ডিজিটাল বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য আমাদের অধিকার
মানুষ
বেঁচে থাকার জন্য যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হলো খাদ্য। পানি থেকে শুরু করে
রোগ নিরাময়ের ওষুধ, প্রতিটি উপাদান মানুষের জীবনকে দীর্ঘদিন বাঁচতে সাহায্য
করে। এই খাবারগুলো যেমন মানুষকে রোগপ্রতিরোধ থেকে সাহায্য করে আবার ঠিক এই
খাবারের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটায়। ডিজিটাল বাংলাদেশে বর্তমানে নিরাপদ
খাদ্য কথাটা শুধু কাগজ-কলমে রয়ে গেছে। খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল এমনকি
মেয়াদ শেষে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রসাধনীসামগ্রীতে ভেজাল নিয়ে ১৬ কোটি
মানুষের দেশে আমাদের বসবাস। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে রাতের খাবার
পর্যন্ত যদি হিসাব করা হয় মনে হয় নিরাপদ খাদ্য পাওয়া সোনার হরিণের মতো।
বাজারে যাবেন মাছ কিনতে সেখানে ফরমালিন, যাবেন মসলা কিনতে সেখানে ভেজাল,
যাবেন তেল কিনতে ঠিক সেখানেও একই রকম। এবার আসেন একটা ব্রেড কিনব সেখানেও
ভেজাল, দুধ থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল। রাস্তার ফুচকা
কিংবা ঝালমুড়ি বাদই দিলাম। মহান আল্লাহ কাছে আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে শোকর
করা উচিত যে, আমরা বেঁচে আছি। মাঝেমধ্যে পত্রিকা কিংবা টিভিতে দেখা যায়,
ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে জেল-জরিমানা করেন। প্রিয় পাঠক আপনারা ব্যাপারটি যত
সহজ মনে করেন তা কিন্তু নয়। মানুষের যৌবন, জীবন, রোগ এমনকি মৃত্যু ঘটায় এই
খাদ্য, তার ওপর যদি নতুন করে শুরু হয় ভেজাল ডাক্তার তাহলে এই ডিজিটাল
বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যাব কোথায়? এই ভেজাল জীবন নিয়ে কি করছে আমাদের সরকার
তার দিকে একটু দেখি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ পাস করে
অক্টোবর ২০১৩ সালে। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালে সরকার বাংলাদেশ ফুড সেফটি
অথরিটি নামক একটা প্রতিষ্ঠান শুরু করে।
এ প্রতিষ্ঠান ২০১২ সাল পর্যন্ত
তাদের কার্যক্রম ঘোষণা করেন। সেগুলো হচ্ছে সভা, কর্মশালা, সেমিনার এবং
নিরাপদ খাদ্য দিবস পালন।সরকারের এই ডিজিটাল যুগে ২০১৮ সালে এসে
প্রতিষ্ঠানের সরকারি ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা গেলো সাত পাতার ওয়েবসাইট ছাড়া আর
কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেই। আমি আশ্চর্য হলাম সরকারি এই সাইটে গিয়ে যে,
ভিশন, অবজেক্টিভ, রেসপনসিবিলিটি, এনফোর্সমেন্ট, কনজ্যুমার ফার্স্ট, ফুড
বিজনেস, টেকনোলজি পাতাগুলো এখনো আন্ডার কনস্ট্রাকশন। তাহলে ১৬ কোটি মানুষের
খাদ্যের সেফটি কে দেবে? অন্তত সরকার এই দায়িত্ব সঠিকভাবে নেবে। হাজারো
সমস্যার মধ্যে আছে আমাদের দেশের মানুষ। বাজার থেকে নিজের শ্রমের টাকা খরচ
করে যদি বিষ খেতে হয় তাহলে সেই উন্নয়ন দিয়ে আমরা কি করব? দেশের সরকারি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইট
চার বছর থেকে আন্ডার কনস্ট্রাকশন। সরকার ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে, মিডিয়া
ব্যস্ত সরকার উন্নয়নের মহাসড়ক নিয়ে। আর আমরা সাধারণ মানুষ ব্যস্ত বেঁচে
থাকার তাগিদে, নতুন প্রজন্ম ব্যস্ত ফেসবুক আর ইউটিউবে। মশার কামড় খাব আমরা
সাধারণ মানুষ, পুলিশের পিটুনিও আমাদের পিঠে আর ভেজাল খাবারটা আমাদের
পেটে।প্রসঙ্গটা আমার ভিন্ন শুধু রেফারেন্স হিসেবে আমি এই তথ্য উপস্থাপন
করলাম। আমি এখানে খাদ্য সুরক্ষার একটি নমুনা তুলে ধরলাম। ফুড স্ট্যান্ডার্ড
পরিচালনা করতে হয় কতগুলো ডিপার্টমেন্টের যৌথ সহযোগিতায় কিন্তু মূল
দায়িত্বে থাকে ফুড সেফটি অথরিটির কাছে। যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, ফুড পলিসি,
রেগুলেশন, ইন্সপেক্ট এবং ফুড স্যাম্পল পরীক্ষা।শুধু পরিদর্শন করা হয়
স্থানীয় সরকার অথবা সিটি কাউন্সিলের হেলথ এবং পরিবেশ কর্মকর্তার মাধ্যমে।
সেই কর্মকর্তার ক্ষমতা থাকে যে কোনো সময়ে ফুড প্রসেসিং এরিয়া, রেস্টুরেন্ট,
ক্যাফে এবং পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান রেগুলার পরিদর্শন করা। ফুড সেফটি
স্ট্যান্ডার্ড না থাকলে সে দোকান অথবা ফ্যাক্টরি সঙ্গে সঙ্গে সিলগালা বন্ধ
ঘোষণা করা হয়। মালিক পক্ষককে জরিমানা করা ছাড়াও কিছু নিয়মকানুন দেয়া হয়।
যার প্রথম প্রতিটি ফুড প্রসেসিং শপ, ফেক্টরি, রেস্টুরেন্ট কিংবা হোটেলে
একজন ফুড সেফটি সুপারভাইজার থাকবে যিনি সরকারের নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে
ট্রেনিং এবং পরীক্ষা দিয়ে সেই সার্টিফিকেট নেবেন। তার দায়িত্ব থাকবে
নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। ফুড কালার, কর্মীদের পার্সোনাল হাইজিনি, ড্রেস
কোড, ফুড প্রসেসিং এরিয়া পেইন্ট, হাত ধোয়ার আলাদা বেসিন, গরম পানি, ফুড
থার্মোমিটার, ফ্রিজের তাপমাত্রা, তাজা মাছ-মাংস এবং রান্না করা ফুড
আলাদাভাবে রাখাসহ নিয়মমতো ফ্লাই স্প্রে করার সব কাগজপত্র সব সময় আপডেট
রাখতে হবে। আমাদের সরকার এইখানে বর্ণিত কাজগুলো করছে বলে আমার মনে হয় না।
আপনি যদি খাদ্যে নিরাপদ দিতে না পারেন তাহলে নিরাপদ খাদ্য দিবস পালনের দিবস
বা গোলটেবিল বৈঠক করে কিভাবে সুরক্ষা দেবেন? একটা প্রতিষ্ঠান নিজেই জানে
না কিভাবে ফুড সেফটি পুরো ধাপগুলো করতে হয়। তারা শুধু ব্যস্ত প্রেস রিলিজ,
সভা কিংবা সেমিনার নিয়ে। আমাদের সরকার অনেক সাফল্য আছে। দেশ উন্নতি হচ্ছে,
ইন্টারনেট এখন গ্রামে, ঢাকা শহরে বড় বড় উড়ালসেতু কিন্তু জনগণকে খোয়াচ্ছেন
ভেজাল খাদ্য, তার দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে। ভুক্তভোগী মানুষকে প্রতিকার
করতে হবে। সরকারকে খাদ্যে ভেজাল রোধে জিরো টোলারেন্স নীতি নিতে হবে।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হচ্ছে একমাত্র সম্বল। আমরা চাই না আর কোনো
মানুষ অন্তত এই ডিজিটাল যুগে খাদ্যে ভেজাল খেয়ে বেঁচে থাকুক। এটা আমাদের
নাগরিক অধিকার।
[লেখক: রাশেদ শ্রাবন, প্রবাসী সাংবাদিক ও গবেষক। ফুড সেফটি সুপারভাইজার, ডিপার্টমেন্ট অব প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রি ফুড অথরিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার, অস্ট্রেলিয়া।]
[লেখক: রাশেদ শ্রাবন, প্রবাসী সাংবাদিক ও গবেষক। ফুড সেফটি সুপারভাইজার, ডিপার্টমেন্ট অব প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রি ফুড অথরিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার, অস্ট্রেলিয়া।]
No comments