ওয়াসার লাইনে বিষ: পাতালের পানিই ভরসা জুরাইনে by শাহনেওয়াজ বাবলু
জুরাইনের
মসজিদে মসজিদে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে লম্বা লাইন। কারো হাতে কলস। কারো হাতে
বালতি। কেউ নিয়ে এসেছেন ড্রাম। মসজিদের ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি নেয়ার এ
লাইন থাকে রাত দিন সবসময়। এ পানি নিতে মসজিদের ফাণ্ডে তারা দিচ্ছেন
প্রতিবার দুই কিংবা পাঁচ টাকা করে। সারাবছরই পানি সংকট থাকে রাজধানীর
জুরাইন এলাকায়। মাঝে মধ্যে যেটুকু পানি আসে, তাতেও দুর্গন্ধ। ভাসে ময়লা। এক
সময় ফুটিয়ে খাওয়া গেলেও এখন ফুটানোর পর ফিটকিরি দিয়েও কাজ হয় না। চারদিকে
সুপেয় পানির জন্য হাহাকার। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিভিন্ন মসজিদে
ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে।
এই পানি দিয়ে মসজিদের মুসল্লীরা ওজু করেন। আর এই টিউবওয়েল থেকে পাইপের মাধ্যমে জুরাইনের বিভিন্ন মোড়ে সংযোগ দিয়ে বসানো হয়েছে আলাদা পানির ট্যাপ। সেখান থেকে মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করে। প্রতিবার দুই টাকা করে মসজিদের ফান্ডে দেয়া হয়। আর এই পানি সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকে মানুষের ভিড়। তাদের কথা- পাতালের পানি আমাগ বাঁচাইয়া রাখছে। ওয়াসার পানি নয়, দিচ্ছে বিষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে এই পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জুরাইনের বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানি পাওয়াই যাচ্ছে না। কিছু জায়গায় পানি পাওয়া গেলেও তা ময়লা-দুর্গন্ধে ভরা, যা ফুটিয়েও ব্যবহারোপযোগী করা যাচ্ছে না।
সরেজমিন জুরাইনের মুরাদপুর, মাদরাসা রোড, মেডিকেল রোড, ইসলাসাবাদ, ঋষিপাড়া, কমিশনার রোডসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুরাইন এলাকার সব জায়গাতেই রয়েছে পানির হাহাকার। রমাজানে এ হাহাকার আরও বেড়েছে। তাদের পানি কিনতে হচ্ছে খাওয়া-রান্না ও গোসলের জন্য। যাদের বাসা স্থানীয় মসজিদের পাশে, তারা মসজিদের স্থায়ী পাম্প থেকে লিটার প্রতি দুই টাকার বিনিময়ে পানি কিনছেন। কেউ কেউ বোতলজাত কিংবা জারের পানি কিনে ব্যবহার করছেন। এভাবেই কাটছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের রমজান মাস। কোনো কোনো মসজিদে পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানিও মিলছে না।
ওই এলকার বাসিন্দা ও সুপেয় পানির জন্য অন্যতম আন্দোলনকারী মিজানুর রহমান বলেন, এতো আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এলাকার পানির সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কিছুদিন আগে একটি টকশোতে আমাদের এলাকায় ওয়াসার ময়লা পানির একটি ভিডিও দেখিয়েছিলাম। ওই টকশোতে ওয়াসার এমডিও ছিলেন। তখনই তিনি আমাকে বলেছেন, এই এলাকার পানির সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত তিনি উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু ওই টকশোর পর দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও ওয়াসার কোন কর্মকর্তাকে এই এলাকায় দেখি নাই।
রাস্তার পাশের ট্যাপ থেকে পানি নিতে আসা কামরুন নাহার বলেন, ওয়াসার পানিতে গন্ধ আর ময়লা আসে। খাওয়ার জন্য মসজিদের ডিপের পানিই নেই প্রতিদিন। ২ টাকা, ৫ টাকা যখন যা পারি দেই। এক মাস হলো এই এলাকায় এসেছেন তিনি। এর মধ্যে বেশ কয়েক দিন ওয়াসার লাইনে হলুদ ও নীল কালারের ময়লা পানি আসার কথা জানালেন তিনি।
পূর্ব জুরাইনের আলম মার্কেট এলাকায় ছোট ছোট আধাপাকা ঘরে ভাড়া থাকে কয়েকটি পরিবার। এখানে ১৫ বছর ধরে থাকছেন রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, এই পানি খাওয়া যায় না। দুর্গন্ধ। ওই মসজিদ থেকে পাতালের পানি কিন্না আইনা খাই। ৫ টাকা দেই, ২ টাকাও দেই। এই মসজিদের পানি দিয়া পুরা মহল্লাডা চলতাছে। ওয়াসাকে অভিযোগ জানিয়েছেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা ভাড়াটিয়া, আমরা কী অভিযোগ দিমু। আর বাড়িওলাও তো কিন্না খায়। তাদের কী কমু?
বাড়িওয়ালা হাজি ওসমান গণিকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, জন্ম থেকে এখানে আছি। ২০-২৫ বছর ধরেই ওয়াসার লাইনে ময়লা পানি আসছে। মাঝে মধ্যে লাল পানি আসে। পোকা, কেঁচো পর্যন্ত আসে। মইরা গেলেও তো এই পানি খামু না। মানুষ দিয়া মসজিদ থেকে পানি আইনা খাই।
ওয়াসাকে অভিযোগ জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী অভিযোগ জানামু, দেখেন না একজন অভিযোগ জানাইতে গিয়া এখন হুমকি-ধামকি খাইতাছে। কোন সময় গায়েব করে দেয় ঠিক আছে? এজন্য আমগো মতো সাধারণ মানুষ কেউই অভিযোগ জানাতে যাই না। যেমনে আছি, এমনেই ভালা আছি। পানি পচা আসুক আর যেমনই আসুক।
ওসমান গণির বড় ছেলে বলেন, ওরা তো কেউ আসে না। পানি ভালো না খারাপ দেখতেও তো আসে না একটা দিন। খালি বিলের কাগজটা দিয়া যায়। হেরা তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের ধরতে হলে টেবিলে টেবিলে যেতে হবে। টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না।
এ বিষয়ে জুরাইন এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুদ্দীন বলেন, ভাগ্যিস এলাকার ১৫-২০টি মসজিদের পাশে গভীর নলকূপ বসানো আছে। এসব গভীর নলকূপের কারণে টাকা দিয়ে হলেও সুপেয় পানির দেখা মিলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নূর হোসেনও স্বীকার করে নিলেন পানি সংকটের কথা। তিনি মানবজমিনকে বলেন, দেড় বছর আগে ডিএসসিসিতে এক সভায় ওয়াসার এমডির সামনে জুরাইনের পানি সমস্যার চিত্র তুলে ধরা হয়। তখন তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু আজও সমাধান হয়নি। শুধু তাই নয়, গত চার বছর ধরে বহুবার ডিএসসিসির মেয়রের সমন্বয়ে ওয়াসাকে চিঠি দিয়েছি। একটারও কোনো উত্তর পাইনি। আমার নিজ উদ্যোগে সবুজবাগ ও কমিশনার রোডে দুটি পাম্প বসিয়েছি। এখন পানির সমস্যা কিছুটা লাগব হচ্ছে।
ওয়াসার মোডস জোন-৭-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবিদ হোসেন বলেন, জুরাইনে পানির সমস্যা চলছে, এটা ঠিক। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই ওই এলাকায় নতুন পাম্প বসানো হবে। তবে কবে নাগাদ এই পাম্প বসানো হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
এই পানি দিয়ে মসজিদের মুসল্লীরা ওজু করেন। আর এই টিউবওয়েল থেকে পাইপের মাধ্যমে জুরাইনের বিভিন্ন মোড়ে সংযোগ দিয়ে বসানো হয়েছে আলাদা পানির ট্যাপ। সেখান থেকে মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করে। প্রতিবার দুই টাকা করে মসজিদের ফান্ডে দেয়া হয়। আর এই পানি সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকে মানুষের ভিড়। তাদের কথা- পাতালের পানি আমাগ বাঁচাইয়া রাখছে। ওয়াসার পানি নয়, দিচ্ছে বিষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে এই পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জুরাইনের বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানি পাওয়াই যাচ্ছে না। কিছু জায়গায় পানি পাওয়া গেলেও তা ময়লা-দুর্গন্ধে ভরা, যা ফুটিয়েও ব্যবহারোপযোগী করা যাচ্ছে না।
সরেজমিন জুরাইনের মুরাদপুর, মাদরাসা রোড, মেডিকেল রোড, ইসলাসাবাদ, ঋষিপাড়া, কমিশনার রোডসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুরাইন এলাকার সব জায়গাতেই রয়েছে পানির হাহাকার। রমাজানে এ হাহাকার আরও বেড়েছে। তাদের পানি কিনতে হচ্ছে খাওয়া-রান্না ও গোসলের জন্য। যাদের বাসা স্থানীয় মসজিদের পাশে, তারা মসজিদের স্থায়ী পাম্প থেকে লিটার প্রতি দুই টাকার বিনিময়ে পানি কিনছেন। কেউ কেউ বোতলজাত কিংবা জারের পানি কিনে ব্যবহার করছেন। এভাবেই কাটছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের রমজান মাস। কোনো কোনো মসজিদে পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানিও মিলছে না।
ওই এলকার বাসিন্দা ও সুপেয় পানির জন্য অন্যতম আন্দোলনকারী মিজানুর রহমান বলেন, এতো আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এলাকার পানির সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কিছুদিন আগে একটি টকশোতে আমাদের এলাকায় ওয়াসার ময়লা পানির একটি ভিডিও দেখিয়েছিলাম। ওই টকশোতে ওয়াসার এমডিও ছিলেন। তখনই তিনি আমাকে বলেছেন, এই এলাকার পানির সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত তিনি উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু ওই টকশোর পর দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও ওয়াসার কোন কর্মকর্তাকে এই এলাকায় দেখি নাই।
রাস্তার পাশের ট্যাপ থেকে পানি নিতে আসা কামরুন নাহার বলেন, ওয়াসার পানিতে গন্ধ আর ময়লা আসে। খাওয়ার জন্য মসজিদের ডিপের পানিই নেই প্রতিদিন। ২ টাকা, ৫ টাকা যখন যা পারি দেই। এক মাস হলো এই এলাকায় এসেছেন তিনি। এর মধ্যে বেশ কয়েক দিন ওয়াসার লাইনে হলুদ ও নীল কালারের ময়লা পানি আসার কথা জানালেন তিনি।
পূর্ব জুরাইনের আলম মার্কেট এলাকায় ছোট ছোট আধাপাকা ঘরে ভাড়া থাকে কয়েকটি পরিবার। এখানে ১৫ বছর ধরে থাকছেন রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, এই পানি খাওয়া যায় না। দুর্গন্ধ। ওই মসজিদ থেকে পাতালের পানি কিন্না আইনা খাই। ৫ টাকা দেই, ২ টাকাও দেই। এই মসজিদের পানি দিয়া পুরা মহল্লাডা চলতাছে। ওয়াসাকে অভিযোগ জানিয়েছেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা ভাড়াটিয়া, আমরা কী অভিযোগ দিমু। আর বাড়িওলাও তো কিন্না খায়। তাদের কী কমু?
বাড়িওয়ালা হাজি ওসমান গণিকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, জন্ম থেকে এখানে আছি। ২০-২৫ বছর ধরেই ওয়াসার লাইনে ময়লা পানি আসছে। মাঝে মধ্যে লাল পানি আসে। পোকা, কেঁচো পর্যন্ত আসে। মইরা গেলেও তো এই পানি খামু না। মানুষ দিয়া মসজিদ থেকে পানি আইনা খাই।
ওয়াসাকে অভিযোগ জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী অভিযোগ জানামু, দেখেন না একজন অভিযোগ জানাইতে গিয়া এখন হুমকি-ধামকি খাইতাছে। কোন সময় গায়েব করে দেয় ঠিক আছে? এজন্য আমগো মতো সাধারণ মানুষ কেউই অভিযোগ জানাতে যাই না। যেমনে আছি, এমনেই ভালা আছি। পানি পচা আসুক আর যেমনই আসুক।
ওসমান গণির বড় ছেলে বলেন, ওরা তো কেউ আসে না। পানি ভালো না খারাপ দেখতেও তো আসে না একটা দিন। খালি বিলের কাগজটা দিয়া যায়। হেরা তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের ধরতে হলে টেবিলে টেবিলে যেতে হবে। টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না।
এ বিষয়ে জুরাইন এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুদ্দীন বলেন, ভাগ্যিস এলাকার ১৫-২০টি মসজিদের পাশে গভীর নলকূপ বসানো আছে। এসব গভীর নলকূপের কারণে টাকা দিয়ে হলেও সুপেয় পানির দেখা মিলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নূর হোসেনও স্বীকার করে নিলেন পানি সংকটের কথা। তিনি মানবজমিনকে বলেন, দেড় বছর আগে ডিএসসিসিতে এক সভায় ওয়াসার এমডির সামনে জুরাইনের পানি সমস্যার চিত্র তুলে ধরা হয়। তখন তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু আজও সমাধান হয়নি। শুধু তাই নয়, গত চার বছর ধরে বহুবার ডিএসসিসির মেয়রের সমন্বয়ে ওয়াসাকে চিঠি দিয়েছি। একটারও কোনো উত্তর পাইনি। আমার নিজ উদ্যোগে সবুজবাগ ও কমিশনার রোডে দুটি পাম্প বসিয়েছি। এখন পানির সমস্যা কিছুটা লাগব হচ্ছে।
ওয়াসার মোডস জোন-৭-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবিদ হোসেন বলেন, জুরাইনে পানির সমস্যা চলছে, এটা ঠিক। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই ওই এলাকায় নতুন পাম্প বসানো হবে। তবে কবে নাগাদ এই পাম্প বসানো হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
No comments