যেভাবে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান প্রিয়া সাহা
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি প্রিয়া সাহার নালিশ নিয়ে
দেশ-বিদেশে তোলপাড় চলছে। সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল
প্রতিনিধিরা কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রতিবাদের ঝড় বইছে সর্বত্র।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের তরফে পৃথক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী
ড. একে আবদুল মোমেন সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এটা ডাঁহা মিথ্যা।
বিশেষ মতলবে প্রিয়া এমন উদ্ভট কথা বলেছেন।
সেগুনবাগিচার বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের উদ্দেশ্যেই প্রিয়া এই ধরনের বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, দেশে ফিরলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ধরণের খবর দেয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ ও উদ্দেশ্য আছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হব।
শুধু তা-ই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বলেছেন, প্রিয়ার বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহীতা। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মামলা করার ইঙ্গিতও দেন সরকারের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একাট্টা। হিন্দু বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত এরই মধ্যে তার সংগঠনের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। জানিয়েছেন- তিনি বা তার সংগঠন প্রিয়া সাহার কোন দায় নিবে না। প্রশ্ন ওঠেছে, প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা কী আচমকাই তিনি দিলেন? নাকি অনেক দিন ধরে তিনি এমনটা ধারণ করছিলেন, সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এটাও বড় জিজ্ঞাসা আজ- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রধান ৪ ধর্মের সরকারি প্রতিনিধি দল স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন গেলেও আলাদাভাবে যাওয়া প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউজে নিমন্ত্রণ পেলেন কিভাবে? বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রিয়া সাহাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে তার দুর্ভোগের কথা শুনতে নিয়ে যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন, এমন আগাম কোন তথ্য কী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে ছিল? অনেক প্রশ্নের অবতারণা হচ্ছে এখন। সরকারের প্রতিনিধিদের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ণের সময় এখন নয়, কিন্তু তারপরও প্রশ্ন আসছে বানের পানির মত। এ ঘটনা কী পূর্ব-পরিকল্পিত।
এটা কি রাষ্ট্র বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোন ষড়যন্ত্র? যদি এর জবাব সত্যিই হ্যাঁ বোধক হয়, যেমনটা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন আসে একজন প্রিয়া সাহা কি এটি করেছেন নাকি তার পেছনে আর কেউ আছে? সরকারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন তারা সমন্বিতভাবে এটা জানা এবং বুঝার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। নেট দুনিয়ায় অবশ্য এর কিছু কিছু এরই মধ্যে আসতে শুরু হয়েছে। সব সত্য নয়, আবার সব মিথ্যাও নয়- বলছেন সরকারের প্রতিনিধিরা। তারা এ-ও বলছেন, এটা নিছক তার পলিটিক্যাল অ্যাসাইলামের জন্য নয়। আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশ, তাও আবার মিথ্যা তথ্য এবং অসত্য বক্তব্য দিয়ে! এটা ঠিক মিলে না। বার্তা সংস্থা বিডি নিউজ অবশ্য একটি বিষয় নোটিশে এনেছে, তা হল ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তা জয় ক্যানসারার উদ্যোগে প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন। কে এই জয় ক্যানসারা, তার সঙ্গে প্রিয়া সাহার ব্যক্তিগত না সাংগঠনিক যোগাযোগ এটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু ওই বক্তব্যের যে যোগসূত্র রয়েছে সেটি ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’-এর টুইটার ঘেঁটে কিছুটা হলেও অনুমেয়। সেখানে একটি সেলফি রয়েছে ৩ জনের। জয়, প্রিয়া এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক দূত স্যাম ব্রাউন বেক। ১৮ই জুলাই প্রকাশিত ওই টুইট বার্তায় বলা হয়- “হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের জয় ক্যানসারা অ্যাম্বাসেডর স্যাম ব্রাউন বেক এর সঙ্গে তার স্মরণীয় মূহুর্তটি শেয়ার করেছেন। আমাদের বন্ধু প্রিয় বালা বিশ্বাস ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছেন।
তিনি সেই ঘটনাগুলো শেয়ার করতে এসেছেন যে, বাংলাদেশে কিভাবে ইসলামিস্ট গ্রুপগুলো হিন্দুদের নির্যাতন করেন।” ওই টুইট বার্তার বরাতে সরকারের দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি বলছেন, প্রিয় সাহা যে এটি বলতেই গেছেন তা হিন্দু আমেরিকার ফাউন্ডেশন ও জয় ক্যানসারা আগে থেকেই জানতেন। তারা যে এটি বলার জন্য প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত তাকে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন, লবিং করেছেন সেটা এখন অনেকেই বিশ্বাস করছেন। ওয়াশিংটনের এক কর্মকর্তা অবশ্য এর সঙ্গে আরেকটু যুক্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে, প্রিয় সাহা আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সব পথ-ঘাট তার জানা। তাকে ঢাকা থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে। এটাও বলাবলি আছে যে তার নাকি ফ্লাইট মিস হয়েছিল। তিনি পরবর্তী বিমান ধরেছেন। কিন্তু তার পেছনে যে বা যারা আছেন তারা যে প্রভাবশালী এটি মানছেন ওই কর্মকর্তা। জয় ক্যানসারার প্রোফাইল ঘেঁটে জানা যায়, তিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটি করে থাকেন। পরিচালক পদ মর্যাদায় তিনি সেখানে কর্মরত। স্বেচ্ছাসেবী ওই প্রতিষ্ঠানে ক্যানসারা খুবই সক্রিয়। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে।
মিথ্যা তথ্যে প্রিয়ার হোয়াইট হাউজে প্রবেশ: প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক। ওই সংগঠনের আরও অন্তত ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। প্রিয়া কোনকালেই ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। কিন্তু তিনি হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে। ফ্রিডম হাউজ নামক একটি ওয়েব সাইটে হোয়াইট হাউজের বরাতে ওই দিনে বিভিন্ন দেশের যে ২৭ জন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুনানিতে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকদের বিবেচনায় বাংলাদেশি প্রিয়া সাহা প্রদত্ত পরিচয় ইংরেজিতে প্রকাশ করা হলো- "Priya Biswas Saha, a Hindu from Bangladesh who serves as General Secretary of Bangladesh Hindu-Buddhist-Christian Unity Council"
‘প্রিয়া সাহা’ নাম নিয়েই বিভ্রান্তি: প্রিয় সাহা নাকি প্রিয়া সাহা- ট্রাম্পের কাছে নালিশ করা ওই নারীর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। প্রিয়া নামেই এখন তার সব খবর প্রচার হচ্ছে। এমনকি স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাতে ‘প্রিয়া বিশ্বাস সাহা’ বলে খবর প্রচার হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় একটি পত্রিকার ডিক্লারেশনের জন্য করা তার আবেদনে নিজের নাম প্রিয় বালা বিশ্বাস লিখেন। প্রকাশিতব্য ‘দলিত কণ্ঠ’ নামক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক তিনি। তাছাড়া ওই নামে ‘শারি’ নামের বাংলাদেশের দলিত সমপ্রদায় নিয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালকও তিনি। পিরোজপুরের মেয়ে প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় কুমার সাহা, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। রোকেয়া হলে ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশি প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউসে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭ জন প্রতিনিধিকে গত বুধবার ওভাল অফিসে ডেকে পাঠান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি তাদের দুর্ভোগের কথা শোনেন। সেখানে প্রিয়া সাহা ওই নালিশ জানান।
সেগুনবাগিচার বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের উদ্দেশ্যেই প্রিয়া এই ধরনের বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, দেশে ফিরলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ধরণের খবর দেয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ ও উদ্দেশ্য আছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হব।
শুধু তা-ই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বলেছেন, প্রিয়ার বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহীতা। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মামলা করার ইঙ্গিতও দেন সরকারের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একাট্টা। হিন্দু বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত এরই মধ্যে তার সংগঠনের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। জানিয়েছেন- তিনি বা তার সংগঠন প্রিয়া সাহার কোন দায় নিবে না। প্রশ্ন ওঠেছে, প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা কী আচমকাই তিনি দিলেন? নাকি অনেক দিন ধরে তিনি এমনটা ধারণ করছিলেন, সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এটাও বড় জিজ্ঞাসা আজ- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রধান ৪ ধর্মের সরকারি প্রতিনিধি দল স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন গেলেও আলাদাভাবে যাওয়া প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউজে নিমন্ত্রণ পেলেন কিভাবে? বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রিয়া সাহাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে তার দুর্ভোগের কথা শুনতে নিয়ে যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন, এমন আগাম কোন তথ্য কী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে ছিল? অনেক প্রশ্নের অবতারণা হচ্ছে এখন। সরকারের প্রতিনিধিদের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ণের সময় এখন নয়, কিন্তু তারপরও প্রশ্ন আসছে বানের পানির মত। এ ঘটনা কী পূর্ব-পরিকল্পিত।
এটা কি রাষ্ট্র বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোন ষড়যন্ত্র? যদি এর জবাব সত্যিই হ্যাঁ বোধক হয়, যেমনটা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন আসে একজন প্রিয়া সাহা কি এটি করেছেন নাকি তার পেছনে আর কেউ আছে? সরকারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন তারা সমন্বিতভাবে এটা জানা এবং বুঝার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। নেট দুনিয়ায় অবশ্য এর কিছু কিছু এরই মধ্যে আসতে শুরু হয়েছে। সব সত্য নয়, আবার সব মিথ্যাও নয়- বলছেন সরকারের প্রতিনিধিরা। তারা এ-ও বলছেন, এটা নিছক তার পলিটিক্যাল অ্যাসাইলামের জন্য নয়। আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশ, তাও আবার মিথ্যা তথ্য এবং অসত্য বক্তব্য দিয়ে! এটা ঠিক মিলে না। বার্তা সংস্থা বিডি নিউজ অবশ্য একটি বিষয় নোটিশে এনেছে, তা হল ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তা জয় ক্যানসারার উদ্যোগে প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন। কে এই জয় ক্যানসারা, তার সঙ্গে প্রিয়া সাহার ব্যক্তিগত না সাংগঠনিক যোগাযোগ এটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু ওই বক্তব্যের যে যোগসূত্র রয়েছে সেটি ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’-এর টুইটার ঘেঁটে কিছুটা হলেও অনুমেয়। সেখানে একটি সেলফি রয়েছে ৩ জনের। জয়, প্রিয়া এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক দূত স্যাম ব্রাউন বেক। ১৮ই জুলাই প্রকাশিত ওই টুইট বার্তায় বলা হয়- “হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের জয় ক্যানসারা অ্যাম্বাসেডর স্যাম ব্রাউন বেক এর সঙ্গে তার স্মরণীয় মূহুর্তটি শেয়ার করেছেন। আমাদের বন্ধু প্রিয় বালা বিশ্বাস ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছেন।
তিনি সেই ঘটনাগুলো শেয়ার করতে এসেছেন যে, বাংলাদেশে কিভাবে ইসলামিস্ট গ্রুপগুলো হিন্দুদের নির্যাতন করেন।” ওই টুইট বার্তার বরাতে সরকারের দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি বলছেন, প্রিয় সাহা যে এটি বলতেই গেছেন তা হিন্দু আমেরিকার ফাউন্ডেশন ও জয় ক্যানসারা আগে থেকেই জানতেন। তারা যে এটি বলার জন্য প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত তাকে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন, লবিং করেছেন সেটা এখন অনেকেই বিশ্বাস করছেন। ওয়াশিংটনের এক কর্মকর্তা অবশ্য এর সঙ্গে আরেকটু যুক্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে, প্রিয় সাহা আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সব পথ-ঘাট তার জানা। তাকে ঢাকা থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে। এটাও বলাবলি আছে যে তার নাকি ফ্লাইট মিস হয়েছিল। তিনি পরবর্তী বিমান ধরেছেন। কিন্তু তার পেছনে যে বা যারা আছেন তারা যে প্রভাবশালী এটি মানছেন ওই কর্মকর্তা। জয় ক্যানসারার প্রোফাইল ঘেঁটে জানা যায়, তিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটি করে থাকেন। পরিচালক পদ মর্যাদায় তিনি সেখানে কর্মরত। স্বেচ্ছাসেবী ওই প্রতিষ্ঠানে ক্যানসারা খুবই সক্রিয়। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে।
মিথ্যা তথ্যে প্রিয়ার হোয়াইট হাউজে প্রবেশ: প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক। ওই সংগঠনের আরও অন্তত ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। প্রিয়া কোনকালেই ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। কিন্তু তিনি হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে। ফ্রিডম হাউজ নামক একটি ওয়েব সাইটে হোয়াইট হাউজের বরাতে ওই দিনে বিভিন্ন দেশের যে ২৭ জন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুনানিতে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকদের বিবেচনায় বাংলাদেশি প্রিয়া সাহা প্রদত্ত পরিচয় ইংরেজিতে প্রকাশ করা হলো- "Priya Biswas Saha, a Hindu from Bangladesh who serves as General Secretary of Bangladesh Hindu-Buddhist-Christian Unity Council"
‘প্রিয়া সাহা’ নাম নিয়েই বিভ্রান্তি: প্রিয় সাহা নাকি প্রিয়া সাহা- ট্রাম্পের কাছে নালিশ করা ওই নারীর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। প্রিয়া নামেই এখন তার সব খবর প্রচার হচ্ছে। এমনকি স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাতে ‘প্রিয়া বিশ্বাস সাহা’ বলে খবর প্রচার হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় একটি পত্রিকার ডিক্লারেশনের জন্য করা তার আবেদনে নিজের নাম প্রিয় বালা বিশ্বাস লিখেন। প্রকাশিতব্য ‘দলিত কণ্ঠ’ নামক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক তিনি। তাছাড়া ওই নামে ‘শারি’ নামের বাংলাদেশের দলিত সমপ্রদায় নিয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালকও তিনি। পিরোজপুরের মেয়ে প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় কুমার সাহা, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। রোকেয়া হলে ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশি প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউসে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭ জন প্রতিনিধিকে গত বুধবার ওভাল অফিসে ডেকে পাঠান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি তাদের দুর্ভোগের কথা শোনেন। সেখানে প্রিয়া সাহা ওই নালিশ জানান।
No comments