ডেঙ্গু রোগীদের ৮০ ভাগই শিশু by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দ্বিতীয়
তলায় শিশু ওয়ার্ড-২। এখানে বড় করে দেয়ালে লেখা আছে ডেঙ্গু ওয়ার্ড। ঢুকতেই
চোখ পড়ে বেড ২/১-এ। এ সিটে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে শিশু সুমাইয়া আক্তার।
ওর বয়স সাড়ে ৫ বছর। ৪ দিন আগে হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মারাত্মক অবস্থায় ভর্তি হয় সুমাইয়া। তার পেটে ও
ফুসফুসে পানি জমেছে। শিশুটির বড় ভাই সাগর জানান, প্রথমে তারা ইসলামী
ব্যাংক হাসপাতাল শাহজাহানপুরে তিন দিন ভর্তি ছিলেন।
তার বোনের অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত এখানে নিয়ে আসেন। সুমাইয়াকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। রক্তের প্লাটিলেট দিতে হয়েছে শিশুটিকে।
প্লাজমাও লেগেছে তার। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, গত ৭দিনে চিকিৎসায় এক লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রক্তে ব্যয় বেশি। রাজধানীর বাসাবোতে তাদের বাসা। একই ওয়ার্ডে পাশের একটি সিটের চিকিৎসা নিচ্ছে অনন বিশ্বাস। বয়স ১৩ বছর। দুই দিন আগে এখানে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে বিশ্বাস। শিশুটির মা জানান, দিনে ৩০ থেকে ৩৫ বার পাতলা পায়খান করছে তার ছেলে। পেট ফুলে গেছে। পেটে জলও এসেছে। পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়। জ্বর ১০২, ১০৩ ওঠেছে। শিশুটির মা আরও জানান, প্রথমে তারা মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে ৪দিন আগে এখানে ভর্তি হয়েছেন। এ হাসপাতালে দৈনিক ১২শ’টাকা সিট ও ডাক্তারের ভিজিট দিতে হয়। এ পর্যন্ত তার এক লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে।
শুধু সুমাইয়া বা অনন বিশ্বাস নয়, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শিশু এবং শতাধিক নারী-পুরুষ ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে সিট খালি থাকলে কর্তৃপক্ষ ভর্তি করছেন। বাকিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির শিশু বিভাগে ৬০ জন শিশু ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হয়ে বহির্বিভাগ দিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনকে ভর্তির কথা স্বীকার করেছেন বিভাগীয় প্রধান। হাসপাতারের নার্সরা জানান, হাসপাতালটিতে ৪৫০সিট আছে। বর্তমানে ১১৫জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নতুন ১২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন যেভাবে ডেঙ্গু রোগী আসছে, সে পরিমাণে সিট দেয়া যাচ্ছে না বলে তারা উল্লেখ করেন। বাধ্য হয়ে রোগীরা অন্য হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। জানা যায়, ডেঙ্গু রোগীর কারণে রক্তেরও সংকট দেখা দিয়েছে এই হাসপাতালে। প্রয়োজনে রক্তের গ্রুপ না মিলার কারণে রোগীর স্বজনদের বিভিন্ন জায়গায় দৌঁড়-ঝাপ করতে হচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে নিচ তলায় ১৫২ নম্বর গাইনী ওয়ার্ডকে পুরুষ ওয়ার্ড ঘোষণা করে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখানে কথা হয় স্যালাইন লাগানো ডেঙ্গু রোগী অন্তর খানের সঙ্গে। তার বয়স ২৪ বছর। রাজধানীর ফার্মগেট আমতলা খিষ্ট্রান পাড়ায় থাকেন। বিসিএস পরীক্ষার কোচিং করেন। এ হাসপাতালে ৩দিন আগে ভর্তি হয়েছেন। তার প্রচুর পাতাল পায়খানা হচ্ছে। জ্বর ১০৪ ওঠেছে। পায়ের গোড়ালিতে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি। এ ওয়ার্ডের ২/১-বেডে এবিএম নাঈম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার বয়ম ৫৫ বছর। থাকেন মালিবাগ এলাকায়। তার পাশেই ৩/২ বেডে-এ চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশাল থেকে আগত শামসুল আলম। বয়স ৭২ বছর। একমাস আগ থেকেই তার জ্বর ওঠা নামা করছে। জ্বর ১০৩ ওঠেছে। তিন আগে বরিশালে ধরা পড়ে তার ডেঙ্গু হয়েছে। গত দুই দিন আগে এখানে ভর্তি করা হয় তাকে। তার পাশে ২/৪ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে রাহাত। বয়স ১৬ বছর। খিলগাঁ তাদের বাসা। তার মা জানান, জ্বর ১০৪ ওঠেছে। পাতালা পায়খানা, গায়ে ব্যথা, বমি হয়েছে। রক্ত লেগেছে চার ব্যাগ।
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গু এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। আগের চেয়ে মারাত্মক চেহারা নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। মধ্য জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রথম হলি ফ্যামিলিতে এই রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করেছিলেন অধ্যাপক ফাতমী। তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে যে রোগী আসছে তার ৮০ শতাংশই শিশু। গতকালও বহির্বিভাগে দিয়ে ৬০ জন শিশু ডেঙ্গু রোগী এসেছে, তাদের মধ্যে মাত্র ৬ জনকে ভর্তি দিতে পেয়েরেছেন। বাকীরা সিট না থাকায় অন্যত্র চলে গেছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এবার শুধু সংখ্যায়ই বেশি না। এবার প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমারজিক ফিভারে আক্রান্ত। আগে ছিল ক্লাসিকাল ডেঙ্গু রোগী। এদের পঞ্চাশ ভাগেরই শক সিন্ড্রোম।
শক সিন্ড্রোম অর্থ হচ্ছে পালর্স (নাড়ির গতি) পাওয়া যায় না। এবার ডেঙ্গুর প্যাটার্নটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সবার প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে, সবাই শকে চলে যাচ্ছে। আগে সামান্য ডেঙ্গু হয়েই ভালো হয়ে যেত। এবার সবারই রক্ত লাগছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যান। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কিছু দিন চিকিৎসকের ফলো আপে থাকুন। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা আরও জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে দুইজন মারা গেছে। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ইর্ন্টানী চিকিৎসক মানতাসা বলেন, তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে বেশির ভাগই ডেঙ্গু রোগী। এবারের ডেঙ্গু জ্বরে ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে ব্যক্তি ভেদে আলাদা। তিনি বলেন, এবার রোগীদের পাতলা পায়খানা, ভালো হওয়ার পর আবার কষা হওয়া, বুকে পানি, পেটে ও ফুসফুসে পানি জমা, জ্বর ১০২,১০৩, ১০৪-এ ওঠা নামা করছে। কারো কারো রেশও ওঠছে। লিভার বড় হয়ে যাওয়া। বমি করছে।
জ্বর না কমা বা অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকা, বমি হওয়া, পেটে তীব্র ব্যথা, রক্তক্ষরণ, মাথা ধরা, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া বা কম হওয়া, খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়া, নিদ্রাহীনতা ও আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। অন্তঃসত্ত্বা, বৃদ্ধ, শিশু, সদ্যোজাত এবং ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, লিভার ও কিডনির রোগীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, চলতি মাসের ২০শে জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৬০ জন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টা আক্রান্ত হয়েছে ২৩৩ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে একজন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত চারগুণ হবে। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
তার বোনের অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত এখানে নিয়ে আসেন। সুমাইয়াকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। রক্তের প্লাটিলেট দিতে হয়েছে শিশুটিকে।
প্লাজমাও লেগেছে তার। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, গত ৭দিনে চিকিৎসায় এক লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রক্তে ব্যয় বেশি। রাজধানীর বাসাবোতে তাদের বাসা। একই ওয়ার্ডে পাশের একটি সিটের চিকিৎসা নিচ্ছে অনন বিশ্বাস। বয়স ১৩ বছর। দুই দিন আগে এখানে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে বিশ্বাস। শিশুটির মা জানান, দিনে ৩০ থেকে ৩৫ বার পাতলা পায়খান করছে তার ছেলে। পেট ফুলে গেছে। পেটে জলও এসেছে। পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়। জ্বর ১০২, ১০৩ ওঠেছে। শিশুটির মা আরও জানান, প্রথমে তারা মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে ৪দিন আগে এখানে ভর্তি হয়েছেন। এ হাসপাতালে দৈনিক ১২শ’টাকা সিট ও ডাক্তারের ভিজিট দিতে হয়। এ পর্যন্ত তার এক লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে।
শুধু সুমাইয়া বা অনন বিশ্বাস নয়, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শিশু এবং শতাধিক নারী-পুরুষ ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে সিট খালি থাকলে কর্তৃপক্ষ ভর্তি করছেন। বাকিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির শিশু বিভাগে ৬০ জন শিশু ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হয়ে বহির্বিভাগ দিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনকে ভর্তির কথা স্বীকার করেছেন বিভাগীয় প্রধান। হাসপাতারের নার্সরা জানান, হাসপাতালটিতে ৪৫০সিট আছে। বর্তমানে ১১৫জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নতুন ১২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন যেভাবে ডেঙ্গু রোগী আসছে, সে পরিমাণে সিট দেয়া যাচ্ছে না বলে তারা উল্লেখ করেন। বাধ্য হয়ে রোগীরা অন্য হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। জানা যায়, ডেঙ্গু রোগীর কারণে রক্তেরও সংকট দেখা দিয়েছে এই হাসপাতালে। প্রয়োজনে রক্তের গ্রুপ না মিলার কারণে রোগীর স্বজনদের বিভিন্ন জায়গায় দৌঁড়-ঝাপ করতে হচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে নিচ তলায় ১৫২ নম্বর গাইনী ওয়ার্ডকে পুরুষ ওয়ার্ড ঘোষণা করে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখানে কথা হয় স্যালাইন লাগানো ডেঙ্গু রোগী অন্তর খানের সঙ্গে। তার বয়স ২৪ বছর। রাজধানীর ফার্মগেট আমতলা খিষ্ট্রান পাড়ায় থাকেন। বিসিএস পরীক্ষার কোচিং করেন। এ হাসপাতালে ৩দিন আগে ভর্তি হয়েছেন। তার প্রচুর পাতাল পায়খানা হচ্ছে। জ্বর ১০৪ ওঠেছে। পায়ের গোড়ালিতে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি। এ ওয়ার্ডের ২/১-বেডে এবিএম নাঈম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার বয়ম ৫৫ বছর। থাকেন মালিবাগ এলাকায়। তার পাশেই ৩/২ বেডে-এ চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশাল থেকে আগত শামসুল আলম। বয়স ৭২ বছর। একমাস আগ থেকেই তার জ্বর ওঠা নামা করছে। জ্বর ১০৩ ওঠেছে। তিন আগে বরিশালে ধরা পড়ে তার ডেঙ্গু হয়েছে। গত দুই দিন আগে এখানে ভর্তি করা হয় তাকে। তার পাশে ২/৪ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে রাহাত। বয়স ১৬ বছর। খিলগাঁ তাদের বাসা। তার মা জানান, জ্বর ১০৪ ওঠেছে। পাতালা পায়খানা, গায়ে ব্যথা, বমি হয়েছে। রক্ত লেগেছে চার ব্যাগ।
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গু এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। আগের চেয়ে মারাত্মক চেহারা নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। মধ্য জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রথম হলি ফ্যামিলিতে এই রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করেছিলেন অধ্যাপক ফাতমী। তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে যে রোগী আসছে তার ৮০ শতাংশই শিশু। গতকালও বহির্বিভাগে দিয়ে ৬০ জন শিশু ডেঙ্গু রোগী এসেছে, তাদের মধ্যে মাত্র ৬ জনকে ভর্তি দিতে পেয়েরেছেন। বাকীরা সিট না থাকায় অন্যত্র চলে গেছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এবার শুধু সংখ্যায়ই বেশি না। এবার প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমারজিক ফিভারে আক্রান্ত। আগে ছিল ক্লাসিকাল ডেঙ্গু রোগী। এদের পঞ্চাশ ভাগেরই শক সিন্ড্রোম।
শক সিন্ড্রোম অর্থ হচ্ছে পালর্স (নাড়ির গতি) পাওয়া যায় না। এবার ডেঙ্গুর প্যাটার্নটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সবার প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে, সবাই শকে চলে যাচ্ছে। আগে সামান্য ডেঙ্গু হয়েই ভালো হয়ে যেত। এবার সবারই রক্ত লাগছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যান। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কিছু দিন চিকিৎসকের ফলো আপে থাকুন। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা আরও জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে দুইজন মারা গেছে। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ইর্ন্টানী চিকিৎসক মানতাসা বলেন, তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে বেশির ভাগই ডেঙ্গু রোগী। এবারের ডেঙ্গু জ্বরে ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে ব্যক্তি ভেদে আলাদা। তিনি বলেন, এবার রোগীদের পাতলা পায়খানা, ভালো হওয়ার পর আবার কষা হওয়া, বুকে পানি, পেটে ও ফুসফুসে পানি জমা, জ্বর ১০২,১০৩, ১০৪-এ ওঠা নামা করছে। কারো কারো রেশও ওঠছে। লিভার বড় হয়ে যাওয়া। বমি করছে।
জ্বর না কমা বা অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকা, বমি হওয়া, পেটে তীব্র ব্যথা, রক্তক্ষরণ, মাথা ধরা, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া বা কম হওয়া, খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়া, নিদ্রাহীনতা ও আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। অন্তঃসত্ত্বা, বৃদ্ধ, শিশু, সদ্যোজাত এবং ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, লিভার ও কিডনির রোগীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, চলতি মাসের ২০শে জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৬০ জন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টা আক্রান্ত হয়েছে ২৩৩ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে একজন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত চারগুণ হবে। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
No comments