টার্নিং পয়েন্ট সিলেট বিএনপি-জামায়াত দূরত্বে নতুন মাত্রা by কাফি কামাল
২০
দলীয় জোটের প্রধান দুই শরিক দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে টানাপড়েন শুরু
হয়েছে নতুন করে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দৃশ্যমান
হচ্ছে দুই দলের সম্পর্কের ফাটল। রাজনীতিতে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে
বাড়ছে সেই ফাটলের পরিধি। সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরালো হয়েছে
দুই দলের সম্পর্কের এ টানাপড়েন। সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
মেয়র পদে প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে জামায়াত প্রকাশ করেছে তাদের অনড় অবস্থান।
দু’দফায় জোটের বৈঠক ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পরও তারা মেয়র পদে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। অন্যদিকে দুই দলের দূরত্বের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে তিন সিটির নির্বাচনে জোটের সমন্বয় কমিটিতে জামায়াতকে জায়গা না দেয়ায়। জোটের একাধিক নেতা জানান, জামায়াত নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যতই জোটবদ্ধ রাজনীতি করুক না কেন, স্বতন্ত্র দল হিসেবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের অধিকার রয়েছে জামায়াতের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো যে তাদের অবস্থান শক্ত সেটা তারা প্রমাণ করতে চায় সিটি নির্বাচনে। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অর্ধশতাধিক আসনের একটি প্রার্থী তালিকাও করছে জামায়াত। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সেই তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে উপস্থাপন করা হবে। জামায়াতের সংশ্লিষ্ট সূত্র ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে এমন বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট অটুট থাকবে কিনা সেটাই এখন অনিশ্চিত।
দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় অংশটিই চাইছে জোট থেকে বেরিয়ে যাক জামায়াত। মুখে প্রকাশ না করলেও জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি কৌশলগত নীতি বা অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও জোট নিয়ে জামায়াতের কৌশল ভিন্ন। তারা চাইছে, বিএনপিই তাদের জোট ভেঙে দিক। কৌশল-পাল্টা কৌশলের একটি সূক্ষ্ম সুতো জড়িয়ে রেখেছে দুই দলের সম্পর্ক। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই বড় জোটের বাইরে থাকা দলগুলো নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রগতিশীল ও বামপন্থি দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। বিএনপির নেতাদের কারও কারও ধারণা, এসব ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য হলে জামায়াত জোটে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের আগের অবস্থান নষ্ট হবে। এ কারণে জামায়াত সিলেটে আলাদা নির্বাচন করে বিএনপিকে একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখছে। আবার জামায়াতের কারণে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে ওই দলগুলোরও আপত্তির কথা- চালু আছে। তাই বিএনপিও বৃহত্তর স্বার্থে আপাতত জামায়াতকে পেছনে রেখে জাতীয় ঐক্য গড়তে চাইছে।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতসহ ৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। জামায়াত ইস্যুতে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার অস্বস্তি বুকপকেটে রেখেই জোটগত পথযাত্রা শুরু করেছিল বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন করে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়েছিল বিএনপি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াতকে সরকারের হিস্যা দিতে কার্পণ্য করেনি বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে দলের তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে হারিয়েছে দলটি।
দেশের যেসব এলাকায় জামায়াতকে আসন ছেড়েছিল সেখানে শরিক দলটির মনরক্ষায় নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও মেনে নিয়েছিল বিএনপি। এতে রাজনৈতিক আদর্শ ও অবস্থান সম্পর্কে দেশে-বিদেশে নানামুখী প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছে বিএনপি। একটি উদার গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি দল হয়েও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গালি হজম করতে হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে জামায়াত ছাড়তে বিএনপিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বারবার। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক দুঃসময়ে বিএনপির চেয়ারপারসনসহ বেশিরভাগ নেতা যখন কারাগারে তখন মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়িয়েছেন জামায়াত নেতারা। জোট সরকারে অংশ হয়েও নানা জায়গায় তারা বলেছেন, বিএনপির দুর্নীতির দায়ভার কেন তারা নেবেন? ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আগ্রহী ছিলেন না।
কিন্তু জামায়াতের চাপের কারণে সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। শক্তিশালী সাংগঠনিক অবস্থান ও বিপুল জনসমর্থনের পরও সে নির্বাচনে বিএনপি ঘাড়ে চেপে বসে একটি ভূমিধস পরাজয়ের ভার। যা রাজনীতিতে বিএনপিকে ঠেলে দেয় খাদের কিনারে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পর আন্দোলন-সংগ্রামে দুই দলের দূরত্ব দৃশ্যমান হতে শুরু করে। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে জোটের বন্ধনকে কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ করে ফেলে জামায়াত। নিজেদের প্রার্থীর ব্যাপারে একাট্টা হয়ে মাঠে নামলেও বিএনপির পাশে দাঁড়ায়নি তারা। এ সময় ভিতরে ভিতরে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ব্যাপারে নানা গুঞ্জনও ছড়ায় রাজনৈতিক মহলে।
জামায়াতের ডাকা হরতালের কারণে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সে ঘটনায় বিএনপিকে দিতে হয়েছে চরম খেসারত। সে নির্বাচনের পর দীর্ঘ এক বছর দুই দলের নেতারা সৌজন্য বৈঠক পর্যন্ত করেননি। তারপর দুই দলের সম্পর্কের বিষয়টি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে মাসে-ছ’মাসে কাগজে-কলমে দুয়েকটি বৈঠক। ওদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে এক সময় প্রচারণা ছিল দলটি জামায়াত-শিবির নির্ভর হয়ে পড়েছে আন্দোলন-সংগ্রামে।
কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে বিএনপি ঘোষিত টানা আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছিল না শরিক দল জামায়াতের। পরবর্তী আড়াই বছর ধীরে চলো নীতিতে এগিয়েছে বিএনপির রাজনীতি। নিম্ন আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের শেষের কয়েক মাস থেকে চলতি বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহেই রাজধানীর মৎস্যভবন থেকে বকশীবাজার পর্যন্ত শোডাউন করেছে বিএনপি ও অঙ্গদলগুলোর নেতাকর্মীরা।
প্রতিটি হাজিরার দিনে সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলা এবং অব্যাহত গ্রেপ্তারের মুখেও সে শোড়াউনে বেড়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। যা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে তৈরি করেছে নতুন আত্মবিশ্বাস। খালেদা জিয়া জোটের শীর্ষ নেত্রী হলেও জামায়াতকে দৃশ্যমান হতে দেখা যায়নি তার কারামুক্তির আন্দোলনে। জোটের বৈঠকে দলটি আন্দোলনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও রক্ষা করেনি সে প্রতিশ্রুতি। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় দলটির নেতারা জানান, এ বিষয়টিকে তারা বিএনপির দলীয় ইস্যু মনে করে। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, সন্দেহ-অবিশ্বাসের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ দুই দশক জোটগত পথযাত্রার পর এখন বিএনপিও ভাবছে নতুন করে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম সূত্র জানায়, জামায়াতের একটি অংশের কার্যক্রমের ওপর অনেক আগে থেকেই নজর রাখছে বিএনপি। তাদের কর্মকাণ্ডকে দেখা হচ্ছিল সন্দেহের চোখে। দলের হাইকমান্ডও বিষয়টি অবহিত। রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত চায়নি বিএনপি। তবে বারবার আহ্বান ও অনুরোধ জানানোর পরও সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী প্রত্যাহার না করায় দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে বিএনপি। ২০ দলের শরিক দলগুলোও ক্ষুব্ধ হয়েছে এ ঘটনায়।
বিএনপি যখন বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান নিয়ে কাজ করছে তখন জামায়াতের এমন কর্মকাণ্ড ও অবস্থান উদ্দেশ্যমূলক এবং রহস্যজনক বলছেন তারা। তাদের ভাষ্য, এখানে দুইটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে জামায়াতের। প্রথমত, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী দেয়া জামায়াতের একটি কৌশল হতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে দরকষাকষির সুযোগ নিতেই এমন কৌশল নিয়েছে তারা।
দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করছে দলটির একটি অংশ। দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু সেটার মূল উদ্দেশ্য অন্যখানে। বিএনপিকে দুর্বল করতেই জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছিল সরকার। রাজনীতিতে পরিবর্তিত কৌশলে তারা জামায়াতকে স্পেস দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। আর সেটা হলে বিএনপিকে বাদ দিয়ে বর্তমান সরকারের অধীনে জামায়াতের ওই অংশটি নির্বাচনে যেতে পারে বলেও শঙ্কা বিএনপির।
জামায়াতের এমন সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামসহ সিনিয়র নেতাদের বড় অংশটি মোটেই চিন্তিত নয়। তারা মনে করেন, জামায়াত যদি জোট ছেড়ে চলে যেতে চায়, তাহলে সেটিই হবে বিএনপির জন্য মঙ্গল। কারণ, এ দলটির কারণে বারবার বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি বিএনপি।
জামায়াতের কারণে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েও সমর্থন দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক দল এবং সামাজিক শক্তি। জামায়াতের কারণেই প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারছে না বিএনপি। তৈরি হচ্ছে না আস্থার সম্পর্ক। তাই এ দলটি জোট ছেড়ে চলে যেতে চাইলে তাদের ধরে রাখতে চায় না বিএনপি। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সামনের দিনে ভোটের রাজনীতিতে খুব বেশি পথ আগাতে চায় না বিএনপি। তাই এই দূরত্ব ঘোচাতে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না।
অন্যদিকে বিএনপির একটি অংশ মনে করে, জামায়াতের সঙ্গে এই মুহূর্তে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত হবে না। তারা মনে করেন, বিএনপি জোট থেকে ইসলামী দলগুলোকে আলাদা করতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। জামায়াতকে জোট থেকে আলাদা করতে পারলে সরকার এ দলটিকেই আবার বিএনপির বিপক্ষে দাঁড় করাতে পারে। তাহলে কি সিলেট থেকেই শুরু হচ্ছে সে বিরোধিতা? সিলেটে দলীয় মেয়র প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষেই মেয়র পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছি।’
অন্যদিকে ৪ঠা জুলাই জোটের বৈঠক শেষে একক প্রার্থীর ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের সঙ্গে জামায়াতের বক্তব্য ছিল সাংঘর্ষিক। জামায়াত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের রয়েছেন। এতে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।’ বিষয়টি পরিষ্কার যে, বুঝে-শুনেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এ ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার হয়তো জামায়াত নিয়ে খেলতে চাইছে।
তাদের আলাদাভাবে নির্বাচন করার প্রস্তাবও দিতে পারে। দলটির একাংশ এমন সমঝোতা করলেও তাদের নির্যাতিত তৃণমূল সেটা মেনে নেবে বলে মনে হয় না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্যকথা। বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াত প্রকাশ্যে দলের কোনো কার্র্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কিন্তু সিলেটে প্রকাশ্যে নিয়মিত নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী। গাড়িবহর নিয়ে শহরের সব জায়গায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।
প্রতিদিন কর্মিসভা করে যাচ্ছেন। সেখানে কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছে না পুলিশ। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো মাঠে নামতে পারেনি। প্রতিনিয়ত তাদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে বরিশাল-রাজশাহীতেও দুই দলের মধ্যে চলছে টানাপড়েন। রাজশাহীতে মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও এখন পর্যন্ত বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয়নি জামায়াত। সেখানে তারা শর্ত জুড়ে দিয়ে বলছে, জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দিলেই তারা বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবে।
দু’দফায় জোটের বৈঠক ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পরও তারা মেয়র পদে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। অন্যদিকে দুই দলের দূরত্বের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে তিন সিটির নির্বাচনে জোটের সমন্বয় কমিটিতে জামায়াতকে জায়গা না দেয়ায়। জোটের একাধিক নেতা জানান, জামায়াত নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যতই জোটবদ্ধ রাজনীতি করুক না কেন, স্বতন্ত্র দল হিসেবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের অধিকার রয়েছে জামায়াতের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো যে তাদের অবস্থান শক্ত সেটা তারা প্রমাণ করতে চায় সিটি নির্বাচনে। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অর্ধশতাধিক আসনের একটি প্রার্থী তালিকাও করছে জামায়াত। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সেই তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে উপস্থাপন করা হবে। জামায়াতের সংশ্লিষ্ট সূত্র ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে এমন বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট অটুট থাকবে কিনা সেটাই এখন অনিশ্চিত।
দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় অংশটিই চাইছে জোট থেকে বেরিয়ে যাক জামায়াত। মুখে প্রকাশ না করলেও জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি কৌশলগত নীতি বা অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও জোট নিয়ে জামায়াতের কৌশল ভিন্ন। তারা চাইছে, বিএনপিই তাদের জোট ভেঙে দিক। কৌশল-পাল্টা কৌশলের একটি সূক্ষ্ম সুতো জড়িয়ে রেখেছে দুই দলের সম্পর্ক। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই বড় জোটের বাইরে থাকা দলগুলো নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রগতিশীল ও বামপন্থি দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। বিএনপির নেতাদের কারও কারও ধারণা, এসব ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য হলে জামায়াত জোটে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের আগের অবস্থান নষ্ট হবে। এ কারণে জামায়াত সিলেটে আলাদা নির্বাচন করে বিএনপিকে একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখছে। আবার জামায়াতের কারণে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে ওই দলগুলোরও আপত্তির কথা- চালু আছে। তাই বিএনপিও বৃহত্তর স্বার্থে আপাতত জামায়াতকে পেছনে রেখে জাতীয় ঐক্য গড়তে চাইছে।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতসহ ৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। জামায়াত ইস্যুতে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার অস্বস্তি বুকপকেটে রেখেই জোটগত পথযাত্রা শুরু করেছিল বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন করে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়েছিল বিএনপি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াতকে সরকারের হিস্যা দিতে কার্পণ্য করেনি বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে দলের তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে হারিয়েছে দলটি।
দেশের যেসব এলাকায় জামায়াতকে আসন ছেড়েছিল সেখানে শরিক দলটির মনরক্ষায় নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও মেনে নিয়েছিল বিএনপি। এতে রাজনৈতিক আদর্শ ও অবস্থান সম্পর্কে দেশে-বিদেশে নানামুখী প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছে বিএনপি। একটি উদার গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি দল হয়েও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গালি হজম করতে হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে জামায়াত ছাড়তে বিএনপিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বারবার। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক দুঃসময়ে বিএনপির চেয়ারপারসনসহ বেশিরভাগ নেতা যখন কারাগারে তখন মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়িয়েছেন জামায়াত নেতারা। জোট সরকারে অংশ হয়েও নানা জায়গায় তারা বলেছেন, বিএনপির দুর্নীতির দায়ভার কেন তারা নেবেন? ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আগ্রহী ছিলেন না।
কিন্তু জামায়াতের চাপের কারণে সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। শক্তিশালী সাংগঠনিক অবস্থান ও বিপুল জনসমর্থনের পরও সে নির্বাচনে বিএনপি ঘাড়ে চেপে বসে একটি ভূমিধস পরাজয়ের ভার। যা রাজনীতিতে বিএনপিকে ঠেলে দেয় খাদের কিনারে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পর আন্দোলন-সংগ্রামে দুই দলের দূরত্ব দৃশ্যমান হতে শুরু করে। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে জোটের বন্ধনকে কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ করে ফেলে জামায়াত। নিজেদের প্রার্থীর ব্যাপারে একাট্টা হয়ে মাঠে নামলেও বিএনপির পাশে দাঁড়ায়নি তারা। এ সময় ভিতরে ভিতরে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ব্যাপারে নানা গুঞ্জনও ছড়ায় রাজনৈতিক মহলে।
জামায়াতের ডাকা হরতালের কারণে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সে ঘটনায় বিএনপিকে দিতে হয়েছে চরম খেসারত। সে নির্বাচনের পর দীর্ঘ এক বছর দুই দলের নেতারা সৌজন্য বৈঠক পর্যন্ত করেননি। তারপর দুই দলের সম্পর্কের বিষয়টি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে মাসে-ছ’মাসে কাগজে-কলমে দুয়েকটি বৈঠক। ওদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে এক সময় প্রচারণা ছিল দলটি জামায়াত-শিবির নির্ভর হয়ে পড়েছে আন্দোলন-সংগ্রামে।
কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে বিএনপি ঘোষিত টানা আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছিল না শরিক দল জামায়াতের। পরবর্তী আড়াই বছর ধীরে চলো নীতিতে এগিয়েছে বিএনপির রাজনীতি। নিম্ন আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের শেষের কয়েক মাস থেকে চলতি বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহেই রাজধানীর মৎস্যভবন থেকে বকশীবাজার পর্যন্ত শোডাউন করেছে বিএনপি ও অঙ্গদলগুলোর নেতাকর্মীরা।
প্রতিটি হাজিরার দিনে সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলা এবং অব্যাহত গ্রেপ্তারের মুখেও সে শোড়াউনে বেড়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। যা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে তৈরি করেছে নতুন আত্মবিশ্বাস। খালেদা জিয়া জোটের শীর্ষ নেত্রী হলেও জামায়াতকে দৃশ্যমান হতে দেখা যায়নি তার কারামুক্তির আন্দোলনে। জোটের বৈঠকে দলটি আন্দোলনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও রক্ষা করেনি সে প্রতিশ্রুতি। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় দলটির নেতারা জানান, এ বিষয়টিকে তারা বিএনপির দলীয় ইস্যু মনে করে। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, সন্দেহ-অবিশ্বাসের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ দুই দশক জোটগত পথযাত্রার পর এখন বিএনপিও ভাবছে নতুন করে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম সূত্র জানায়, জামায়াতের একটি অংশের কার্যক্রমের ওপর অনেক আগে থেকেই নজর রাখছে বিএনপি। তাদের কর্মকাণ্ডকে দেখা হচ্ছিল সন্দেহের চোখে। দলের হাইকমান্ডও বিষয়টি অবহিত। রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত চায়নি বিএনপি। তবে বারবার আহ্বান ও অনুরোধ জানানোর পরও সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী প্রত্যাহার না করায় দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে বিএনপি। ২০ দলের শরিক দলগুলোও ক্ষুব্ধ হয়েছে এ ঘটনায়।
বিএনপি যখন বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান নিয়ে কাজ করছে তখন জামায়াতের এমন কর্মকাণ্ড ও অবস্থান উদ্দেশ্যমূলক এবং রহস্যজনক বলছেন তারা। তাদের ভাষ্য, এখানে দুইটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে জামায়াতের। প্রথমত, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী দেয়া জামায়াতের একটি কৌশল হতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে দরকষাকষির সুযোগ নিতেই এমন কৌশল নিয়েছে তারা।
দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করছে দলটির একটি অংশ। দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু সেটার মূল উদ্দেশ্য অন্যখানে। বিএনপিকে দুর্বল করতেই জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছিল সরকার। রাজনীতিতে পরিবর্তিত কৌশলে তারা জামায়াতকে স্পেস দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। আর সেটা হলে বিএনপিকে বাদ দিয়ে বর্তমান সরকারের অধীনে জামায়াতের ওই অংশটি নির্বাচনে যেতে পারে বলেও শঙ্কা বিএনপির।
জামায়াতের এমন সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামসহ সিনিয়র নেতাদের বড় অংশটি মোটেই চিন্তিত নয়। তারা মনে করেন, জামায়াত যদি জোট ছেড়ে চলে যেতে চায়, তাহলে সেটিই হবে বিএনপির জন্য মঙ্গল। কারণ, এ দলটির কারণে বারবার বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি বিএনপি।
জামায়াতের কারণে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েও সমর্থন দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক দল এবং সামাজিক শক্তি। জামায়াতের কারণেই প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারছে না বিএনপি। তৈরি হচ্ছে না আস্থার সম্পর্ক। তাই এ দলটি জোট ছেড়ে চলে যেতে চাইলে তাদের ধরে রাখতে চায় না বিএনপি। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সামনের দিনে ভোটের রাজনীতিতে খুব বেশি পথ আগাতে চায় না বিএনপি। তাই এই দূরত্ব ঘোচাতে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না।
অন্যদিকে বিএনপির একটি অংশ মনে করে, জামায়াতের সঙ্গে এই মুহূর্তে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত হবে না। তারা মনে করেন, বিএনপি জোট থেকে ইসলামী দলগুলোকে আলাদা করতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। জামায়াতকে জোট থেকে আলাদা করতে পারলে সরকার এ দলটিকেই আবার বিএনপির বিপক্ষে দাঁড় করাতে পারে। তাহলে কি সিলেট থেকেই শুরু হচ্ছে সে বিরোধিতা? সিলেটে দলীয় মেয়র প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষেই মেয়র পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছি।’
অন্যদিকে ৪ঠা জুলাই জোটের বৈঠক শেষে একক প্রার্থীর ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের সঙ্গে জামায়াতের বক্তব্য ছিল সাংঘর্ষিক। জামায়াত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের রয়েছেন। এতে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।’ বিষয়টি পরিষ্কার যে, বুঝে-শুনেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এ ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার হয়তো জামায়াত নিয়ে খেলতে চাইছে।
তাদের আলাদাভাবে নির্বাচন করার প্রস্তাবও দিতে পারে। দলটির একাংশ এমন সমঝোতা করলেও তাদের নির্যাতিত তৃণমূল সেটা মেনে নেবে বলে মনে হয় না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্যকথা। বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াত প্রকাশ্যে দলের কোনো কার্র্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কিন্তু সিলেটে প্রকাশ্যে নিয়মিত নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী। গাড়িবহর নিয়ে শহরের সব জায়গায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।
প্রতিদিন কর্মিসভা করে যাচ্ছেন। সেখানে কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছে না পুলিশ। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো মাঠে নামতে পারেনি। প্রতিনিয়ত তাদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে বরিশাল-রাজশাহীতেও দুই দলের মধ্যে চলছে টানাপড়েন। রাজশাহীতে মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও এখন পর্যন্ত বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয়নি জামায়াত। সেখানে তারা শর্ত জুড়ে দিয়ে বলছে, জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দিলেই তারা বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবে।
No comments