খালেদার জামিন স্থগিত এজলাসে উত্তাপ
বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন রোববার পর্যন্ত
স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন
কমিশন (দুদক)কে লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ
মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ গতকাল এ আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী
খুরশিদ আলম খানের সাবমিশন শুনেই আদালত এ আদেশ দেন। এ সময় খালেদা জিয়ার
আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে
বারবার দাবি জানান। এজলাস কক্ষে তখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুনানির
সুযোগ না পাওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপি চেয়ারপারসনের
আইনজীবীরা বলেছেন, তারা ব্যথিত ও হতাশ। এদিকে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের
দেয়া জামিনের ওপর আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে গতকাল দুপুরে
চেম্বার আদালতে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। চেম্বার আদালত বিষয়টি
আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেন।
সকাল ৯টা ৫ মিনিটে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান শুনানির শুরুতে আদালতকে জানান, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশের বিরুদ্ধে তারা লিভ টু আপিল করতে চান। কিন্তু আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় তা করতে পারেননি।
খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট চারটি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আদেশের কপি পেলে আমরা লিভ টু আপিল করব।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা সি পি ফাইল (ক্রিমিনাল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল) করে আসেন। দুদক আইনজীবী বলেন, এখনো আমরা হাইকোর্টের আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদালত বলেন, আদেশের কপি পাননি কেন?
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশের কপি বের হয়েছে গতকাল বিকাল ৫টার পরে। যে কারণে আমরা লিভ টু আপিল করতে পারিনি। লিভ টু আপিল করতে আগামী রোববার পর্যন্ত আমাদের সময় দেয়া হোক।
এ সময় আদালত বলেন, রোববারের মধ্যে সিপি ফাইল করে আসেন। এ পর্যন্ত স্টে (স্থগিত) থাকবে।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে বলেন, মাননীয় আদালত, আমাদের বক্তব্য না শুনেই আপনি আদেশ দিয়ে দিলেন। আমাদের বক্তব্য না শুনে তো আপনি আদেশ দিতে পারেন না। আদালত বলেন, শুনতে হবে না। রোববার পর্যন্ত তো স্টে দিয়েছি। ওই দিন শুনবো।
জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে উচ্চস্বরে বলেন, আপনি কেন আমাদের কথা শুনবেন না। আপনি একতরফাভাবে কেন আদেশ দেবেন। আমাদেরকে তো শুনতে হবে। এভাবে আদেশ দিলে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।
আদালত বলেন, কোর্টকে কোর্টের মতো চলতে দিন। কোর্টকে কোর্টের কাজ করতে দিন। কোর্ট কোনো পাবলিক পারসেপশনে যাবে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে আসামি বেরও হবেন না। তাই স্টে’র প্রয়োজন নেই।
এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে যান।
এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতের উদ্দেশে বলেন, মাই লর্ড, আমাদের কথা না শুনেই আপনি আদেশ দিয়ে দিলেন।
আদালত বলেন, এটি অর্ন্তবর্তীকালীন আদেশ। রোববার সিপি শুনবো। এখন শোনার দরকার নেই।
এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, আমরা তো সুযোগই পেলাম না।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি কার্যতালিকার অন্য মামলা শুনানি শুরু করতে বলেন। তখনও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ আদালতের উদ্দেশে উচ্চস্বরে বলেন, আপনি একতরফাভাবে আদেশ দিলেন। আমাদেরকে তো শুনতে হবে। কেন আপনি শুনবেন না?
প্রধান বিচারপতি বলেন, কার কথা শুনবো, কার কথা শুনবো না- সেটা কি আপনার কাছ থেকে শুনতে হবে?
এ সময় আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আপনি একতরফা শুনানি করে আদেশ দিতে পারেন না। এটা নজিরবিহীন। অর্ডার রিকল করেন।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন? এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আপনি আমাদের কথা শুনে অর্ডার দেন।
এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়িয়ে হৈচৈ শুরু করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তারা এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। পরে তারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা উপস্থিত ছিলেন।
আপিল বিভাগের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আমাদের কোনো বক্তব্য শুনলেন না। কোনো রকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবিলা করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। না দিয়ে স্টে অর্ডার পাস করলেন। তিনি বলেন, আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি যে, আমাদের কথা না শুনে এ ধরনের অর্ডার পাস ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। এতে করে পাবলিক পারসেপশন বিচার বিভাগের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জয়নুল আবেদীন বলেন, চেম্বারে স্টে না থাকা সত্ত্বেও স্টে দিয়ে দিলেন। আদালতের এই আদেশে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত। বিচার বিভাগের কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি। এই আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরা আশা করি রোববার আদালত আমাদের কথা শুনবেন, উভয়পক্ষের কথা শুনবেন এবং আজকের (গতকাল) যে আদেশটি দিলেন অতীতের নজিরগুলো অন্তত লক্ষ্য রেখে তা বাতিল করবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বক্তব্যের মধ্যে তিনি (খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন) দেখালেন যে হাইকোর্টের আদেশ ইতিমধ্যে টাইপ হয়ে গেছে এবং বিচারপতিদের সইও হয়ে গেছে, এরকম কথা যখন বলা হয় তখন আপিল বিভাগ শতভাগ ক্ষেত্রে মূল পিটিশনটা শুনতে চান এবং সার্টিফায়েড কপি দিয়ে লিভ পিটিশন ফাইল করতে বলেন। এটিই আপিল বিভাগের নিয়ম এবং সচরাচর আপিল বিভাগ এরকম আদেশই দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যা বলতে চাচ্ছেন তা সঠিক না। হাইকোর্টেও তারা এরকমভাবে উষ্মা প্রদর্শন করেছিলেন। আপিল বিভাগে কোনো বিষয় না দেখে, না শুনে আদেশ দেয়া যায় না। এজন্যই আদালত সঠিকভাবেই বলেছেন যে, তাদের (আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ) সামনে হাইকোর্টের সই মুহুরি কপি আসুক তখন তারা বিবেচনা করবেন যে হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশ সঠিক হয়েছে কি-না? তিনি বলেন, আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী নন এরকম একজন আইনজীবী (গিয়াস উদ্দিন আহমেদ) আদালতের উদ্দেশ্যে উষ্মা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেছিলেন। অর্ডার রিকল করার কথা বলেছিলেন। তখন আদালত তাকে সংযতভাবে কথা বলতে বলেন, তাকে এ ধরনের আচরণ করতে নিষেধ করেন আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতে হট্টগোল করে কেউ যদি আদালতের পারসেপশনের কথা বলেন, সেটা তো স্ববিরোধী কথা হয়ে গেল। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। রোববারের মধ্যে লিভ টু আপিল ফাইল করতে বলেছেন আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সোমবার (১২ই মার্চ) চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করতে আদেশ দেন আদালত। আর পেপার বুক প্রস্তুত হয়ে গেলে যেকোনো পক্ষ শুনানির জন্য আপিল উপস্থাপন করতে পারবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। ওই দিন হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরই কুমিল্লায় নাশকতার একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখাতে সরকারের আবেদনটি মঞ্জুর করেন কুমিল্লার ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ। একই সঙ্গে আগামী ২৮শে মার্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (পি-ডব্লিউ) ইস্যু করেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার চেম্বার আদালতে আবেদন করেন দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে চেম্বার আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
ওদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ যাত্রী হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ও হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদনে আদেশ দেয়নি আদালত। কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫নং আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি আগামী ২৮শে মার্চ শুনানির দিন ধার্য রেখে আদেশ দিয়েছেন।
সকাল ৯টা ৫ মিনিটে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান শুনানির শুরুতে আদালতকে জানান, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশের বিরুদ্ধে তারা লিভ টু আপিল করতে চান। কিন্তু আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় তা করতে পারেননি।
খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট চারটি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আদেশের কপি পেলে আমরা লিভ টু আপিল করব।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা সি পি ফাইল (ক্রিমিনাল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল) করে আসেন। দুদক আইনজীবী বলেন, এখনো আমরা হাইকোর্টের আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদালত বলেন, আদেশের কপি পাননি কেন?
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশের কপি বের হয়েছে গতকাল বিকাল ৫টার পরে। যে কারণে আমরা লিভ টু আপিল করতে পারিনি। লিভ টু আপিল করতে আগামী রোববার পর্যন্ত আমাদের সময় দেয়া হোক।
এ সময় আদালত বলেন, রোববারের মধ্যে সিপি ফাইল করে আসেন। এ পর্যন্ত স্টে (স্থগিত) থাকবে।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে বলেন, মাননীয় আদালত, আমাদের বক্তব্য না শুনেই আপনি আদেশ দিয়ে দিলেন। আমাদের বক্তব্য না শুনে তো আপনি আদেশ দিতে পারেন না। আদালত বলেন, শুনতে হবে না। রোববার পর্যন্ত তো স্টে দিয়েছি। ওই দিন শুনবো।
জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে উচ্চস্বরে বলেন, আপনি কেন আমাদের কথা শুনবেন না। আপনি একতরফাভাবে কেন আদেশ দেবেন। আমাদেরকে তো শুনতে হবে। এভাবে আদেশ দিলে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।
আদালত বলেন, কোর্টকে কোর্টের মতো চলতে দিন। কোর্টকে কোর্টের কাজ করতে দিন। কোর্ট কোনো পাবলিক পারসেপশনে যাবে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে আসামি বেরও হবেন না। তাই স্টে’র প্রয়োজন নেই।
এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে যান।
এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতের উদ্দেশে বলেন, মাই লর্ড, আমাদের কথা না শুনেই আপনি আদেশ দিয়ে দিলেন।
আদালত বলেন, এটি অর্ন্তবর্তীকালীন আদেশ। রোববার সিপি শুনবো। এখন শোনার দরকার নেই।
এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, আমরা তো সুযোগই পেলাম না।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি কার্যতালিকার অন্য মামলা শুনানি শুরু করতে বলেন। তখনও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ আদালতের উদ্দেশে উচ্চস্বরে বলেন, আপনি একতরফাভাবে আদেশ দিলেন। আমাদেরকে তো শুনতে হবে। কেন আপনি শুনবেন না?
প্রধান বিচারপতি বলেন, কার কথা শুনবো, কার কথা শুনবো না- সেটা কি আপনার কাছ থেকে শুনতে হবে?
এ সময় আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আপনি একতরফা শুনানি করে আদেশ দিতে পারেন না। এটা নজিরবিহীন। অর্ডার রিকল করেন।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন? এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আপনি আমাদের কথা শুনে অর্ডার দেন।
এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়িয়ে হৈচৈ শুরু করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তারা এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। পরে তারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা উপস্থিত ছিলেন।
আপিল বিভাগের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আমাদের কোনো বক্তব্য শুনলেন না। কোনো রকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবিলা করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। না দিয়ে স্টে অর্ডার পাস করলেন। তিনি বলেন, আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি যে, আমাদের কথা না শুনে এ ধরনের অর্ডার পাস ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। এতে করে পাবলিক পারসেপশন বিচার বিভাগের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জয়নুল আবেদীন বলেন, চেম্বারে স্টে না থাকা সত্ত্বেও স্টে দিয়ে দিলেন। আদালতের এই আদেশে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত। বিচার বিভাগের কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি। এই আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরা আশা করি রোববার আদালত আমাদের কথা শুনবেন, উভয়পক্ষের কথা শুনবেন এবং আজকের (গতকাল) যে আদেশটি দিলেন অতীতের নজিরগুলো অন্তত লক্ষ্য রেখে তা বাতিল করবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বক্তব্যের মধ্যে তিনি (খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন) দেখালেন যে হাইকোর্টের আদেশ ইতিমধ্যে টাইপ হয়ে গেছে এবং বিচারপতিদের সইও হয়ে গেছে, এরকম কথা যখন বলা হয় তখন আপিল বিভাগ শতভাগ ক্ষেত্রে মূল পিটিশনটা শুনতে চান এবং সার্টিফায়েড কপি দিয়ে লিভ পিটিশন ফাইল করতে বলেন। এটিই আপিল বিভাগের নিয়ম এবং সচরাচর আপিল বিভাগ এরকম আদেশই দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যা বলতে চাচ্ছেন তা সঠিক না। হাইকোর্টেও তারা এরকমভাবে উষ্মা প্রদর্শন করেছিলেন। আপিল বিভাগে কোনো বিষয় না দেখে, না শুনে আদেশ দেয়া যায় না। এজন্যই আদালত সঠিকভাবেই বলেছেন যে, তাদের (আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ) সামনে হাইকোর্টের সই মুহুরি কপি আসুক তখন তারা বিবেচনা করবেন যে হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশ সঠিক হয়েছে কি-না? তিনি বলেন, আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী নন এরকম একজন আইনজীবী (গিয়াস উদ্দিন আহমেদ) আদালতের উদ্দেশ্যে উষ্মা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেছিলেন। অর্ডার রিকল করার কথা বলেছিলেন। তখন আদালত তাকে সংযতভাবে কথা বলতে বলেন, তাকে এ ধরনের আচরণ করতে নিষেধ করেন আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতে হট্টগোল করে কেউ যদি আদালতের পারসেপশনের কথা বলেন, সেটা তো স্ববিরোধী কথা হয়ে গেল। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। রোববারের মধ্যে লিভ টু আপিল ফাইল করতে বলেছেন আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সোমবার (১২ই মার্চ) চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করতে আদেশ দেন আদালত। আর পেপার বুক প্রস্তুত হয়ে গেলে যেকোনো পক্ষ শুনানির জন্য আপিল উপস্থাপন করতে পারবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। ওই দিন হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরই কুমিল্লায় নাশকতার একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখাতে সরকারের আবেদনটি মঞ্জুর করেন কুমিল্লার ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ। একই সঙ্গে আগামী ২৮শে মার্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (পি-ডব্লিউ) ইস্যু করেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার চেম্বার আদালতে আবেদন করেন দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে চেম্বার আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
ওদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ যাত্রী হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ও হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদনে আদেশ দেয়নি আদালত। কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫নং আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি আগামী ২৮শে মার্চ শুনানির দিন ধার্য রেখে আদেশ দিয়েছেন।
No comments