এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর ভারত কি সত্যিই কাউকে ফেরত পাঠাতে পারে
বুধবার
অমিত শাহ রাজ্য সভায় বলেছেন সরকার সমস্ত বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের দেশের
প্রতিটি ইঞ্চি থেকে ফেরত পাঠাবে। আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের
কয়েক সপ্তাহ আগে এ কথা বলেছেন তিনি। অমিত শাহ এবং বিজেপি নেতারা সারা দেশে
এনআরসি লাগু করার পক্ষে।
কতজনকে ফেরত পাঠানো হবে?
এনআরসি তালিকার বাইরে কতজন থাকবেন তার সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত নয়, এবং এও স্পষ্ট নয় যে কাউকেই ফেরত পাঠানো হবে কিনা। প্রথমে সংখ্যার দিকে তাকানো যাক। এনআরসি-র চূড়ান্ত খশড়ায় বাদ পড়েছেন ৪০ লক্ষ আবেদনকারী। আরও এক লক্ষের নাম বাদ পড়েছে ভেরিফিকেশনের পরে। সংখ্যাটা ৪১ লাখে সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। তালিকার ২ লক্ষ নামের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করা হয়েছে, ফলে সেখানে আরও কিছু নাম বাদ যাবে। কিছু নাম হয়ত অন্তর্ভুক্তও হবে। যে ৪০ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের মধ্যে ৩৬ লক্ষ নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি সহকারে দরখাস্ত করেছেন।
এবার আসবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। গত বছরের শুরুতে এই বিল তামাদি হয়ে যাওয়ার পর ফের সরকার এই বিল আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদি রাজ্য সভায় সে বিল পাশ হয়ে যায় তাহলে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্তরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদিও কোনও ধর্মীয় ভাগাভাগির ভিত্তিতে কোনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে প্রায়ই বিভিন্ন রেকর্ডেড বয়ান থেকেই জানতে পারা গিয়েছে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা মুসলিমদের থেকে বেশি। বিল যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদের সংখ্যা কমাবে।
চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হওয়ার কথা ৩১ জুলাই। যাঁরা বাদ পড়বেন তাঁদের আবেদনের বেশ কিছু সুযোগ থাকবে, যা সময়সাপেক্ষ। এর পরই ফেরত পাঠানোর প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি আদৌ তা ওঠে।
ফেরত পাঠানো নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
ব্যাপক সংখ্যায় কোনও মানুষকে কোনও দেশে ফেরত পাঠাতে হলে, যে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাকে স্বীকার করে নিতে হবে যে তাদের নাগরিকরা বেআইনিভাবে ওই দেশে এসেছিল। ২০১৯ সালের সরকারি তথ্যানুসারে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে আসাম ১৬৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। এনআরসির পরিপ্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা- এ কেবল কয়েক লক্ষ মানুষের প্রশ্ন নয়, এদের মধ্যে অনেকেই দশকের পর দশক ধরে আসামে বাস করছেন এবং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলে চলেছেন সে দেশের কোনও নাগরিক ভারতে নেই। একইসঙ্গে ভারতের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করারও কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাস্তবত ভারত বাংলাদেশের কাছে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে ফেরত পাঠানোর কোনও কথা বলা হবে না বলে জানিয়েছে বলেই খবর। গত বছর জুলাইয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ঢাকা সফরে গিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খানকে কেন্দ্রের এনআরসি এবং তার পদ্ধতির সীমারেখা সম্পর্কে জানিয়েও এসেছিলেন। সে খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছিল।
ফেরত যদি পাঠানো না হয়, তাহলে কী হবে?
আসামে নাগরিকত্ব বা বেআইনি অনুপ্রবেশ নির্ধারণের বিষয়টি স্থির হতে যদি কয়েক দশক না-ও লাগে, কয়েক বছর তো লাগবেই। প্রথমত আধা-বিচারবিভাগীয় বিদেশি ট্রাইবুনাল রয়েছে, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে যাঁরা বাদ পড়বেন তাঁরা সেখানে যেতে পারবেন। ট্রাইবুনালে প্রত্যাখাত হলে তাঁদের হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে তাঁদের যে ১০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে, বা যে আরও ২০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হতে চলেছে, তার কোনও একটিতে পাঠানো হতে পারে। যাঁরা তিন বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটিয়ে ফেলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তাঁদের বন্ডের বিনিময়ে শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দিতে বলেছে। গত বছর এক কথোপকথনের সময়ে আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমি (ডিটেনশন সেন্টার) সমর্থন করি না… আমি মনে করি একবার তাঁদের পরিচয় ডিজিট্যালি রেকর্ড হওয়া উচিত এবং দেশের অন্য কোনও রাজ্যে গিয়ে তাঁরা আর ভারতের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারবেন না। একবার সেটা হয়ে গেলে ওঁদের প্রাথমিক মানবাধিকার দেওয়া উচিত।”
লক্ষলক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ সারা জীবনের জন্য অনিশ্চিত। একমাত্র দীর্ঘ আইনি লড়াই-ই সুনিশ্চিত, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন পরিচয়ের কেউ খর্বিত অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন। ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা সুদূর।
কতজনকে ফেরত পাঠানো হবে?
এনআরসি তালিকার বাইরে কতজন থাকবেন তার সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত নয়, এবং এও স্পষ্ট নয় যে কাউকেই ফেরত পাঠানো হবে কিনা। প্রথমে সংখ্যার দিকে তাকানো যাক। এনআরসি-র চূড়ান্ত খশড়ায় বাদ পড়েছেন ৪০ লক্ষ আবেদনকারী। আরও এক লক্ষের নাম বাদ পড়েছে ভেরিফিকেশনের পরে। সংখ্যাটা ৪১ লাখে সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। তালিকার ২ লক্ষ নামের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করা হয়েছে, ফলে সেখানে আরও কিছু নাম বাদ যাবে। কিছু নাম হয়ত অন্তর্ভুক্তও হবে। যে ৪০ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের মধ্যে ৩৬ লক্ষ নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি সহকারে দরখাস্ত করেছেন।
এবার আসবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। গত বছরের শুরুতে এই বিল তামাদি হয়ে যাওয়ার পর ফের সরকার এই বিল আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদি রাজ্য সভায় সে বিল পাশ হয়ে যায় তাহলে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্তরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদিও কোনও ধর্মীয় ভাগাভাগির ভিত্তিতে কোনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে প্রায়ই বিভিন্ন রেকর্ডেড বয়ান থেকেই জানতে পারা গিয়েছে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা মুসলিমদের থেকে বেশি। বিল যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদের সংখ্যা কমাবে।
চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হওয়ার কথা ৩১ জুলাই। যাঁরা বাদ পড়বেন তাঁদের আবেদনের বেশ কিছু সুযোগ থাকবে, যা সময়সাপেক্ষ। এর পরই ফেরত পাঠানোর প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি আদৌ তা ওঠে।
ফেরত পাঠানো নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
ব্যাপক সংখ্যায় কোনও মানুষকে কোনও দেশে ফেরত পাঠাতে হলে, যে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাকে স্বীকার করে নিতে হবে যে তাদের নাগরিকরা বেআইনিভাবে ওই দেশে এসেছিল। ২০১৯ সালের সরকারি তথ্যানুসারে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে আসাম ১৬৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। এনআরসির পরিপ্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা- এ কেবল কয়েক লক্ষ মানুষের প্রশ্ন নয়, এদের মধ্যে অনেকেই দশকের পর দশক ধরে আসামে বাস করছেন এবং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলে চলেছেন সে দেশের কোনও নাগরিক ভারতে নেই। একইসঙ্গে ভারতের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করারও কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাস্তবত ভারত বাংলাদেশের কাছে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে ফেরত পাঠানোর কোনও কথা বলা হবে না বলে জানিয়েছে বলেই খবর। গত বছর জুলাইয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ঢাকা সফরে গিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খানকে কেন্দ্রের এনআরসি এবং তার পদ্ধতির সীমারেখা সম্পর্কে জানিয়েও এসেছিলেন। সে খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছিল।
ফেরত যদি পাঠানো না হয়, তাহলে কী হবে?
আসামে নাগরিকত্ব বা বেআইনি অনুপ্রবেশ নির্ধারণের বিষয়টি স্থির হতে যদি কয়েক দশক না-ও লাগে, কয়েক বছর তো লাগবেই। প্রথমত আধা-বিচারবিভাগীয় বিদেশি ট্রাইবুনাল রয়েছে, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে যাঁরা বাদ পড়বেন তাঁরা সেখানে যেতে পারবেন। ট্রাইবুনালে প্রত্যাখাত হলে তাঁদের হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে তাঁদের যে ১০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে, বা যে আরও ২০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হতে চলেছে, তার কোনও একটিতে পাঠানো হতে পারে। যাঁরা তিন বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটিয়ে ফেলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তাঁদের বন্ডের বিনিময়ে শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দিতে বলেছে। গত বছর এক কথোপকথনের সময়ে আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমি (ডিটেনশন সেন্টার) সমর্থন করি না… আমি মনে করি একবার তাঁদের পরিচয় ডিজিট্যালি রেকর্ড হওয়া উচিত এবং দেশের অন্য কোনও রাজ্যে গিয়ে তাঁরা আর ভারতের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারবেন না। একবার সেটা হয়ে গেলে ওঁদের প্রাথমিক মানবাধিকার দেওয়া উচিত।”
লক্ষলক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ সারা জীবনের জন্য অনিশ্চিত। একমাত্র দীর্ঘ আইনি লড়াই-ই সুনিশ্চিত, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন পরিচয়ের কেউ খর্বিত অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন। ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা সুদূর।
No comments