঝা মনে হচ্ছে ‘একমাত্রা’ তাদেরই একদিন সঠিক পরিচর্যা করে জনসম্পদে পরিণত করে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবে এই দেশ, এই জনপদ।
No comments