রাজনীতির ভবিষ্যৎ অচলাবস্থা!
বাজেট
অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এবারের অধিবেশনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি
থাকবে। অফিসিয়াল অপজিশন তো থাকবেই। বাজেট আলোচনায় সব দল অংশ নেবে। কিন্তু
এতকিছুর পরেও সংসদ তার পুরনো চেনা চেহারা ফিরে পাবে না। সকল দল সংসদে
থাকবে, আবার ঠিক থাকাও হবে না। রাজনীতিতে যে অস্বাভাবিকতা বিরাজমান, তার
রেশ কাটবে না, চলমান থাকবে। এ সবই যেন বাংলাদেশি রাজনীতির নিয়তি।
রাজনীতিবিদরা এসব নিয়ে ভাবেন না। তারা চান যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকতে। এর
ফলে জনগণ রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। এর মধ্যেই বড় দুই দলের ভবিষ্যৎ
রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
জাতীয় রাজনীতি আটকে গেছে। অনেকের মতে রাজনীতির ভবিষ্যৎই হলো একটা অচলাবস্থা। জোটগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুরা মন্ত্রিসভায় না থাকায় মহাজোটের টেস্ট নষ্ট হয়ে গেছে। আবার ১৪ দল কাগজে কলমে থাকলেও তাও গতিশীল নেই। মোহাম্মদ নাসিম মাঝে মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। হয়তো মনের কষ্টে।
অবশ্য রাজনীতি সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেছেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করা। তার কথায়, ?‘এগুলোকে প্রায় অকার্যকর করার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এটা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অপরিহার্য। কিন্তু এটা বাস্তবে সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয় না। ফলে এই অবস্থা থেকে বেরুতে হলে কখন কীভাবে পরিবর্তন আসবে, সেটা ভেবে আমি উদ্বিগ্ন।’ তিনি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন। বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের চরিত্র অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে দলটি এখন ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা আত্মঘাতী, এখানে পরিবর্তন না এলে আমরা যে যেখান থেকে যত সংস্কারের কথাই বলি, কোনোদিন সংস্কার আনা যাবে না। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিটি, বিশেষ করে দুই বড় দলে সংস্কার আনতে হবে।’ এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই অচলাবস্থার বৃত্ত কে ভাঙবে। ক্ষমতাসীন দলের সামনে বড় উৎসব উদ্যাপনের হাতছানি।
তারা এখন এমন কিছুতেই জড়াবে না, যাতে উৎসব উদ্যাপনের সম্ভাবনায় কোনো রকম চিড় ধরে। সুতরাং বড় কোনো সংস্কারে ক্ষমতাসীন দল যাবে না। সুশাসন ও আইনের শাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। কিন্তু তা শুরু করার কোনো রকম সম্ভাবনা নেই। চার লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। জানা যায়, কোনো টাকা ফেরত আনতে কোনো প্রক্রিয়া নেই দুদক, মহাহিসাব নিরীক্ষক কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে। টিআইবি মুখপাত্র প্রশ্ন তুলেছেন, কোকোর টাকা ফেরত আনার উদাহরণ তৈরি থাকলে সেটা অন্যদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না কেন? অবশ্য তিনি অকপটে এমনটাও বলেছেন যে, টাকা পাচারে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের একাংশের জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রকট। সে কারণে দুদক ভাবে, এখানে ‘হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে’।
পর্যবেক্ষকরা একমত বিএনপির পক্ষে এই বৃত্ত ভাঙায় কার্যকর দূরে থাক আদৌ কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। অতীতে দুর্নীতি বিষয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দল একটা লিপ সার্ভিস দিতো। সেটা এখন হারিয়ে গেছে। ৫ম সংসদে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী মাজেদুল হকের ছোটখাটো দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি হয়েছিল। দিনের পর দিন বিতর্ক হয়েছে। কয়েক শ’ পৃষ্ঠার সংসদীয় রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। আজ সেসব স্বপ্নের মতো। জাতীয় পার্টি বা বিএনপির কথায় কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতি বিষয়ে সংসদ দিনের পর দিন বিতর্ক করছে, সেটা আশা করা যায় না।
সংবাদ মাধ্যমের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া যেন পাল্লা দিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাকি থাকে সিভিল সোসাইটি। তবে সবাই একবাক্যে বলবেন, এই সোসাইটির সদস্য সংগ্রহ অভিযান বহুদিন ধরেই স্থগিত। অনেকে রসিকতা করে বলেন, সিভিল সোসাইটি অলৌকিক হয়ে যাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে ভিপিসহ কিছু পদে বিরোধী দলীয়দের নাটকীয় বিজয়ের পরে রাজনীতিতে একটা নতুন হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু তা থমকে গেছে। দেশের বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে, তা কারো জানা নেই। এখানেও সেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
এরকম একটি অবস্থায় অচলাবস্থা ভঙ্গ করার একটা আশু সম্ভাবনা মনে করা হয়, কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তিনি দেশে থাকেন বা বিদেশে যান, অনেকের মতে, রাজনীতিতে একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার।
তবে তিনি প্যারোলে নাকি জামিনে বেরুবেন- এখানেই অচলাবস্থা চলছে। ইতিমধ্যে তিনি পরিত্যক্ত কারাগারে দীর্ঘ সময় পার করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আইনবেত্তাদের অনেকেই এমন পরিবেশে তাকে এভাবে রাখা কতোটা জেল কোডসম্মত সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে দ্বিধান্বিত। কারণ তুলনা করার মতো কোনো উদাহরণ জাতির ইতিহাসে নেই।
সর্বশেষ জানা গেছে, তাকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সেখানেই ৩৪ মামলায় তার বিচারে এজলাস বসবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এতদিনে কেরানীগঞ্জে নারী কয়েদিদের রাখার জায়গার কাজ শেষ হয়েছে। তাই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করতে অসুবিধা নেই। আর নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিচারকাজ নিষ্পত্তি করতে কেরানীগঞ্জ কারাগারে বিশেষ আদালত গঠন করা হচ্ছে।
বিএনপি’র অনেকেই অবশ্য মনে করেন, দেশের সার্বিক যা পরিস্থিতি, যেখানে রাজনীতি অনুপস্থিত, গণতন্ত্রের ঘাটতি গভীরতর, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে কারাগার থেকে বের হবেন, সেই বিষয়ে প্রক্রিয়াগত প্রশ্ন তোলা বৃথা।
বেগম খালেদা জিয়ার দরকার আশু চিকিৎসা। মুক্ত পরিবেশে তার নিজের চিকিৎসক দিয়ে মনমতো চিকিৎসক বাছাই করে স্বাস্থ্যসেবা নেয়া। এখন সেটা তিনি করবেন জামিনে না প্যারোলে, সেটা এখন একটা কূটতর্ক। অবশ্য দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম জিয়া প্যারোল না নিতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তাকে অবশ্য স্মরণ করানো হয়েছে, এক এগারোতে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে প্যারোল নিতে চাননি। কিন্তু পরে রাজি হন।
ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সবশেষে বৈঠকে বিএনপি আশাবাদী হয়েছিল। সেটা মিলিয়ে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকালে বিএনপির অতি উৎসাহীদের অপ্রয়োজনীয় মনে করেন সিনিয়র নেতাদের একাংশ।
গত মার্চের গোড়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন যে, প্যারোলের দরখাস্ত পেলে তারা বিবেচনা করবেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে গত বছরের ২৭শে মার্চ, ২৩শে এপ্রিল ও ৯ই সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি নেতারা।
তার মুক্তির প্রশ্ন অমিমাংসিত রেখেই বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি লড়াইয়ে নামছে। সংরক্ষিত নারী আসনেও নাম পাঠাবে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও রাজনীতির নিকটবর্তী অচলায়তন ভাঙার প্রশ্নটি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেটি বাস্তবে ঘটলেও বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব কাঠামো না বদলালে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া বিএনপি কি চায় এটা পরিষ্কার নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে নির্বাচনের আগে এবং পরে বেশকিছু অফার এসেছিল। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করেও দেখেননি। এক বাক্যে নো, নো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি বেগম জিয়া কারাগারে যাবার আগেও প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ভুল কামাল হোসেনের মাধ্যমে শোধরানোর চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে তা সময়ই বলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে আওয়ামী লীগই শক্তিশালী হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট হবে। তিনি আরো বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরলেও তিনি ?‘আগের’ রাজনীতি করবেন না। সুতরাং প্রলম্বিত অচলাবস্থাই আপাতত নিয়তি।
জাতীয় রাজনীতি আটকে গেছে। অনেকের মতে রাজনীতির ভবিষ্যৎই হলো একটা অচলাবস্থা। জোটগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুরা মন্ত্রিসভায় না থাকায় মহাজোটের টেস্ট নষ্ট হয়ে গেছে। আবার ১৪ দল কাগজে কলমে থাকলেও তাও গতিশীল নেই। মোহাম্মদ নাসিম মাঝে মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। হয়তো মনের কষ্টে।
অবশ্য রাজনীতি সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেছেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করা। তার কথায়, ?‘এগুলোকে প্রায় অকার্যকর করার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এটা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অপরিহার্য। কিন্তু এটা বাস্তবে সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয় না। ফলে এই অবস্থা থেকে বেরুতে হলে কখন কীভাবে পরিবর্তন আসবে, সেটা ভেবে আমি উদ্বিগ্ন।’ তিনি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন। বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের চরিত্র অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে দলটি এখন ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা আত্মঘাতী, এখানে পরিবর্তন না এলে আমরা যে যেখান থেকে যত সংস্কারের কথাই বলি, কোনোদিন সংস্কার আনা যাবে না। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিটি, বিশেষ করে দুই বড় দলে সংস্কার আনতে হবে।’ এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই অচলাবস্থার বৃত্ত কে ভাঙবে। ক্ষমতাসীন দলের সামনে বড় উৎসব উদ্যাপনের হাতছানি।
তারা এখন এমন কিছুতেই জড়াবে না, যাতে উৎসব উদ্যাপনের সম্ভাবনায় কোনো রকম চিড় ধরে। সুতরাং বড় কোনো সংস্কারে ক্ষমতাসীন দল যাবে না। সুশাসন ও আইনের শাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। কিন্তু তা শুরু করার কোনো রকম সম্ভাবনা নেই। চার লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। জানা যায়, কোনো টাকা ফেরত আনতে কোনো প্রক্রিয়া নেই দুদক, মহাহিসাব নিরীক্ষক কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে। টিআইবি মুখপাত্র প্রশ্ন তুলেছেন, কোকোর টাকা ফেরত আনার উদাহরণ তৈরি থাকলে সেটা অন্যদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না কেন? অবশ্য তিনি অকপটে এমনটাও বলেছেন যে, টাকা পাচারে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের একাংশের জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রকট। সে কারণে দুদক ভাবে, এখানে ‘হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে’।
পর্যবেক্ষকরা একমত বিএনপির পক্ষে এই বৃত্ত ভাঙায় কার্যকর দূরে থাক আদৌ কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। অতীতে দুর্নীতি বিষয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দল একটা লিপ সার্ভিস দিতো। সেটা এখন হারিয়ে গেছে। ৫ম সংসদে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী মাজেদুল হকের ছোটখাটো দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি হয়েছিল। দিনের পর দিন বিতর্ক হয়েছে। কয়েক শ’ পৃষ্ঠার সংসদীয় রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। আজ সেসব স্বপ্নের মতো। জাতীয় পার্টি বা বিএনপির কথায় কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতি বিষয়ে সংসদ দিনের পর দিন বিতর্ক করছে, সেটা আশা করা যায় না।
সংবাদ মাধ্যমের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া যেন পাল্লা দিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাকি থাকে সিভিল সোসাইটি। তবে সবাই একবাক্যে বলবেন, এই সোসাইটির সদস্য সংগ্রহ অভিযান বহুদিন ধরেই স্থগিত। অনেকে রসিকতা করে বলেন, সিভিল সোসাইটি অলৌকিক হয়ে যাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে ভিপিসহ কিছু পদে বিরোধী দলীয়দের নাটকীয় বিজয়ের পরে রাজনীতিতে একটা নতুন হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু তা থমকে গেছে। দেশের বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে, তা কারো জানা নেই। এখানেও সেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
এরকম একটি অবস্থায় অচলাবস্থা ভঙ্গ করার একটা আশু সম্ভাবনা মনে করা হয়, কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তিনি দেশে থাকেন বা বিদেশে যান, অনেকের মতে, রাজনীতিতে একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার।
তবে তিনি প্যারোলে নাকি জামিনে বেরুবেন- এখানেই অচলাবস্থা চলছে। ইতিমধ্যে তিনি পরিত্যক্ত কারাগারে দীর্ঘ সময় পার করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আইনবেত্তাদের অনেকেই এমন পরিবেশে তাকে এভাবে রাখা কতোটা জেল কোডসম্মত সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে দ্বিধান্বিত। কারণ তুলনা করার মতো কোনো উদাহরণ জাতির ইতিহাসে নেই।
সর্বশেষ জানা গেছে, তাকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সেখানেই ৩৪ মামলায় তার বিচারে এজলাস বসবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এতদিনে কেরানীগঞ্জে নারী কয়েদিদের রাখার জায়গার কাজ শেষ হয়েছে। তাই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করতে অসুবিধা নেই। আর নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিচারকাজ নিষ্পত্তি করতে কেরানীগঞ্জ কারাগারে বিশেষ আদালত গঠন করা হচ্ছে।
বিএনপি’র অনেকেই অবশ্য মনে করেন, দেশের সার্বিক যা পরিস্থিতি, যেখানে রাজনীতি অনুপস্থিত, গণতন্ত্রের ঘাটতি গভীরতর, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে কারাগার থেকে বের হবেন, সেই বিষয়ে প্রক্রিয়াগত প্রশ্ন তোলা বৃথা।
বেগম খালেদা জিয়ার দরকার আশু চিকিৎসা। মুক্ত পরিবেশে তার নিজের চিকিৎসক দিয়ে মনমতো চিকিৎসক বাছাই করে স্বাস্থ্যসেবা নেয়া। এখন সেটা তিনি করবেন জামিনে না প্যারোলে, সেটা এখন একটা কূটতর্ক। অবশ্য দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম জিয়া প্যারোল না নিতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তাকে অবশ্য স্মরণ করানো হয়েছে, এক এগারোতে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে প্যারোল নিতে চাননি। কিন্তু পরে রাজি হন।
ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সবশেষে বৈঠকে বিএনপি আশাবাদী হয়েছিল। সেটা মিলিয়ে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকালে বিএনপির অতি উৎসাহীদের অপ্রয়োজনীয় মনে করেন সিনিয়র নেতাদের একাংশ।
গত মার্চের গোড়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন যে, প্যারোলের দরখাস্ত পেলে তারা বিবেচনা করবেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে গত বছরের ২৭শে মার্চ, ২৩শে এপ্রিল ও ৯ই সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি নেতারা।
তার মুক্তির প্রশ্ন অমিমাংসিত রেখেই বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি লড়াইয়ে নামছে। সংরক্ষিত নারী আসনেও নাম পাঠাবে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও রাজনীতির নিকটবর্তী অচলায়তন ভাঙার প্রশ্নটি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেটি বাস্তবে ঘটলেও বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব কাঠামো না বদলালে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া বিএনপি কি চায় এটা পরিষ্কার নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে নির্বাচনের আগে এবং পরে বেশকিছু অফার এসেছিল। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করেও দেখেননি। এক বাক্যে নো, নো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি বেগম জিয়া কারাগারে যাবার আগেও প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ভুল কামাল হোসেনের মাধ্যমে শোধরানোর চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে তা সময়ই বলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে আওয়ামী লীগই শক্তিশালী হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট হবে। তিনি আরো বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরলেও তিনি ?‘আগের’ রাজনীতি করবেন না। সুতরাং প্রলম্বিত অচলাবস্থাই আপাতত নিয়তি।
No comments