নদী খননের নামে লুটপাট
বাংলাদেশ
ও ভারতের অভিন্ন নদীর পানি ভারতীয় অংশে প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাংলাদেশের
বিভিন্ন নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় নদী বাঁচাতে একের পর এক প্রকল্প
বাস্তবায়িত হলেও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে নদীগুলো প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না।
বস্তুত নদী খননের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের উৎসব চলছে। এ লুটপাটের ভয়াবহ
এক চিত্র বুধবার যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের ফারাক্কা
বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশে পদ্মার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায়
লবণাক্ততা সমস্যা বাড়তে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে শুষ্ক মৌসুমে গড়াইয়ে পানি
প্রবাহ ধরে রাখতে দু’দফা খনন করা হয়। এ নদী খনন বাবদ দুই দফায় হাজার কোটি
টাকার বেশি ব্যয় করা হলেও এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। পদ্মার প্রধান
শাখা নদী গড়াইয়ের বুকে মাইলের পর মাইল সৃষ্টি হয়েছে বালুচর। দেশে নদী ও খাল
খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। দুর্নীতিবাজরা অভিনব কায়দায়
দুর্নীতি করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। হাজার কোটি টাকা খরচ করার পরও
গড়াই কেন প্রাণ ফিরে পেল না, তা অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর
ব্যবস্থা নিতে হবে।
নদী ও খাল খননের নামে যাতে সরকারি অর্থ লুটপাট না হয়
এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের
প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা সমস্যা আগামীতে তীব্র আকার ধারণ করবে। এ
প্রেক্ষাপটে দেশের সব নদীর পানি প্রবাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য করণীয়
নির্ধারণ করতে হবে। অভিন্ন নদীর পানি ভারতীয় অংশে প্রত্যাহার করে নেয়া
অব্যাহত থাকলে দেশের নদীগুলো একের পর এক মরে যাবে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর
পানি প্রবাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য দিল্লির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত
রাখতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভারত সফরকালে ভারতের
প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রীকে রাজি করাতে নয়াদিল্লির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করব
তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে দিল্লি আরও আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে যাতে
অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়। দেশে নদী ও খাল খননে ভয়াবহ দুর্নীতি ও
অনিয়মের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। তাই দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প
নেই। খননকৃত নদী ব্যবস্থাপনায় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে খননে সুফল মিলবে না,
এটা স্পষ্ট।
No comments