কতটা নিশ্চিত হচ্ছে গ্রাহক স্বার্থ?
প্রতি
বছরের মতো এবারও ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস বাংলাদেশসহ
বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। এবার বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হল
: ‘ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ’।
বর্তমান সরকার দেশকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত
করার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোর অন্যতম হল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে
শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে উপকরণ,
আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও সেবা সহজলভ্য, দাম সহনীয় রাখা এবং সেবার মান
নিশ্চিত করা। তথ্যপ্রযুক্তি সেবার উন্নয়নে যোগাযোগ ও সেবাগুলো জনগণের কাছে
অতি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে এবং মানুষের হাতের নাগালে চলে আসছে। এ কারণে
তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, বিশেষ করে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ছাড়া বর্তমান আধুনিক
সভ্যতার যুগে মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল। আর ডিজিটাল প্রযুক্তির উপকরণ
এখন আমাদের জীবনধারার সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে
এর ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রেও ক্রেতা তথা ভোক্তার অধিকার
নিশ্চিত করা জরুরি। এদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। ভোক্তা অধিকার
অবশ্যই মানবাধিকার। কারণ ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা ও
বেঁচে থাকার সম্পর্ক নিবিড়, যদিও দেশে ভোক্তা অধিকারের বিষয়ে এখনও সেভাবে
সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মুনাফাখোর, মজুদদার, সিন্ডিকেট
ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে; নকল, ভেজাল
ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্যে নাগরিক জীবন আজ অতিষ্ঠ, সাধারণ মানুষের মৌলিক
অধিকার এক্ষেত্রে ভূলুণ্ঠিত। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ায় ইচ্ছামতো। জনগণকে
জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটস্থ করে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে
বাংলাদেশের ভোক্তারা বরাবরই পণ্য ও সেবা উভয় ক্ষেত্রেই অন্যায্যতার শিকার।
ভোক্তারা অসচেতন ও অসংগঠিত হওয়ায়, স্বার্থ সংরক্ষণে শক্তিশালী ভোক্তা সংগঠন
এবং আইনে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার না থাকায় প্রবঞ্চনার হার প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
সেজন্যই বাংলাদেশের ভোক্তাদের বলা হয়ে থাকে হেল্পলেস কনজিউমার বা অসহায়
ক্রেতা-ভোক্তা। বিভিন্ন দেশে ভোক্তারাই পণ্যের নিয়ামক। কারণ ভোক্তারা
পণ্যটি ব্যবহার করলেই উৎপাদক ও বিক্রেতারা লাভবান হবেন। সে কারণে উন্নত
দেশগুলোতে ভোক্তাদের ‘সম্রাট’ উপাধি প্রদান করা হলেও আমাদের দেশে পরিস্থিতি
তার উল্টো, বরং ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করেন ভোক্তারা কোন পণ্যটি হজম করবেন।
আবার দাম নির্ধারণেও ব্যবসায়ীদের ভূমিকাই মুখ্য। ভোক্তারা এখানে অনেকটাই
হাতের পুতুল। ভোক্তাদের প্রতি সুবিচার তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সরকার,
রাজনৈতিক দল, উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তা স্বার্থকে
অধিকতর গুরুত্ব দেবে। অন্যদিকে ভোক্তা স্বার্থসংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব
করার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত হবে। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, সেবা
সার্ভিস, বিশেষ করে ইন্টারনেট সার্ভিসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। পণ্য
ও সেবার মান ঠিক রাখতে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের জন্য হটলাইন সার্ভিস চালু
করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ সম্পর্কে ব্যবসায়ী ও সাধারণ
ভোক্তা পর্যায়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
এস এম নাজের হোসাইন : ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
এস এম নাজের হোসাইন : ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
No comments