উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা: দাবি মিয়ানমারের
মিয়ানমারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইউ অং হ্লা তুন |
রোহিঙ্গাদের
বিরুদ্ধে এবার নতুন প্রচারণায় নেমেছে মিয়ানমার। দেশটি বলছে, রাখাইনে কোনও
গণহত্যা বা জাতিগত নিধনযজ্ঞ সংঘটিত হয়নি। রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের
ঘরবাড়ি, গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। এসবের পর ‘উন্নত জীবনের আশায়’ তারা বাংলাদেশে
পালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইউ অং হ্লা তুন সাংবাদিকদের
এসব কথা বলেছেন। অন্যদিকে, নেপিদো’তে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার সরকারের
রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ কমিটির সমন্বয়ক ইউ অং তুন থেত বলেছেন, ‘আমাদের দেশে
জাতিগত নিধনযজ্ঞ বা গণহত্যার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমরা সে রকম কিছু করিনি।
অভিযোগ করা খুবই সহজ কাজ।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক
টাইমসের এক প্রতিবেদনে রহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমার সরকারের চালানো
প্রপাগান্ডার বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করার বিষয়টির পাশাপাশি ২০১২ সালে ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের এখনও ‘ট্রানজিট সেন্টারে রেখে দেওয়া’, প্রায় সাত লাখের মধ্যে মাত্র আট হাজার জনের প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া এবং ওই ৮ হাজারের মধ্যে মাত্র ৩০০ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লাখ মানুষ। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, নিরাপত্তাবাহিনীর চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতেই তারা ওই অভিযান চালিয়েছিল। তাদের অভিযানে খুন, ধর্ষণ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটার কথা অস্বীকার করছে দেশটি। তবে ১৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ পরামর্শক আদাম দিয়েং বলেন, ‘এটি পরিষ্কার যে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সবই করা হয়েছে তাদের পরিচয়ের জন্য।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার কাজে লিপ্ত ছিল, এমনটা মনে করার যৌক্তিক কারণ আছে। আর তা যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে তা গণহত্যার অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। অথচ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মাটিতে মাথা গুঁজে রয়েছে।’ অন্যদিকে মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা নিজেরাই তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর বহু নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেলেও তা অস্বীকার করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইউ অং হ্লা তুন বুধবার বলেছেন, বাংলাদেশে যে এতো রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে তার জন্য কিছুটা হলেও ‘বাঙালি সন্ত্রাসীরা’ দায়ী। তারা গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি চৌকিতে হামলা করেছিল। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইউ অং হ্লা তুনের ভাষায়, ‘তৃণমূল থেকে পাওয়া খবর থেকে জানা গেছে, সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ভয়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কায়। আবার অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে উন্নত জীবন যাপনের আশায় মিয়ানমার ছেড়েছে।’
সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কাছে মিয়ানমারেরে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর চলতে থাকা নিপীড়নের বিষয়ে উত্থাপিত প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। জাতিসংঘে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময়ে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়ন গণহত্যার চূড়ান্ত নিদর্শন। ব্যক্তি ও পুরো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর আদেশ যারা দিয়েছে আর যারা তা বাস্তবায়ন করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত হিন লিন, এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে ইয়াংহি লিকে চাকরীচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আবার গত সোমবার অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পোড়া রোহিঙ্গা গ্রামের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলার জন্য দায়ী করেছে মিয়ানমার সরকারকে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, ‘মানবতা বিরোধী অপরাধের’ প্রমাণ নষ্ট করতেই মিয়ানমার সরকার ওই কাজ করছে। উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি দেখে অ্যামেনেস্টি জানতে পেরেছে, রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলোর স্থানে নতুন সেনা ছাউনি বানাচ্ছে মিয়ানমার। পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এমন ৩০০ রোহিঙ্গা গ্রামের তালিকা করেছে, গত আগস্টের আক্রমণের পর যে গ্রামগুলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলোর ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ইউ অং তুন থেত বুধবার নেপিডোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমারা জমি পরিষ্কার করছি যাতে উদ্বাস্তুদের জন্য কিছু নির্মাণ করা যায়।’
উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের সরকারই রোহিঙ্গাদের স্বেছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে গত মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কাছে মাত্র ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। বুধবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ মিন্ট থু বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি করা প্রত্যাবাসন তালিকায় জরুরি যেসব তথ্য অনুপস্থিত, রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে সেগুলো দরকার। তাই মিয়ানমার ৮ হাজার ৩২ জন আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৩৭৪ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে প্রত্যয়ন করেছে। তাদের যেকোনও সময় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারার কথা। অথচ প্রত্যাবাসনের জন্য বেশ কয়েকটি পূর্ব নির্ধারিত দিন পার হয়ে গেলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
যারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তাদেরকে প্রথমে ডিসমাল ট্রানজিট সেন্টারে রাখা হবে। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা এই শিবিরগুলোকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জেলখানার সঙ্গে তুলনা করেছে। মিয়ানমার সরকারের একজন মুখপাত্র ইউ যাও হাতে বুধবার বলেছেন, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের এক মাসের মতো ওইসব শিবিরে থাকতে হবে। তারপর তারা তাদের বাড়িতে যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই, ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভেতর যে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসিত করা হয়েছিল, তাদেরকে মিয়ানমার এখনও জেলখানার মতো ওই ডিসমাল ট্রানজিট সেন্টারগুলোতে আটকে রেখেছে। ২০১৮ সালে এসেও মিয়ানমার বলছে, ‘তাদেরকে তাদের আসল জায়গায় ফেরত পাঠাবার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’ জাতিসংঘ এখনও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষ দূত দিয়েং বলেছেন, এখনিই যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাদের ওপর আবার সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার ভাষ্য, ‘রোহিঙ্গাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আর কোনও মানুষের ক্ষেত্রে হওয়াটা কাম্য নয়। আমরা আর তাদের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারি না।’
প্রতিবেদনে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করার বিষয়টির পাশাপাশি ২০১২ সালে ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের এখনও ‘ট্রানজিট সেন্টারে রেখে দেওয়া’, প্রায় সাত লাখের মধ্যে মাত্র আট হাজার জনের প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া এবং ওই ৮ হাজারের মধ্যে মাত্র ৩০০ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লাখ মানুষ। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, নিরাপত্তাবাহিনীর চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতেই তারা ওই অভিযান চালিয়েছিল। তাদের অভিযানে খুন, ধর্ষণ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটার কথা অস্বীকার করছে দেশটি। তবে ১৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ পরামর্শক আদাম দিয়েং বলেন, ‘এটি পরিষ্কার যে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সবই করা হয়েছে তাদের পরিচয়ের জন্য।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার কাজে লিপ্ত ছিল, এমনটা মনে করার যৌক্তিক কারণ আছে। আর তা যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে তা গণহত্যার অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। অথচ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মাটিতে মাথা গুঁজে রয়েছে।’ অন্যদিকে মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা নিজেরাই তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর বহু নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেলেও তা অস্বীকার করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইউ অং হ্লা তুন বুধবার বলেছেন, বাংলাদেশে যে এতো রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে তার জন্য কিছুটা হলেও ‘বাঙালি সন্ত্রাসীরা’ দায়ী। তারা গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি চৌকিতে হামলা করেছিল। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইউ অং হ্লা তুনের ভাষায়, ‘তৃণমূল থেকে পাওয়া খবর থেকে জানা গেছে, সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ভয়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কায়। আবার অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে উন্নত জীবন যাপনের আশায় মিয়ানমার ছেড়েছে।’
সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কাছে মিয়ানমারেরে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর চলতে থাকা নিপীড়নের বিষয়ে উত্থাপিত প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। জাতিসংঘে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময়ে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়ন গণহত্যার চূড়ান্ত নিদর্শন। ব্যক্তি ও পুরো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর আদেশ যারা দিয়েছে আর যারা তা বাস্তবায়ন করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত হিন লিন, এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে ইয়াংহি লিকে চাকরীচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আবার গত সোমবার অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পোড়া রোহিঙ্গা গ্রামের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলার জন্য দায়ী করেছে মিয়ানমার সরকারকে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, ‘মানবতা বিরোধী অপরাধের’ প্রমাণ নষ্ট করতেই মিয়ানমার সরকার ওই কাজ করছে। উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি দেখে অ্যামেনেস্টি জানতে পেরেছে, রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলোর স্থানে নতুন সেনা ছাউনি বানাচ্ছে মিয়ানমার। পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এমন ৩০০ রোহিঙ্গা গ্রামের তালিকা করেছে, গত আগস্টের আক্রমণের পর যে গ্রামগুলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলোর ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ইউ অং তুন থেত বুধবার নেপিডোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমারা জমি পরিষ্কার করছি যাতে উদ্বাস্তুদের জন্য কিছু নির্মাণ করা যায়।’
উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের সরকারই রোহিঙ্গাদের স্বেছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে গত মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কাছে মাত্র ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। বুধবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ মিন্ট থু বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি করা প্রত্যাবাসন তালিকায় জরুরি যেসব তথ্য অনুপস্থিত, রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে সেগুলো দরকার। তাই মিয়ানমার ৮ হাজার ৩২ জন আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৩৭৪ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে প্রত্যয়ন করেছে। তাদের যেকোনও সময় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারার কথা। অথচ প্রত্যাবাসনের জন্য বেশ কয়েকটি পূর্ব নির্ধারিত দিন পার হয়ে গেলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
যারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তাদেরকে প্রথমে ডিসমাল ট্রানজিট সেন্টারে রাখা হবে। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা এই শিবিরগুলোকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জেলখানার সঙ্গে তুলনা করেছে। মিয়ানমার সরকারের একজন মুখপাত্র ইউ যাও হাতে বুধবার বলেছেন, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের এক মাসের মতো ওইসব শিবিরে থাকতে হবে। তারপর তারা তাদের বাড়িতে যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই, ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভেতর যে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসিত করা হয়েছিল, তাদেরকে মিয়ানমার এখনও জেলখানার মতো ওই ডিসমাল ট্রানজিট সেন্টারগুলোতে আটকে রেখেছে। ২০১৮ সালে এসেও মিয়ানমার বলছে, ‘তাদেরকে তাদের আসল জায়গায় ফেরত পাঠাবার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’ জাতিসংঘ এখনও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষ দূত দিয়েং বলেছেন, এখনিই যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাদের ওপর আবার সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার ভাষ্য, ‘রোহিঙ্গাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আর কোনও মানুষের ক্ষেত্রে হওয়াটা কাম্য নয়। আমরা আর তাদের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারি না।’
No comments