ধানের বাজার দরঃ না পেট ভরে না পিঠ ঘুরে by ইমাদ উদ দীন
এক
মণ ধান বিক্রি করে মেলে না এক কেজি মাংস। সব খরচ ছাড়াও হয় না একজন
শ্রমিকের মজুরিও। রোদ বৃষ্টিতে সারা বছর হাল চাষ করে না পাই পেট পুরে খেতে।
আর না পারি ভালো পোশাক পরতে। ধান পাওয়ার পরও টানপড়েনের সংসার। কারণ যে খরচ
করে ধান চাষ শেষে ফসল ঘরে তুলি, ধানের বাজার দর কম থাকায় তা বিক্রি করে সে
ব্যয়টিও উঠাতে পারি না। প্রতিবছরই প্রতিজ্ঞা করি আর ধান চাষ করব না। জায়গা
পতিত রাখব। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষায় মৌসুম এলেই পেছনের কথা ভুলে যাই। আবারো
নব উদ্যমে স্বপ্ন প্রত্যাশায় শুরু করি নতুন মৌসুম। কিন্তু যেই সেই। ধানের
ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষক হয় হতাশ। আর ব্যবসায়ীরা হয় আঙুল ফুলে কলাগাছ।
এভাবে আর চলে না। এর দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান না হলে কৃষক আর কৃষি কোনোটাই
বাঁচবে না। গত ১৬ মে ২০১৯ বিকালে এমনি ভাবে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন
হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামের কৃষক ফয়ছল
আহমদ, লীল মিয়া, হারিছ মিয়া, তোতা মিয়া, বরদল গ্রামের জসিম আহমদ, মহিষঘরি
গ্রামের কৃষক আনফর আলী, আমিন মিয়া, কুটি মিয়া, আব্দুল খালিক, গৌড়করনের লেচু
মিয়াসহ অনেকেই। তারা ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বলেন, আমাদের নিয়ে ভাবলে আমাদের
কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতো সরকার। ধানের ন্যায্য মূল্যও দিতেন।
এমনটি হলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারতাম। আমরাতো হাওর পাড়ের মানুষ, আমাদের জীবন জীবিকা ওই বোরো ধানের ওপরই নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলে আমাদের কৃষি ক্ষেত। নাব্যহ্রাসে বন্যা ও খরা মোকাবিলায় অতিষ্ঠ হয়েও কখনো কখনো ধানের বাম্পার ফলন হলেও মেলেনা দাম। এখন কেজি প্রতি ধানের দাম সাড়ে এগারো থেকে সাড়ে চৌদ্দ টাকা বিক্রি হলেও কেজি প্রতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। কিন্তু আমরা ধানের দাম পাই না। তারা বলেন ফড়িয়া ব্যবসায়ী কিংবা মিল মালিকরা লাভবান হলেও আমরা হচ্ছি ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখেও দেখে না। সরকার শুধু মিল মালিকদের খুশি করতে ব্যস্ত। তা না হলে সরাসরি আমাদের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করত। ২০১৭ সালে বন্যা ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় সর্বস্ব খুইয়েছিল এ জেলার হাওর ও নদী তীরের বোরোচাষিরা।
তখন পাকা-আধাপাকা বোরো ধানের সঙ্গে বানের পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল তাদের মাথা গুজার একমাত্র ঠাঁই বসতভিটাও। তখন পচা ধানের বিষক্রিয়ায় মারা যায় মাছ, হাঁস জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদও। আর ২০১৮ সালে বোরো ধানের উৎপাদন ভালো হলেও হঠাৎ ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্টের আক্রমণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন বোরোচাষিরা। তবে এ বছর ভিন্ন দৃশ্য হাওরজুড়ে। হাকালুকি, হাইলহাওর আর কাউয়াদিঘি হাওরসহ জেলার ছোট বড় হাওর ও নদী এলাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। তবে তাদের এই খুশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। কারণ তারা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তাই ধানের উৎপাদন ব্যয় কিভাবে পুষাবেন এ নিয়ে রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। জেলা কৃষি বিভাগ জানায় এবছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ১১৬ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ১৬২ হেক্টর। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৯ টন। আর উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৮৪৪ টন।
জানা যায় এ মৌসুমে সাড়ে এগারো লাখ টন চাল এবং দেড় লাখ টন ধান ক্রয় করবে সরকার। ২৫শে এপ্রিল থেকে সারা দেশে এই ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়ে ৩১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। সরকার ৩৬ টাকা সিদ্ধ ও ৩৫ টাকা আতপ চাল কেজি দরে ক্রয় করবে। ধান প্রতি মণ ১০৪০ টাকা দরে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি ভাবে ধান ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ ও বরাদ্দ না থাকায় এ জেলার কৃষক মণ প্রতি ধান বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। সরকারের এই ঘোষণায় স্থানীয় হাওর পাড়ের কৃষক তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এমন সিদ্ধান্তে মিল মালিকরা উপকৃত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষিরা। কৃষক বাঁচাতে তারা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জোরালো দাবি জানান। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিনয় কুমার দেব গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান এ জেলায় সরকারি ভাবে ১ হাজার ৪৫৫ টন ধান ও ৭ হাজার ৭শ’ ৭ টন চাল ক্রয় করা হবে। জেলার ৭ উপজেলার ৮টি গুদাম এজন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি জানান ক্রয় সংক্রান্ত এই বরাদ্দের নির্দেশনাটি ২৭শে এপ্রিলে তাদের হস্তগত হয়েছে। ২রা মে এ বিষয়ে জেলায় মিটিংও হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ জেলায় এখনো ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়নি।
শিগগিরই ধান চাল ক্রয় কার্যক্রম চলবে। হাওর বাঁচাও, কৃষি বাঁচাও ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বাদশাহ মানবজমিনকে বলেন গেল কয়েক বছরের মধ্যে এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষক আনন্দিত। তবে ধানের মূল্য কম হওয়ায় তাদের সে আনন্দ অনেকটাই ম্লান হচ্ছে। সরকার মিল মালিকগণকে বাঁচাতে মরিয়া। অথচ ওই মিল মালিকরা ধান চাষ করেন না। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান ক্রয় করে বেশি দামে সরকারের কাছে বিক্রি করেন। এতে কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেন, সারা দেশে সরকারি ভাবে এখনো একটি ধানও ক্রয় করা হয়নি। সরকার কৌশলে ওই ধান চাল মূলত মিল মালিকের কাছ থেকে কিনতে চান। এই ঘোষণা শুধুমাত্র লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। তিনি কৃষক বাঁচাতে এ বিষয়ে সরকারকে সদয় হওয়ার আহ্বান জানান।
এমনটি হলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারতাম। আমরাতো হাওর পাড়ের মানুষ, আমাদের জীবন জীবিকা ওই বোরো ধানের ওপরই নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলে আমাদের কৃষি ক্ষেত। নাব্যহ্রাসে বন্যা ও খরা মোকাবিলায় অতিষ্ঠ হয়েও কখনো কখনো ধানের বাম্পার ফলন হলেও মেলেনা দাম। এখন কেজি প্রতি ধানের দাম সাড়ে এগারো থেকে সাড়ে চৌদ্দ টাকা বিক্রি হলেও কেজি প্রতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। কিন্তু আমরা ধানের দাম পাই না। তারা বলেন ফড়িয়া ব্যবসায়ী কিংবা মিল মালিকরা লাভবান হলেও আমরা হচ্ছি ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখেও দেখে না। সরকার শুধু মিল মালিকদের খুশি করতে ব্যস্ত। তা না হলে সরাসরি আমাদের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করত। ২০১৭ সালে বন্যা ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় সর্বস্ব খুইয়েছিল এ জেলার হাওর ও নদী তীরের বোরোচাষিরা।
তখন পাকা-আধাপাকা বোরো ধানের সঙ্গে বানের পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল তাদের মাথা গুজার একমাত্র ঠাঁই বসতভিটাও। তখন পচা ধানের বিষক্রিয়ায় মারা যায় মাছ, হাঁস জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদও। আর ২০১৮ সালে বোরো ধানের উৎপাদন ভালো হলেও হঠাৎ ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্টের আক্রমণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন বোরোচাষিরা। তবে এ বছর ভিন্ন দৃশ্য হাওরজুড়ে। হাকালুকি, হাইলহাওর আর কাউয়াদিঘি হাওরসহ জেলার ছোট বড় হাওর ও নদী এলাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। তবে তাদের এই খুশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। কারণ তারা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তাই ধানের উৎপাদন ব্যয় কিভাবে পুষাবেন এ নিয়ে রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। জেলা কৃষি বিভাগ জানায় এবছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ১১৬ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ১৬২ হেক্টর। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৯ টন। আর উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৮৪৪ টন।
জানা যায় এ মৌসুমে সাড়ে এগারো লাখ টন চাল এবং দেড় লাখ টন ধান ক্রয় করবে সরকার। ২৫শে এপ্রিল থেকে সারা দেশে এই ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়ে ৩১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। সরকার ৩৬ টাকা সিদ্ধ ও ৩৫ টাকা আতপ চাল কেজি দরে ক্রয় করবে। ধান প্রতি মণ ১০৪০ টাকা দরে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি ভাবে ধান ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ ও বরাদ্দ না থাকায় এ জেলার কৃষক মণ প্রতি ধান বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। সরকারের এই ঘোষণায় স্থানীয় হাওর পাড়ের কৃষক তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এমন সিদ্ধান্তে মিল মালিকরা উপকৃত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষিরা। কৃষক বাঁচাতে তারা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জোরালো দাবি জানান। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিনয় কুমার দেব গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান এ জেলায় সরকারি ভাবে ১ হাজার ৪৫৫ টন ধান ও ৭ হাজার ৭শ’ ৭ টন চাল ক্রয় করা হবে। জেলার ৭ উপজেলার ৮টি গুদাম এজন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি জানান ক্রয় সংক্রান্ত এই বরাদ্দের নির্দেশনাটি ২৭শে এপ্রিলে তাদের হস্তগত হয়েছে। ২রা মে এ বিষয়ে জেলায় মিটিংও হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ জেলায় এখনো ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়নি।
শিগগিরই ধান চাল ক্রয় কার্যক্রম চলবে। হাওর বাঁচাও, কৃষি বাঁচাও ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বাদশাহ মানবজমিনকে বলেন গেল কয়েক বছরের মধ্যে এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষক আনন্দিত। তবে ধানের মূল্য কম হওয়ায় তাদের সে আনন্দ অনেকটাই ম্লান হচ্ছে। সরকার মিল মালিকগণকে বাঁচাতে মরিয়া। অথচ ওই মিল মালিকরা ধান চাষ করেন না। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান ক্রয় করে বেশি দামে সরকারের কাছে বিক্রি করেন। এতে কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেন, সারা দেশে সরকারি ভাবে এখনো একটি ধানও ক্রয় করা হয়নি। সরকার কৌশলে ওই ধান চাল মূলত মিল মালিকের কাছ থেকে কিনতে চান। এই ঘোষণা শুধুমাত্র লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। তিনি কৃষক বাঁচাতে এ বিষয়ে সরকারকে সদয় হওয়ার আহ্বান জানান।
No comments